আজকে প্রকাশিত চাকরির পরীক্ষার নোটিশ গুলো পাবেন

কনফুসিয়াস

কনফুসিয়াস



কনফুসিয়াসের বিখ্যাত কিছু উক্তিঃ

প্রতিশোধ নিতে যাওয়ার আগে দুটি কবর খুঁড়ো।

সব কিছুরই রয়েছে সৌন্দর্য- কিন্তু, খুব কম লোকই তা দেখতে পায়।

যারা মিতব্যায়ী নয়- তারা আজ হোক, কাল হোক ভুগবেই।

অজ্ঞতা হল মনের রাত্রি। যে রাত্রি চন্দ্রশূন্য, নক্ষত্রশূন্য ।

ভবিষ্যৎকে মুঠোয় নেওয়ার জন্য অতীতকে বিশ্লেষন কর।

কনফুসিয়াসকে একজন ধর্মগুরু বলে গন্য করা হলেও আদতে তিনি তা নন। কনফুসিয়াস ছিলেন মুলত মানবতাবাদী দার্শনিক।মানব জাতির জ্ঞাত ইতিহাসে তিনিই প্রথম সবথেকে বেশী প্রভাব বিস্তারকারী দার্শনিক যিনি চীনের ঐতিহ্যগত দার্শনিক চিন্তাধরাগুলিকে সমান্বিত করে একটি সংহতরূপ দান করেন।

বলা হয়ে থাকে- “যেখানে আছে হলুদ নদীর নয় বাঁক আর তাঈ পর্বতের চুঁড়া” সে এলাকার বাসিন্দা ছিলেন কনফুসিয়াস।এখানে হলুদ নদী চীনা জনগনের প্রতীক আর তাঈ পর্বত প্রাচীন সানদঙ(Tsan long) প্রদেশে অবস্থিত।সানদঙ এর আরেক নাম “লু(Loo)” প্রদেশ।এর রাজধানীর নাম কুফু(Cufu)।এই নগরীর কাছেই ঝোউই(Xoue) এলাকায় খ্রিস্টপূর্ব ৫৫১ অব্দে কনফুসিয়াসের জন্ম।

কনফুসিয়াস নামটি কিন্তু চৈনিক নয় বরং ল্যাটিন।তাঁর চৈনিক নাম ছিল কোঙ কিউ বা কোঙ ঝোঙনি।স্বদেশে তিনি পরিচিত ছিলেন কোঙ ফু জু (কোঙয়ের মহাশিক্ষক) নামে। এই “কোঙ ফু জু” শব্দটিই ল্যাটিন ভাষায় রুপান্তরিত হয় “কনফুসিয়াস” নামে।প্রাচীন কালের মহামানবদের জীবনীকে ঘিরে কিছু কিংবদন্তী দেখা যায়।তাঁর বেলায়ও এটা প্রযোজ্য।

তিন বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হন।মা কে হারান চব্বিশ বছর বয়সে।কিগুয়ান নামে এক নারীকে তিনি বিয়ে করেন উনিশ বছর বয়সে।বিয়ের একবছর পর তাদের ছেলে কঙ লি এর জন্ম।

পারিবারিক অভাবহেতু অল্প বয়সেই তিনি জীবিকার সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন।নানা কাজ করেছেন তিনি।একসময় রু নামের পদে চাকরী নেন।রু হলো জন্ম-মৃত্যু,বিয়ে সংক্রান্ত সামাজিক অনুষ্ঠান পরিচালনার কাজ।সেকালে রু কে গন্যকরা হতো মর্যাদাহীন কাজ রুপে।চাকরী কালীন সময়েই তিনি ছয় কলায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন।এই ছয় কলা হলো-সদাচারন,সংগীত,ধনুর্বিদ্যা,শকট চালানো,লেখালেখি আর গনিত শাস্ত্র।

কিছুদিন পর তিনি চাকরী ছেড়ে দেন এবং পরবর্তী ষোল বছর নানা জায়গায় ঘুরে মানব জীবনের নানা জ্ঞান আহরন করেন।এরপর তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন।সেকালের চীনে সমাজের নীচু স্তরের মানুষের সন্তানেরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতো।তিনি এই অব্যবস্থা দূর করতে ব্যক্তিগতভাবে এগিয়ে আসেন।চীনের বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থার পথিকৃত ছিলেন কনফুসিয়াস।শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি নৈতিকতা আর শারিরীক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উতকর্ষের ওপর জোর দেন।তিনি নিজে কাব্য চর্চা করতেন আর ছাত্রদেরও কাব্য চর্চায় উতসাহ দিতেন।কবিতা,সংগীত আর চিত্রকলার প্রতি তার অনুরাগ ছিল।তিনি বলতেন-শিল্পকলা মানুষের মনের কলুষতা দূর করতে সাহায্য করে। তার ছাত্রদের কেউ কেউ পরে লু প্রদেশের উচু পদেও অধিষ্ঠিত হয়। এসময়ে তিনি কিছুদিন দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।

বছর চারেক পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং শিষ্যদের নিয়ে চীন সাম্রাজ্য ভ্রমনে বেড়িয়ে পড়েন।তাঁর ছাত্ররা অনেক চেস্টা করেন তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে।মৃত্যুর পাঁচ বছর আগে তিনি পুনরায় স্বদেশে ফিরেন।জীবনের বাকী দিন গুলিতে তিনি এখানেই শিক্ষাদান ও গ্রন্থ রচনার কাজে ব্যয় করেন।জীবনের শেষ দিকে তিনি লু রাজ্যের বছর ওয়ারী ইতিহাস রচনায় হাত দিয়েছিলেন।

কনফুসিয়াসের মৃত্যুর পর তার ছাত্ররা তাঁর বাণী আর শিক্ষাপ্রনালীকে সংকলিত ও গ্রন্থভূক্ত করেন।আজ আমারা কনফুসিয়াস এনালেকটস(Confusias's Enalects)নামে যে গ্রন্থগুলি পাই তার কোনটি যে তার নিজের সংকলিত,সেই প্রমান নেই।বর্তমানে প্রচলিত তার বিশটি গ্রন্থ মোট ৪৯৬টি অধ্যায়ে বিভক্ত।তবে পন্ডিতমহলে অনুমোদিত “কনফুসিয়াসবাদের” মোট তেরটি প্রামান্য গ্রন্থ আছে।

কনফুসিয়াস ছিলেন একজন ধর্মনিরপেক্ষ, নীতিবাদী ও মানবতাবাদী দার্শনিক।ব্যক্তি,সমাজ ও রাস্ট্রের কল্যান সাধনই ছিল তার জীবনের মূলমন্ত্র।তিনি তার পূর্ববর্তীদের নীতিশাস্ত্র অধ্যায়ন করে সেগুলির ভিত্তিতে নিজস্ব দর্শন প্রচার করে গেছেন।প্রাচীন কালে যখন মানুষ নানারকম দেব-দেবীর মহাত্ম্য আলোচনায় মুখর থাকত,অতিপ্রাকৃত নানা শক্তির বন্দনায় আনন্দ পেত,তখন তিনি মানুষের মহত্ব প্রচার করেন।তার মতে সর্বোত্তম মানুষ প্রধানত দুইটি গুনের অধিকারী- জেন(Jen) আর ই(Yi)।জেন হলো অপরের প্রতি ভালোবাসা আর মমত্ব গুন, ই হলো সদাচারন ও নৈতিকতার গুন।

সবধরনের সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কনফুসিয়াস পরিবারকেই সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতেন।তিনি বলতেন পরিবারই নৈতিক শিক্ষার প্রাথমিক কেন্দ্র।পরিবারই সমাজ তথা রাস্ট্রের মধ্যে সেতু বিশেষ।সকলেই যদি তাদের নিজস্ব দায়িত্ব আর অপরের প্রতি করনীয়গুলি যথাযথভাবে পালন করে তবে পরিবার,সমাজ ও রাস্ট্রে সুখশান্তি নিশ্চিত হতে পারে।

কনফুসিয়াস মতবাদে অসহিষ্ণুতার কোন স্থান নেই।এতে অন্য কোন ধর্ম বা মতবাদকে আক্রমণ করা হয়নি।তার রাস্ট্রীয় দর্শন অতি উদার।তার মতে রাস্ট্র হলো একটি বিরাট পরিবার মাত্র।রাজাকে হতে হবে নীতিবান।তিনি কোন ক্রমেই ইশ্বরের প্রতিনিধি নন বরং তিনি জনগনের প্রতিনিধি।কনফুসিয়াস সেনাবাহিনীকে কম গুরুত্ব দিতেন।তার মতে, সেনাবাহিনী থাকবে বেসামরিক আমলাতন্ত্রের অধীনে।নারী-পুরুষের অধিকারের প্রশ্নে তিনি ছিলেন রক্ষনশীল মনোভাবের।তার মতে, পুরুষরা কাজ করবে বাইরে আর স্ত্রীর দায়িত্ব গৃহে।

কনফুসিয়াস পরলোকে বিশ্বাসী ছিলেন না।মৃত্যুপরবর্তী জীবনের চাইতে ইহজগতের ভাল-মন্দই ছিল তার বিচার্যা।মানুষের ভাগ্য কোন ইশ্বর গড়ে দিবেন এটা তিনি বিশ্বাস করতেন না।মানুষকে তার নিজের ভাগ্য নিজেকেই গড়তে হবে-এটাই ছিল তার মতাদর্শ।

প্রচলিত অর্থে কনফুসিয়াস কোন ধর্ম প্রচারক ছিলেন না।তিনি সে দাবীও করেননি।প্রচলিত কনফুসিয়াসবাদ তাই একটি দর্শন মাত্র।কনফুসিয়াসবাদের দর্শন আছে,শিক্ষাগ্রন্থ আছে, তবে কোন ধর্মগ্রন্থ নেই।তবে তার শিক্ষাতেও প্রর্থনার ব্যবস্থা ছিল।প্রাচীন ধর্র্মীয় আচার-অনুষ্ঠানকে তিনি বর্জন করেন নি।অমরত্বের যেই ধারনা কনফুসিয়াসবাদে প্রচলিত,তাও একধরনের মানবতাবাদ-“মৃত্যুর পর শেষ পর্যন্ত মানুষের সদগুন আর সতকর্মই টিকে থাকে।”

চীনে পরবর্তীকালে তাওবাদ,জৈন ও বৌদ্ধধর্মের প্রসারে কনফুসিয়াস মতবাদের যথেস্ট ভূমিকা রয়েছে।কারন মতবাদগুলিতে প্রচারিত বিষয়ের সাথে চীনের মানুষ আগে থেকেই পরিচিত ছিল কনফুসিয়াসের শিক্ষার মাধ্যমে।

৪৭৯ খ্রিস্টপূর্বে কনফুসিয়াস কুফু নগরীতে মৃত্যবরন করেন।নগরীর উত্তর দিকে সি নদীর তীরে তাঁকে সমাহিত করা হয়।তাঁর সমাধিক্ষেত্র তখন থেকেই এক মহাতীর্থের মর্যাদা লাভ করেছে। বর্তমান বিশ্বের চীন,জাপান,কোরিয়া,ভিয়েতনামের এক বিরাট জনগোষ্ঠি কনফুসিয়াসবাদের প্রভাবে পরিচালিত হচ্ছে।তবে আশ্চর্য্য বিষয় হলো তাদের কাছে কনফুসিয়াস একজন ধর্মীয় নেতার মতই।তাঁকে তারা পুজাও করে।

☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "কনফুসিয়াস"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Iklan Atas Artikel

Iklan Tengah Artikel 1

Iklan Tengah Artikel 2

Iklan Bawah Artikel