আজকে প্রকাশিত চাকরির পরীক্ষার নোটিশ গুলো পাবেন

শিং মাছের পোনা উৎপাদন পদ্ধতি

শিং মাছের পোনা উৎপাদন পদ্ধতি



শিং মাছ একটি বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ। এই মাছটি অত্যন- সুস্বাদু এবং জনপ্রিয়। আমাদের দেশে বেশ আগে হাওড়-বাঁওড়ে মাছটির প্রাচুর্যতা ছিল। কালের বির্বতনে প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে মাছটি আমাদের দেশ থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে। আমরা মাছটিকে ব্যাপকভাবে উৎপাদনের জন্য ১৯৯৮-৯৯ সালে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে '৯৯ সালে ব্যাপকভাবে পোনা উৎপাদনে সক্ষম হয়েছি। এই মাছটি উৎপাদন করতে গিয়ে বিভিন্ন হাওড়-বাঁওড় থেকে জীবিত ব্রুড মাছ সংগ্রহ থেকে শুরু করে, ভৌত অবকাঠামো গড়ে তোলা দক্ষ জনবল তৈরি করাসহ অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে পোনা উৎপাদন ছিল অত্যন্ত- ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল একটি কাজ। আমার সমসাময়িক সময়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকেও শিং মাছের প্রজনন পদ্ধতি আবিষ্কারের কথা বলা হয়েছিল। এই প্রযুক্তিতে পুরুষ শিং মাছের টেস্টিজ কেটে স্টিপিং পদ্ধতিতে ডিম সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে। বাস-বে এই পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভিত্তিতে কখনই সফলতা বয়ে আনবে না। কারণ-

১. চাপ প্রয়োগ পদ্ধতিতে শিং মাছের ডিমের নিষিক্তের হার সাধারণত ৫% এর বেশি হয় না যা কখনই একজন খামারি বাণিজ্যিকভাবে সফলতা পাবে না।

২. বাণিজ্যিকভাবে শিং মাছের পোনা উৎপাদনের জন্য যে পরিমাণ শিং মাছের স্ট্রিপিং এর প্রয়োজন সে পরিমাণ শিং মাছকে স্ট্রিপিং করাও এক দুঃসাধ্য ব্যাপার। তা ছাড়া ওই প্রযুক্তিতে বাণিজ্যিকভাবে কেউ পোনা উৎপাদন করতে পারবে না। কিছু কিছু হ্যাচারি মালিকদের টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়ে ওই প্রযুক্তিটিকে টিকিয়ে রাখার প্রানান- চেষ্টা কিছুদিন লক্ষ্য করেছি। বাস-বে সেইসব হ্যাচারি মালিকরাও কিন্তু ওই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে না। শুধু টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারের লোভে এই অনৈতিক সাক্ষাতকার দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারা বাস-বে অনুসরণ করছে আমার প্রযুক্তি। প্রযুক্তি এমনই একটা জিনিস যা কোনদিন স্থায়ীভাবে ধরে রাখা সম্ভব হয় না। আমার ক্ষেত্রেও হয়েছে তাই। আমার এই প্রযুক্তিটি ১৯৯৯ সাল থেকে ব্যবহার করছি। ধীরে ধীরে এই প্রযুক্তিটি ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে।

শিং মাছের প্রজননে আমার নিম্নলিখিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বল্প বা বিশাল পরিসরে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে খুব সহজেই চাহিদা মাফিক যে কেউ শিং মাছের পোনা উৎপাদন করতে সক্ষম হবেন।



প্রজননক্ষম মাছ সংগ্রহ ও পরিচর্যা

পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, ১০/১১ মাস বয়সে একটি শিং মাছ প্রজননে সক্ষম হয়। সুস্থ ও সবল মাছ শতাংশ প্রতি পুরুষ স্ত্রী মাছ ৫০ : ৫০ অনুপাতে ২০০টি ব্রুড মাছ মজুদ করে নিয়মিতভাবে দেহের ওজনের ৫% হারে সম্পূরক খাবার দিতে হয়। ৩০% ফিস মিল, ২০% সরিষার খৈল, ৩০% অটোকুড়া, ১০% মিটবোন, ১০% ভূষি ও ভিটামিন প্রিমিক্স সহকারে সম্পূরক খাবার তৈরি করা যায়।



প্রজননের জন্য উপযোগী স্ত্রী ও পুরুষ মাছ বাছাই

সাধারণত এপ্রিলের প্রথম থেকে অক্টোবর মাস পর্যন- শিং মাছের প্রজননকাল। এই সময়ে স্ত্রী মাছের পেটে ডিম ভর্তি থাকে। পুরুষ মাছ স্ত্রী মাছ থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট থাকে এবং পেট স্বাভাবিক অবস্থায় দেখা যায়। প্রজনন করার জন্য পুরুষ মাছ স্বাভাবিক উদর ও স্ত্রী মাছের উদরে ডিম ভর্তি দেখে পরিপক্কতা সম্পন্ন মাছ বাছাই করে নিতে হয়।



শিং মাছের ইঞ্জেকশন পদ্ধতি

দুটি হরমোননের মাধ্যমে শিং মাছকে ইঞ্জেকশন করা যায়। যথা : পি. জি. দ্রবণ দিয়ে ইঞ্জেকশন : পুরুষ ও স্ত্রী মাছকে একটি করে ডোজ দিতে হয়। স্ত্রী মাছকে ৩০ মি. গ্রা. হারে অর্থাৎ ১ কেজি মাছের জন্য ৩০ মি. গ্রা. পি. জি. এর দ্রবণ প্রয়োগ করতে হয়। এরপর প্রতি কেজি পুরুষ মাছকে ৫/১০ মি. গ্রা. পি. জি. এর দ্রবণ দিয়ে ইঞ্জেকশন করা যায়।



এইচ.সি.জি. দ্রবণ দিয়ে

স্ত্রী শিং মাছকে এইচ.সি.জি. দিয়ে ইঞ্জেকশন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ৫০০০ আই.ইউ এর এইচ. সি.জি. এর একটি অ্যাম্পল দিয়ে ২/৩ কেজি স্ত্রী মাছের ইঞ্জেকশন করা যায়।

এছাড়া কৃত্রিম প্রজননের জন্য প্রথমে মাছ বাছাই করতে হয়। এক্ষেত্রে সমপরিমাণ পুরুষ ও স্ত্রী মাছ বাছাইয়ের পর পি.জি. দ্রবণের ইঞ্জেকশন দিতে হয়। অন্য একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, পুরুষ মাছের সংক্রান- স্ত্রী মাছের চেয়ে দেড়গুণ দিলে শিং মাছ বেশি ডিম দেয়।

প্রথমে প্রজননক্ষম উপযোগী স্ত্রী ও পুরুষ শিং মাছ সমান অনুপাতে প্রজনানঙ্গ বরাবর উপরের মাংশল স্থানে ইঞ্জেকশন করে পানির হাউজে ছেড়ে দিলে চলবে। তবে পুরুষ মাছ স্ত্রী মাছের তুলনায় কিছু বেশি দিলে সব স্ত্রী শিং মাছই ডিম ছাড়ে এবং ডিম নিষিক্তের হার ভাল হয়। ইঞ্জেকশন করে প্রাকৃতিক উপায়ে ২ ভাবে ডিম সংগ্রহ করা হয়।

১. হাঁপা পদ্ধতি এবং

২. সিস্টার্ণ পদ্ধতি।



১. হাঁপা পদ্ধতি

প্রথমে দৈর্ঘ্যে ১২ ফুট, প্রস্থে ৮ ফুট এবং ১ সে.মি. ফাঁক বিশিষ্ট পলিথিন জাতীয় একটি হাঁপা তৈরি করতে হবে। তারপর এই হাঁপাটিকে হাউজে এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যেন হাঁপার তলদেশ হাউজের তলা থেকে কমপক্ষে ৬ ইঞ্চি উপরে থাকে। এরপর হাউজের পানি ৩ ফুট উচ্চতায় ভরে কৃত্রিম ঝর্ণার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে স্রোতের সৃষ্টি হয়। এরপর মাছগুলোকে ইঞ্জেকশন দিয়ে হাঁপাতে ছাড়তে হবে। ইঞ্জেকশনের ১০/১২ ঘন্টা পরে প্রাকৃতিকভাবে শিং মাছ প্রজনন করবে। শিং মাছের ডিম হালকা আঠালো। ডিম দেয়ার পর ডিমগুলো হাঁপার ফাঁক দিয়ে সিস্টার্ণের তলায় পড়ে যাবে। ভোর বেলায় ডিম পারা শেষ হলে সেখান থেকে চিকন পাইপ দিয়ে সাইফন করে ডিমগুলো সংগ্রহ করতে হবে।



২. সিস্টার্ণ পদ্ধতি

মাছকে ইঞ্জেকশন করে সিস্টার্ণে ছেড়ে দিতে হবে। ১০/১২ ঘন্টা পর শিং মাছ প্রাকৃতিকভাবে ডিম দেয়া শেষ করবে। পরে ডিমগুলোকে সাইফন পদ্ধতিতে সংগ্রহ করতে হবে। সংগৃহীত ডিমগুলো ছোট ছোট সিস্টার্ণে (২/৩ ইঞ্চি উচ্চতায় পানিতে) ছড়িয়ে দিতে হবে। পরে ওই সিস্টার্ণে ০.৫ ইঞ্চি পিভিসি পাইপকে ছিদ্র করে ঝর্ণার ব্যবস্থা করতে হবে। এভাবে ১৮ থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা বের হবে। বাচ্চা হওয়ার ৩ দিনের মধ্যে ডিম্বথলী শোষিত হয়ে রেনু পোনায় পরিণত হয়। বাচ্চা ফুটে বের হওয়ার ৪৮ ঘন্টা পর ডিম্বথলী থাকা অবস্থাই খাবার খেতে পারে। এরা স্বগ্রোত্রভোজী হয়ে থাকে। তাই প্রতি ৩ ঘন্টা অন-র অন-র খাবার দিতে হয়। খাদ্য হিসেবে এদের ছোট লাল কেঁচো ব্লেন্ডারে মিহি করে সপ্তাহ দেড়েক খাওয়াতে হয় অথবা আটিমিয়া ফুটিয়ে খাওয়ালে সবচেয়ে ভাল হয়। আবার সিদ্ধ ডিমের কুসুম ভাল করে ছেকে রেনুকে খাওয়ালে চলবে। রেনুর বয়স ৪/৫ দিন হলে নার্সারি পুকুরে ছাড়তে হবে। অনেকেই শিং মাছকে চাপ প্রয়োগ পদ্ধতিতে রেনু উৎপাদনের কথা বলে থাকেন। আমার মতে চাপ প্রয়োগে শিং মাছের ডিম সংগ্রহ করে কোনদিনই বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়া যায় না।



আতুর পুকুর পোনা পালন প্রযুক্তি

৫ দিন বয়সের পোনা সিস্টার্ণ বা সিমেন্টের ট্যাংক থেকে চিকন রাবার নল দিয়ে সাইফন করে রেনু পোনা বের করে নার্সারিতে ছাড়তে হবে। নার্সারি পুকুরের আয়তন ১৫/২০ শতাংশ হলে ভাল হয়। প্রথমে নার্সারি পুকুরটির তলা শুকিয়ে হালচাষ করে শতাংশ প্রতি ৫-১০ কেজি গোবর ছিটিয়ে পুকুরে শ্যালো মেশিনের স্বচ্ছ পানি দিয়ে রেনু ছাড়তে হবে।



আতুর পুকুর প্রস্তুতির উল্লেখযোগ্য দিক

১. আতুর পুকুর বা নার্সারি পুকুরে যাতে কোন প্রকার ব্যাঙ, সাপ বা অবাঞ্ছিত কোন প্রাণী না ঢুকতে পারে সে জন্য পুকুরের চারপাশ জাল দিয়ে ভালভাবে ঘের দিতে হবে।

২. নার্সারি পুকুরে অতিরিক্ত খাদ্য প্রয়োগ করা যাবে না।

৩. নার্সারি পুকুরের খাদ্য হিসেবে ৫০% কুড়া এবং ৫০% শুটকি মাছের গুঁড়া একত্রে মিশ্রিত করে প্রতিদিন রেনুর ওজনের ২০০% প্রয়োগ করতে হবে।

৪. এরা সাধারণত রাতে খেতে পছন্দ করে। তাই খাবার রাতে ২বার প্রয়োগ করা যেতে পারে।

1 Response to "শিং মাছের পোনা উৎপাদন পদ্ধতি"

  1. ইনজেকশন এর ওষুধ কোথায় পাবো? ঠিকানা দিলে আপনারা কুড়িয়ার করে পাঠাবেন?

    উত্তরমুছুন

Iklan Atas Artikel

Iklan Tengah Artikel 1

Iklan Tengah Artikel 2

Iklan Bawah Artikel