মাও সে তুং
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০১৯
Comment
(জন্ম- ডিসেম্বর ২৬, ১৮৯৩; মৃত্যু- সেপ্টেম্বর ৯, ১৯৭৬)

১৯৪৯ সালে চীনের শাসন ক্ষমতায় আসেন ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য এক দূরদর্শী কর্ণধার মাও সে তুং। তাঁর নেতৃত্বেই চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায় আসে এবং পরবর্তী সময়ে এ বিশাল দেশটির মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের চাকা ঘুরতে শুরু করে। শাসন ক্ষমতায় এসেই মাও ওই বছরেরই ১ অক্টোবর দেশটিকে পিপলস রিপাবলিক অব চায়না বলে ঘোষণা করেন। মাও সে তুং ছিলেন এই পার্টির প্রথম চেয়ারম্যান। ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি এই পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মাও সে তুংয়ের জন্ম ১৮৯৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর, চীনের হুনান প্রদেশের শাওশান গ্রামে। তাঁর বাবা মাও জেন সেং ছিলেন একজন ধনাঢ্য কৃষক। মা ওয়েন চি মেই ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের অনুরক্ত একজন ধর্মপরায়ণ মহিলা। ওয়েন চেয়েছিলেন, ছেলেও যেন তাঁর মতোই ধর্মের পথে বিকশিত হন। আর সে কারণেই মাওকে পারিবারিক ও ধর্মীয় কঠোর অনুশাসনের মধ্য দিয়ে বড় হতে হয়েছে। ২৫ বছর বয়সের আগে একা একা বাড়ি ছেড়ে দূরে কোথাও যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি।
১৯১১ সালে মাওয়ের বয়স যখন ১৮, তখন চীনে জীর্ণ ও ক্ষয়প্রাপ্ত চিং রাজবংশের বিরুদ্ধে বিপ্লব সংগঠিত হতে শুরু করে। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে সমগ্র চীন শাসন করে আসা সেই রাজবংশ ১৯১১ সালের বিপ্লবের মুখে আর টিকে থাকতে পারেনি। বিপ্লব শুরুর অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই পতন ঘটে যায় তাদের। তরুণ বয়সেই মাও রাজনৈতিক চিন্তাধারার ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে বামপন্থী রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণার প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করেন। মার্কসবাদের প্রতি প্রবলমাত্রায় আকর্ষণ ছিল তাঁর। ১৯২০ সালের দিকে তিনি একজন মার্কসবাদী হিসেবে চীনা রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করতে শুরু করেন। ১৯২১ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠায় যদিও তাঁর ভূমিকা ছিল অন্যতম। কিন্তু পার্টির নেতৃত্বে পৌঁছানোর জন্য তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল দীর্ঘ সময়। অবশেষে ১৯৩৫ সালে মাও যখন কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছে গেলেন, তারপর থেকে রাজনীতির মাঠে পার্টির ক্ষমতা ও কার্যকর ভূমিকা বাড়তে শুরু করে এক অদম্য গতিতে।
১৯৪৭ সালের মধ্যে চিয়াং কাই শেকের নেতৃত্বাধীন চীনের জাতীয়তাবাদী সরকারের বিরুদ্ধে সার্বিক সংগ্রামের প্রস্তুত নিতে শুরু করে কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না। দুর্দান্ত প্রতাপের সঙ্গে সংগ্রাম পরিচালনা করে মাও সে তুং ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্টদের নিয়ে এলেন চীনের মাটিতে। চীনের শাসন ব্যবস্থায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলো তাদের।
মাও যখন চীনের ক্ষমতায় আসেন তখন সমগ্র বিশ্বে চীনের পরিচয় ছিল একটি অনুন্নত ও দারিদ্র্যপীড়িত দেশ হিসেবে। বিগত সময়ের যুদ্ধ-বিগ্রহে চীন তখন ক্ষত-বিক্ষতপ্রায়। পুঁজিবাদী ভগ্নপ্রায় চীনকে নতুনভাবে মাও সে তুং নির্মাণ করতে শুরু করলেন সমাজতন্ত্রের আদর্শে। যদিও এ কারণে চীনে তিনি তখন রাজনৈতিকভাবে একটি কঠোর একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। কিন্তু তার পরও মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বেই চীন উত্তরণের পথে হাঁটতে শুরু করল। চীনের সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মাও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিপ্লব সংগঠিত করার পাশাপাশি সামাজিক বিপ্লব ঘটানোরও চেষ্টা করেছিলেন।
কিন্তু চীনের উন্নয়নের ব্যাপারে মাওয়ের সব সিদ্ধান্তই সফলভাবে কার্যকর হয়নি। ১৯৫৮ সালের দিকে মাও চীনে ৎেবধঃ ষবধঢ় ঋড়ৎধিৎফ নামের কর্মসূচি চালু করেছিলেন। কিন্তু পরিকল্পনাটি সফল হতে পারেনি। পরবর্তী মাও ১৯৬৬ সালের দিকে অনেক কমিউনিস্ট নেতার বিরোধিতাকে উপেক্ষা করেই সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নামে আরেকটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন। এ পরিকল্পনার কারণে তখন চীনের কমিউনিস্ট শাসন ব্যবস্থায় এক রকম দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হতে শুরু করে। তবে এসব কোনো কিছুই মাওকে তাঁর পরিকল্পনার বাস্তবায়ন থেকে হটাতে পারেনি। মাও তাঁর কিছু একান্ত অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন পরিচালনা করতে থাকেন আর অন্যদিকে কমিউনিস্ট পার্টির কিছু আমলা তৎকালীন সময়ে তাদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। ১৯৬৮ সালের দিকে এ আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে।
প্রথম জীবনে মাও সে তুং বিশ্বাস করতেন, শহরে শিল্প-কারখানার শ্রমিকরাই হচ্ছে কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর এ ধারণা অনুযায়ী চীনের উন্নয়নের পথে তিনি অগ্রসর হননি। মার্কসবাদী এই দর্শনকে টপকে ১৯৫২ সালের দিকে মাও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার প্রধান সমর্থন তিনি চীনের সাধারণ কৃষকসমাজ থেকেই আদায় করবেন। জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার দীর্ঘ লড়াইয়ের সময় পার্টির ক্ষমতার প্রধান ভিত্তিই ছিল চীনের গ্রামাঞ্চলে, সে কথা ভুলে যাননি মাও। চীনের কৃষিজীবী মানুষকে প্রাধান্য দিয়েই তিনি পার্টির শাসন ব্যবস্থার নীতিনির্ধারণ করেছিলেন।
মাওয়ের রাষ্ট্রনীতি চীনকে বদলে দিয়েছিল। দেশটির সর্বজনীন আধুনিকায়ন, দ্রুতগতিতে শিল্পায়ন এবং গণশিক্ষার ব্যাপক অগ্রগতিতে মাও সে তুং বিশাল অবদান রেখেছেন নিঃসন্দেহে। দুরারোগ্য পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হয়ে চীনের বেইজিংয়ে ১৯৭৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পৃথিবী ছেড়ে যান তিনি।
☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "মাও সে তুং"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন