আজকে প্রকাশিত চাকরির পরীক্ষার নোটিশ গুলো পাবেন

আলেকজান্ডার দি গ্রেট

আলেকজান্ডার দি গ্রেট


আলেকজান্ডার দি গ্রেট
৩৩৫-৩৩৪ খ্রীঃপূঃ গ্রীসের সিংহাসনে বসলেন আলেকজান্ডার। তার পিতা ছিলেন ২য় ফিলিপ, যিনি ৩৩৪ খ্রীঃপূঃ তার মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত মেসিডোনিয়ার রাজা ছিলেন। এই মেসিডোনিয়া গ্রীসের অন্যতম প্রধান রাজ্য ছিল। আর এসময় এখানে সকল প্রকার শিল্পকলার বিকাশ ঘটেছিল এবং উৎকর্ষতা শিখরে পৌঁছেছিল। দর্শন, সাহিত্য, ভাস্কর্য, স্থাপত্য-শিল্প এবং অন্যান্য কলায় তারা সমসাময়িক অন্যান্য জাতিসমূহের তুলনায় শ্রেষ্টত্ব অর্জন করেছিল। এখানেই থুসিডাইডেস, অ্যারিষ্টফেনিস, জেনোফোন, সক্রেটিস, প্লেটো, এরিষ্টোটল, ডায়োজিনিস, ডিমোস্থিনিস এবং আরও অনেক মহৎ মহৎ লোকের জন্ম হয়েছিল। বিশ্ব বিজয়ী আলেকজান্ডার এরিষ্টোটলের ছাত্র ছিলেন।

গ্রীসের সভ্যতা ছিল মূলতঃ নগর কেন্দ্রিক। এটি নগরসমূহে বিকাশ লাভ করেছিল এবং নগরবাসীদের দ্বারা বিস্তার লাভ করেছিল। প্রাচ্যের নগরগুলি কিছু সংখ্যক দালান-কোঠা নিয়ে গড়ে উঠেছিল। জনগণের মধ্যে কোন সুষ্ঠ পরিকল্পণা ছিল না। একজন স্বৈরাচারী শাসকের দ্বারা সেগুলি শাসিত হত। তাই জনগণের অবস্থা ছিল প্রায় ক্রীতদাস পর্যায়ের। অপরদিকে গ্রীসের নগরগুলি ছিল সুপরিকল্পিত এবং শিল্পমন্ডিতভাবে নির্মিত। জনগণ কর্মাধ্যক্ষগণকে নির্বাচিত করত, জনগণের বিষয়সমূহ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করত এবং তাদের সরকারী ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করত। গ্রীকেরা মনে করত যে জীবন উত্তম এবং তা উপভোগ করা উচিৎ। স্বাস্থ্য ছিল সুখের ভিত্তি। ব্যায়ামাগার ছিল একটি জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান। এখানে খেলাধূলা, ক্রীড়া প্রতিযোগীতা, নৃত্য, গান-বাজনা, কাব্যচর্চা ইত্যাদি গুরুত্বসহকারে অনুশীলন করা হত। তাদের ক্রীড়া প্রতিযোগীতার জন্যে ছিল স্টেডিয়াম, রথ চালানোর জন্যে ছিল বড় মাঠ, নাট্যানুষ্ঠানের জন্যে ছিল থিয়েটার।

সাহিত্য ও শিল্পকলা গ্রীকদের জীবনে একটি বিরাট স্থান দখল করেছিল। বুদ্ধিগত বিকাশ সম্পর্কে সতর্ক ছিল বিধায়, তারা বিভিন্ন শিক্ষালয় স্থাপন করেছিল। তারা দর্শণশাস্ত্র নিয়ে আলাপ আলোচনা করত। শিল্পকলা এবং ভাস্কর্য শিক্ষার্থীদের জন্যে তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল। তাদের প্রত্যেকটি দালান কোঠায় আবশ্যিকভাবে কারুকার্য করা হত। এই কারুকার্য বা ভাস্কর্য প্রধানতঃ ছিল তাদের বিভিন্ন দেবদেবীদের নিয়ে। তাদের কাছে শিল্পকলাবিহীন একটি নগরী ছিল অচিন্ত্যনীয়। তারা তাদের ভাষাকে ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষায় পরিণত করেছিল।

প্রাচ্যের অন্যান্য জাতিসমূহ থেকে গ্রীকদের জীবন-যাপনের পদ্ধতি ও রীতিনীতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের। তাদের পোশাক ছিল জমকাল, ঢিলে-ঢালা এবং তারা চওড়া কান বিশিষ্ট টুপি মাথায় দিত। তাদের জীবন দর্শন ছিল এই ধরণের যে, জীবনকে আজই উপভোগ করতে হবে, আগামীকাল আমরা নাও থাকতে পারি। এই কারণে গ্রীকেরা ভোগ-বিলাসকে তাদের অন্যতম প্রধান বিষয় মনে করত। তদের কাছে ধর্ম ছিল ভবিষ্যৎ জীবনের বিষয় তাই তাদের চিন্তা-ভাবনায় এর স্থান ছিল সামান্য মাত্র।

গ্রীসের উত্তর-পূর্ব দিকে বলকান উপদ্বীপে অবস্থিত ছিল মেসিডোনিয়া। এখানকার অধিকাংশ জনগণ ছিল কৃষিজীবি। খ্রী:পূ: ৪র্থ শতকের মধ্যভাগে রাজা ২য় ফিলিপমেসিডোনিয় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং এক শক্তিশালী সেনাদল গঠন করলেন। কৃষকদের মধ্যে থেকে বেঁছে বেঁছে তিনি তার পদাতিক বাহিনী গঠন করেছিলেন। যুদ্ধে পদাতিকদের নিয়েই ফালাঙ্গোস তৈরী করা হত। অভিজাত মেসিডোনিয়রা হত অশ্বারোহী যোদ্ধা।

রাজা ২য় ফিলিপ তার শক্তিশালী সেনাবাহিনী দ্বারা একের পর এক গ্রীক শহর দখল করতে শুরু করলেন। গ্রীক দাস মালিকদের একাংশ স্বেচ্ছায় তার বশ্যতা স্বীকার করে নেয়। জন্মভূমির স্বাধীনতার চেয়ে তারা বেশী মূল্য দিত নিজেদের ধন-সম্পত্তিকে। এমনও ঘটেছে যে, রাজা ফিলিপ কাউকে কিছু উৎকোচ দিয়েছেন, আর তারা পরে দূর্গের প্রবেশদ্বার তার জন্যে খুলে দিচ্ছে। এ করণে ফিলিপ ব্যঙ্গ করে বলতেন যে-‘সোনাভরা গর্দভ যে কোন শহর নিয়ে নিতে পারে।’

মেসিডোনিয় সম্রাটের বিরুদ্ধে এথেনিয় দেমোস উঠে দাঁড়িয়েছিল। আত্তিকা প্রদেশের শাসক অভিজাতবর্গ ব্যতিরেকে সমস্ত স্বাধীন এথেন্সবাসীদের বলা হয় দেমোস। এদের বেশিরভাগই ছিল কৃষক, কারিগর, মাঝিমাল্লা ও দিনমুজুর। যাহোক বিখ্যাত বাগ্মী ডিমোস্থিনিস তার জ্বালাময়ী বক্তৃতায় ২য় ফিলিপকে পরস্বাপহারী রূপে সকলের সম্মুখে প্রকাশ করেন এবং গ্রীকদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে আহবান জানান। এরফলে মধ্যগ্রীসের নগর রাষ্ট্রসমূহের একাংশ মেসিডোনিয়ার সাথে সংগ্রামের জন্যে ঐক্যবদ্ধ হয়।

খ্রী:পূ: ৩৩৮ অব্দে খেরোনিয়া শহরের নিকটে এথেনিয় ও মেসিডোনিয়দের চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু হয়। এথেনিয়দের সাথে এক সাঁরিতে দাঁড়িয়ে সাধারণ যোদ্ধার ন্যায় যুদ্ধ করেছিলেন ডিমোস্থিনিস।

এথেনিয় সেনাবাহিনী কঠোর নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে গড়ে উঠেছিল। সেনাবাহিনীতে ভর্ত্তির সময় তরুণেরা শপথ নিত। তাদের শপথ ছিল এমন- ‘আমি এই পবিত্র অস্ত্রের অসম্মান করব না এবং যুদ্ধ ক্ষেত্রে যেখানেই থাকি, কখনই আমার সঙ্গীকে পরিত্যাগ করব না। আমি আমার পর্ণ কুঠির রক্ষার জন্যে যুদ্ধ করব এবং তারপরে পিতৃভূমিকে দূর্বল তো করবই না, বরং আরও পরাক্রান্ত ও শক্তিশালী করে তুলব। আমি নিজে অন্যদের সাথে বর্তমানে প্রচলিত আইন-কানুন এবং ভবিষ্যতে যেসব আইন-কানুন প্রবর্তিত হবে, সেসবও মেনে চলব। স্বদেশের সমুদয় পবিত্র বস্তুকে আমি ভক্তি করব। দেবতারা আমার সাক্ষী-সাক্ষী স্বদেশের সীমানা, গম ও যবের শস্য ক্ষেত, জলপাইয়ের বাগান ও দ্রাক্ষাক্ষেত।’

এথেনীয়দের দৃঢ় মনোবল ও নেতৃত্বের কারণে দীর্ঘদিন ধরে এই ভয়াবহ যুদ্ধ চলে। প্রথম দিকে ২য় ফিলিপের বাহিনীকে এথেনিয়রা পিছু হটিয়ে দেয়। অবশ্য উন্নততর অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জ্বিত এবং অধিক নিয়ম শৃঙ্খলায় অভ্যস্ত মেসিডোনিয় সেনাবাহিনী জয়লাভ করেছিল। এই জয়লাভের ফলে প্রায় সমস্ত গ্রীস মেসিডোনিয়ার পদানত হয়।

আলেকজান্ডার বাল্যকাল থেকেই ইচ্ছে পোষণ করতেন যে, তিনি সিংহাসনে আরোহণের পর বিশ্ব জয়ের মত বিশাল এবং গৌরবময় কোন কার্য্য করবেন। গোর্দিউস নগরে একটি রথের উপরে ‘গোর্দিউস গিঁট’ অত্যন্ত জটিলভাবে জঁটপাকানো একটি গিঁট রাখা ছিল। কথিত ছিল যে, যিনি ঐ গিঁট খুলতে পারবেন তিনি সমগ্র এশিয়ার অধিপতি হবেন। অনেকেই গিঁট খুলতে চেষ্টা করেছিল বটে, কিন্তু কেউই তা খুলতে পারেনি। আলেকজান্ডারও চেষ্টা করেন। অত:পর যখন ব্যর্থ হলেন, তখন তিনি তরবারী দ্বারা গিঁটটা কেটে ফেললেন। এ থেকেই এ বাগিধির উৎপত্তি:To cut the Gordian knot. অর্থাৎ জটিল ও গোলমেলে কোন সমস্যার দ্রুত চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা।

সুতরাং পিতা ২য় ফিলিপের এই বিজয়াভিযানের সাফল্য শুনে যুবক আলেকজান্ডার তাই বলেছিলেন, ‘আমার পিতাই সব অধিকার করে নেবেন দেখছি, বিরাট ও গৌরবময় কোন কিছু করার সুযোগ আর আমার কপালে বোধহয় নেই।’

সমস্ত গ্রীস নিজের অধিকারে নিয়ে আসার পর রাজা ২য় ফিলিপ পারস্য অভিযানের জন্যে তৈরী হতে লাগলেন। এই অভিযান প্রস্তুতি কালে চক্রান্তকারীদের হাতে নিহত হলেন তিনি। তখন তার ২০ বৎসর বয়স্ক পুত্র আলেকজান্ডার সিংহাসনে উপবেশন করলেন।

আলেকজান্ডার সিংহাসনে আরোহণের অল্পদিনের মধ্যে ৩০ হাজার পদাতিক ও পাঁচ হাজার অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে বের হন দিগিজয়ে এবং অল্পদিনেই লক্ষ লক্ষ মানুষের এবং বহু জাতির ভাগ্যনিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। তিনি তার সংক্ষিপ্ত বার বৎসরের রাজত্বকালে যে বিশাল বিজয় অর্জন করেন তার পূর্বে অন্য কেউ সেরূপ করতে সক্ষম হননি।

বিশ্বজয়ের প্রথমদিকে পারস্য সাম্রাজ্যের এশিয়া মাইনরে প্রবেশ করে আলেকজান্ডার ৩য় দরিয়াবসের পারস্যিক সেনাবাহিনীর মোকাবেলা করেন এবং ইসসুজের যুদ্ধে তাদের পরাজিত করেন। তারপর তার বাহিনী ভূ-মধ্য সাগরের তীর ধরে দক্ষিণ দিকে এগিয়ে যায়। আলেকজান্ডারের পদানত হয় উত্তর সিরিয়াসহ ফ্রিজিয়া, কেপডাসিয়া এবং সেলেওসিয়া। তারপর তিনি সিরিয়া এবং প্যালেস্টাইনের মধ্যে দিয়ে মিসরের দিকে অগ্রসর হয়ে সোর নগরী অবরোধ করেন। পতনের পূর্বে সোর কয়েক মাস গ্রীক সেনাবাহিনীকে ঠেকিয়ে রেখেছিল।

যুদ্ধে সোরীয়রা পরাজিত হল। আলেকজান্ডার ছিলেন বদরাগী ও নিষ্ঠুর। তার বিরুদ্ধে যারা রূখে দাঁড়িয়েছে সেইসব জনগোষ্ঠীকে তিনি নির্মমভাবে হত্যা করেছেন নয়ত: তাদের দাসে পরিণত করেছেন। সোর নগরী দখল করার পর তার আদেশে ৮ হাজার লোককে হত্যা ও ৩০ হাজার লোককে দাসরূপে বাজারে বিক্রি করে দেয়া হয়।

পুনঃরায় মিসরের পথে আলেকজান্ডার জেরুজালেমে প্রবেশ করেন এবং বিনা বাঁধায় তা দখল করে নেন। জেরুজালেমের বাইরে সেইসময় একদল ধর্মীয়নেতা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এদের মধ্যে এমন একজন ছিলেন, যিনি পূর্বেই তার সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন যে, তিনি বিশ্বজয় করবেন। আলেকজান্ডার তাদের দ্বারা প্রভাবিত হন এবং পবিত্র নগরী সম্পর্কীত যুক্তিসঙ্গত শর্তাবলী তিনি মঞ্জুর করেন।

জেরুজালেম থেকে আলেকজান্ডার তার সেনাবাহিনী নিয়ে মিসর অভিমুখী হন এবং শীঘ্রই তা তার করতলগত হয়। এই প্রাচীন দেশের উত্তর সমুদ্রতীরে তিনি এক মহানগরী স্থাপন করেন এবং তার নাম দেন আলেকজান্দ্রিয়া। এতেও তিনি সন্তুষ্ট হলেন না। তিনি তার সেনাবাহিনী নিয়ে অশুর দেশের মরুভূমি, অরবিলায় দরিয়াবসের সেনাবাহিনীর মোকাবেলা করার জন্যে প্যালেস্টাইন এবং সিরিয়ার মধ্যে দিয়ে আবার ফিরে এলেন।

আলেকজান্ডার তার সেনাবাহিনী নিয়ে মেসোপটেমিয়ায় এসে পৌঁছেন। পারস্য সম্রাট ৩য় দরিয়াবস বিশাল সৈন্য সমাবেশ করেছিলেন। তার বাহিনীতে রণহস্তী ও রথ ছিল। রথের সাথে কাস্তে জাতীয় ধারাল অস্ত্র বাঁধবার ব্যবস্থা ছিল, যাতে করে যুদ্ধের সময় বিপক্ষেরা তার আঘাতে ধরাশায়ী হয়। ৩৩১ খ্রীঃপূঃ টাইগ্রিস নদীর ধারে গিউগামেলা নামক একটি বসতির নিকটবর্তী বিস্তীর্ণ প্রান্তর, অরবিলায় আলেকজান্ডার দরিয়াবসের সেনাবাহিনীর মুখোমুখী হন। শুরু হল বিখ্যাত গ্রানিকাসের যুদ্ধ।

দরিয়াবস আক্রমণের জন্যে রথীদের পাঠালে গ্রীক বাহিনী শর নিক্ষেপ করে তাদের অধিকাংশকে নিহত করে ফেলে এবং নিজেরা দু‘পাশে সরে যাওয়া মাত্র পারস্যিকদের ক্ষিপ্তপ্রায় ধাবস্ত যুদ্ধাশ্বগুলো তীরবেগে ভিতরে অগ্রসর হয়ে যায়। এদিকে তাদের পাশ কাটিয়ে অশ্বারোহী বাহিনীসহ আলেকজান্ডার পারস্যিক সৈন্যদলের কেন্দ্রস্থলে যেখানে সম্রাট দরিয়াবস দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেখানে গিয়ে উপস্থিত হন। সঙ্গে সঙ্গে তার ফালাঙ্গোসও পারস্যিকদের আক্রমণ করে হটিয়ে দেয়। পরিস্থিতির আকষ্মিকতায় ভীতচকিত দরিয়াবস সর্বাগ্রে পালাতে শুরু করেন। তার পিছনে পিছনে তার সমগ্র বাহিনীও পালাতে শুরু করে। এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পারস্য সাম্রাজ্যের পতন হল। এরফলে ২০০ বৎসরের (৫৩১-৩৩১ খ্রীঃপূঃ) পারস্যিক শাসনেরও অবসান ঘটল।

সম্রাট ৩য় দরিয়াবস পালিয়ে যান এশিয়ার দিকে। পরে নিহত হন মধ্য এশিয়ার ব্যাকটেরিয়ায়। আলেকজান্ডার ব্যাবিলন হয়ে পৌঁছে গেলেন পার্সিপলিস- পারস্য সাম্রাজ্যের রাজধানী। পার্সিপলিস লুন্ঠিত ও ভষ্মিভূত হল গ্রীক সেনাদের হাতে। সমগ্র পারস্য অঞ্চল আলেকজান্ডারের দখলে এল। কিন্তু এতেও তার বিজয়ের আকাঙ্খা পরিতৃপ্ত হয়নি। দূরপ্রাচ্যের দেশগুলির ধন-সম্পদ তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছিল। তিনি একবাটানা থেকে পূর্বদিকে অগ্রসর হতে লাগলেন এবং মধ্য এশিয়া দখল শেষে ভারতীয় উপমহাদেশের দিকে অগ্রসর হন।

আলেকজান্ডার ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ করেন ৩২৭ খ্রী:পূ:। হিন্দুকূশ পর্বত অতিক্রমের পর কাবুলের সন্নিকটে নিকাইয়া নামক স্থানে গ্রীক শিবির স্থাপিত হল। তারপর সেখান থেকে তক্ষশীলা ও সিন্ধু উপত্যকার রাজন্যবর্গকে আলেকজান্ডারের আনুগত্য স্বীকারের আমন্ত্রণ জানিয়ে দূত প্রেরিত হল।

আলেকজান্ডারের ভারতীয় উপমহাদেশে অভিযানের প্রাক্কালে সমগ্র ভারত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনপদ ও মহাজনপদে বিভক্ত ছিল। কেবলমাত্র ঝিলিম ও বিপাশা নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলেই সাতটি ভিন্ন জাতির বসবাস ছিল এবং অঞ্চলটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল। যেমন- অশ্বক রাজ্য (বুনার অঞ্চল), পুস্করাবতী (পেশোয়ার), তক্ষশীলা (রাওয়ালপিন্ডি), অভিসার, ঝিলিম ও চেনার নদীর মধ্যবর্তী পুরুর রাজ্য, গান্ধার, মালব ইত্যাদি অন্যতম। এইসব রাজ্যগুলো পরস্পর আত্মকলহ, যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত থাকায় তাদের মধ্যে কোন ঐক্য ছিল না। প্রতিটি রাজ্য একারণে রাজনৈতিক ভাবে অস্থিতিশীল ছিল।

সর্বপ্রথম তক্ষশীলার রাজা অম্ভি আলেকজান্ডারের বশ্যতা স্বীকার করে নেন। তিনি গ্রীক দূত তার নিকট পৌঁছানোর পূর্বেই বশ্যতা স্বীকারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচুর উপঢৌকনসহ আলেকজান্ডারের নিকট দূত প্রেরণ করেন। একে একে আলেকজান্ডার শশীগুপ্ত সঞ্জয়, কোফিউস আরও কতিপয় রাজন্যবর্গের বশ্যতা স্বীকারের প্রতিশ্রুতি পান।

কাবুলের মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হলে আলেকজান্ডার (Alexander) সর্বপ্রথম পুস্করাবতীর রাজা অস্টক কর্তৃক বাঁধাপ্রাপ্ত হন। সম্মুখ সমরে পরাজিত হয়ে অস্টক দূর্গে আশ্রয় নেন। অতঃপর দীর্ঘ ৩০ দিন অবরুদ্ধের পর দূর্গের পতন হলে তিনি গ্রীক বাহিনীর হাতে নিহত হন।

পুস্করাবতীকে পদানত করে আলেকজান্ডার সম্মুখে অগ্রসর হন এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজন্যবর্গের প্রতিরোধ প্রতিহত করে সিন্ধুনদ অতিক্রম শেষে তক্ষশীলায় ছাউনি ফেলেন। এ সময় তক্ষশীলার রাজা অম্ভি স্থানীয় দলপতিদের সঙ্গে আলেকজান্ডারের পরিচয় করিয়ে দেন। এখানে অবস্থান কালেই অভিসার জাতির বশ্যতা স্বীকারপত্র দূতেরা আলেকজান্ডারের নিকট হস্তান্তর করেছিল।

তক্ষশীলা হতে পূর্বদিকে ঝিলাম নদী বরাবর অগ্রসর হন আলেকজান্ডার। ঝিলাম ও চন্দ্রভাগার মধ্যবর্তী অঞ্চলের রাজা ছিলেন পুরু। আলেকজান্ডার পুরুকে বশ্যতা স্বীকারের আমন্ত্রণ জানিয়ে দূত প্রেরণ করলেন। আত্মমর্যাদা সম্পন্ন পুরু তার এই প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন।বিনাযুদ্ধে এই রাজ্য দখল সম্ভব হবে না দেখে আলেকজান্ডার পুরুকে মিত্র সংগ্রহের কিম্বা যুদ্ধ প্রস্তুতির কোনরূপ অবকাশ না দিয়ে খ্রী:পূ: ৩২৬ অব্দের মে মাসে ঝিলাম নদীর তীরে শিবির স্থাপন করলেন। নিজ রাজ্যের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে নদীর অপর তীরে পুরু ছাউনি ফেলেন।

স্বল্প সময়ের মধ্যে পুরু গ্রীক বাহিনীর তুলনায় অধিক সেনাসমাবেশ করেছিলেন। সুতরাং আলেকজান্ডার কৌশলের আশ্রয় নিলেন। আর এমনিতেও তিনি সমর কুশলী ছিলেন। তিনি রাতের অন্ধকারে ঝিলাম নদীর গতিপথ ধরে ১৭ মাইল অগ্রসর হয়ে পিন্ডি খোয়াতে পৌঁছেন এবং নদী অতিক্রম করে প্রত্যুষে অতর্কিত পুরুর রাজ্যে প্রবেশ করেন।এতদ্রুত গ্রীক বাহিনী তার রাজ্যে প্রবেশ করতে পারে পুরু তার জন্যে আদৌ প্রস্তুত ছিলেন না। গ্রীক বাহিনীর ক্ষিপ্রতায় বিষ্মিত পুরু তার দুই পুত্রকে আলেকজান্ডারের গতিরোধ করতে প্রেরণ করেন। পুরুর পুত্রদ্বয়ের উভয়ই আলেকজান্ডারের সাথে যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হল।

পুত্রদ্বয়ের মৃত্যুতেও পুরু আত্মবিশ্বাস হারালেন না। তিনি ৫০ হাজার পদাতিক, চার হাজার অশ্বারোহী, তিন শত রথ এবং দু‘শত হস্তি নিয়ে আলেকজান্ডারের মোকাবেলায় এগিয়ে যান এবং সুখচৈনপুর অতিক্রম করে প্রত্যুষে ঝিলাম নদীর তীরে আলেকজান্ডারের বার হাজার অশ্বারোহী ও তীরন্দাজ বাহিনীর মুখোমুখী হন।

পূর্বরাত্রির বৃষ্টিপাতে ঝিলাম নদী তীরের যুদ্ধক্ষেত্র পিচ্ছিল ও কর্দমাক্ত ছিল। যুদ্ধ শুরু হলে পুরু বাহিনীর অধিকাংশ রথের চাকাগুলো কাদায় আটকে গিয়ে সেগুলি একে একে অচল হয়ে পড়তে লাগল। আলেকজান্ডারের অশ্বারোহী বাহিনী এই সুযোগে দ্রুত বেগে পুরুর সেনাবাহিনীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে ছত্রভঙ্গ করে দিল।অসীম বীরত্বে যুদ্ধ করে পুরু আহত অবস্থায় বন্দী হন। এসময় তার শরীর নয়টি আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত ছিল।

পুরুকে খাঁচায় বন্দী করে আলেকজান্ডারের সম্মুখে উপস্থিত করা হলে পুরু তার প্রতি গ্রীক সম্রাটের এহেন ব্যবহারে তীব্র ক্ষোভ ও উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। এতে বিষ্মিত আলেকজান্ডার পুরুকে তার নিকট থেকে কিরূপ ব্যাবহার প্রত্যাশা করেন তা জিজ্ঞেস করেন। পুরু তার কাছে রাজকীয় সম্মান দাবী করে বসেন।

আলেকজান্ডার পুরুর অসাধারণ সাহস, বীরত্ব ও স্বদেশ প্রেমে মুগ্ধ হয়ে তার সাথে মিত্রতা স্থাপন করেন এবং এই মিত্রতার নিদর্শণ স্বরূপ তার রাজ্য তাকে ফিরিয়ে দেন। আর পুরু আলেকজান্ডারের এই বিজয়ের নিদর্শণ স্বরূপ ঝিলাম নদীর তীরে বুকেফালা ও নিকাইয়া নামে দু‘টি নগরীর গোড়াপত্তন করেন।

অপরাজিত গ্রীক বাহিনীর হাতে পুরুর পরাজয়ের পর রাভী নদীর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল সমূহের প্রজাতান্ত্রিক রাজ্যগুলো আলেকজান্ডারের আনুগত্য স্বীকার করে নিল। সুতরাং ছোট খাট আর কোন বাঁধা বিপত্তি না থাকায় আলেকজান্ডার সরাসরি মগধ আক্রমণের মানসে সসৈন্যে বিপাশা নদীর তীরে এসে ছাউনি ফেলেন। এসময় নদীর ওপারে মগধের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন ধননন্দ। এখানেই আলেকজান্ডারের সেনাবাহিনীর মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিল। সেনাবাহিনী দীর্ঘসময় যুদ্ধে লিপ্ত থাকায় অত্যাধিক রণক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তাই তারা আর অধিক দূর অগ্রসর হতে অনীহা প্রকাশ করে দেশে ফেরার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সুতরাং আলেকজান্ডার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করা স্থির করেন।

৩২৬ খ্রী:পূ: নভেম্বর মাসে আলেকজান্ডার ঝিলাম নদীর তীর ধরে অগ্রসর হলেন এবং ৩২৫ খ্রী:পূ: সেপ্টেম্বর মাসে বেলুচিস্থানের মধ্যে দিয়ে ব্যবিলনের পথে রওনা হন।

আলেকজান্ডার তার বিজিত অঞ্চল সমূহকে ৭টি প্রদেশে বিভক্ত করেছিলেন। এদের পাঁচটি ভারতীয় এবং অপর দু‘টি উপমহাদেশের বাইরে। ভারতীয় ৫টি প্রদেশের দু‘টিতে পাঞ্জাব ও সিন্ধুতে তিনি গ্রীক গভর্নর নিযুক্ত করেছিলেন এবং অপর তিনটিতে ভারতীয় গভর্নর নিযুক্ত হযেছিল।

আলেকজান্ডার যখন পাঞ্জাবে অবস্থান করছিলেন, সেইসময় চন্দ্রগুপ্ত তার সাক্ষাৎপ্রার্থী হন। যে উদ্দেশ্যে চন্দ্রগুপ্তের এই মিশন তা হল মগধরাজ ধননন্দকে সিংহাসনচ্যূত করতে আলেকজান্ডারের সহায়তা লাভ। সুতরাং চন্দ্রগুপ্ত ধননন্দের প্রতি প্রজাসাধারণের ঘৃণা ও বীতশ্রদ্ধার কথা আলেকজান্ডারের কাছে তুলে ধরেন এবং সাথে সাথে প্রজাসাধারণের পক্ষ থেকে ধননন্দকে উৎখাতে সাহায্য সহযোগীতার প্রতিশ্রুতিও দেন।

চন্দ্রগুপ্তের এই মিশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হল। গ্রীক সহায়তা লাভের বদলে নিজের মৃত্যুদন্ডাদেশ কাঁধে নিয়ে তিনি পলায়ন করে কোনরকম প্রাণ রক্ষা করেন। চন্দ্রগুপ্ত তার নির্ভিক ও তেজোদীপ্ত আচরণের জন্যে আলেকজান্ডার কর্তৃক মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রাপ্ত হয়েছিলেন।

চন্দ্রগুপ্ত ক্ষত্রিয় বংশোদ্ভূত ছিলেন। কোন এক যুদ্ধে তার পিতা মারা গেলে তার মাতা মূরা দেবী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং অন্ত:সত্ত্বা অবস্থায় মগধের রাজধানী পাটালীপুত্রে আশ্রয় গ্রহণ করে। চন্দ্রগুপ্ত সেখানেই জন্মগ্রহণ করেন। মূরাদেবীর আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় এক রাখাল চন্দ্রগুপ্তকে পোষ্যপুত্র হিসেবে গ্রহণ করে। চন্দ্রগুপ্ত এই রাখালের গৃহে কিছুদিন লালিত-পালিত হন। অত:পর বালক চন্দ্রগুপ্তের রাজসদৃশ চেহারা ও বুদ্ধিমত্তা লক্ষ্য করে তাকে তক্ষশীলার এক ব্রাহ্মণ চানক্য যিনি বিষ্ণুগুপ্ত ও কৌটিল্য নামেও পরিচিত, সঙ্গে করে নিয়ে যান এবং তাকে রাজনীতি ও সামরিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে থাকেন। এর কারণ ছিল এই যে, এই কৌটিল্য প্রকাশ্য রাজদরবারে একবার নন্দরাজ কর্তৃক অপমানিত হয়েছিলেন।

ধননন্দের পিতৃশ্রাদ্ধে পৌরহিত্য করার জন্যে একজন ব্রাহ্মণের প্রয়োজন হয়। তখন মন্ত্রী শকটার কৌটিল্য বা চাণক্যকে ঐ শ্রাদ্ধে পৌরহিত্য করার জন্যে আমন্ত্রণ জানান। তারপর যখন কৌটিল্য রাজপ্রসাদে উপস্থিত হয়ে প্রধান পুরোহিতের আসন গ্রহন করেন, তখন কুৎসিৎ কদাকার চেহারার কৌটিল্যকে দেখে ধনানন্দ ভীষণ ক্রুদ্ধ হন। তিনি তাকে টিকি ধরে টেনে তুলে ঘেটি ধরে রাজপ্রাসাদ থেকে বের করে দেন। আর কৌটিল্য এই অপমানের প্রতিশোধ নেবার প্রতিজ্ঞা করেন এবং ব্রত পালন করতে থাকেন।

চন্দ্রগুপ্ত আলেকজান্ডারের সাহায্য লাভে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসে সেনাবাহিনী সংগঠনে আত্মনিয়োগ করেন এবং কূটবুদ্ধি সম্পন্ন ব্রাহ্মণ চানক্যের সহযোগীতায় পার্শ্ববর্তী প্রজাতান্ত্রিক রাজ্যগুলো থেকে সেনা সংগ্রহ করে অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিন্ধ্যা পর্বতে একদক্ষ সেনাদল গড়ে তোলেন। এই সেনাবাহিনী শক, যবন, কিরাত, কম্বোজ প্রভৃতি জাতির যোদ্ধা দ্বারা গঠিত হয়েছিল।

৩২৪ খ্রী:পূ: চন্দ্রগুপ্ত তার সেনাবাহিনী নিয়ে মগধ আক্রমণ করেন। এই সংঘর্ষে নন্দরাজ পরাজিত ও নিহত হলে চন্দ্রগুপ্ত মগধের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন এবং কৌটিল্য হন তার উপদেষ্টা।

আলেকজান্ডার তার বাহ্যিক সাফল্যগুলির দ্বারা বিমোহিত হয়ে, তার আদর্শ সমূহকে বিসর্জন দিয়েছিলেন। এরূপে পূর্বাঞ্চলে তার শেষ বৎসরগুলিতে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পূর্ণরূপে পাল্টে গিয়েছিল। তিনি তার চারপাশের বিভিন্ন প্রলোভন দ্বারা দারুনভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। তিনি মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানে আসক্ত এবং এক ধরণের জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। এই জ্বরই তার মৃত্যুর কারণ হল।

বাবিলে ৩২৩ খ্রীঃপূঃ বিশ্ববিজয়ী আলেকজান্ডার মৃত্যুবরণ করেন। এসময় তার বয়স ছিল মাত্র৩৩ বৎসর। এত অল্প বয়সী হলেও ইতিমধ্যেই তিনি এক যুগান্তকারী ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেলেছিলেন।

আলেকজান্ডার যখন মৃত্যুবরণ করেছিলেন তখন তার উত্তরাধিকারী হওয়ার মত এমন কোন শক্তিশালী লোক ছিলেন না যিনি তার বিজিত বিশাল সাম্রাজ্য একত্রে ধরে রাখতে পারেন। তার মৃত্যুরপর তাকে সমাধিস্থ করার পূর্বেই তার সেনাপতিদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়ে যায়। তার এই সাম্রাজ্য অত:পর তার চারজন সেনাপতির মধ্যে ভাগ হয়ে গেল। এই সেনাপতিরা হলেন টলেমি, লাইসিয়াস, কাসেন্ডার এবং সেলুকাস। আর এই বিভাগগুলি ছিল পশ্চিমাঞ্চল অথবা গ্রীস, উত্তরাঞ্চল অথবা আর্মেনিয়া, পূর্বাঞ্চল অথবা সিরিয়া এবং দক্ষিণাঞ্চল বা মিসর। সেলুকাসের শাসনাধীনে সিরিয়া বা পূর্বাঞ্চলের অংশে পড়েছিল পাঞ্জাব, সিন্ধু, পারস্য ও প্যালেষ্টাইনের উত্তরাঞ্চল। টলেমীর শাসনাধীন দক্ষিণাঞ্চল বা মিসরীয় ভাগের অন্তর্ভূক্ত ছিল প্যালেস্টাইনের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল। বস্তুতঃ প্যালেস্টাইন সেলুকাস এবং টলেমি এই দু’শক্তির মাঝে পড়েছিল।

সেলুকাস তার রাজ্যে গ্রীসের অনুরূপ নগর রাষ্ট্র গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়েছিলেন যার অন্যতম ছিল দজলা বা টাইগ্রিসে অবস্থিত সেলেওসিয়া। এখানে তিনি পশ্চিমা দেবদেবীদের মূর্ত্তি স্থাপন করেছিলেন এবং পশ্চিমা শিল্পকলা ও চিন্তাধারার বিকাশ ঘটিয়েছিলেন।

আলেকজান্ডারের মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই চন্দ্রগুপ্ত গ্রীক শাসকদের বিতাড়নের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। প্রথমে নন্দ বংশের উচ্ছেদ সাধন করে তিনি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে তার রাজ্য বিস্তার অব্যহত রাখেন। একই সঙ্গে একের পর এক গ্রীক অধিকৃত অঞ্চলসমূহ জয় করে পাঞ্জাবের নিকটবর্তী হন। আলেকজান্ডারের নিয়োজিত গ্রীক শাসনকর্তা সেলিওকাস তাকে দমন ও বিজিত রাজ্যসমূহ পুন:রুদ্ধার করতে ৩০৫ খ্রী:পূ: সিন্ধুতে এসে পৌছিলে চন্দ্রগুপ্ত কর্তৃক প্রচন্ড বাঁধার সম্মুখীন হন। এতে সেলিওকাস চন্দ্রগুপ্তের সাথে সন্ধি করতে বাধ্য হন। সন্ধির আশু শর্তানুসারে সেলিওকাস চন্দ্রগুপ্তকে কাবুল, কান্দাহার, হিরাট ও মাকরান প্রদেশ ছেড়ে তো দিলেনই উপরন্তু নিজকন্যা হেলেনের সঙ্গে চন্দ্রগুপ্তের বিবাহ দিয়েছিলেন। অন্যদিকে বন্ধুত্বের নিদর্শণ স্বরূপ চন্দ্রগুপ্ত সেলিওকাসকে পাঁচশত হাতি উপহার দেন।দীর্ঘ ২৪ বৎসর রাজত্বের পর ৩০০ খ্রী:পূ: এই চন্দ্রগুপ্ত অবশেষে মহীশুরের শ্রাবণ বেলগোলা নামক স্থানে অনশনে মৃত্যুবরণ করেন।

☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "আলেকজান্ডার দি গ্রেট"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Iklan Atas Artikel

Iklan Tengah Artikel 1

Iklan Tengah Artikel 2

Iklan Bawah Artikel