ইংরেজি: উচ্চাকাঙ্ক্ষার সিঁড়ি
বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০১৯
Comment
বিশ্বায়নের অন্যতম প্রধান নিয়ামক প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তির প্রভাবেই পৃথিবী এখন গ্লোবাল ভিলেজ। বর্তমানে এ ভিলেজের lingua franca (লিংগোআ ফ্রাংকা- বহু ভাষাভাষী অঞ্চলে যে ভাষা যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়) অনিবার্যভাবে ইংরেজি। সুতরাং ইংরেজি ভাষায় দুর্বলতা আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে যে কোন ধরনের উন্নয়নের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। একারণে বিশ্বব্যাপী আর্থ সামাজিক, প্রযুক্তিগত এবং জ্ঞানগত উন্নয়নের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হলে ইংরেজি আমাদের শিখতেই হবে।
বাংলাদেশে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি - বিষয়টি আলোচিত, সমালোচিত কিন্তু উপেক্ষিত নয়। আমরা এ বিতর্কে না গিয়েই বলতে চাই, উচ্চ শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ভাষাকে স্বাগত জানানো ক্যারিয়ার সচেতন প্রতিটি ব্যক্তির জন্যই এখন অপরিহার্য।
কারণ শিক্ষার এই স্তরে যে বিষয়ই পড়ুক না কেন একজন শিক্ষার্থীকে প্রতিনিয়ত ইংরেজিতে লেখা বইয়ের সাহায্য নিতে হয়, ইংরেজিতে লিখতে হয় এবং ইংরেজিতে ইন্টারনেটের মত তথ্য প্রযুক্তির সাহায্য নিতে হয়। তাছাড়া ইচ্ছা থাকলেও বহু বিষয়ের, যেমন- প্রকৌশল বিদ্যা, চিকিৎসা বিদ্যা, এর শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় বইয়ের অভাবে মাতৃভাষায় লেখাপড়া করতে পারে না। ইংরেজিতে দুর্বল থাকার কারণে বহু শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষায় ভাল ফলাফল করতে পারে না, যা অনিবার্যভাবে তাদের ক্যারিয়ারের উপর প্রভাব ফেলে। কারণ উচ্চ শিক্ষই ক্যারিয়ারের শক্তিশালী সোপান।
বাংলাদেশের চাকুরির বাজার পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে বহুগুণে প্রতিযোগিতামূলক এবং চ্যালেঞ্জিং। সরকারি, বেসরকারি, বহুজাতিক, আন্তর্জাতিক ইত্যাদি সংস্থাগুলোতে ক্যারিয়ার শুরু করতে চাইলে ইংরেজি ভাষা লেখা, বলা শোনা এবং পড়ার উপর প্রয়োজনীয় দক্ষতাকে অন্যতম গুণ হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রত্যাশিত সব দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষায় অদক্ষতার কারণে বহু চাকুরিপ্রার্থী মূল্যবান এইসব চাকুরি থেকে বঞ্চিত হয়। সুতরাং যথাযথ ক্যারিয়ার নির্মাণে ইংরেজির উপর গুরুত্ব আরোপ আজ সময়ের দাবি।
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ এখন বাংলাদেশের সামনে এক বড় সমস্যা। এই সমস্যা মোকাবেলার একটাই পথ, আর তা হচ্ছে বিপুল জনগোষ্ঠীকে জনশক্তি বা মানবসম্পদে রূপান্তর। আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজি এক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারে। আমাদের বিপুল সংখ্যক বেকার জনগোষ্ঠীকে ইংরেজি ভাষায় প্রশিক্ষিত করে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে আরো বেশি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। বাংলাদেশের শ্রমিকরা ইংরেজি না জানার কারণে পৃথিবীর বহু দেশে যেতে পারে না, আবার গেলেও ইংরেজি না জানার কারণে নানা বৈষম্যের শিকার হয়।
সবশেষে সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি বাস্তব ঘটনা দিয়ে ক্যারিয়ার নির্মাণে ইংরেজির গুরুত্ব শেষ করতে চাই। বছর কয়েক আগে বাংলাদেশের কয়েকজন পুলিশ অফিসারকে হয়েছিল জাতিসংঘ শান্তি মিশনে। দায়িত্ব পালনের পূর্বে UN সদর দপ্তরে বিভিন্ন পরীক্ষা, যেমন- শারীরিক ফিটনেস, ড্রাইভিং, আর্মস পরিচালনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তারা ব্যাপক দক্ষতার পরিচয় দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হার মানে ইংরেজি ভাষার প্রয়োজনীয় যোগাযোগের ক্ষেত্রে এবং তাদেরকে দেশে ফেরৎ পাঠানো হয়। এ ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ইংরেজি এখন শুধু ব্যক্তির ক্যারিয়ারের জন্যই নয়, বরং দেশ ও জাতির মুখ উজ্জল এবং সুনাম রক্ষার্থেও ইংরেজির বিকল্প নেই।
✦✦ চাকুরি : প্রস্তুতি
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে ডিগ্রি অনুযায়ী একটি চাকুরি পাওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এই স্বাভাবিক ঘটনাটাই আমাদের দেশে একন নানা বিবেচনায় অস্বাভাবিকতায় রূপ নিয়েছে। ডিগ্রি এখন চাকুরিতে আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত কিন্তু চাকুরিতে চান্স পাবার বেলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডিগ্রির ভূমিকা গৌণ। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্জিত বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান একজন প্রার্থীকে অধিকাংশ চাকুরির পরীক্ষায় খুব বেশি সাহায্য করে না। যা সাহায্য করে তা হলো সাধারণ জ্ঞান। যেমন-
✦✦ ক) সাধারণ জ্ঞান হিসেবে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।
✦✦ খ) সাধারণ জ্ঞান হিসেবে বাংলাদেশে ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী।
✦✦ গ) মানসিক দক্ষতা বা মনস্তাত্ত্বিক জ্ঞান।
কিন্তু সাধারণ জ্ঞান কথাটি যত সাধারণ পরীক্ষার হলে সাধারণ জ্ঞান তার চেয়ে বহুগুণ অসাধারণ। চাকুরির বাজারের অসহনীয় এবং অভাবনীয় প্রতিযোগিতার কারণে চাকুরিদাতাগণ সীমিত সংখ্যক প্রার্থীকে গ্রহণের চেয়ে বহুসংখ্যক প্রার্থীকে বর্জনের বিষয়টিই আগে ভাবেন। ফলাফল যা দাঁড়ায় তাহলো- সাধারণ জ্ঞান তার সীমা পেরিয়ে অসাধারণতায় রূপ নেয়, আর চাকুরির পরীক্ষা না হয়ে, হয়ে যায় বর্জনের প্রক্রিয়া। এই বর্জনের প্রক্রিয়ায় নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা আওতায় ক্রমাগত/ নিয়মিত সময়, শ্রম, ধৈর্য এবং অর্থের বিনিয়োগ। পরিমাণগত দিক থেকে অর্থ যৎকিঞ্চিৎ অর্থাৎ এককালীন বড় জোর একহাজার এবং প্রতিমাসে ন্যূনতম পঞ্চাশ টাকা। (বিবিএস- এর প্রস্তুতি অংশের প্রয়োজনীয় উপকরণ ও বইসমূহ দেখুন)।
সময়ের বিষয়টি অন্যতম বিবেচ্য একারণে যে, যদি প্রার্থী উচ্চ শিক্ষা শেষে চাকুরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন তাহলে নিয়মিতভাবে প্রতিদিন আট থেকে দশ ঘন্টা এখাতে চাকুরি না পাওয়া পর্যন্তব্যয় করতে হবে। কিন্তু যারা উচ্চশিক্ষার শুরুতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করবেন তারা একাডেমিক লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকুরি পরীক্ষার একটি মানসিক প্রস্তুতি স্মরণে রাখবেন এবং প্রতিদিন অবসরে কিন্তু সচেতনে অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় এখাতে বিনিয়োগ করবেন।
প্রতিদিনের ২০ মিনিট শিক্ষা শেষে আপনাকে এমন এক অর্জনের মুখোমুখি দাঁড় করাবে যে প্রত্যাশিত চাকুরি অনায়াসে আপনার হাতে ধারা দিবে। অনেক ক্ষেত্রেই সময় আমাদের সমস্যা নয়, কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় সময়ের ব্যবস্থাপনা। সময় ব্যবস্থাপনায় আপনি যেন হেরে না যান- এ কারণে আপনার থাকা দরকার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত অপরিসীম ধৈর্য। একারণে আমরা সময়, শ্রম এবং অর্থের সাথে ধৈর্যকে সফলতায় সোপান হিসেবে বিবেচানয় নিতে চাই।
☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "ইংরেজি: উচ্চাকাঙ্ক্ষার সিঁড়ি"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন