আজকে প্রকাশিত চাকরির পরীক্ষার নোটিশ গুলো পাবেন

পিথাগোরাস

পিথাগোরাস




( খ্রিস্টপূর্ব ৫৭০– খ্রিস্টপূর্ব ৪৯৫)

সামোসের পিথাগোরাস ছিলেন এক জন আয়োনীয় গ্রিক দার্শনিক, গণিতবিদ এবং পিথাগোরাসবাদী ভ্রাতৃত্বের জনক যার প্রকৃতি ধর্মীয় হলেও তা এমন সব নীতির উদ্ভব ঘটিয়েছিল যা পরবর্তীতে প্লেটো এবং অ্যারিস্টটলের মতো দার্শনিকদের প্রভাবিত করেছে। তিনি এজিয়ান সাগরের পূর্ব উপকূল অর্থাৎ বর্তমান তুরস্কের কাছাকাছি অবস্থিত সামোস দ্বীপে জন্মেছিলেন। ধারণা করা হয় শৈশবে জ্ঞান অন্বেষণের তাগিদে মিশর সহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। ৫৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে ইতালির দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত গ্রিক কলোনি ক্রোতোনে চলে যান, এবং সেখানে একটি আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক ভ্রাতৃত্বমূলক সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর অনুসারীরা তাঁরই নির্ধারিত বিধিনিষেধ মেনে চলত এবং তাঁর দার্শনিক তত্ত্বসমূহ শিখত। এই সম্প্রদায় ক্রোতোনের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে যা তাঁদের নিজেদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। এক সময় তাঁদের সভাস্থানগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং পিথাগোরাসকে বাধ্য করা হয় ক্রোতোন ছেড়ে যেতে। ধারণা করা হয় জীবনের শেষ দিনগুলো তিনি দক্ষিণ ইতালিরই আরেক স্থান মেতাপোন্তুমে কাটিয়েছিলেন।

পিথাগোরাস ছিলেন প্রাচীন গ্রীসের প্রথম গণিত বিষারদদের অন্যতম। এই অসামান্য গণিত প্রতিভা সম্ভবত খ্রিষ্টপূর্ব ৫৮৪ সালে এশিয়ার মাইনরের পশ্চিম তীরে গ্রীকদের Loian উপনিবেশ সামোস এ জন্মগ্রহন করেন। জানা যায় ৫২৫ খ্রিষ্টপূর্বে তিনি দক্ষিণ ইতালির দোরিয়ান উপনিবেশের অন্তর্গত ক্রোতনা শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি দর্শন ও গণিতশ্রাস্ত্রের উপর বক্তৃতা দিতেন। তার বক্তৃতা কক্ষ সবসময় উৎসাহীদের দ্বারা পরিপুর্ণ থাকত। উচ্চ শ্রেণীর অনেকেই তার বক্তৃতা শুনতে আসত। তখনকার সময়ে মহিলাদের জন্য সাধারণ সভায় মহিলাদের অংশগ্রহন নিষিদ্ধ থাকলেও পিথাগোরাসের সভায় মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।

পিথাগোরাসের অনুগামী ছিলেন তার গৃহস্বামী মিলো (Milo) এর সুন্দরী কন্যা থিয়ানো (Theano), তাঁকে তিনি পরবর্তীতে বিবাহ করেছিলেন। তিনি তার স্বামীর জীবনী রচনা করেছিলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য যে সেটি পরবর্তীতে হারিয়ে যায়।

পিথাগোরাস ম্যাগনা গ্রিসিয়া(Magna Graeccie) তে একটা শিক্ষাকেন্দ্র খুলেন এবং সেখানে অনেক শিক্ষার্থী সমাগম হয়। ছাত্রদের উপর মহান শিক্ষক পিথাগোরাসের প্রভাব এত বেশি ছিল যে সেখানকার শিক্ষার্থীরা ক্রমে নিজেদের মাঝে একটা ভ্রাতৃসংঘে পরিনত হয়…তারা Order of the Pythagorians অর্থাৎ পিথাগোরাসের সেবক রূপে পরিচিত হয়।

গণিত শাস্ত্রে পিথাগোরাসঃ সংখ্যাতত্ত্ব এবং ত্রিমাত্রিক ও ক্ষেত্রফল সম্পর্কীয় জ্যামিতি শাস্ত্রে পিথাগোরাস অনেক বেশি অবদান রাখেন। তখন ভাতৃসংঘের রীতি ছিল সকল উদ্ভাবন পিথাগোরাসের বলে বিশ্বাস করা তাই উপপাদ্য গুলোর প্রতিটির উদ্ভাবক কে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তারা জ্যামিতির মাধ্যমে পাটি গণিতের ভিত্তি স্থাপন করে কিন্তু অমূলদ সংখ্যার ব্যাখ্যা করতে ব্যার্থ হয় এবং এসব অন্যদের উদ্ভাবন গুলো আলেকজেন্দ্রিয়াতে এনে ইউক্লিড তার বই ‘The Elements’ এ প্রকাশ করেন।

পিথাগোরাস মিশরের পুরোহিতদের কাছ থেকে পরিমিতি সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করেন,তিনি মেজের উপর খুঁটিগুলোর ছায়াদ্বারা উৎপন্ন সুক্ষ রেখা গুলো তীক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষন করতেন। শিক্ষক থেলস থেকে তিনি জ্যামিতি সংক্রান্ত অনেক তথ্য শিখেছিলেন। পিথাগোরাস চিত্র-বিচিত্র করা মেঝেতে আঁকা পর্যায়ক্রমিক বর্ণময় বর্গক্ষেত্রের সারির দিকে তাকান এবং সংখ্যার প্রতি উৎসাহ বশত তিনি বর্গক্ষেত্রগুলোর সংখ্যা গণনা করেন। বর্গক্ষেত্রগুলোর আকার,বৃহত্তর বর্গক্ষেত্রের অভ্যন্তরে অবস্থিত ক্ষুদ্র বর্গক্ষেত্র এবং ছায়াগুলোর অবস্থান থেকে উদ্ভাবন করলেন এক নতুন যুগান্তকারী উপপাদ্য…সমকোণী ত্রিভুজের এক বাহুর উপর বর্গ অন্য দুই বাহুর উপর বর্গের সমষ্টির সমান।

পিথাগোরাস আরও বিমূর্ত বিষয়ের প্রতি আগ্রহী ছিলেন…বলা হয় তিনি সঙ্গীতের সুরের সংকেত,বাদ্যযন্ত্রের তারের দৈর্ঘ্য স্বরগ্রাম বা পিচ এর মধ্যকার সম্পর্ক হতে আশ্চর্যজনক harmonic progression আবিষ্কার করেন। আর একটি সমস্যা যা পিথাগোরাসকে উৎসাহিত করেছিল, method of the application of areas বা ক্ষেত্রফল প্রয়োগ পদ্ধতি। এর সমাধানে তিনটি সম্ভাব্য চিত্র উপস্থাপন করেন যাদের নাম তিনি দিয়েছিলেন প্যারাবোলা,ইলিপস এবং হাইপারবোলা

একদা এরিস্টটল মন্তব্য করেছিলেন,”পিথাগোরিয়ানরা প্রথমে নিজেদের গণিতের সাথে মিশিয়ে নিয়েছিলেন,তারা গনিতকে সমৃদ্ধ করেছিলেন,গণিতের মধ্যে প্রবেশ করে মুগ্ধ হয়েছিলেন এই দেখে যে সবকিছুর মূলনীতি হল গণিত”

পিথাগোরাস কিছু লেখেননি এবং সমসাময়িক কারও রচনাতেও তার সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না। উপরন্তু ১ম খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে তাঁকে বেশ অনৈতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হতে থাকে। সে সময় ভাবা হত পিথাগোরাস এক জন স্বর্গীয় স্বত্তা এবং গ্রিক দর্শনে যা কিছু সত্য (এমনকী প্লেটো এবং অ্যারিস্টটলের চেয়েও অনেক পরিণত চিন্তাধারা) তাঁর সবই তিনি শুরু করেছেন। এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে এমনকী কিছু গ্রন্থ পিথাগোরাস ও পিথাগোরাসবাদীদের নামে জাল করা হয়েছিল। তাই তাঁর সম্পর্কে সত্যটা জানার জন্য মোটামুটি নির্ভেজাল এবং প্রাচীনতম প্রমাণগুলোর দিকে তাকাতে হবে। কারণ স্পষ্টতই পরবর্তীরা তাঁর ব্যাপারে তথ্য বিকৃতি ঘটিয়েছিল। বর্তমানে পিথাগোরাস প্রধাণত গণিতবিদ ও বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত হলেও প্রাচীনতম প্রমাণ বলছে, তাঁর সময় বা তাঁর মৃত্যুর দেড়শো বছর পরও প্লেটো ও অ্যারিস্টটলের সময়ও তিনি গণিত বা বিজ্ঞানের জন্য বিখ্যাত ছিলেন না। তখন তিনি পরিচিত ছিলেন, প্রথমত, মৃত্যুর পর আত্মার পরিণতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসাবে যিনি ভাবতেন আত্মা অমর এবং ধারাবাহিক ভাবে তাঁর অনেকগুলো পুনর্জন্ম ঘটে, দ্বিতীয়ত, ধর্মীয় আচারানুষ্ঠান বিষয়ে পণ্ডিত হিসাবে, তৃতীয়ত, এক জন ঐন্দ্রজালিক হিসাবে যাঁর স্বর্ণের ঊরু আছে এবং যিনি একই সঙ্গে দুই স্থানে থাকতে পারেন এবং চতুর্থত, একটি কঠোর জীবন ব্যবস্থা যাতে খাদ্যাভ্যাসের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং আচারানুষ্ঠান পালন ও শক্ত আত্ম-নিয়ন্ত্রয়ণের নির্দেশ আছে তার জনক হিসেবে।

কোনগুলো পিথাগোরাসের কাজ আর কোনগুলো তার উত্তরসূরিদের কাজ তা নির্ধারণ করা বেশ কষ্টকর। তার পরও ধারণা করা হয় পিথাগোরাস বস্তু-জগৎ ও সঙ্গীতে সংখ্যার গুরুত্ব ও কার্যকারিতা বিষয়ক তত্ত্বের জনক। অন্যান্য প্রাক-সক্রেটীয় দার্শনিকের মতো তিনিও বিশ্বতত্ত্ব নিয়ে ভেবেছিলেন কিনা এবং আসলেই তাঁকে গণিতবিদ বলা যায় কিনা এ নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে প্রাচীনতম নিদর্শন বলছে, পিথাগোরাস এমন একটি বিশ্বজগতের ধারণা দিয়েছিলেন যা নৈতিক মানদণ্ড এবং সাংখ্যিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গঠিত। প্লেটোর মহাজাগতিক পুরাণে যে সব ধারণা পাওয়া যায় তার সঙ্গে এর বেশ মিল আছে। বিভিন্ন সংখ্যার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে তিনি খুব আগ্রহী ছিলেন যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ পিথাগোরাসের উপপাদ্য। কিন্তু এই উপপাদ্য তিনি প্রমাণ করেছিলেন বলে মনে হয় না। সম্ভবত পিথাগোরীয় দর্শনের উত্তরসূরিরাই এর প্রকৃত প্রতিপাদক। এই উত্তরসূরিরা তাঁদের গুরুর বিশ্বতত্ত্বকে দিন দিন আরও বৈজ্ঞানিক ও গাণিতিক দিকে নিয়ে গেছে যাঁদের মধ্যে ফিলোলাউস এবং আর্কিটাস উল্লেখযোগ্য। পিথাগোরাস মৃত্যু-পরবর্তী আত্মার অপেক্ষাকৃত আশাবাদী একটি চিত্র দাঁড় করিয়েছিলেন এবং জীবনযাপনের এমন একটি পদ্ধতি প্রদান করেছিলেন যা দৃঢ়তা ও নিয়মানুবর্তিতার কারণে অনেককে আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছিল। বলা হয়ে থাকে তিনিই প্রথম যিনি নিজেকে দার্শনিক বা প্রজ্ঞার প্রেমিক হিসেবে দাবি করেছিলেন।

☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "পিথাগোরাস"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Iklan Atas Artikel

Iklan Tengah Artikel 1

Iklan Tengah Artikel 2

Iklan Bawah Artikel