আজকে প্রকাশিত চাকরির পরীক্ষার নোটিশ গুলো পাবেন

রোবট/যন্ত্রমানব

রোবট/যন্ত্রমানব


(সংকেত: ভূমিকা; রোবট কী; প্রথম রোবট; রোবটের গঠন ও কার্যপ্রণালী; রোবটের শ্রেণিবিভাগ; রোবটের ব্যবহার; বাংলাদেশে রোবট; আগামী দিনে রোবট ও এর সমস্যা; উপসংহার।)

ভূমিকা: প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে। মানুষের জীবনপ্রণালী এখন পুরোপুরি প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। তাই প্রযুক্তি বাদ দিয়ে আধুনিক জীবন কল্পনা করা যায় না। আর প্রযুক্তি নির্ভর বর্তমান বিশ্বে একটি অন্যতম সংযোজন হচ্ছে রোবট, বিভিন্ন কাজে যা মূলত মানুষের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মানুষের পক্ষে যে কাজ করা প্রায় দুঃসাধ্য, রোবট তা অনায়াসেই করতে পারে। মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই রোবটের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রোবট কী: রোবট শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে মানবসদৃশ কোনো যন্ত্র। আসলে রোবট শব্দটির উৎপত্তি চেক শব্দ ‘রোবোটা’ থেকে, যার অর্থ ফোরসড লেবার বা মানুষের দাসত্ব কিংবা একঘেয়েমি খাটুনি বা পরিশ্রম করতে পারে এমন যন্ত্র। রোবট হলো কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা, যা মানুষ যেভাবে কাজ করে ঠিক সেই ভাবেই কাজ করতে পারে অথবা এর কাজের ধরণ দেখে মনে হবে এর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আছে। রোবটের বহুমাত্রিক সংজ্ঞা দেয়া সম্ভব। সহজ ভাষায় বলা যায়, যে যন্ত্র নিজে নিজে মানুষের কাজে সাহায্য করে এবং নানাবিধ কাজে মানুষের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাই রোবট।

প্রথম রোবট: কে কবে কোথায় প্রথম রোবট তৈরি করেছিলেন তা নিয়ে পন্ডিত মহলে বিতর্ক রয়েছে। তবে ধারণা করা হয় মার্কিন-বৃটিশ বিজ্ঞানি উইলিয়াম গ্রে ওয়াল্টার প্রথম রোবট তৈরি করেন। তাঁর তৈরিকৃত প্রথম রোবটের নাম দেয়া হয়েছিল ‘টেসটিউডো’। যার ল্যাটিন অর্থ কচ্ছপ। এই রোবটটি বিভিন্ন প্রাণির কার্যকলাপ অনুকরণ করতে পারত। এই রোবটের চোখের যায়গায় বসানো ছিল আলোকতড়িৎ কোষ, স্পর্শ অনুভব করার জন্য ছিল আলোক সুবেদী যন্ত্র এবং তার চলাচলের জন্য ছিল একাধিক মোটর ও চাকা।

রোবটের গঠন ও কার্যপ্রণালী: রোবটের গঠন ও কার্যাবলীর প্রধান উপাদান হলো পাওয়ার সিস্টেম, সেন্সর, একচুয়েটর ও ম্যানিপুলেশন। পাওয়ার সিস্টেমের দ্বারা রোবট চালিত হয় অর্থাৎ এটি রোবটের বিদ্যুতের উৎস। এর কার্য প্রণালী নিয়ন্ত্রিত হয় একটি মাইক্রোকন্ট্রোলার দ্বারা। পরিবেশ থেকে তথ্য নিয়ে এই মাইক্রোকন্ট্রোলার বেশ কিছু কার্য সম্পাদন করে। রোবটের আশেপাশে কোনো বস্তু আছে কি নেই তা নির্ধারণ করার জন্য একটি সেন্সর ব্যবহার করা হয়। সেন্সর পরিবেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মাইক্রোকন্ট্রোলারে প্রেরণ করে। মাইক্রোকন্ট্রোলার তখন একচুয়েটরকে সক্রিয় করে রোবটের কার্য সম্পাদন করার জন্য এবং কোনো সেন্সর হতে কি ধরণের সিগন্যাল পেলে কি করতে হবে, কতক্ষণ করতে হবে, কোনো বস্তু কতক্ষণ ধরতে হবে এবং কোনো মোটর কতক্ষণ ঘুরাতে হবে, কত গতিতে ঘুরাতে হবে তা পরিচালনা করে ম্যানিপুলেশন।

রোবটের শ্রেণিবিভাগ: ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে রোবটের নানা শ্রেণিকরণ করা যায়। যেমন : শ্রমিক রোবট, যেগুলো শিল্প কারখানায় উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত হয়, গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত রোবট, চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত রোবট, মিলিটারি রোবট, বিনোদনে ব্যবহৃত রোবট, মহাকাশযানে ব্যবহৃত রোবট। এছাড়া আকৃতিগত ভিন্নতার দিক দিয়ে বিভিন্ন রোবট আছে। যেমন : সিলিন্ডার আকৃতির, গোলাকার বা বর্তুলাকার, আয়তকার, চাকাযুক্ত বিভিন্ন ধরণের রোবট আছে।

রোবটের ব্যবহার: রোবট প্রযুক্তির প্রথম থেকেই চেষ্টা করা হচ্ছে এমন একটা রোবট বানানোর জন্য, যা মানুষের মতো চলাফেরা করতে পারবে। এই লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত অনেকগুলো রোবট বানানো হয়েছে, যারা মানুষের মতো দুই পায়ে হাটতে না পারলেও ৪, ৬ বা তার চেয়ে বেশি পা ব্যবহার করে হাটতে পারে। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা সফল ‘আইকাব’ রোবটটি, কারণ এটি দুই পা ব্যবহার করে মানুষের মতো হাঁটতে পারে। তবে এদের চলার পথ মসৃণ হতে হয়। তবে ক্ষেত্র বিশেষে প্রয়োজন হলে এরা কিছুটা সিঁড়িও ভাঙ্গতে পারে। মানুষের কোনো সম্পৃক্ততা ছাড়াই চালিত হয় রোবট বিমান এবং ভ্রমণের প্রতিটি পর্যায়ে নিজেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। টেকঅফ, স্বাভাবিট ফ্লাইট, এমনকি ল্যান্ডিং এর মতো কাজগুলোও এটি একা একাই করতে পারে। ‘আরকিউ-৪ গ্লোবাল হক’ এই ধরণের একটি রোবট বিমান। ঘর পাহারা দেওয়ার কাজে একটি বিশেষ ধরণের রোবট ব্যবহার করা হয়। এতে রয়েছে একাধিক সিসি ক্যামেরা। কোনো বিপদ দেখলে মানুষকে এরা সাবধান করে দিতে পারে। গোয়েন্দাগিরির কাজেও এই ধরণের রোবটগুলো বিশেষভাবে পারদর্শী। ঘরের কাজে সাহায্যের জন্যেও আছে রোবট। এগুলো গৃহস্থালির নানা কাজে মানুষকে সহযোগিতা করে। তাছাড়া শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত হয় এক ধরণের রোবট যা মূলত মানুষের পক্ষে ভারী এমন জিনিস ওঠানামা বা পরিবহণের কাজে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া কারখানায় সংযোজন, প্যাকিং প্রভৃতি কাজে ব্যবহৃত হয় এই রোবট।

বাংলাদেশে রোবট: রোবট নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই। এই যন্ত্রের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা স্থাপনের কাজেও অনেকটা এগিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। পশ্চিমা বিশ্বে রোবট নিয়ে গবেষণা এগিয়েছে অনেক। বাংলাদেশও এক্ষেত্রে অবদান রাখার চেষ্টা করছে। রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৩ সালে তৈরি হয় বাংলা রোবট। যা বাংলা ভাষা বুঝতে পারে এবং নির্দেশ অনুসরণ করতে পারে এবং এটি হাজার হাজার মাইল দূর থেকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাছাড়া পানির নিচে চলাচলে সক্ষম রোবট নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণা হচ্ছে বাংলাদেশে। এই রোবট ব্যবহার করে সমুদ্রের গভীরে অনুসন্ধান চালানো সম্ভব হবে। রোবট নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। চলতি বছরের শুরুতে ভারতের বাণিজ্য নগর মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক রোবোটিক্্স চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানার আপ হয় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের তৈরি একটি প্রকল্প। এভাবে রোবট গবেষণায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

আগামী দিনে রোবট ও এর সমস্যা: রোবট বর্তমানে বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মানুষের বিকল্প হিসেবে এর কোনো জুড়ি নেই। বিশেষ করে কলকারখানায় মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব এমন কাজ এই যন্ত্র অনায়াসেই করে ফেলতে পারে। একই সাথে একটি রোবট অনেক মানুষের কাজ করতে পারে। আগামি দিনগুলোতে কর্মক্ষেত্রে মানুষের স্থান দখল করে নেবে রোবট, যেহেতু এই যন্ত্র মানুষের চেয়ে দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে কাজ করতে পারে। তাই ধারণা করা হচ্ছে যে আগামী দিনে এই রোবটের জন্যেই বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া বিভিন্ন দেশে বর্তমানে যুদ্ধের জন্যে রোবট তৈরি করা হচ্ছে, যা প্রকৃত অর্থে মানবজাতির জন্যে অকল্যাণ বয়ে আনবে।

উপসংহার: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আধুনিক নাগরিক জীবন গঠন তথা মানুষের জীবনে সার্বিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ ফিরিয়ে আনতে অবদান রাখছে। ফলে মানুষের জীবন পরিণত হয়েছে প্রযুক্তিনির্ভর এক আধুনিক জীবনে। যেখানে আধুনিক সভ্যতা, যেখানে নাগরিক জীবন সেখানেই ধরে নিতে হবে প্রযুক্তির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের কথা। এই প্রযুক্তির আশীর্বাদ নিয়ে এগিয়ে যেতে পারলে তা মানব কল্যাণে অপরিহার্য ভূমিকা রাখবে। তাই আমাদের ভালোর জন্যেই প্রযুক্তির ভালো দিকগুলোকে গ্রহণ করতে হবে আর প্রযুক্তির খারাপ দিকগুলোকে পরিত্যাগ করতে হবে ।

1 Response to "রোবট/যন্ত্রমানব"

Iklan Atas Artikel

Iklan Tengah Artikel 1

Iklan Tengah Artikel 2

Iklan Bawah Artikel