আজকে প্রকাশিত চাকরির পরীক্ষার নোটিশ গুলো পাবেন

জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন

জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন


(সংকেত: ভূমিকা; আবহাওয়া ও জলবায়ুর ধারণা; বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তন; বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণ; জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব; বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে করণীয়; উপসংহার।)

ভূমিকাঃ জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হিসেবে উপনীত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ হিসেবে সর্বপ্রথমে আসে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি। এর ফলে আবহাওয়া পরিবর্তিত হচ্ছে, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে এবং সারা বিশ্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ক্রমাগত বেড়ে চলছে। ব্যাপক হারে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার, বনাঞ্চল ধ্বংস, শিল্পায়ন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির দরুণ উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে, যা সৃষ্টি করছে নতুন হুমকি।

আবহাওয়া ও জলবায়ুর ধারণাঃ কোনো নির্দিষ্ট এলাকার তাপমাত্রা, বায়ু প্রবাহ, বৃষ্টিপাত, ভূ-প্রকৃতি অন্যান্য এলাকা থেকে ভিন্ন হয়। এরূপ হওয়ার কারণ হলো আবহাওয়া ও জলবায়ুর তারতম্য। কোনো একটি অঞ্চলের স্বল্পকালীন সময়ের তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদি হলো আবহাওয়া। অন্যদিকে আবহাওয়ার দীর্ঘকালীন গড় অবস্থা (সাধারণত ২৫-৩০ বছর) হলো জলবায়ু।

বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ুর পরিবর্তনঃ পৃথিবীকে বেষ্টন করে রাখা বায়ুমন্ডল তথা আবহাওয়া মন্ডলের লের উপযুক্ততায় পৃথিবীতে প্রাণধারণ করা সম্ভব হয়েছে এবং পৃথিবী হয়েছে বাসযোগ্য। মহাশূন্যে ওজোন স্তর নামে অদৃশ্য এক দেয়াল বিদ্যমান। এটি পৃথিবীতে সূর্যের ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মি প্রবেশে বাধা দেয়। ওজোন স্তরে পরিশোধিত হয়ে সূর্যের উপকারী তাপ ও আলোই কেবল পৃথিবীতে আসতে পারে। কিন্তু মানব সৃষ্ট দুষণ, বনাঞ্চল ধ্বংস এবং অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের ফলে এই স্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। ফ্রিজ, এসি ইত্যাদিতে ব্যবহৃত CFC গ্যাস ওজোন স্তরকে ছিদ্র করে দিচ্ছে। ফলে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি সহজেই পৃথিবীতে প্রবেশ করছে। এতে পৃথিবী উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। আবার মাত্রাতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনের ফলে বায়ুম-লে কার্বনের একটি দেয়াল বা স্তর সৃষ্টি হচ্ছে। এই স্তর পৃথিবী থেকে বিকিরিত তাপ মহাশূন্যে ফেরত যেতে বাধা দিচ্ছে। ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। এই প্রক্রিয়াকে গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া বলা হয়। এভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণঃ বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রধান কারণ হলো জনসংখ্যা বৃদ্ধি। জনসংখ্যা বাড়লে বাসস্থানের জন্য কাঠ সংগ্রহ ও জমি উন্মুক্ত করতে বনভূমি উজার করতে হয়। অতিরিক্ত শিল্প কারখানা ও যানবাহন প্রয়োজন হয়। ফলে কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ, ঝড়, ভূমিকম্প, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি কারণেও জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে। এসব বিষয় সামগ্রিকভাবে উষ্ণতার জন্য দায়ী।

জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবঃ বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে পৃথিবীপৃষ্ঠের স্বাভাবিক জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীতে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবগুলো নিম্মরূপ-

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিঃ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের একটি ভয়াবহ পরিণতি হলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি। তাপমাত্রা বাড়ার ফলে মেরু অঞ্চলের জমাট বাধা বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে উপকূলীয় নিম্মভূমি তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা ১০ সে. বাড়ালে বাংলাদেশের ১১% ভাগ ভূখ- সমুদ্রে তলিয়ে যাবে বলে বিজ্ঞানীরা হুশিয়ার করে দিয়েছেন।

মরুকরণঃ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে একদিকে যেমন সমুদ্রপৃষ্ঠের ভূমি তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, তেমনি মরুভূমিতে রূপান্তরিত হবে অনেক এলাকা। ফলে কৃষি ও বনভূমি বিপন্ন হবে।

জীববৈচিত্র্য ধ্বংসঃ জলবায়ু পরিবর্তিত হলে প্রাণীর স্বাভাবিক জীবন ধারা ব্যহত হয়। জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বনাঞ্চল ধ্বংস এবং দুর্যোগের ফলে অনেক প্রজাতির প্রাণী পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে বা বিলুপ্তির পথে রয়েছে।

নদ-নদীর প্রবাহ হ্রাসঃ উষ্ণায়নের ফলে নদ-নদীর পানি প্রবাহ কমে যাচ্ছে এর ফলে পলি জমে নদী মরে যাচ্ছে। ফলে নদ-নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যহত হচ্ছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধিঃ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাপমাত্রা পরিবর্তনজনিত কারণে দুর্যোগের পরিমাণ এবং ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা পূর্বে তুলনায় বাড়ছে।

বন্যা-খরা বৃদ্ধিঃ পাহাড়ি ঢলের কারণে আকস্মিক বন্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বন্যার স্থায়িত্বও বাড়ছে। নদ-নদীর প্রবাহ বিঘ্নিত হওয়ার ফলে পানি অপসারিত হতে না পারার কারণে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। আবার অতিবৃষ্টি যেমন বন্যার সৃষ্টি করছে, অনাবৃষ্টি তেমনি খরার সৃষ্টি করছে।

বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে করণীয়ঃ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মানব জাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের তালিকায় শীর্ষ স্থানে অবস্থান করছে। এটি প্রতিরোধ বাংলাদেশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিরোধে মানব জাতির স্বার্থেই সবাইকে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য করণীয় হলো-

-ব্যাপকহারে বনায়ন করতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চল এবং ফাঁকা স্থানে পর্যাপ্ত গাছ লাগাতে হবে।

-অপ্রয়োজনে বৃক্ষ নিধন রোধ করতে হবে। প্রয়োজনের তাগিদে একটি গাছ কাটলে কমপক্ষে ৫টি গাছ লাগানো বাধ্যতামূলক করতে হবে।

-বায়ুম-লের তাপমাত্রা বাড়াতে সহায়ক ক্ষতিকর গ্যাসমূহের নির্গমন বন্ধ করতে হবে।

-পরিবেশবান্ধব এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার বাড়াতে হবে।

-পরিবেশের ক্ষতি করে এরূপ শিল্প কারখানা বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। শিল্প বর্জ্য শোধনাগারে বর্জ্যকে পরিশোধিত করার ব্যবস্থা করতে হবে।

-পরিবেশ রক্ষায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

উপসংহারঃ মানবজাতি উন্নতির চরম শিখরে অবস্থান করলেও, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ক্রমে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা মূলত মানুষেরই সৃষ্টি। বর্তমানে এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ভারসাম্য রক্ষা করে না চললে এই সমস্যাই যে বর্তমান সভ্যতার ধ্বংসের কারণ হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই আমাদেরকে এখনই জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে এগিয়ে আসতে হবে।

☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Iklan Atas Artikel

Iklan Tengah Artikel 1

Iklan Tengah Artikel 2

Iklan Bawah Artikel