আজকে প্রকাশিত চাকরির পরীক্ষার নোটিশ গুলো পাবেন

ইবনে রুশদ

ইবনে রুশদ




১১৯৭ খ্রিস্টাব্দ। স্পেনের কর্ডোভা শহরের আলজামা মসজিদ। মসজিদটি অস্টম শতকে একটি চার্চ ছিল- কর্ডোভায় উমাইয়া বংশের স্থপতি আমির আবদুর রহমান চার্চটি কিনে মসজিদে রুপান্তরের নির্দেশ দিয়েছিলেন। স্বর্নালী গম্বুজবিশিষ্ট বিশাল মসজিদ- তারই সামনে নতশিরে দাঁড়িয়ে আছেন কর্ডোভা নগরের একজন মুক্তমনা লেখক ও স্বাধীন চিন্তাবিদ-রুশদ। তাঁকে অত্যন্ত বিমর্ষ দেখাচ্ছে, তাঁর পরনে শতছিন্ন ময়লা পোশাক। মসজিদে যারা ঢুকছে আর বেরুচ্ছে তারা সবাই দার্শনিকের গায়ে থুতু ফেলছে! কেন? কারণ রুশদ এমন কিছু বিশ্বাস করেন, এমন কিছু লেখেন- যার সঙ্গে কর্ডোভা নগরের লোকেদের বিশ্বাসের ফারাক আশমানজমিন । যেমন রুশদী বিশ্বাস করেন- জগৎ শ্বাশত, জগৎ ঈশ্বরদ্বারা সৃষ্ট নয় । দ্বিতীয়ত, ঈশ্বর নির্বিকার; কাজেই মানুষের কর্মকান্ডে ঈশ্বরের তথাকথিত স্বর্গীয় হস্তক্ষেপের প্রশ্নই আসে না। আর, সমগ্র মানবজাতির জন্য রয়েছে একটিই সক্রিয় বিচারবুদ্ধি বা রিজন, রুশদ যাকে বলেছেন ‘এজেন্ট ইন্টেলেক্ট’- যে কারণে মৃত্যুর পর ব্যাক্তিগত পুনুরুর্জ্জীবন অসম্ভব; এবং দার্শনিক মত বিরোধ থাকলেও নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিটি দার্শনিক মতই সত্য।

এই বিশ্বাসের জন্যই তাঁর এই নিগ্রহ। এই বিশ্বাসের জন্যই তাঁকে ধর্মান্ধদের চাপে কর্ডোভা নগর থেকে পার্শ্ববর্তী লোসীনিয়ায় নির্বাসিত করা হয়েছিল । কিন্তু, লোসীনিয়ায় কেন? ধর্মান্ধরা দাবী করেছিল, রুশদ এর পূর্বপুরুষ নাকি ঐ অঞ্চল থেকেই এসেছিল। লোসীনিয়া জায়গাটি ছিল ইহুদিঅধ্যুষিত। লোসীনিয়াবাসী অবশ্য অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গেই গ্রহন করেছিল রুশদকে । কেননা, প্রথমত: তাদের মধ্যে দর্শনের মতো স্বাধীন বিষয়ের চর্চা ছিল; দ্বিতীয়ত: তারা উপলব্দি করেছিল, ভবিষ্যতের মানুষ ইবনে রুশদকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করবে তাঁর স্বাধীন চিন্তার জন্য ।

রোমান সম্রাট হাদ্রিয়ানের (৭৬-১৩৮) শাসনামলে ইহুদিরা জুদাহ বিদ্রোহ করেছিল; সে সময় ৫ লক্ষ ইহুদিকে জুদাহ থেকে স্পেন নির্বাসিত করা হয়েছিল। ভিসিগথরা ছিল ৫ম শতকের জার্মানিক জাতি; এরা স্পেনসহ রোমান সাম্রাজ্যের কিয়দংশ জয় করেছিল। আরব অভিযানের আগে স্পেন শাসন করত ভিসিগথরা-তারা স্পেনের ইহুদিরা ওর জুলুম করত। ইসলামের প্রথম রাজবংশ উমাইয়া ; তাদের সময়ই অষ্টম শতকে স্পেন আরবদের করতলগত হয়। ইহুদিরা স্বাগত জানিয়েছিল স্পেনে মুসলিম অভিযানে। বেরবাররা ছিল উত্তর আফ্রিকার অন্ -আরব গোত্র। উমাইয়া সৈন্যরা বেরবার দের নিয়ে স্পেন জয় করে। এরপর স্পেনের শহরগুলি মুসলিম সংস্কৃতির কেন্দ্র হয়ে ওঠে। বিশেষ করে সেভিল ও কর্ডোবা অন্যতম । কর্ডোবা (আরবিতে কুরতুবা) হয়ে স্পেনে মুসলিম খেলাফনের কেন্দ্র। স্পেনে মুসলিম প্রভাবিত অঞ্চলকে বলা হয় আন্দালুসিয়া।

যা হোক। লোসীনিয়ায় রুশদের ওপর ধর্মান্ধদের নির্যাতন চলছিল। তিনি ফ্রান্সে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। সফল হলে না। মৌলবাদীরা তাঁকে আটক করে কর্ডোভায় এনে আলজামা মসজিদের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখে। স্পেনের সুলতান সেসময় ইয়াকুব মনসুর । রুশকে আগে থেকেই চিনতেন, লেখক হিসেবে গভীর শ্রদ্ধা করতেন। তিনি লোক পাঠিয়ে মোল্লাদের হাত থেকে দার্শনিকটিকে উদ্ধার করেন।

রুশদের বাড়িটি আলজামা মসজিদের কাছ থেকে খুব বেশি দূরে ছিল না। তাঁর পিতামহ আবদুল ওয়ালিদ মুহাম্মদ (মৃত্যু ১১২৬) আলজামা মসজিদেরই ইমাম ছিলেন; প্রধান বিচারকও ছিলেন তিনি। রুশদের পরিবারটি অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত ও শিক্ষিত। রুশদের পিতা আবদুল কাশিম আহমদও ছিলেন বিশিষ্ট আলেম ও প্রধান বিচারক । বাড়ির দিকে যেতে যেতে সে সব কথাই ভাবছিলেন রুশদ।

রুশদ এর জন্ম ৫২০ হিজরীতে (১১২৬ খ্রিস্টাব্দ) । জন্মকালীন নাম ছিল: আবু ওয়ালিদ মুহাম্মদ ইবনে রুশদ। পিতা ও পিতামহ বিদ্যানুরাগী ছিলেন বলেই তাদের বাড়িটি হয়ে উঠেছিল বিদ্যালয়। দূরবর্তী স্থান থেকে ছাত্ররা এসে থাকত, পড়াশোনা করত। বাবার কাছে শৈশবেই কোরান শিক্ষা হয়েছিল রুশদের। শৈশবেই ইমাম মালিক লিখিত মোতা (ফিকা শাস্ত্র ) মুখস্ত করে ফেলেছিল মেধাবী বালকটি। তারপর পাঠ্যসূচির অর্ন্তভূক্ত হল আরবি ব্যকরণ ও সাহিত্য। কাব্যের প্রতি বাল্যকাল থেকেই ছিল তীব্র অনুরাগ । তবে কার্ল মার্কসের মতোই সে অনুরাগ বিসর্জন দিতে হয়েছিল বাস্তবতার ফেরে। (বিংশ শতাব্দীর এক প্রখ্যাত পন্ডিতের মন্তব্য)

তবে দর্শনের প্রতি অনুরাগ ছিল গভীর।

সেকালে স্পেনের বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক ছিলেন আবু বকর মোহাম্মদ ইবনে বাজা। বাজার জন্ম স্পেনের সারাগোসায় হলেও কর্ডোভা নগরে এসে বাস করতেন। মৌলিক লেখা ছাড়াও বাজা অ্যারিস্টটলের ব্যাখ্যা লিখেছেন। তবে কম লিখেছেন বাজা । স্বাধীন চিন্তার অধিকারী ছিলেন বাজা- বিশ্বাস করতেন:‘ধর্মীয় রহস্যবাদ হৃদয়ের অন্তস্থলে যে প্রতিবিম্বকে প্রকট করে তা সত্যকে প্রকাশ না করে বরং আড়ালই করে।’ নিজস্ব মতামত প্রকাশ করার কারণে বাজাকে কারাবাস ভোগ করতে হয়েছিল। তখন বলেছি, রুশদের পিতা আবদুল কাশিম আহমদ সুপন্ডিত ও প্রধান বিচারক ছিলেন-তিনি বাজাকে মুক্ত করেন। কাজেই রুশদের পারিবারিক পরিমন্ডলের উদারতার বিষয়ে আঁচ পাওয়া যায়। বাজা-র কাছেই দর্শন ও চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন রুশদ।

১১৩৮ সালে মারা যান বাজা । বাজার অন্যতম শিষ্য ছিলেন তুফৈল (তোফায়েল?)

তিনিও দার্শনিক ছিলেন, কবিতাও লিখতেন। তুফৈল-এর অনেক বিশ্বাসের একটি ছিল: ‘গূঢ়চেতনা (ইনটুইশন) দ্বারা প্রত্যক্ষ বস্তুকে শব্দ দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না।’

তুফৈল ও বাজার উদ্ধৃতি থেকেই আমরা উপলব্দি করতে পারি তৎকালে অর্থাৎ দ্বাদশ শতকে মুসলিম দর্শন কোন্ স্তরে পৌঁছেছিল। অথচ, এই একুশ শতকেও বাংলায় দর্শন সেভাবে সুসংগঠিত হয়ে উঠল না! অবশ্য বাংলায় দর্শন কে বলে ভাব। সে দিক দিয়ে খামতি কোনওকালেই ছিল না -তবে মূলস্রোতের আলোচনার ধারাবাহিকতার প্রয়োজন ছিল। (এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা দেখুন: মশিউল আলম-রচিত প্লেটোর ইউটোপিয়া ও অন্যান্য প্রসঙ্গ। পৃষ্টা,৯। অবসর প্রকাশনী)

একই গুরুর অধীন শিষ্যদের বলা হয় গুরুভাই । তুফৈল ছিলেন রুশদের গুরুভাই। তুফৈল ঠিকই রুশদের ভিতরকার জ্ঞানের সুপ্ত আগুন টের পেয়েছিলেন। কর্ডোভার রাজদরবারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল তুফৈল-এর । সুলতান তখন মনসুরের পিতা ইউসুফ। অত্যন্ত বিদ্যানুরাগী সুলতান, অ্যারিস্টটলের দর্শন বিশ্লেষন করতে সক্ষম। সুলতান কে তুফৈল বললেন রুশদের লুক্কায়িত আগুন-প্রতিভার কথা। রুশদ ততদিনে পাঠ শেষ করে সদ্য অধ্যাপনায় নিযুক্ত হয়েছেন । আইনে সুপন্ডিত হলেও দর্শন ও চিকিৎশাস্ত্রেই তাঁর নাম ছড়িয়েছিল।

রুশদকে রাজদরবারে নিয়ে গেলেন তুফৈল। বয়স্ক সুলতান ইউসুফ নম্রস্বরে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার বাবা আবদুল কাশিম প্রধান বিচারক ছিলেন-না?

জ্বী। রুশদ মাথা নাড়ে। ভীষণ কুন্ঠা বোধ করছেন। সুলতানের সামনে এই প্রথম এলেন।

বেশ। তা হলে বল ঈশ্বর নিত্য না অনিত্য?

মানে মানে ... রুশদ নার্ভাস। কী উত্তর দেবে।

সুতান রসিক ছিলেন। বললেন, ঠিক আছে। আচ্ছা, বল তো সেভিল নগর সম্পর্কে তোমার কি ধারণা?

রুশদ এবার চট করে উত্তর দিলেন, সেভিলে পন্ডিত মারা গেলে তার বইগুলি কর্ডোভায় নিয়ে আসা হয়; আর কর্ডোভায় সংগীতজ্ঞ মারা গেলে তার বাদ্যযন্ত্রগুলি নিয়ে যাওয়া হয় সেভিলে।

হাঃ হাঃ হাঃ করে হেসে উঠলেন সুলতান। তারপর হাসি থামিয়ে বললেন, সেভিলে কাজীর পদ খালি আছে? সেভিলে যাবে কি?

রুশদ রাজী। অ্যারিস্টটলের অ্যানিমা (আত্মা) পড়ছেন। ধ্বনি সম্বন্ধে কিছু ভাবনা মাথায় এসেছে। আরবসংগীত নিয়ে গবেষনায় হাত দিয়েছেন। সেভিল সংগীততীর্থ। সেখানেই গবেষনার সুবিধা। তা ছাড়া, একটা চাকরিও তো জরুরি।

১১৬৯। সেভিলে এলেন রুশদ। শুরু হল ব্যস্ত জীবন । এ প্রসঙ্গে পরে লিখেছেন, ‘সরকারি কাজে আমায় এত ব্যস্ত থাকতে হয় যে শান্তচিত্তে লেখার অবসর পাইনা। তাই লেখাগুলি ক্রটিমুক্ত হচ্ছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না।’ তবে ঐ বছরই অ্যারিস্টটলের প্রাণিশাস্ত্রের ব্যাখ্যা লিখে সম্পূর্ন করেন। রুশদ মূলত অ্যারিস্টটলের রচনার টীকাভাষ্যের জন্যেই বিখ্যাত। তাছাড়া তিনি নব্যপ্লোটোবাদী ব্যাখ্যার হাত থেকে অ্যারিস্টটলের দর্শনকে রক্ষা করার চেস্টা করেন। (ঘটনাটি ঘটেছিল আল ফারাবির সময়ে) ... অ্যারিস্টটলের রচনার তিন ধরনের বয়ান করেছিলেন রুশদ। ১, সংক্ষিপ্ত প্যারাফেজ বা শব্দান্তরিত প্রকাশ কিংবা বিশ্লেষন। ২, পাঠ্যের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং ৩, আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা।

যাই হোক। কাজীর দায়িত্ব পালনের ফাঁকে ফাঁকে লেখা চলছিল। অত্যন্ত দয়ালু ছিলেন রুশদ। কাউকে মৃত্যুদন্ড দিতে হলে বিব্রত বোধ করতেন এবং এই বিব্রত বোধ করাটা রাজনৈতিক চাপে নয়। এ প্রসঙ্গে রুশদের জীবনীকার লিখেছেন,‘তিনি এতই দয়ালু ছিলেন যে কয়েক বছর কাজীর পদে কাজ করলেও কাউকে মৃত্যুদন্ড দেননি। এ রকম কোনো অবস্থা এলে স্বয়ং বিচারকের আসন ত্যাগ করে অন্য ব্যাক্তিকে সেখানে বসাতেন।’

স্পেনের মানচিত্রে সেভিল সুলতান ইউসুফ মারা গেলেন। তাঁর ছেলে ইয়াকুব মনসুর সুলতান হলেন । পিতার মতোই অত্যন্ত জ্ঞানপিপাসু ছিলেন মনসুর । রাজদরবারেই তত্ত্বালোচনা করতেন।

এদিকে, যা হয়, রুশদের সেভিলে আর ভাল লাগছিল না, কাজীগিরিও আর ভালো লাগছিল না। কাজীর পদে ইস্তফা দিয়ে কর্ডোবায় চলে আসেন রুশদ। সুলতান মনসুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। রুশদের সঙ্গে কথা বলে সুলতান যাকে বলে ইপ্রেসড। তারা বন্ধু হয়ে উঠলেন। এগারো বছর রুশদকে রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিলেন সুলতান মনসুর । এরই মধ্যে দর্শন গ্রন্থ ২৮টি, চিকিৎসাশাস্ত্র ২০টি, ফিকাশাস্ত্র ৬ টি, কলামশাস্ত্র ৪টি, জ্যোতিষ গণিত ৮টি, আরবী ব্যাকরণ ২টি লিখে শেষ করলেন রুশদ। প্রতিটা রচনাই লিখেছেন আরবী ভাষায়।

এরপর ঘনিয়ে এল বিপদ।

এর কারণ, আগেই বলেছি, রুশদের দার্শনিক বিশ্বাস হয়ে উঠেছিল গোঁড়াদের চক্ষুশূল। নবম শতক থেকেই দার্শনিক আল কিন্দি এবং আল ফারাবির মাধ্যমে ইসলামী দর্শনে গ্রিক দর্শনের প্রভাব পড়ছিল-যা গোঁড়ারা মেনে নিতে পারেনি। দার্শনিকদের ধ্বংস কামনা করে ইমাম গাজ্জালী (১০৫৮-১১১১) লিখেছেন: তাহাফুতুল ফালাসিফা। (দার্শনিকদের অসংলগ্নতা বা দার্শনিকদের ধ্বংস) যে বইয়ে ইমাম গাজ্জালী দাবী করলেন, জ্ঞানের ভিত্তি মানবীয় যুক্তিবুদ্ধি নয়- ঐশি প্রত্যাদেশ। ইমাম গাজ্জালীর যুক্তির জবাব দিয়ে রুশদ লিখলেন (তাহাফুত আল- তাহাফুত অসংলগ্নতার অসংলগ্নতা বা ধ্বংসের ধ্বংস।) সে গ্রন্থে ঐশি প্রত্যাদেশের পরিবর্তে রুশদ মানবীয় যুক্তিবুদ্ধির গুরুত্ব আরোপ করলেন। ইমাম গাজ্জালীর মত খন্ডন করে রুশদ লিখলেন,‘দার্শনিকগনের সমালোচনা শুধু তিনিই করতে পারেন, যিনি আন্তরিকভাবে দর্শনের গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন (গাজ্জালী ইবনে সিনা অপেক্ষা অধিক জ্ঞানী ছিলেন না)। গাজ্জালীর আক্ষেপের দুটি কারণ থাকতে পারে --হয় তিনি সর্বজ্ঞ ছিলেন তাই অন্যের অজ্ঞতায় আক্ষেপ করেছেন, কিন্তু এ কাজ অসৎ ব্যাক্তিরই শোভা পায়; নয়তো তিনি স্বয়ং ছিলেন অনভিজ্ঞ, আর অনভিজ্ঞ ব্যাক্তির আক্ষেপ মূর্খতা ছাড়া আর কিছু না।’

অ্যারিস্টটলের দর্শনের একটি প্রতিপাদ্য প্রকৃতির কার্যকারণের অনঢ় ও অলঙ্ঘনীয় বিধান-যা রুশদ মেনে নিয়ে ছিলেন। প্রকৃতির কার্যকারণ নিয়মকে অস্বীকার করে তাহাফুত আল ফালাসিফা গ্রন্থে ইমাম গাজ্জালী লিখেছিলেন, ‘এটা মেনে নিলে ‘কেরামত’ অর্থাৎ অপ্রাকৃত ঘটনা সম্বন্ধে ভ্রান্তি সৃষ্টি হবে এবং মনে রাখা দরকার ধর্মের বুনিয়াদ এই কেরামতের উপরই নির্ভরশীল।’

আমরা এ প্রসঙ্গে রুশদ এর গুরু আবু বকর মোহাম্মদ ইবনে বাজার একটি উক্তি স্মরণ করতে পারি। বাজা বিশ্বাস করতেন ‘ধর্মীয় রহস্যবাদ হৃদয়ের অন্তস্থলে যে প্রতিবিম্বকে প্রকট করে তা সত্যকে প্রকাশ না করে বরং আড়ালই করে।’ এ থেকে বোঝা যায় ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়াই চলছিল।

যা হোক, ইমাম গাজ্জালী উত্তরে রুশদ লিখলেন, ‘ যিনি কার্যকারণ নিয়মকেই অস্বীকার করেন তাঁর এটাও স্বীকার করার প্রয়োজন নেই যে প্রতিটি সৃষ্টি ও কার্যের পিছনে একজন কর্তার হাত আছে।’

ইমাম গাজ্জালী স্পেনের মুসলিম সমাজে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ছিলেন। কাজেই

স্পেনব্যাপী কাঠমোল্লারা রুশদের ওপর খেপে ভয়ানক উঠল। তাঁর বইগুলি আগুনে নিক্ষেপ করা হল। অনেকটা বাধ্য হয়েই সুলতান মনসুর রুশদের বিচার বসালেন। রুশদ যদিও ঘনিষ্ট বন্ধু, তবু তাঁর পক্ষ নিলে জনগন, ধর্মনেতা, সাধারণ সৈন্যরা আর সামন্তরা সব সুলতানের বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠবে। এদের খুশি করেই তো ক্ষমতায় টিকে থাকতে হয়! যা হোক। বিচারের পর রুশদকে নির্বাসিত করা হল কর্ডোভা শহর পার্শ্ববর্তী ইহুদিঅধ্যুষিত লোসীনিয়ায়-সে কথা আগেই বলেছি। লোসীনিয়ায় মানসিক পীড়ন ও শারীরিক নির্যাতন অব্যাহত থাকলে ফ্রান্সে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন রুশদ। পারেননি। ইমাম গাজ্জালীর চ্যালারা তাঁকে ধরে কর্ডোভায় এনে আলজামা মসজিদ সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল হেনস্থা করার জন্য ।

সুলতান মনসুর নিজেও জ্ঞানের সাধক বলেই প্রবল অনুতাপে ভুগছিলেন। তিনি রুশদকে ডেকে পাঠালেন। বললেন, যথেষ্ট হয়েছে। আমি আপনার বিরুদ্ধে মোল্লাতন্ত্রের সকল অভিযোগ উঠিয়ে নিচ্ছি। আপনি মরক্কো যান। মারকাশ নগরে কাজীর পদ শূন্য হয়েছে। অনুগ্রহ করে যোগ দিন। কথা দিচ্ছি, আপনার লেখা বই পোড়ানো হবে না।

রুশদী আর কি বলবেন। তিনি মরক্কোর মারকাশ নগরে গেলেন। টের পেলে সময় ফুরিয়ে দ্রুত আসছে। কী অদ্ভুত কেটে গেল গোটা একটা মানবজীবন। তবে তিনি তৃপ্ত। কেননা, তিনি লেখক। জীবনে কম তো আর লেখেননি। হ্যাঁ। এখন সর্বভূতে বিলীন হওয়াই যায়।

১১৯৮ খ্রিষ্টাব্দ। ডিসেম্বর ১০; মেধাবী। দার্শনিকটি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ।

বলা হয় রুশদ মুসলিম দর্শনের শেষ অধ্যায়, খ্রিষ্টান দর্শনের প্রথম অধ্যায়। ইহুদি দর্শনেও রুশদ-এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ন । স্পেনের ইহুদি দার্শনিক ইবনে মৈমুন (Maimonides); তিনিই প্রথম রুশদের মহত্ত্ব উপলব্দি করেন। এবং রুশদের প্রতি ইহুদি দার্শনিকদের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। ইহুদি দার্শনিকরা রুশদের চিন্তার গভীরতায়, রচনাশৈলীতে মুগ্ধ হয়ে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই ইউরোপে শিক্ষিত মহলে রুশদের লেখা প্রচার করা দায়িত্ব গ্রহন করেন।

ত্রয়োদশ শতকে লাতিন ভাষায় রুশদ রচনাবলী অনুবাদ করেন প্রখ্যাত পন্ডিত মাইকেল স্কট । এরপর ইউরোপের বিদগ্ধ মহলে সাড়া পড়ে যায়। পরবর্তী শতকগুলিতে ইউরোপের ভাবজগতে রুশদ-এর বক্তব্য গভীর প্রভাব ফেলতে থাকে । এ প্রসঙ্গে বারট্রান্ড রাসেল লিখেছেন: ‘পেশাদার দর্শনের অধ্যাপক ছাড়াও বিশালসংখ্যক মুক্তচিন্তার অধীকারীদের বলা হল Averroists বা রুদশবাদী ; বিশেষ করে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে রুশদের অনুরাগীর সংখ্যা ছিল ব্যাপক।’ (দ্র: হিস্ট্রি অভ ওয়েস্টার্ন ফিলসফি। পৃষ্ঠা, ৪২০) রুশদের সবচে বেশি প্রভাব পড়েছিল ফ্রান্সিসকান সম্প্রদায়ের ওপর। সম্প্রদায়টির প্রবর্তক সাধু ফ্রান্সিস (১১৮২-১২২৬) ত্রয়োদশ শতকে বিলাসিতায় নিমজ্জ্বমান পোপ ও তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষনা করেছিলেন।

যা হোক। ফারাবির মতোই রুশদের দর্শন অ্যারিস্টটল ও নব্যপ্লোটোবাদের সংমিশ্রন।

যে দর্শনের প্রধান আলোচ্য সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় বুদ্ধিমত্তার প্রসঙ্গ। ইবনে সিনা বিশ্বাস করতেন সক্রিয় বুদ্ধিমত্তা বিশ্বজনীন ও স্বতন্ত্র্য এবং নিষ্ক্রিয় বুদ্ধিমত্তা ব্যাক্তিনির্ভর এবং আত্মিক। পক্ষান্তরে রুশদ বিশ্বাস করতেন সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় বুদ্ধিমত্তা উভয়ই বিশ্বজনীন ও স্বতন্ত্র্য। এর মানে, একের মধ্যেই সব। অর্থাৎ শাশ্বত এক বিশ্বের ধারণা ছিল রুশদের। তাঁর মতে, আত্মা দুটি ভাবে বিভক্ত। (ক) ব্যাক্তিক ও (খ) স্বর্গীয়। ব্যাক্তিক আত্মা শাশ্বত নয়; প্রাথমিক স্তরে প্রতিটি মানুষ স্বর্গীয় আত্মা ধারণ করে। যে কথাটিই প্রারম্ভে আমি অন্যভাবে বলেছি- সমগ্র মানবজাতির জন্য রয়েছে একটিই সক্রিয় বিচারবুদ্ধি বা রিজন (এজেন্ট ইন্টেলেক্ট)- যে কারণে মৃত্যুর পর ব্যাক্তিগত পুনুরুর্জ্জীবন সম্ভব না। ...এসব কারণেই মধ্যযুগের খ্রিস্টান পন্ডিতেরা রুশদকে শয়তান ঠাউরেছিল। মধ্যযুগের ইতালির কবি দান্তে রচিত ‘ডিভাইন কমিডির’ কথা আমরা জানি। সে কাব্যে খ্রিষ্টীয়রাজ্যের পাপীদের ভয়ঙ্কর শাস্তির বর্ণনা রয়েছে। কাউকে জীবন্ত কবর দেওয়া হচ্ছে বা কাউকে বরফে ফেলে রাখা হচ্ছে। নরকে খ্রিষ্টান পাপীরা যেমন রয়েছে অখ্রিষ্টান লেখকরাও রয়েছেন। দান্তে তাদের নাম করেছেন। অ্যারিস্টটল সক্রেটিস প্লাটো গালেন যেনো সেনেকা আর ...আর আভেরস ... ইবনে রুশদ ...অথচ ধর্মবিশ্বাসীদের প্রতি রুশদী একেবারেই হস্টাইল (আক্রমানত্বক) ছিলেন না। কেননা, তিনি বিশ্বাস করতেন ধর্ম ও দর্শনের মধ্যে মূলত কোনও বিরোধ নেই। তাঁর মতে- একই সত্যে পৌঁছবার জন্য ধর্ম ও দর্শন দুটি ভিন্নপথ মাত্র। কথটি অন্যভাবে বলা যায়: সত্যের জ্ঞান দুই প্রকার। প্রথমত: বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত সত্য যা প্রমাণ অসম্ভব এবং যা বোঝার জন্য বিশেষ শিক্ষারও দরকার হয় না। সত্যের দ্বিতীয় জ্ঞানই হল দর্শন। যা স্বল্পসংখ্যক ব্যাক্তিরই মাত্র বোধগম্য, যাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা রয়েছে, যাদের দার্শনিক শিক্ষা অর্জনের অসীম ধৈর্য রয়েছে ।

মধ্যযুগের শেষ প্রান্তে পৌঁছে মানবজাতির ইতিহাসের দীর্ঘযাত্রার পথটি বিশ্বাস ও যুক্তির -এই দুদিকে বাঁক নিল- তার অন্যতম নির্দেশক দ্বাদশ শতকের স্পেনের মুসলিম দার্শনিক আবু ওয়ালিদ মুহাম্মদ ইবনে রুশদ। যে কারণে আজও পশ্চিমব্যাপী তাঁর আশমানতুল্য জনপ্রিয়তা ... আল ফারাবি ও ইবনে সিনার প্রদর্শিত পথ ধরে ইউরোপের জ্ঞানরাজ্যের বিশ্বাস ও যুক্তির দুটি ভিন্ন পথের দিকনির্দেশনা সুস্পস্ট করে দিয়েছিলেন রুশদ- কেবলি অন্ধবিশ্বাসের ওপর গুরুত্ব না দেওয়ায় তাঁর বইপত্র মোল্লাতন্ত্র পুড়িয়ে ফেলেছিল, যে কারণে আজও মুসলিম বিশ্বে তিনি উপেক্ষিত ...

বারট্রান্ড রাসেল-এর হিস্ট্রি অভ ওয়েস্টার্ন ফিলসফি এবং রাহুল সাংকৃত্যায়নের দর্শন দিগদর্শন (প্রথম খন্ড ) অবলম্বনে।

ইবনে রুশদ এর কয়েকটি মজার ঘটনাঃ
এক.

খলিফা ইয়াকুবের দরবার। জ্ঞানী গুনী পরিবেষ্টিত খলিফা আজ বেশ চিন্তিত। চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে তার চেহারায়। তার উজিরদের মাঝে শুরু হয়েছে গুন্জ্ঞন। অবশেষে একজন শুরু করলেন:

"আমিরুল মুমিনীন। আমায় ক্ষমা করবেন। আপনাকে আজ বেশ পেরেশান মনে হচ্ছে।"

"ঠিকই ধরেছ ইবনে তুফায়েল। আমি আজ কিছুটা বিভ্রান্ত।"

"বেয়াদবী না নিলে জানতে পারি এর কারন?"

"ভাবছিলাম এরিস্ততলের বইগুলোর কথা। কি কঠিন, জটিল। সাধারনের বোধগম্যের বাইরে। কেউ যদি এর সারবত্তাটুকু সাধারনের জন্য সহজ ভাষায় লিখে দিত তবে তা আমজনতার জন্য কতই না কল্যানকর হত। তুফায়েল, সেরকম কারো সম্পর্কে তুমি কি কিছু জান?" খলিফা তার উজির তুফায়েলের দিকে চাইলেন।

"আমিরুল মুমিনিন। আমি আপনার উজির, আমার কাজ আপনাকে পরামর্শ দেয়া। সেরকম মানুষ একজনই আছেন এই আন্দালুসিয়াতে।" থামলেন ইবনে তুফায়েল।

"আছে সেরকম কেউ? অথচ আমি জানি না। কে তিনি আবু বকর?" উদ্বিগ্ন হয়ে খলিফা জানতে চান।

"তিনি অপরিচিত কেউ নন। স্বনামধন্য কাজী আবুল কাসিমের পুত্র। তার নাম আবু ওয়ালিদ।"

"আবুল কাসিম? যিনি মোরাবিতদের বিচারক ছিলেন?"

"জ্বি তিনিই।" ইবনে তুফাইল জানালেন।

"ঠিক আছে। তাকে আমার সাথে দেখা করতে বল।"

"তিনি এই দরবারেই আজ হাজির রয়েছেন, আমিরুল মুমিনিন। আপনি চাইলে তিনি আপনার সাথে একান্তে আলাপ করতে পারেন।" ইবনে তুফাইল ইংগিত করলেন নূতন আগন্তুকের দিকে। দরবারের তখন মনোযোগ সে আগন্তুকের প্রতি।

খলিফা দৃষ্টি দিলেন আগন্তুকের দিকে। একটু থেমে আচমকা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, "দার্শনিকরা এ বিশ্বের সৃষ্টির বিষয়ে কি বলে? তা কি শ্বাশত, নাকি সময়ের শুরুতে তৈরী করা।"

আগন্তুক বুঝতে পারলেন প্রশ্নটা তাকে উদ্দেশ্য করে করা। খুব খুশী বলে মনে হল না। তিনি জানেন এসব বিষয় আমজনতার মাঝে কতটা বিতর্ক তৈরী করেছে। আমতা আমতা করে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইল। খলিফা ফিরলেন ইবনে তুফায়েলের দিকে।

"দেখো তুফায়েল। প্লেতো কিন্তু আরিস্ততলের ঠিক উল্টোটা বলেছেন। আরিস্ততল যেখানে বিশ্বকে অনাদি দাবী করেছেন, প্লেতো দাবী করেছেন তা সৃষ্ট।" আগন্তুকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, "আপনি কি কিছু জানেন?"

আগন্তুকের দ্বিধা কাটতে শুরু করল। খলীফাকে একজন সত্যিকারের সমঝদার বলে মনে হল তার। মহাবিশ্ব নিয়ে দার্শনিকদের এসব ধ্যান ধারনার সাথে আগন্তুক খুব ভালভাবেই পরিচিত। অনেকটা নির্ভয়ে শুরু করলেন আলোচনা। ধীরে ধীরে খুলতে লাগলেন দর্শনের নানা জট। নিবিষ্ট শ্রোতার ভূমিকায় খলীফা শুনতে লাগলেন।

খুশী হলেন খলীফা। "তুফায়েল আপনার বিষয়ে ঠিকই বলেছে। আপনার পক্ষেই আরিস্ততলের সারাংশ লেখা সম্ভব। আর প্লাতোর রিপাবলিকের মুখবন্ধ আপনি লিখুন, তাও আমি চাই। এ গুরু দায় আপনাকেই দেয়া হল। এছাড়া সেভিলে কাজীর পদ অলংকৃত করবেন। বংশ পরষ্পরার এ ধারায় আপনিই তার যোগ্য উত্তরসূরী। বংশ পরষ্পরায় মোরাবিতদের বিশ্বস্ত ছিলেন বলে ভাববেন না আমি আপনার উপর বীত শ্রদ্ধ। আপনি আপনার পেশাগত দায়িত্ব সম্পূর্ন স্বাধীন ভাবে পালন করবেন।" খলিফার আচরন আশ্বস্ত করল আগন্তুককে।

আগন্তুকের আশংকা কেটে গেল। উৎফুল্ল চিত্তে তিনি খলীফার দরবার ত্যাগ করলেন।

দুই.

পয়ত্রিশ বছর পরের কথা।

সেদিনের সেই আগন্তুক আজ বাহাত্তর বছরের বৃদ্ধ, যার জীবনী শক্তি প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। স্মৃতিচারনে তিনি ভুলে যেতে চান তিক্তময় অতীত, তবু তা দুঃসহ যন্ত্রনা হয়ে বার বার বুকে আঘাত করে। ভেবেছিলেন ইসালার নির্বাসন থেকে ফিরে এসে হয়তবা মর্ম বেদনা কম হবে। কিন্তু তিল তিল করে গড়ে তোলা বইগুলো যে তার জীবনের আরেক পিঠ, সে ধ্বংসের বেদনা এই মৃত্যু প্রহরের বেদনার চেয়েও অন্তর্ঘাতী।

আপনি কাফের .............। মুসলমানের বাচ্চা এসব করতে পারে না, মুসলমান ভাবতে পারে না, লিখতে পারেনা .................। চাবুকের মত বাক্যগুলো বৃদ্ধকে আবারো আঘাত হানে। সব কি ভুলে যাওয়া যায়। কল্পনায় ভেসে উঠে সেই সালিশ ........। যে মানুষটি নিজেই সারা জীবন বিচারকের ভূমিকায় ছিলেন, জীবনের শেষ আদালতে কিনা তারই বিচার হয়েছে....। ভাগ্যের কি পরিহাস। জীবনের ফোটা ফোটা ঘাম ঝরানো অতন্দ্র প্রহরের সাধনার সব লিপির আগুন পড়া ছাই মনের ভেতর আবার আগুন হয়ে দাউ দাউ জ্বলে। একটা জীবনের সাধনা ......। কতই না মূল্যহীন .............।

স্বপ্নের কর্ডোভাতে হাজারো মানুষের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে খলীফা তাকে একদিন সম্মানের সাথে কাছে ডেকে নিয়েছিলেন, সেই তিনিই কিছু উন্মত্ত অন্ধ মানুষের কাছে আত্ম সমর্পন করতে দ্বিধা করলেন না। হায়রে রাজনীতি .......। যে দর্শন ছিল গর্ব অহংকারের বিষয়, তাই শেষে হয়ে গেল গলার কাটা।

জিহাদ শেষ হয়েছে। রক্ষনশীলদের প্রয়োজন খলীফার কাছে ফুরিয়েছে ...। মনে হয়েছে সেই নির্বাসিত বৃদ্ধ দার্শনিকের কথা। হয়ত বা কিছুটা অনুতপ্তও............... নির্বাসন দন্ড স্থগিত করে আবার তাই ফিরিয়ে আনা হয়েছে মারাকেশে। সমাজে তার মুসলমানিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করার কেউ নেই। হারানো সম্মান আবার তার আপন ঠিকানা খুজে পেয়েছে।

তবুও শুধু হাহাকার। বিষন্নতা তার পিছু ছাড়ে না। হঠাৎ পড়ার ঘরটায় ঢুকলে যেন রাশি রাশি বই চোখে পড়ে। আবারো নেচে উঠে মন প্রান। ঐ তো তার সব লেখা বই......, নিজের হাতে লেখা......... দিনের পর দিন বছরের পর বছরের সাধনা। কিছুই নষ্ট হয় নি। সব অকৃত্রিম রয়েছে।

না কোথায়। হতাশ হন তিনি। সব ভুল, চোখের ধাধা। সে সব বই যে সব ছাই হয়ে গিয়েছে। বুক শেলফটা রয়েছে ঠিকই। নেই তাতে প্রান।

দূরে মসজিদের প্রাঙ্গন থেকে ভেসে আসে আজান। ভগ্ন প্রান বৃদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলে নামাজে দন্ডায়মান হবার প্রস্তুতি নেয়। দখিনের এক ঝাপটা বাতাস তাকে এলোমেলো করে দিয়ে যায়। সে বাতাসে যেন তিনি ফিসফিস শুনতে পান, "হতাশ হবে না। তোমার সব সম্পদ এই পৃথিবীতেই রয়েছে। পৃথিবী একদিন সে গুপ্তধন খুজে নেবেই।"

☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "ইবনে রুশদ"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Iklan Atas Artikel

Iklan Tengah Artikel 1

Iklan Tengah Artikel 2

Iklan Bawah Artikel