আলুর উপকারিতা ও গুনাগুণ
বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০১৯
Comment
➢ মূলত আলু একটি বহুবর্ষজীবী টিউবেরাস ফসল যা সোলানেসিয়া গোত্রের অন্তর্গত। আসলে এর খাওয়ার উপযোগী টিউবারের কারণেই এটির আলু নামকরণ। আলুর ইংরেজি শব্দ পটেটো এসেছে স্প্যানিশ পেটাটা থেকে। স্প্যানিশ রয়েল একাডেমির তথ্য অনুযায়ী এটি টাইনো (মিষ্টি আলু) এবং কুয়েছু পেপা (আলু)। আলু বলতে মূলত সাধারণ আলু অপেক্ষা মিষ্টি আলুকে বুঝানো হয়, যদিও এই দুই ধরনের আলুর মাঝে কোনো মিল নেই। ষোড়শ শতাব্দীতে ইংরেজ উদ্ভিদবিদ জন গেরারড 'বাস্টার্ড পটেটো' এবং 'ভার্জিনিয়া পটেটো' নামক দুইটি টার্ম ব্যবহার করেন এবং মিষ্টি আলুকে সাধারণ আলু হিসেবে নামকরণ করেন।
➢ দেহকে শক্তিশালী করতে বিশেষ করে প্লীহা আর পাকস্থলীর কর্মক্ষমতা বাড়াতে আলু বিশেষ কার্যকর। বৃক্কের কার্যক্ষমতায় ঘাটতির সমস্যায় এই উদ্ভিদ কাজে লাগে। রাতকানা রোগের ক্ষেত্রেও এর উপকারিতা লক্ষ করা যায়। সে ক্ষেত্রে রোগীকে প্রাণীর, বিশেষ করে খাসির কলিজার সাথে মিষ্টি আলু খাওয়াবেন। গ্রামে, এমন কি শহরেও আগুনে পুড়িয়ে কিছুটা পোড়া পোড়া করে মিষ্টি আলু খাওয়ার প্রচলন আছে। এই পদ্ধতি সাধারণ সর্দি-কাশির উপশমে কার্যকর। আলুতে রয়েছে শর্করা, আমিষ, কলয়েড পদার্থ, ভিটামিন বি আর সি, পটাসিয়াম আর সোলানিন। গোল আলুর উপকারিতা অনেকটা মিষ্টির আলুর মতোই। তবে কিছুটা কম। এটি প্লীহা আর পাকস্থলীর দুর্বলতা দূর করার াশাপাশি দেহের সাধারণ দুর্বলতা দূর করতে সহায়ক।
➢ যে যে পুষ্টিগুণ রয়েছে
➢ শক্তি ৩২১ জুল (৭৭ ক্যালরি), স্টার্চ ১৫ গ্রাম, তন্তু ২.২ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, প্রোটিন ২ গ্রাম, পানি ৭৫ গ্রাম, থায়ামিন (ভিটামিন বি-১) ০.০৮ মিলিগ্রাম, রায়বোফ্লাভিন (ভিটামিন বি-২) ০.০৩ মিলিগ্রাম, নিয়াচিন (ভিটামিন বি-৩) ১.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-৮ ০.২৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ২০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১২ মিলিগ্রাম, আয়রন ১.৮ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ২৩ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৫৭ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৪২১ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৬ মিলিগ্রাম।
➢ আলুর গুনাবলি-
➢ অনেকেই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এবং আলুর চিপস খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু ফ্যাট থাকার কারণে এসব খাবারে যে শরীরের ক্ষতি হয় সেদিকে আমরা খেয়াল রাখি না। আলু সেদ্ধ করে, তরকারিতে রান্না করে কিংবা ভর্তা করে খাওয়া যায়। আলুতে ভিটামিন সি রয়েছে, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে শরীরের কোষের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়। আলু পেটের সমস্যাও দূর করে। ত্বকের কোথাও পুড়ে গেলে কাঁচা আলু থেঁতলে পুড়ে যাওয়া জায়গায় লাগালে আরাম পাওয়া যায়। আলুতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, আমাইনো এসিড, ওমেগা-থ্রিসহ নানা ধরনের ফ্যাটি এসিড রয়েছে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে। কার্বোহাইড্রেড, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, নিয়াসিন এবং ভিটামন সি ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের ভালো উৎস এই আলু, এসব উপাদান হৃদরোগ মোকাবিলায় সহায়তা করে ও রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে। আলু কিডনিতে পাথর জমতে দেয় না। আলুতে ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স ছাড়াও পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক ও ফসফরাস রয়েছে, এসব উপাদান আপনার ত্বকের জন্য উপকারি।
➢ আলুর ক্ষতিকারক দিক হচ্ছে - গ্যাস্ট্রিক
➢ তাই যাদের গ্যাস্ট্রিক সমস্যা আছে তাদের আলু পরিহার করে চলাই ভাল।
মিষ্টি আলুর গুনাগুণ
➢ মিষ্টি আলুতে কেবলই শ্বেতসার, এইতো জানি আমরা, এতে যে আরও পুষ্টি আছে তা কি জানি?
➢ মিষ্টি আলু যেগুলোর রাঙা আবরণ- তাদের মধ্যে যে পুষ্টি উপকরণ তা সাদা মিষ্টি আলুর তুলনায় বেশি। একটি আলুতে আছে ১০০ ক্যালোরি, ২ গ্রাম প্রোটিন, ২২ গ্রাম শ্বেতসার, ৩ গ্রাম আঁশ, ০ গ্রাম চর্বি। এছাড়া ১টি মিষ্টি আলু থেকে প্রতিদিনের চাহিদা ২৬০ভাগ ভিটামিন এ পাওয়া যায়। ১২.৬ভাগ ভিটামিন বি৬, ২৮ভাগ ভিটামিন সি।
➢ ভিটামিন সি ও ডি এর উৎসঃ
➢ মিষ্টি আলু ভিটামিন সি ও ডিরও সমৃদ্ধ উৎস। ভিটামিন সি ভিটামিন সি ঠাণ্ডা প্রতিরোধে ও ভিটামিন ডি স্বাস্থ্যকর হাড়, হার্ট, নার্ভ, ত্বক ও দাঁতের জন্য জরুরি।
➢ আয়রনের উৎসঃ
➢ মিষ্টি আলু আয়রনেরও ভালো উৎস। এটি আমাদের শরীরে শ্বেতকণিকা তৈরি, চাপ প্রতিরোধ, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কার্যকর রাখাসহ নানা কাজে আসে।
➢ অন্যান্য খনিজ উপাদানঃ
➢ মিষ্টি আলুতে ম্যাঙ্গানিজ ও পটাশিয়ামও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ধমনী, রক্ত, হাড় ও মাংসপেশির সুস্থতায় ও নার্ভের সুষ্ঠুভাবে কাজ করার জন্য ম্যাঙ্গনেসিয়াম প্রয়োজন।
➢ ডায়াবেটিসেঃ
➢ মিষ্টি আলুতে প্রাকৃতিকভাবে চিনি থাকলেও তা খুব ধীরে ধীরে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। এতে শরীর শুধু শক্তির নিয়মিত জোগানই পায় না, শরীরে শক্তির ভারসাম্যও বজায় থাকে।
➢ এটি শর্করা হলেও বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে মিষ্টি আলু রক্তের সুগার মান সুস্থিতিতে এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হ্রাস করতে বেশ উপযোগী। মিষ্টি আলুতে বেশ আঁশ আছে, এর গ্লাইসিমিক ইনডেক্স বেশ নিচুতে (৫০)। তবে এতে আরো কিছু উপাদান আছে যে জন্য রক্তের সুগার কমাতে এটি উপযোগী।
➢ আমাদের চর্বি কোষ থেকে উৎপন্ন হয় প্রোটিন হরমোন ‘এডিপোনেকটিন’। যাদের ডায়েবেটিস তাদের শরীরে এডিপোনেক্টিন হরমোন নিচু এবং মিষ্টি আলুর নির্যাস টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে এডিপোনেকটিন মান তাৎপর্যপূর্ণভাবে বাড়ায়।
➢ পেটের রোগেঃ
➢ ইরিটিবেল বাউয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) এবং আলসারেটিভ কোলাইটিসের মত পেটের রোগেও উপকারী। মিষ্টি আলুর আরও রয়েছে প্রদাহরোধী গুণ। দেখা গেছে মিষ্টি আলুতে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট যা আছে, সেগুলো প্রদাহসূচকগুলো হ্রাসে সহযোগী।
➢ হৃদরোগেঃ
➢ এ সবজি ভিটামিন বি৬-এর একটি ভালো উৎস। এটি আমাদের শরীরে হোমোসাইস্টিন নামের কেমিক্যাল কমাতে সহায়তা করে। এই কেমিক্যাল হৃদরোগসহ নানা ধরনের অসুখের অন্যতম কারণ। পটাশিয়াম হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে, কিডনি সুরক্ষায় ও একে কর্মক্ষমতা স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখে।
➢ রাতকানা রোগেঃ
➢ রাতকানা রোগের ক্ষেত্রেও এর উপকারিতা লক্ষ্য করা যায়। সে ক্ষেত্রে রোগীকে প্রাণীর, বিশেষ করে খাসীর কলজের সাথে মিষ্টি আলু খাওয়াবেন।
➢ এ ছাড়াও বৃক্কের কার্যক্ষমতায় ঘাটতি বা কাংখিত সময়ের আগেই বীর্যস্খলন-এর সমস্যায় এই উদ্ভিদ কাজে লাগে।
➢ গবেষণায় আরো দেখা গেছে, মিষ্টি আলুতে যে সব ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে এগুলো ভারি ধাতু ও মুক্ত মূলকের সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাস করার ব্যাপারে বেশ সহায়ক।
➢ খাওয়ার পদ্ধতিঃ
➢ তাজা মিষ্টি আলু খুব ভালো। ঝলসানো বা সেঁকা আলু সঙ্গে দধি (টক দধি) খুব ভালো খাবার। সুপ ও স্টু বানাতেও এ সবজিটি ব্যবহার করতে পারেন।
➢ (বিঃদ্রঃ- মিষ্টি আলুতে আছে অক্সালেট। যাদের কিডনি বা পিত্তথলির সমস্যা এরা মিষ্টি আলু না খাওয়া ভালো।)
➢ মিষ্টি আলুর গুনাবলি:
➢ আলুর দম, আলু ভাজি, আলুর চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, আলুর তৈরি যে কোন খাবারই খেতে দারুন। সাধারণত সাদা আলু দিয়ে এই খাবারগুলো তৈরি করা হয়ে থাকে। মিষ্টি আলু নামক এক ধরণের আলু আছে, যা সাধারণত সিদ্ধ করে খাওয়া যায়। অনেকেই এটি খেতে পছন্দ করেন না।
➢ কিন্তু আপনি জানেন কি এই মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণ বিটা ক্যারটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, ফাইবার রয়েছে। U.S. Food and Drug Administration এর মতে “একটি মিষ্টি আলুতে ১০০ এর বেশি ভিটামিন এ রয়েছে যা প্রতিদিনের ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে থাকে”।
➢ হার্ট সুস্থ রাখতে:
➢ Harvard University School of Public Health এক গবেষণায় দেখেছেন যে, মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি৬ রয়েছে, যা রক্তের হমোসাইটিনিন ভেঙ্গে দিয়ে রক্তের ধমনী এবং শিরায় রক্ত চলাচল সচল রাখে। এর পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রেখে হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া ইলেক্ট্রোলাইট হার্টবিট নিয়মিত রাখে।
➢ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ:
➢ ভিটামিন সি দাঁত, হাড় এবং কোষ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ক্ষত সারাতে, শরীরে কোলাজন উৎপাদন করে ত্বকের নমনীয়তা ধরে রাখতে ভিটামিন সি এর প্রয়োজন। মিষ্টি আলু ভিটামিন সি এর অন্যতম উৎস।
➢ ক্যান্সার প্রতিরোধক:
➢ দেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হল বিটা-ক্যারটিন। একটি মাঝারি আকৃতির মিষ্টি আলুতে ভিটামিন এ এবং বিটা-ক্যারটিন রয়েছে। ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা, দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখতে সাহায্য করে। School of Public Health’s Department of Nutrition গবেষণায় দেখেছেন যে, বিটা ক্যারটিন প্রোসটেট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে।
➢ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে:
➢ মিষ্টি আলু প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি হয়, যা রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাকৃতিক চিনি কাজের শক্তি প্রদান করে অবসাদ, ক্লান্তি দূর করে থাকে।
➢ দুশ্চিন্তা নিরাময়ক:
➢ ম্যাগনেসিয়াম স্বাস্থ্যকর রক্ত, হাড়, হার্ট, পেশী এবং নার্ভ গঠন করতে সাহায্য করে। এছাড়া ম্যাগনেসিয়াম স্ট্রেস, দুশ্চিন্তা দূর করে মন চিন্তা মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
➢ National Health and Nutrition Examination Survey এক জরিপে প্রকাশ করেছে যে, ২ভাগ আমেরিকান প্রতিদিন ৪৭০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম সাপ্লিমেনটরি গ্রহণ করে থাকে। অথচ একটি মাঝারি আকৃতির মিষ্টি আলুতে রয়েছে ৫০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম। Medical News Daily এর মতে প্রতিদিন পটাশিয়াম গ্রহণ প্রায় ২০ভাগ বিভিন্ন রোগে মৃত্যু ঝুঁকি হ্রাস করে থাকে।
☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "আলুর উপকারিতা ও গুনাগুণ"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন