আজকে প্রকাশিত চাকরির পরীক্ষার নোটিশ গুলো পাবেন

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প


(সংকেত: ভূমিকা; পোশাক শিল্পের ইতিহাস; পোশাক শিল্পের বর্তমান অবস্থা; বিশ্ব বাজারে পোশাক শিল্প; পোশাক শিল্পের গুরুত্ব; রপ্তানি আয়; পোশাক শিল্পের সমস্যা; সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ; পোশাক শিল্পের সম্ভাবনা; উপসংহার।)

ভূমিকাঃ বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ যেখানে শিল্পের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটেনি। তবে বাংলাদেশে যেসব শিল্পের বিকাশ সাধন হয়েছে তার মধ্যে পোশাক শিল্প প্রধান। রপ্তানি বাণিজ্যে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের রয়েছে একচ্ছত্র আধিপত্য। কেবল রপ্তানি বাণিজ্যে নয় এর সাথে জড়িত আছে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। সারা বিশ্বে পোশাক খাতে বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বমানের এ পোশাক শিল্প আজ সংকটের মুখোমুখি। অর্থনৈতিক মন্দা, মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রতিযোগিতা, জি.এস.পি সুবিধা বাতিলের ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি অনেকটা হুমকির মুখে।

পোশাক শিল্পের ইতিহাসঃ পোশাক শিল্প বাংলাদেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শিল্প। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮০ সালে পোশাক শিল্পে সরকার পাঁচ বছরের জন্য ঋণ প্রদান করে। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সাল নাগাদ এ শিল্পের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০টির মত। ফলে দিনে দিনে পোশাক শিল্পের বিস্তৃতি ঘটতে থাকে। ১৯৮৫-৮৬ সাল নাগাদ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় অসংখ্য পোশাক শিল্প গড়ে উঠে।

পোশাক শিল্পের বর্তমান অবস্থাঃ বর্তমানে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প যথেষ্ট উন্নতি সাধন করেছে। কাঁচামাল সুবিধা, ভৌগোলিক অবস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রভৃতি দিক বিবেচনা করে মূলত শহর কেন্দ্রিক শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে। ফলে প্রতিবছর দ্রুত গতিতে কারখানার সংখ্যা বাড়ছে। নিম্নে ছকের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিভিন্ন বছরে কারখানার সংখ্যা তুলে ধরা হলো-

সাল ২০১০ ২০১১ ২০১২

কারখানার সংখ্যা ৫,০৬৩ ৫,১৫০ ৫,৪০০

পোশাক শিল্পের কারখানাসমূহ অধিকাংশ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, চট্টগ্রাম প্রভৃতি স্থানে অবস্থিত। বর্তমানে পোশাক কারখানা দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠছে। ফলে জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। পোশাক শিল্প বর্তমানে দেশের অর্থনীতি, বৈদেশিক বাণিজ্য ও মহিলা শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের বৃহৎ খাত। দেশের মোট শ্রমিকের ৭৬ ভাগই পোশাক শিল্পে নিয়োজিত আছে। নিম্নে ছকের মাধ্যমে পোশাক শিল্পে বিভিন্ন বছরে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা তুলে ধরা হলো-

সাল ২০১০ ২০১১ ২০১২

শ্রমিকের সংখ্যা ৩.৬ মিলিয়ন ৩.৬ মিলিয়ন ৪.০ মিলিয়ন

বিশ্ববাজারে পোশাক শিল্পঃ বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের প্রায় ২০টির অধিক দেশে পোশাক রপ্তানি করে থাকে। সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে থাকে যুক্তরাষ্ট্রে। যা মোট রপ্তানির প্রায় ৫৬%। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এছাড়াও জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম ও মধ্যপ্রাচ্যসহ প্রভৃতি দেশে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি করা হয়। পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের প্রথম চীন। তারপর দ্বিতীয় স্থানটি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। পোশাক শিল্পে বর্তমানে প্রায় ৮৫টি ক্যাটগরি রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ৩৬টি ক্যাটাগরিতে উৎপাদন করে থাকে।

পোশাক শিল্পের গুরুত্বঃ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সর্ববৃহৎ উৎস হলো পোশাক শিল্প। যা নিরক্ষর, স্বল্পশিক্ষিত পুরুষ ও মহিলাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। নিম্নে এ শিল্পের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো-

কর্মসস্থান সৃষ্টিঃ বাংলদেশ একটি জনবহুল দেশ। পোশাক শিল্প বেকার জনশক্তি, অদক্ষ ও অশিক্ষিত মহিলাদের কর্মসংস্থানের বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করেছে। পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০ লক্ষাধিক শ্রমিক নিয়োজিত আছে। তারা জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখে।

দক্ষ উদ্যোক্তা সৃষ্টিঃ বাংলাদেশে দক্ষ উদ্যোক্তার অভাবে শিল্পোন্নয়নের গতি সঞ্চারিত হচ্ছে না। পোশাক শিল্প দেশে দক্ষ উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে।

রপ্তানি বাণিজ্যঃ বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৭৬ শতাংশ আসে পোশাক রপ্তানি থেকে। সুতরাং এদেশের অর্থনীতির জন্য এ খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দারিদ্র্য বিমোচনঃ পোশাক শিল্প বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে। ফলে জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ শিক্ষা, চিকিৎসা, পুষ্টি প্রভৃতি বিষয়ে সচেতনতা পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করছে।

দ্রুত শিল্পায়নঃ পোশাক শিল্পকে কেন্দ্র করে অন্যান্য শিল্পের দ্রুত শিল্পায়ন ঘটেছে। এ শিল্পকে কেন্দ্র করে স্পিনিং, উইনিং, নিটিং, ডাইং, ফিনিশিং ও প্রিন্ট শিল্প গড়ে উঠেছে।

সহায়ক শিল্পের বিকাশঃ পোশাক শিল্পের বিকাশের সাথে সাথে অন্যান্য সহায়ক শিল্পের বিকাশের পথ প্রশস্ত হয়েছে। যেমন- ব্যাংক, বীমা, ফ্রেইট ব্যবসা, ক্লিয়ারিং ও ফরোয়ার্ডিং এজেন্টের কাজ ও নতুন কসমেটিক্স কারখানাসহ অন্যান্য সহায়ক শিল্পের বিকাশ ঘটেছে।

তাছাড়া দেশি কাপড়ের বাজার সৃষ্টি, শিক্ষার প্রসার, ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি, বস্ত্র শিল্পের উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে পোশাক শিল্প অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখছে।

পোশাক শিল্পের রপ্তানি আয়: ১৯৭৬ সাল থেকে যাত্রা শুরু হয়ে বর্তমানে পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি রূপে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর বাংলাদেশ ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে পোশাক শিল্প রপ্তানি করে। নিম্নে পোশাক শিল্প হতে বিভিন্ন অর্থবছরের রপ্তানি আয় দেখানো হলো-

(মিলিয়ন মার্কিন ডলারে)

সাল ২০১০ ২০১১ ২০১২

তৈরি পোশাক ৮৪৩২ ৯৬০৩ ৬১১৯

নিটওয়্যার ৯৪৮২ ৯৪৮৬ ৫১২১

পোশাক শিল্পের সমস্যাঃ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প এক উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় শিল্প। তবে পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। নিম্নে পোশাক শিল্পের সমস্যাসমূহ তুলে ধরা হলো-

কাঁচামালের অভাবঃ পোশাক শিল্পের বড় সমস্যা হলো পর্যাপ্ত কাঁচামালের অভাব।

শ্রমিক নিরাপত্তার অভাবঃ পোশাক শিল্প কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। সুষ্ঠু শ্রমিক নিরাপত্তার অভাবে বিভিন্ন সময়ে আগুনে পুড়ে, ভবন ধ্বসে অনেক শ্রমিক নিহত হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ এপ্রিল ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসের ফলে ১১২৯ জন শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটে। শ্রমিক স্বার্থ সুরক্ষা ও কর্মপরিবেশের নিরাপত্তাজনিত কারণে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৩ সালের ২৮ জুন জিএসপি সুবিধা বাতিল করে।

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাবঃ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা পোশাক শিল্পে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি করছে। রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময়ে হরতাল, অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ডাক দিয়ে থাকে। ফলে সময়মত পণ্য আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে সমস্যা হয়।

পরিবহন সমস্যাঃ বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ার কারণে সময়মত কাঁচামাল সরবরাহ ও অন্যান্য সামগ্রীর সরবরাহের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়।

ঋণের অভাবঃ পোশাক শিল্পের মালিকেরা অনেক সময় প্রয়োজনীয় ঋণ পায় না। ফলে কারখানা স্থাপনসহ কারখানা উন্নয়ন, সম্প্রসারণ, নতুন যন্ত্রপাতি আমদানি ইত্যাদি কার্য সম্পাদন করতে সমস্যা হয়।

বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দাঃ বাংলাদেশ যেসব দেশে পোশাক রপ্তানি করে থাকে সেসব দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেওয়ায় জনগণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। ফলে রপ্তানি আয় অনেক কমে গেছে।

সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপঃ পোশাক শিল্প জাতীয় অর্থনীতির বৃহৎ অংশ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে এ শিল্পের বিদ্যমান সমস্যা দূর করতে হবে। নিম্নে এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগুলা তুলে ধরা হলো-

- বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্কের হার নমনীয় করার ব্যাপারে সরকারি- বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

- প্রয়োজনীয় কাঁচামালের ব্যবস্থা ও এর মানের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

- শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষা ও কর্মপরিবেশের সুষ্ঠু নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। ফলে বাতিলকৃত জিএসপি সুবিধাসহ অন্যান্য সুুবিধা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

- দ্রুত পণ্য পরিবহনের জন্য সড়কপথ, রেলপথ প্রভৃতি উন্নয়ন করতে হবে।

- রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। হরতাল, অবরোধসহ অর্থনৈতিক অগ্রগতিবিরোধী সকল কর্মকান্ড পরিত্যাগ করতে হবে।

- শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

- পোশাক শিল্পকে সর্বাধুনিক করার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হবে।

- পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।

- গার্মেন্টস শ্রমিকদের থাকার জন্য গার্মেন্ট পল্লী নির্মাণ করতে হবে।

পোশাক শিল্পের সম্ভাবনাঃ বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলা যায়। কারণ বাংলাদেশের পর্যাপ্ত শ্রমিকের যোগান বিদ্যমান যা সস্তায় পাওয়া যায়। তাছাড়া পোশাক শিল্পে সস্তায় নারী শ্রমিক নিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এদেশের শ্রমিকের মজুরি তুলনামূলকভাবে কম। যা স্বল্পমূল্যে অধিক উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি করে। এছাড়াও স্বল্প মূলধনে শিল্প স্থাপন, অধিক বিনিয়োগ প্রবণতা, উদার শিল্পনীতি প্রভৃতি কারণে বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের সম্ভাবনাকে আরো বেশি জোরালো করেছে।

উপসংহারঃ বর্তমান বিশ্ব মুক্তবাজার অর্থনীতির বিশ্ব। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থায় নিজেদের টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করতে হবে। উদ্ভূত সমস্যাসহ কোটা ও জিএসপিমুক্ত বিশ্বের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই পোশাক শিল্পের অগ্রগতির লক্ষ্যে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সকলে মিলে একসাথে কাজ করতে হবে।

☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "বাংলাদেশের পোশাক শিল্প"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Iklan Atas Artikel

Iklan Tengah Artikel 1

Iklan Tengah Artikel 2

Iklan Bawah Artikel