আজকে প্রকাশিত চাকরির পরীক্ষার নোটিশ গুলো পাবেন

লিচু চাষ

লিচু চাষ



লিচু হলো বিশ্বের সবচেয়ে রোমান্টিক ফল। প্রায় দুই হাজার বছর ধরে ফলটি এ মর্যাদা পেয়ে আসছে। সত্যি বলতে কি, বিশ্বে প্রথম ফল চাষের বই লেখা হয়েছিল ১০৫৬ সালে, সেটিও ছিল লিচুকে নিয়ে। বিশ্বের অনেক রাজা-বাদশাহ রানী-বেগমদের মন জয় করতে যুগে যুগে লিচু ফল উপহার দিয়েছেন। অষ্টম শতকে চীনা সম্রাট হুয়ান সাংও একই কাজ করে বেগমের মন জয় করেছিলেন, দক্ষিণ চীন থেকে লিচু বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন সুদূর উত্তর চীনে।



উন্নত জাত

বিজ্ঞানীরা নানা জাতের লিচু উদ্ভাবন করেছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটও বের করেছে লিচুর তিনটি জাত। এ দেশে যেসব জাতের লিচু পাওয়া যায় সেগুলো হলোন্ধ বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-৩, মঙ্গলবাড়ি, মোজাফ্ফরপুরী, বেদানা লিচু, বারি লিচু-১, বারি লিচু-২, বারি লিচু-৩ ইত্যাদি। বোম্বাই লিচু টকটকে লাল, মাদ্রাজি আগাম জাত, সবচেয়ে ভালো জাত চায়না-৩। এই জাতের গাছে প্রতি বছরই ভালো ফল ধরে। বেদানা নাবী জাত। বারি লিচু-১ আগাম জাত, বারি লিচু-৩ মাঝ মৌসুমি জাত। কিন্তু বারি লিচু-২ নাবী জাত। লাগানোর জন্য এসব জাত থেকে যেকোনো জাত নির্বাচন করা যেতে পারে।



চারা কলম

বীজ থেকে ও অঙ্গজ পদ্ধতিতে লিচুর চারা তৈরি করা যায়। কিন্তু বীজ থেকে উৎপাদিত গাছে ফল ধরতে ৭-১২ বছর সময় লাগে। এ জন্য বীজ থেকে সাধারণত চারা উৎপাদন করা হয় না। চারা উৎপাদনের জন্য গুটিকলম লিচুর ক্ষেত্রে সর্বাধিক উপযোগী। তবে এ পদ্ধতি ছাড়া জোড়কলম, কুঁড়ি সংযোজন, ছেদ কলম প্রভৃতির মাধ্যমে সফলভাবে চারা উৎপাদন করা যায়। গুটি কলম তৈরি করার সময় কাটা জায়গায় অনুমোদিত হরমোন মিশিয়ে লাগালে মূল গঠন ভালো হয়।



চাষাবাদ

পরিকল্পিতভাবে লিচুবাগান করতে হলে বাগান তৈরির বা চারা রোপণের কয়েক বছর আগে দ্রুতবৃদ্ধিশীল লম্বা-দৃঢ় জাতের কিছু গাছ যেমনন্ধ ইউক্যালিপ্টাস, জাম, শিমুল প্রভৃতি রোপণ করতে হবে। অথবা যে জমির চার দিকে বা আশপাশে এ ধরনের গাছ আছে সে জমি বাগানের জন্য নির্বাচন করতে হবে। এতে ফল ঝরা, ফল ফাটা প্রভৃতি হন্সাস পায় এবং ঝড় বাতাসে গাছের ক্ষতি কম হয়।



পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে জমি তৈরি করে জমি সমান করতে হবে। মে-জুন মাসে জমি তৈরি করা ভালো। জমিতে বর্গাকার বা ষড়ভুজি রোপণপ্রণালী অনুসরণ করে ১০ মিটার দূরে দূরে ১ মিটার ১ মিটার ১ মিটার আকারের গর্ত খনন করতে হবে। রোপণের কয়েক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ জুন-জুলাই মাসে গর্ত করা উচিত। গর্ত করার পর গর্তের ওপরের মাটির সাথে গর্তপ্রতি ২০-২৫ কেজি জৈবসার, ২ কেজি হাড়ের গুঁড়ো বা ৫ কেজি কাঠের ছাই মিশিয়ে গর্ত ভরে দিতে হবে। তারপর তাতে পানি দিয়ে কিছু দিন রেখে দিয়ে আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসের দিকে গর্তের মাটির সাথে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও এমওপি মিশিয়ে গর্তের মাঝখানে লিচুর চারা বা গুটিকলম লাগাতে হবে। লাগানোর পরপরই গাছের গোড়ায় পানি সেচ দিতে হবে। প্রয়োজনবোধে কিছু পাতা ছাঁটাই করা ভালো। 
প্রতি বছর তিনবার অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি, মে ও অক্টোবর-নভেম্বরে সার প্রয়োগ করতে হবে। রোপণের বছর সার কম দিলেও বয়স বাড়ার সাথে সারের পরিমাণ বাড়াতে হবে।



সারের পরিমাণ হলো

এক থেকে তিন বছর বয়সী গাছের জন্য গাছপ্রতি জৈবসার ১০-২০ কেজি, ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৪০০ গ্রাম, এমওপি ১৫০-২০০ গ্রাম।

চার-ছয় বছর বয়সী গাছের জন্য গাছপ্রতি জৈবসার ২০-৩০ কেজি, ইউরিয়া ৬০০ গ্রাম, টিএসপি ৫০০ গ্রাম, এমওপি ২৫০-৩০০ গ্রাম।

৭-১০ বছর বয়সী গাছের জন্য গাছপ্রতি জৈবসার ৩০-৪৫ কেজি, ইউরিয়া ৭৫০ গ্রাম, টিএসপি৭০০ গ্রাম, এমওপি ৫০০ গ্রাম।

১০ বছরের বেশি বয়সী গাছের জন্য গাছপ্রতি জৈবসার ৫০-৬০ কেজি, ইউরিয়া ১০০০ গ্রাম, টিএসপি ৭৫০ গ্রাম, এমওপি ৬০০ গ্রাম।

গাছে যদি জিঙ্কের অভাব দেখা দেয় অর্থাৎ পাতা যদি তামাটে রঙ ধারণ করে তবে প্রতি বছর ৫০০ লিটার পানির সাথে ২ কেজি চুন ও ৪ কেজি জিঙ্ক সালফেট গুলে বসন্তকালে গাছে ছিটাতে হবে। ফল ঝরা কমাতে এটা সাহায্য করবে। ফল ফেটে যাওয়া কমাতে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ গ্রাম বোরিক পাউডার গুলে ফলে স্প্রে করা যেতে পারে।



আবহাওয়া ও মাটির ধরন অনুসারে শীতকালে ১০-১২ দিন ও গ্রীষ্মকালে ৭-১০ দিন অন্তর সেচ দিতে হয়। তবে সারা বছর ১২৫ সেন্টিমিটারের বেশি সুষমভাবে বৃষ্টিপাত হলে সেচ না দিলেও চলে। ফল ধরার পর নিয়মিত পানি সেচ দিলে ফলন বেড়ে যায়। ফল না ধরা পর্যন্ত লিচুবাগানে খরিপ ঋতুতে শসা, কুমড়া, ঝিঙ্গা, উচ্ছে বা করলা, মাষকলাই, গো মোটর প্রভৃতি এবং রবি ঋতুতে বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজি চাষ করা যায়। ফলসা, আনারস, কলা, পেঁপে প্রভৃতি ফলও আন্ত:শস্য হিসেবে চাষ করা যায়।



ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে লিচুগাছে ফুল আসে ও মে-জুন মাসে লিচুর পাকা ফল সংগ্রহ করা হয়। এ সময় ফলের খোসা লালচে রঙ ধারণ করে ও কাঁটাগুলো চ্যাপ্টা হয়ে খোসা প্রায় মসৃণ হয়ে যায়। কয়েকটি পাতাসহ গোছা ধরে লিচু সংগ্রহ করা হয় এতে ফল বেশি দিন ধরে ঘরে রাখা যায়। বৃষ্টি হলে তার পর পরই কখনো লিচু সংগ্রহ করা ঠিক নয়। সাধারণত লিচুগাছে তিন থেকে ছয় বছর পর ফল ধরে। তবে ২০-৩০ বছর বয়স পর্যন্ত লিচুগাছে ফলন বাড়তে থাকে। সাধারণত প্রতিটি গাছ থেকে বছরে ৮০-১৫০ কেজি বা ৩২০০-৬০০০টি লিচু পাওয়া যায়। অবস্খাভেদে এর তারতম্যও লক্ষ করা যায়।



লিচুর কলম রোপণ




গ্রীষ্মকালীন ফলের মধ্যে লিচু একটি জনপ্রিয় ফল। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় লিচু সব জায়গায় ভালো ফলন দেয় না। বিশেষ কিছু জাত বিশেষ জায়গায় বেশ ভালো ফলন দেয় এবং সেসব জায়গা সেই লিচুর জাতের নামেই পরিচিতি পেয়ে গেছে। যেমন- রাজশাহীর লিচু (জাত : মুম্বাই), পাবনার ঈশ্বরদীর লিচু (জাত : মুম্বাই, মাদ্রাজি), দিনাজপুর (জাত : বেদানা ও কাঁঠালি)। এ ছাড়া চায়না-৩ জাতের লিচু দেশের প্রায় সব জেলাতেই চাষ হচ্ছে।

লিচুর বংশবিস্তার করা হয় প্রধানত গুটি কলম করে। লিচু ফলের মওসুম শেষেই শুরু হয়ে যায় ফলগাছ রোপণ মওসুম। অন্যান্য ফলগাছের মতো লিচুর কলম কিন' বর্ষার শুরুতেই রোপণ করা ঠিক নয়। এ জন্য একটু অপেক্ষা করতে হয়।

বর্ষার পর যখন মাটিতে রসের আধিক্য কমতে থাকে তখনই লিচুর কলম রোপণ করতে হয়।

আসলে লিচুর গুটি কলম অন্যান্য ফলগাছের গুটি কলমের মতো নয় বলেই মাটিতে বেশি রস থাকলে রোপণ করা উচিত নয়। তবে যেসব জায়গা উঁচু, মাটি বেলে দো-আঁশ ধরনের, যে মাটিতে পানি দীর্ঘক্ষণ জমে থাকে না এবং সারা দিন রোদ পড়ে সেসব জায়গাই লিচুর কলম রোপণের জন্য উপযুক্ত।

কলম রোপণ উপযোগী জমিতে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে ও সমান করতে হয়। এরপর আগাছা বা ফসলের অবশিষ্টাংশ যদি থাকে সেসব বাছাই করে ২০ ফুট দূরে দূরে বর্গাকার পদ্ধতিতে গর্ত খনন করতে হয়। ক্ষেতের আশপাশের আগাছাও পরিষ্কার করতে হয়।

এরপর তিন ফুট চওড়া ও তিন ফুট গভীর করে গর্ত খনন করার পর মাটি গর্তের চার পাশে নয়-দশ দিন ফেলে রাখতে হয়। এ সময়ে মাটির সাথে জৈব সার মেশাতে এবং গর্তটি খোলা রেখে দিতে হয়। রোপণের দুই-তিন দিন আগে রাসায়নিক সার হিসেবে ইউরিয়া ১০০ গ্রাম, টিএসপি ২০০ গ্রাম ও পটাশ সার ১০০ গ্রাম মেশানোর পর গর্ত ওই মাটি দিয়েই ভরাট করতে হয়। ভরাট করার সময় জমির লেভেল থেকে কমপক্ষে ১৫-২০ সেন্টিমিটার উঁচু ঢিবির মতো করতে হয়। ঢিবির মধ্যখানে হাত দিয়ে বা নিড়ানি দিয়ে গুটি কলমের মাটির পাত্র বা পলিব্যাগের আকারে ছোট গর্ত করে তাতে লিচুর গুটি কলমের মাটির বলটি বসিয়ে চার দিকে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হয়।

কলমটি যাতে বাতাসে হেলে না পড়ে সে জন্য কলম গাছের গোড়া থেকে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার দূরে একটি খুঁটি পুঁতে খুঁটিটি হেলিয়ে গাছের সাথে বেঁধে দিতে হয়। কিছুটা পানি গাছের পাতায় ছিটিয়ে দিয়ে গাছটি গরু-ছাগল থেকে রক্ষার জন্য বেড়া দিতে হয়।

বর্ষার শেষে যখন বৃষ্টির পরিমাণ কমতে থাকে সেই সময় অর্থাৎ আশ্বিন মাসই লিচুর কলম রোপণের উপযুক্ত সময়।

তবে মধ্য আশ্বিনের মধ্যেই লিচুর কলম রোপণ কাজ শেষ করা ভালো। যত দেরি হয় ততই শীত এগিয়ে আসতে থাকে এবং মাটি ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া গাছের শিকড়ের বৃদ্ধি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় গাছ মাটি থেকে খাবার নিতে পারে না। তাই গাছের বৃদ্ধিও বন্ধ হয়ে যায়।



রোপণের পর নতুন পাতাও গজায় না। অন্য দিকে বর্ষার শুরুতেই বা বর্ষার মধ্যেই যদি লিচুর গুটি কলম রোপণ করা হয় তাহলে মাটিতে অতিরিক্ত রসের কারণে লিচুর গুটি কলমের নরম শিকড়গুলো পচে যায়। এতে লিচুর কলম মরে যায়। সুস্থ-সবল গুটি কলম থেকে সুস্থ-সবল লিচুর গাছ এবং ভালো ফলন পেতে চাইলে বর্ষার পরই লিচুর গুটি কলম রোপণ করতে হয়।


দাড়িওয়ালা লিচু রাম্বুটান

রাম্বুটান ফলের চেহারা দেখে অনেকেই ওকে দাড়িওয়ালা লিচু বলে থাকেন। কেননা লিচুর মতো ফলটির খোসায় কাঁটার বদলে আছে আঁশের মতো নরম কাঁটা বা চুলের মতো মোটা আঁশ। রাম্বুটান এ দেশের ফল নয়। ফলটির আদি নিবাস পশ্চিম মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা। তবে ফলটি এখন থাইল্যান্ডে প্রচুর ফলছে। চাষ করা হচ্ছে জাভা, বোর্নিও, কম্বোডিয়া, ফিলিপিন, মিয়ানমার, ভিয়েতনামেও। রাম্বুটান এই ফলের ইংরেজি নাম। ফরাসি ভাষায় লিচি চিভাল, স্প্যানিশে রাম্বুতাও, থাইল্যান্ডে নু ফন্সুয়ান। বাংলা কোনো নাম নেই। তবে গাজীপুর, ভালুকা, ময়মনসিংহ, রাঙ্গামাটিতে কয়েকটি গাছে বেশ ভালোই ফল দিচ্ছে। তাই আশা করা যাচ্ছে, কয়েক বছরের মধ্যে এ দেশে চাষের উপযোগী রাম্বুটানের কিছু জাত পাওয়া যাবে।
 
রাম্বুটানের পরিচয়
রাম্বুটানের গাছ মাঝারি আকারের বৃক্ষপ্রকৃতির, লম্বা হয় প্রায় ১০-২৫ মিটার। বেশ ঝোপাল স্বভাবের। গাছের উচ্চতার প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগ হলো পত্রপল্লবের বিস্তার বা ক্যানোপি। একটি বোঁটায় দু-চারটি পাতা একত্রে থাকে। ডালে পাতাগুলো বিপরীতমুখীভাবে সাজানো থাকে। পাতার কক্ষ থেকে ফুলের মঞ্জরী বের হয়। ডালের আগা বা পার্শ্বীয়ভাবে পুষ্পমঞ্জরী বের হয়। ফুল খুবই ছোট, ফুলের রঙ সবুজাভ, একটি ছড়ায় ৬০০ থেকে দুই হাজার ফুল ফোটে। কিন্তু থোকায় ফল অত ধরে না। ভালমেয়র (১৯৭০) ফুল ধরার প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে রাম্বুটান গাছকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন।
পুরুষগাছ এ শ্রেণীর রাম্বুটান গাছে শুধু পুরুষ ফুল ফোটে (সাধারণত রাম্বুটানের চারা লাগানোর পর ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ গাছই পুরুষ প্রজাতির হয়ে যায়।)
স্ত্রীপ্রধান উভলিঙ্গীগাছ এসব রাম্বুটান গাছে পুরুষ ও স্ত্রী দুই রকম ফুলই ফোটে। তবে এসব গাছে সাধারণত স্ত্রী ফুলই সক্রিয় বা কার্যকর থাকে।
পুরুষপ্রধান উভলিঙ্গীগাছ এসব রাম্বুটান গাছে পুরুষ ও স্ত্রী দুই রকম ফুলই ফোটে। তবে এসব গাছে সাধারণত স্ত্রী ও পুরুষ উভয় ফুলই সক্রিয় বা কার্যকর থাকে। চাষাবাদের জন্য এ শ্রেণীর রাম্বুটান গাছই উপযুক্ত।
 
ফল লিচুর মতোই থোকা ধরে। ফল ডিম্বাকার থেকে গোলাকার। কাঁচাফলের রঙ সবুজ, পাকলে লাল হয়ে যায়। খোসা লম্বা খাটো সোজা বাঁকা ইত্যাদি নানা আকৃতির কাঁটাযুক্ত। তবে কাঁটাগুলো শক্ত নয়। খোসা ছাড়ালেই ভেতরে লিচুর মতো সাদা শাঁস পাওয়া যায়। শাঁসের স্বাদ মিষ্টি টক, রসালো। ভেতরে লিচুর মতো একটি বীজ থাকে, বীজ শক্ত, লম্বাটে, ডিম্বাকার ও বাদামি রঙের। ফলের মোট ওজনের ৩০ থেকে ৫৮ শতাংশ থাকে শাঁস, ৪ থেকে ৯ শতাংশ বীজ। প্রতিটি ফলের ওজন ৩০-৬০ গ্রাম। ফল ধরে গ্রীষ্মকালে।
 
ফলের পুষ্টিমান
রাম্বুটানের প্রতি ১০০ গ্রাম ফলে আছে ৮৩ গ্রাম পানি, ০.৮ গ্রাম প্রোটিন, ১৪.৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ২৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩ মিলিগ্রাম আয়রন, ২০ থেকে ২৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এবং সামান্য ফ্যাট।
 
উপযুক্ত আবহাওয়া
এশীয় দেশগুলোতে ২২ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার মধ্যে রাম্বুটান জন্মে। কিন্তু অব-উষä ও কিছুটা ঠাণ্ডা অঞ্চলে ১২ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে ভালো হয়। যেসব এলাকায় বেশি বৃষ্টিপাত হয় সেখানে রাম্বুটান ভালো হয়। তা না হলে বেশি সেচ দিতে হবে। বিশেষ করে ফুল আসার সময় থেকে ফল সংগ্রহের আগ পর্যন্ত সেচ চালিয়ে যেতে হবে। তাপমাত্রা ও বাতাসের জলীয় বাষ্প বা আর্দ্রতা হঠাৎ কমে গেলে অনেক সময় রাম্বুটান গাছের ডগা শুকিয়ে আসে এবং পাতার কিনারা হলদে হতে শুরু করে।
 
উপযোগী মাটি
উঁচু, যেখানে বৃষ্টির পানি জমে থাকে না এরূপ সুনিষ্কাশিত বেলে দো-আঁশ মাটি রাম্বুটান চাষের জন্য ভালো। তবে এঁটেল-দো-আঁশ মাটিতেও চাষ চলে। তবে মাটিতে বেশি জৈবপদার্থ থাকলে বা দিলে রাম্বুটানের গাছ ভালো বাড়ে ও ফল বেশি ধরে। মাটির অম্লমান বা পিএইচ মান ৪.৫ থেকে ৬.৫-এর মধ্যে হওয়া ভালো।
 
জাত
বিশ্বে রাম্বুটানের অনেক জাত আছে। তবে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন ও থাইল্যান্ডে যেসব জাত জন্মে ও ভালো ফল দেয় সেগুলোই এ দেশের জন্য নির্বাচন করে চাষ করা যেতে পারে। কেননা ওই সব দেশের আবহাওয়ার সাথে এ দেশের আবহাওয়ার কিছুটা মিল রয়েছে। রাম্বুটানের সবচেয়ে বেশি জাত দেখা যায় মালয়েশিয়ায়। সে দেশে রাম্বুটানের ১৫টি জাত রয়েছে। বিভিন্ন দেশে রাম্বুটানের অনেক জনপ্রিয় জাত রয়েছে।
 
তবে বিশ্বে বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য ফিলিপাইনের সিবাবাত, সিঙ্গাপুরের লি, মালয়েশিয়ার পি১, পি৪, পি৫, পি৬, পি৮, পি২২, পি২৮, পি৫৪, পি৬৩ এবং ইন্দোনেশিয়ার মেরাহ ও কোয়েনেং জাতগুলো উল্লেখযোগ্য।
 
চারা তৈরি
জোড়কলম করে রাম্বুটানের চারা তৈরি করা হয়। বীজ থেকে গজানো এক বছর বয়সী চারার মাথা কেটে, সেখানে ফাটল করে ফল ধরা কোনো রাম্বুটান গাছের ডগা তেরছা করে কেটে গোজের মতো ঢুকিয়ে ফিতে দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়। এ পদ্ধতিকে বলে ক্লেফট গ্রাফটিং। তেজি কোনো ভিত্তি চারার ওপর ফোরকাট বা চোখকলম করেও রাম্বুটানের কলম করা হয়। লিচুর মতো বায়ব দাবা কলম করেও প্রতিষ্ঠিত কোনো ফলবান গাছের ডাল থেকে রাম্বুটানের চারা তৈরি করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে সফলতা কম পাওয়া যায়। চোখকলম করেও সুঠাম আকৃতির ভালো গাছ পাওয়া যায়। বসন্তকাল আসার ঠিক আগে চোখকলম করার উপযুক্ত সময়।
 
চাষপদ্ধতি
প্রচণ্ড শীতের সময় ছাড়া বছরের যেকোনো সময় রাম্বুটানের চারা লাগানো যায়। তবে বর্ষার আগে লাগানো উত্তম। সব দিকে ৮০ সেন্টিমিটার থেকে ১ মিটার মাপে গর্ত করে গর্তের মাটিতে আধাআধি পরিমাণ জৈবসার ও মাটি মিশিয়ে সপ্তাহখানেক রেখে দিতে হবে। তারপর গর্তের মাঝখানে খাড়া করে চারা লাগিয়ে কাঠির সাথে বেঁধে গোড়ায় সেচ দিতে হবে। বাণিজ্যিক বাগান করলে হেক্টরপ্রতি ৮০ থেকে ১২০টি চারা লাগানো যায়। গাছের কাণ্ড থেকে সব অবাঞ্ছিত ডগা ও মরা ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে। প্রতিবার ফল তোলার পর ফল ধরা ডালগুলোর আগা লিচুগাছের মতো ভেঙে দিতে হবে। এতে নতুন করে অনেক ডালপালা গজাবে ও বেশি ফুল-ফল ধরবে। খরা চলতে থাকলে অবশ্যই সেচ দিতে হবে। বিশেষ করে ফুল আসার সময় মাটি শুকাতে দেয়া যাবে না। এতে ফুল শুকিয়ে যাবে বা ঝরে যাবে। একটা-দুটো গাছ লাগালে গাছের গোড়ার কিছুটা দূর দিয়ে ঘুরিয়ে মাটি উঁচু করে আইল বেঁধে থালার মতো করে থালার মধ্যে ভাসিয়ে সেচ দেয়া যায়। বাণিজ্যিক বাগানের জমি ভাসিয়ে সেচ দিতে হবে। গাছের বৃদ্ধি বুঝে ও বয়স ধরে ১৪:৪:৩.৫ অনুপাতে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশ ঘটিত সার প্রয়োগ করতে হবে। অল্প করে ডলোমাইট চুন দেয়া যেতে পারে, তবে বেশি দিলে ক্ষতি হবে। এমনকি ডলোমাইটের সাথে যদি চুন এক সাথে দেয়া হয় তাতেও গাছের ক্ষতি হবে, বিশেষ করে তরুণ গাছের। গাছের বয়স ২০ বছর না হওয়া পর্যন্ত রোপণের পর থেকেই সার প্রয়োগ চালিয়ে যেতে হবে।
 
সাধারণত বসন্তের পরপরই শুষ্ক দিনে রাম্বুটানের ফুল আসে এবং গ্রীষ্ম-বর্ষায় ফল পাকে। ফুল ফোটার পর ফল পাকতে প্রায় ৯০ থেকে ১২০ দিন লাগে। চারা লাগানোর তিন বছর পর থেকেই ফল ধরতে শুরু করে এবং ২০ বছর পর্যন্ত ভালো ফলন পাওয়া যায়। জাত অনুযায়ী তিন বছরের একটা গাছে ১৫ থেকে ২০ কেজি ফল পাওয়া যায়, নয় বছরের একটা গাছে ৫৫ থেকে ২০০ কেজি ফল পাওয়া যায়, ২০ বছরের একটা গাছে ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি ফল পাওয়া যায়। ফল পাকলে লালচে রঙ চলে আসে। তখন একটা একটা করে বা গোটা থোকাসহ ফল তোলা যায়।

☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "লিচু চাষ"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Iklan Atas Artikel

Iklan Tengah Artikel 1

Iklan Tengah Artikel 2

Iklan Bawah Artikel