যতি, বিরাম বা ছেদচিহ্নের লিখন কৌশল
বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০১৯
Comment
বাক্যের অর্থ সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করার জন্য বাক্য উচ্চারণের সময় বাক্যের মাঝে ও শেষে বিরতি দিতে হয়। এই বিরতির পরিমাণ প্রয়োজন অনুযায়ী কম-বেশি হয়ে থাকে। আবার বাক্য উচ্চারণের সময় বিভিন্ন আবেগের জন্য উচ্চারণ বিভিন্ন হয়ে থাকে। বাক্যটি লেখার সময় এই বিরতি ও আবেগের ভিন্নতা প্রকাশ করার জন্য যেই চিহ্নগুলো ব্যবহার করা হয়, তাদেরকে বিরাম চিহ্ন বা যতি চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন বলে।
প্রাচীন বাংলায় মাত্র দুইটি বিরাম চিহ্ন ব্যবহার করা হতো, দাঁড়ি (।) ও দুই দাঁড়ি (॥)। পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ইংরেজি ভাষার অনুকরণে বাংলায় আরো অনেকগুলো বিরাম চিহ্ন প্রচলন করেন। বর্তমানে ব্যবহৃত বিরাম চিহ্নগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিরাম চিহ্ন নিচে দেয়া হলো-
যতি বা ছেদ চিহ্নের ব্যবহার
কমা বা পাদচ্ছেদ (,)
· বাক্য পাঠকালে সুস্পষ্টতা বা অর্থ-বিভাগ দেখানোর জন্য যেখানে সল্প বিরতিরপ্রয়োজন, সেখানে কমা ব্যবহৃত হয়।
· পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একাধিক বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ একসঙ্গে বসলে শেষ পদটিছাড়া সবগুলোর পরই কমা বসবে।
· সম্বোধনের পর কমা বসবে।
· জটিল বাক্যের অন্তর্গত প্রত্যেক খন্ডবাক্যের পর কমা বসে।
· উদ্ধরণ চিহ্নের পূর্বে কমা বসবে।
· মাসের তারিখ লিখতে বার ও মাসের পর কমা বসবে।
· বাড়ি বা রাস্তার নম্বরের পর কমা বসে।
· নামের পরে ডিগ্রিসূচক পরিচয় সংযোজিত হলে সেগুলোর প্রত্যেকটির পরে কমাবসে।
সেমিকোলন (;)
কমা অপেক্ষা বেশি বিরতির প্রয়োজন হলে, সেমিকোলন বসে।
দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ (।)
বাক্যের পরিসমাপ্তি বোঝাতে দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ ব্যবহার করতে হয়।
প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?)
বাক্যে কোনোকিছু জিজ্ঞাসা করা হলে বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসে।
বিস্ময় ও সম্বোধন চিহ্ন (!)
· হৃদয়াবেগ প্রকাশ করতে এ চিহ্নটি বসে।
· সম্বোধন পদের পর বিস্ময়সূচক চিহ্ন ব্যবহৃত হতো; কিন্তু আধুনিক নিয়মে সম্বোধনস্থলে কমা বসে।
কোলন (:)
একটি অপূর্ণ বাক্যের পর অন্য একটি বাক্যের অবতারণা করতে কোলন ব্যবহৃত হয়।বর্তমানে উদাহারণ বোঝাতেও কোলন বহুল ব্যবহৃত।
ড্যাস (—)
যৌগিক ও মিশ্র বাক্যে পৃথক ভাবাপন্ন দুই বা তার বেশি বাক্যের সমন্বয় বা সংযোগবোঝাতে ড্যাস বসে।
কোলন ড্যাস (:-)
উদাহারণ বোঝাতে আগে কোলন ড্যাস ব্যবহৃত হত। বর্তমানে উদাহারণ বোঝাতে শুধুকোলন বহুল ব্যবহৃত।
হাইফেন বা সংযোগ চিহ্ন (-)
সমাসবদ্ধ পদগুলোকে আলাদা করে দেখানোর জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
ইলেক বা লোপচিহ্ন (')
কোনো বিলুপ্ত বর্ণের পরিবর্তে লোপ চিহ্ন বসে।
একক উদ্ধৃতি চিহ্ন (' ')
বক্তার প্রত্যক্ষ উক্তিকে এই চিহ্নের অর্ন্তভুক্ত করতে হয়।
যুগল উদ্ধৃতি চিহ্ন (" ")
যদি উদ্ধৃতির ভেতরে আরেকটি উদ্ধৃতি থাকে তখন প্রথমটির ক্ষেত্রে দুই উদ্ধৃতি চিহ্নএবং ভেতরের উদ্ধৃতির জন্য এক উদ্ধৃতি চিহ্ন হবে।
এছাড়াও প্রবন্ধ, গল্প ও কবিতারনামের ক্ষেত্রেও যুগল উদ্ধৃতি চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।
ব্র্যাকেট বা বন্ধনী চিহ্ন
ব্র্যাকেট বা বন্ধনি চিহ্ন তিন প্রকার। যেমন:
· প্রথম বন্ধনী ( )
· দ্বিতীয় বন্ধনী { }
· তৃতীয় বন্ধনী [ ]
মূলত গণিত শাস্ত্রে এগুলো ব্যবহৃত হলেও বিশেষ ব্যাখ্যামূলক অর্থে সাহিত্যে প্রথম বন্ধনীব্যবহৃত হয়।
প্রয়োজনীয়তা
আমরা যখন কথা বলি তখন সবগুলো বাক্য একযোগে না বলে থেমে থেমে বলি। অনেকসময় আবেগ প্রকাশ করি। কিন্তু বাক্য লিখে প্রকাশ করার সময় বিরতি ও আবেগ নির্দেশকরতে যতিচিহ্নের প্রয়োজন হয়। বাক্যে যতিচিহ্নের অশুদ্ধ ব্যবহার ক্ষেত্রবিশেষেঅর্থবিকৃতি ঘটাতে পারে।
☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "যতি, বিরাম বা ছেদচিহ্নের লিখন কৌশল "
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন