ভাস্করাচার্য
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০১৯
Comment
নাসিক থেকে প্রায় ৭০ মাইল দূরে চালিস গাঁ নামে একটি জায়গা আছে। সেখান থেকে ভাউদাজী একটি তাম্র ফলক আবিষ্কার করেন। এতে দ্বিতীয় ভাস্করাচার্য–এর কুল ও পূর্বপুরুষের যে পরিচয় লেখা রয়েছে তা নিম্নরূপ –
ত্রিবিক্রম চক্রবর্তী
ভাস্করভট্ট (ভোজরাজের নিকট বিদ্যাপতি উপাধিপ্রাপ্ত)
গোবিন্দ সর্বজ্ঞ
মনোরথ
মহেশ্বরাচার্য
ভাস্করাচার্য (দ্বিতীয়)
লক্ষ্মীধর
চাঁদেব
উপরের নামের তালিকা থেকে বোঝা যায় ভাস্করাচার্যের জন্ম এক খ্যাতি সম্পন্ন পন্ডিত বংশে। বিজাপুরের প্রাচীন নাম বিজুবিড়। কর্ণাটক প্রদেশের অন্তর্গত। পশ্চিমঘাটে সহ্য পর্বতের নিকট অবস্থিত এই বিজাপুর এলাকাতেই ১১১৪ খ্রিস্টাব্দে ভাস্করাচার্যের জন্ম। পিতা মহেশ্বরাচার্য ছিলেন শান্ডিল্য গোত্রীয় কানাড়া ব্রাহ্মণ দৈবজ্ঞ চূড়ামণি।
ভাস্করাচার্য অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। গণিত ও বেদে তাঁর অসামান্য দখল ছিল। ১১৫০ খ্রিস্টাব্দে ৩৬ বছর বয়সে তিনি ‘সিদ্ধান্ত শিরোমণি’ নামে একটি গণিতের বই লেখেন। বইটি এতটাই উচ্চমানের হয়েছিল যে আজও সেটা জগৎ বিখ্যাত।
‘সিদ্ধান্ত শিরোমণি’ – তে চারটি অধ্যায় আছে – (১) লীলাবতী, (২) বীজগণিত, (৩) গ্রহগণিতাধ্যায় ও (৪) গোলাধ্যায়। প্রথম দুটি অধ্যায়ে গণিত এবং শেষ দুটি অধ্যায়ে জ্যোতির্বিজ্ঞান আলোচিত হয়েছে।
অনেকে তাকে ভাস্কর-১(৬০০-৬৮০ খ্রিস্টাব্দ) এর সাথে মিলিয়ে ফেলেন। এরা দুজন ভিন্ন মানুষ। তাদের জন্মও হয় দুটি ভিন্ন সময়ে। ভাস্কর-১ ছিলেন আর্যভট্টের প্রিয় ছাত্র।
ভাস্কর কর্ণাটকের বিজ্জবিড় শহরে বসবাস করতেন। এ শহরের নাম পরিবর্তন করে বিজাপুর রাখা হয় । শহরটি পশ্চিমঘাটে সহ্য পর্বতের কাছাকাছি। তাঁর বাবা দৈবজ্ঞচূড়ামণি মহেশ্বর উপাধ্যায়। এসব তথ্য জানা যায় একটা তামার ফলক থেকে। ফলকটি নাসিক থেকে সত্তর মাইল দূরে চালিস গাঁ নামে এক জায়গায় ভাউদাজি আবিস্কার করেন।ভস্করের পিতাও ছিলেন একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তি।
অবদান
সিদ্ধান্তশিরমনি
ভাস্করের সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা 'সিদ্ধান্ত-শিরমণি'(১১৫০)। ছত্রিশ বছর বয়সে তিনি এই বই লিখেন। 'করণ কুহুতল' ও 'সর্বতোভদ্র' বই দুটিও তাঁর রচনা। 'সিদ্ধান্ত-শিরমণি' বইটিতে রয়েছে চারটি খণ্ড - লীলাবতী, বীজগণিত, গ্রহ গণিতাধ্যায় ও গোলধ্যায়।
লীলাবতী
সিদ্ধান্ত শিরমনি বইয়ের একটি খণ্ডের নাম লীলাবতী। লীলাবতী খণ্ডটি নিয়ে একাধিক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। লীলাবতী ও বীজগণিত হচ্ছে গণিতের বই। লীলাবতী সম্ভবত ভাস্করের কন্যা ছিলেন।ধারনা করা হয় খুব অল্প বয়সে বিধবা হয়ে তিনি বাবার ঘরে চলে আসেন।ভাস্কর তাকে ধীরে ধীরে পাটিগণিত শেখান। তখনই তিনি বইটি লিখেন। মেয়ের নামে নাম দেন। আর এক মতে, ভাস্করের কোন মেয়ে ছিল না। তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল লীলাবতী। তাঁর স্মরণে তিনি বইটির নাম দেন। তবে বইয়ের নানা জায়গায় এমন কিছু সম্বোধন আছে যে অনেকে ভাবছেন লীলাবতী এক কাল্পনিক নাম। কোথাও বলেছেন- 'অয়ি বালে লীলাবতী', কোথাও সখে, কান্তে, বৎসে বলে সম্বোধন করেছেন। লীলাবতী লেখার ধরণটা কথপকথন। কথা বলতে বলতে অঙ্ক শেখাচ্ছেন। লীলাবতী শব্দটির অর্থ গুণসম্পন্না।
পাটীগণিত নিয়ে আলোচ্য অধ্যায়কে ভাস্করাচার্য কেন লীলাবতী নামকরণ করেছিলেন তাঁর সঠিক উত্তর জানা নেই। তবে এ নিয়ে কিছু গল্প কথা আছে। একটি গল্প হল, লীলাবতী দ্বিতীয় ভাস্করাচার্যের কন্যার নাম। বাল্য বয়সে তাঁর বিবাহ হয়। কিন্তু বেশিদিন তাঁর স্বামীর ঘর করা হয়ে ওঠেনি। এই ঘটনা ভাস্করাচার্যকে ব্যথিত করেছিল। শোক ভোলার জন্য আর বাল্যবিধবা কন্যাকে সান্ত্বনা দেবার জন্য তিনি পাটীগণিত অধ্যায়ের নাম রাখেন ‘লীলাবতী’। অন্য আর-এক মতে মেয়েকে পাটীগণিত শেখানোর জন্যই নাকি ভাস্করাচার্য পাটীগণিত অধ্যায়টি রচনা করেছিলেন এবং মেয়ের নামে নাম রেখেছিলেন ‘লীলাবতী’। আবার অনেকে বলেন ভাস্করাচার্যের স্ত্রীর নাম ছিল লীলাবতী। এদের কোনো সন্তান ছিল না। সেই শোক ভোলার জন্য এবং স্ত্রীর নাম চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য তিনি পাটীগণিতাধ্যায়ের নাম রাখেন ‘লীলাবতী’। তবে এইসব মতবাদের কোনো ঐতিহাসিক সত্য আছে বলে মনে হয় না।
‘লীলাবতী’ শব্দের অর্থ ‘গুণসম্পন্না’। তাই অনেকে মনে করেন ভাস্করাচার্য নিজের বই সিদ্ধান্ত শিরোমণিকে গুণসম্পন্না বোঝাতে লীলাবতী নামটি ব্যবহার করেছেন। প্রাচীন ভারতে স্বীকৃত গ্রন্থ সম্বন্ধে এই ধরণের বিশেষণ ব্যবহারের প্রচলন ছিল।
লীলাবতী নাম নিয়ে আরও একটি মত রয়েছে। সরস্বতীর আরেক নাম লীলাবতী। গ্রন্থটি রচনার সময় সরস্বতী বন্দনার উদ্দেশ্যেই ভাস্করাচার্য লীলাবতী নামটি গ্রহণ করেছিলেন।
বীজগণিত
'লীলাবতী'-তে ব্রহ্মগুপ্ত, শ্রীধর ও পদ্মনাভের নাম উল্লেখ আছে। শ্রীধর দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধানের যে উপায় বার করেছিলেন । পদ্মনাভের বীজগনিতের কথা আমরা প্রথম ভাস্করের রচনা থেকে জানতে পারি।
ভাস্কর যখন বীজগনিতের আলোচনা করেছিলেন কোন রাশিকে শূন্য দিয়ে ভাগ দিলে কী হয় বলেছেন।
তিনিই বলেছেন, ঋণাত্মক রাশিকে ঋণাত্মক রাশি দ্বারা গুন করলে ফলটি হবে ধনাত্মক। কিন্তু ঋণাত্মক রাশিকে ধনাত্মক রাশি দ্বারা গুন করলে ফল হবে ঋণাত্মক।
এখন অজ্ঞাত রাশি বলতে আমরা 'X' বসানো হয়। ভাস্কর মনেকরতেন দেবনাগরি কোন বর্ণ দ্বারা অজ্ঞাত রাশি চিহ্নিত হোক।
নানারকমের দ্বিঘাত সমীকরণকে পাল্টে নিয়ে একটা সাধারণ আকার দিয়ে এরপর সমাধানের উপায় বলেছিলেন তিনি। কিছু বিশেষ ধরনের ত্রিঘাত সমীকরণেরও সমাধান করেন তিনি।
জ্যামিতি ও পরিমিতি
জ্যামিতিতে ভাস্করের অবদান উল্লেখযোগ্য।
সমকোণী ত্রিভুজ আর সুষম বহুভুজ নিয়ে তিনি 'পাই'-এর মান বের করেছিলেন ৩.১৪১৬৬৬।
কোন যন্ত্র ছাড়াই, ৩৮৪ বাহুর এক বহুভুজের কল্পনা করেছিলেন ভাস্কর!
তিনি গোলকের তলের পরিমাণ ও আয়তন নির্ণয় করেছিলেন। করতে গিয়ে গোলকটিকে ছোট ছোট করে ভাগ করে নিয়েছেন ও পরে যোগ করেছেন। বিষয়টা নিউটনের আবিষ্কৃত ইন্টিগ্র্যাল ক্যালকুলাসের মতোই অনেকটা। তবে নিউটন এসেছিলেন আরও পাঁচশো বছর পর।
জ্যোতির্বিজ্ঞান
ভাস্কর গ্রহের গতি পরিমাপ করেছিলেন ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাসের মূলনীতিকে ব্যবহার করে।
গ্রহের তাৎক্ষণিক গতিও মেপেছিলেন।
সময়কে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পরিমাণে ভাগ করেছিলেন।
তিনি Rolle's theorem এর একটি আদি রুপ ব্যবহার করেন-
যদি f(a)=f(b)=0 তাহলে, f’(x)=0 যখন a is less than x SPamp x is less than b
একে ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস বলা হয়!
এক সেকেন্ড সময়কে তিনি ৩৪০০০ ভাগে ভাগ করেছিলেন নাম দিয়েছিলেন 'ত্রুটি'।
ত্রিকোণমিতি
'ত্রিকোণমিতি'-তে সাইন, কোসাইন এসবের নানা ডিগ্রি কোণের প্রতিটির একটি নির্দিষ্ট মান থাকেে। এ সকল মানের জন্য একটি সারণি আছে।
এই সারনি তৈরির কাজটি করেছিলেন ভাস্কর। ভাস্কর ১ ডিগ্রি অন্তর অন্তর কোণের সাইন কোসাইন বের করেছিলেন।
পদার্থ বিজ্ঞান
তরলের পৃষ্ঠটান ধর্মে সম্পর্কে ভাস্কর আলোচনা করেছেন।
১১৮৩ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ ৬৯ বছর বয়সে ভাস্করাচার্য করণ কুতৃহল নামে একটি বই লেখেন। সত্তর বছরের বেশি এই গণিতবিদ বেঁচে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর সাথে সাথে প্রাচীন ভারতীয় গণিতের স্বর্ণযুগ শেষ হয়ে যায়।
ত্রিবিক্রম চক্রবর্তী
ভাস্করভট্ট (ভোজরাজের নিকট বিদ্যাপতি উপাধিপ্রাপ্ত)
গোবিন্দ সর্বজ্ঞ
মনোরথ
মহেশ্বরাচার্য
ভাস্করাচার্য (দ্বিতীয়)
লক্ষ্মীধর
চাঁদেব
উপরের নামের তালিকা থেকে বোঝা যায় ভাস্করাচার্যের জন্ম এক খ্যাতি সম্পন্ন পন্ডিত বংশে। বিজাপুরের প্রাচীন নাম বিজুবিড়। কর্ণাটক প্রদেশের অন্তর্গত। পশ্চিমঘাটে সহ্য পর্বতের নিকট অবস্থিত এই বিজাপুর এলাকাতেই ১১১৪ খ্রিস্টাব্দে ভাস্করাচার্যের জন্ম। পিতা মহেশ্বরাচার্য ছিলেন শান্ডিল্য গোত্রীয় কানাড়া ব্রাহ্মণ দৈবজ্ঞ চূড়ামণি।
ভাস্করাচার্য অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। গণিত ও বেদে তাঁর অসামান্য দখল ছিল। ১১৫০ খ্রিস্টাব্দে ৩৬ বছর বয়সে তিনি ‘সিদ্ধান্ত শিরোমণি’ নামে একটি গণিতের বই লেখেন। বইটি এতটাই উচ্চমানের হয়েছিল যে আজও সেটা জগৎ বিখ্যাত।
‘সিদ্ধান্ত শিরোমণি’ – তে চারটি অধ্যায় আছে – (১) লীলাবতী, (২) বীজগণিত, (৩) গ্রহগণিতাধ্যায় ও (৪) গোলাধ্যায়। প্রথম দুটি অধ্যায়ে গণিত এবং শেষ দুটি অধ্যায়ে জ্যোতির্বিজ্ঞান আলোচিত হয়েছে।
অনেকে তাকে ভাস্কর-১(৬০০-৬৮০ খ্রিস্টাব্দ) এর সাথে মিলিয়ে ফেলেন। এরা দুজন ভিন্ন মানুষ। তাদের জন্মও হয় দুটি ভিন্ন সময়ে। ভাস্কর-১ ছিলেন আর্যভট্টের প্রিয় ছাত্র।
ভাস্কর কর্ণাটকের বিজ্জবিড় শহরে বসবাস করতেন। এ শহরের নাম পরিবর্তন করে বিজাপুর রাখা হয় । শহরটি পশ্চিমঘাটে সহ্য পর্বতের কাছাকাছি। তাঁর বাবা দৈবজ্ঞচূড়ামণি মহেশ্বর উপাধ্যায়। এসব তথ্য জানা যায় একটা তামার ফলক থেকে। ফলকটি নাসিক থেকে সত্তর মাইল দূরে চালিস গাঁ নামে এক জায়গায় ভাউদাজি আবিস্কার করেন।ভস্করের পিতাও ছিলেন একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তি।
অবদান
সিদ্ধান্তশিরমনি
ভাস্করের সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা 'সিদ্ধান্ত-শিরমণি'(১১৫০)। ছত্রিশ বছর বয়সে তিনি এই বই লিখেন। 'করণ কুহুতল' ও 'সর্বতোভদ্র' বই দুটিও তাঁর রচনা। 'সিদ্ধান্ত-শিরমণি' বইটিতে রয়েছে চারটি খণ্ড - লীলাবতী, বীজগণিত, গ্রহ গণিতাধ্যায় ও গোলধ্যায়।
লীলাবতী
সিদ্ধান্ত শিরমনি বইয়ের একটি খণ্ডের নাম লীলাবতী। লীলাবতী খণ্ডটি নিয়ে একাধিক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। লীলাবতী ও বীজগণিত হচ্ছে গণিতের বই। লীলাবতী সম্ভবত ভাস্করের কন্যা ছিলেন।ধারনা করা হয় খুব অল্প বয়সে বিধবা হয়ে তিনি বাবার ঘরে চলে আসেন।ভাস্কর তাকে ধীরে ধীরে পাটিগণিত শেখান। তখনই তিনি বইটি লিখেন। মেয়ের নামে নাম দেন। আর এক মতে, ভাস্করের কোন মেয়ে ছিল না। তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল লীলাবতী। তাঁর স্মরণে তিনি বইটির নাম দেন। তবে বইয়ের নানা জায়গায় এমন কিছু সম্বোধন আছে যে অনেকে ভাবছেন লীলাবতী এক কাল্পনিক নাম। কোথাও বলেছেন- 'অয়ি বালে লীলাবতী', কোথাও সখে, কান্তে, বৎসে বলে সম্বোধন করেছেন। লীলাবতী লেখার ধরণটা কথপকথন। কথা বলতে বলতে অঙ্ক শেখাচ্ছেন। লীলাবতী শব্দটির অর্থ গুণসম্পন্না।
পাটীগণিত নিয়ে আলোচ্য অধ্যায়কে ভাস্করাচার্য কেন লীলাবতী নামকরণ করেছিলেন তাঁর সঠিক উত্তর জানা নেই। তবে এ নিয়ে কিছু গল্প কথা আছে। একটি গল্প হল, লীলাবতী দ্বিতীয় ভাস্করাচার্যের কন্যার নাম। বাল্য বয়সে তাঁর বিবাহ হয়। কিন্তু বেশিদিন তাঁর স্বামীর ঘর করা হয়ে ওঠেনি। এই ঘটনা ভাস্করাচার্যকে ব্যথিত করেছিল। শোক ভোলার জন্য আর বাল্যবিধবা কন্যাকে সান্ত্বনা দেবার জন্য তিনি পাটীগণিত অধ্যায়ের নাম রাখেন ‘লীলাবতী’। অন্য আর-এক মতে মেয়েকে পাটীগণিত শেখানোর জন্যই নাকি ভাস্করাচার্য পাটীগণিত অধ্যায়টি রচনা করেছিলেন এবং মেয়ের নামে নাম রেখেছিলেন ‘লীলাবতী’। আবার অনেকে বলেন ভাস্করাচার্যের স্ত্রীর নাম ছিল লীলাবতী। এদের কোনো সন্তান ছিল না। সেই শোক ভোলার জন্য এবং স্ত্রীর নাম চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য তিনি পাটীগণিতাধ্যায়ের নাম রাখেন ‘লীলাবতী’। তবে এইসব মতবাদের কোনো ঐতিহাসিক সত্য আছে বলে মনে হয় না।
‘লীলাবতী’ শব্দের অর্থ ‘গুণসম্পন্না’। তাই অনেকে মনে করেন ভাস্করাচার্য নিজের বই সিদ্ধান্ত শিরোমণিকে গুণসম্পন্না বোঝাতে লীলাবতী নামটি ব্যবহার করেছেন। প্রাচীন ভারতে স্বীকৃত গ্রন্থ সম্বন্ধে এই ধরণের বিশেষণ ব্যবহারের প্রচলন ছিল।
লীলাবতী নাম নিয়ে আরও একটি মত রয়েছে। সরস্বতীর আরেক নাম লীলাবতী। গ্রন্থটি রচনার সময় সরস্বতী বন্দনার উদ্দেশ্যেই ভাস্করাচার্য লীলাবতী নামটি গ্রহণ করেছিলেন।
বীজগণিত
'লীলাবতী'-তে ব্রহ্মগুপ্ত, শ্রীধর ও পদ্মনাভের নাম উল্লেখ আছে। শ্রীধর দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধানের যে উপায় বার করেছিলেন । পদ্মনাভের বীজগনিতের কথা আমরা প্রথম ভাস্করের রচনা থেকে জানতে পারি।
ভাস্কর যখন বীজগনিতের আলোচনা করেছিলেন কোন রাশিকে শূন্য দিয়ে ভাগ দিলে কী হয় বলেছেন।
তিনিই বলেছেন, ঋণাত্মক রাশিকে ঋণাত্মক রাশি দ্বারা গুন করলে ফলটি হবে ধনাত্মক। কিন্তু ঋণাত্মক রাশিকে ধনাত্মক রাশি দ্বারা গুন করলে ফল হবে ঋণাত্মক।
এখন অজ্ঞাত রাশি বলতে আমরা 'X' বসানো হয়। ভাস্কর মনেকরতেন দেবনাগরি কোন বর্ণ দ্বারা অজ্ঞাত রাশি চিহ্নিত হোক।
নানারকমের দ্বিঘাত সমীকরণকে পাল্টে নিয়ে একটা সাধারণ আকার দিয়ে এরপর সমাধানের উপায় বলেছিলেন তিনি। কিছু বিশেষ ধরনের ত্রিঘাত সমীকরণেরও সমাধান করেন তিনি।
জ্যামিতি ও পরিমিতি
জ্যামিতিতে ভাস্করের অবদান উল্লেখযোগ্য।
সমকোণী ত্রিভুজ আর সুষম বহুভুজ নিয়ে তিনি 'পাই'-এর মান বের করেছিলেন ৩.১৪১৬৬৬।
কোন যন্ত্র ছাড়াই, ৩৮৪ বাহুর এক বহুভুজের কল্পনা করেছিলেন ভাস্কর!
তিনি গোলকের তলের পরিমাণ ও আয়তন নির্ণয় করেছিলেন। করতে গিয়ে গোলকটিকে ছোট ছোট করে ভাগ করে নিয়েছেন ও পরে যোগ করেছেন। বিষয়টা নিউটনের আবিষ্কৃত ইন্টিগ্র্যাল ক্যালকুলাসের মতোই অনেকটা। তবে নিউটন এসেছিলেন আরও পাঁচশো বছর পর।
জ্যোতির্বিজ্ঞান
ভাস্কর গ্রহের গতি পরিমাপ করেছিলেন ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাসের মূলনীতিকে ব্যবহার করে।
গ্রহের তাৎক্ষণিক গতিও মেপেছিলেন।
সময়কে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পরিমাণে ভাগ করেছিলেন।
তিনি Rolle's theorem এর একটি আদি রুপ ব্যবহার করেন-
যদি f(a)=f(b)=0 তাহলে, f’(x)=0 যখন a is less than x SPamp x is less than b
একে ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস বলা হয়!
এক সেকেন্ড সময়কে তিনি ৩৪০০০ ভাগে ভাগ করেছিলেন নাম দিয়েছিলেন 'ত্রুটি'।
ত্রিকোণমিতি
'ত্রিকোণমিতি'-তে সাইন, কোসাইন এসবের নানা ডিগ্রি কোণের প্রতিটির একটি নির্দিষ্ট মান থাকেে। এ সকল মানের জন্য একটি সারণি আছে।
এই সারনি তৈরির কাজটি করেছিলেন ভাস্কর। ভাস্কর ১ ডিগ্রি অন্তর অন্তর কোণের সাইন কোসাইন বের করেছিলেন।
পদার্থ বিজ্ঞান
তরলের পৃষ্ঠটান ধর্মে সম্পর্কে ভাস্কর আলোচনা করেছেন।
১১৮৩ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ ৬৯ বছর বয়সে ভাস্করাচার্য করণ কুতৃহল নামে একটি বই লেখেন। সত্তর বছরের বেশি এই গণিতবিদ বেঁচে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর সাথে সাথে প্রাচীন ভারতীয় গণিতের স্বর্ণযুগ শেষ হয়ে যায়।
☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "ভাস্করাচার্য"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন