কারিগরি শিক্ষা
বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০১৯
Comment
কোন বিষয় নিয়ে আপনি পড়াশুনা করবেন । আসুন জেনে নেওয়া জাক।
আজকে "কারিগরি শিক্ষা" সম্পর্কে জানি। কারিগরি শিক্ষা বা টেকনিক্যাল এডুকেশন বলতে সাধারনত হাতে-কলমে বাস্তবধর্মী শিক্ষাকে বুঝানো হয়। অন্যভাবে বলা যায়, সাধারণ মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তকের যে বিষয়গুলো শেখানো হয় তার যান্ত্রিক বাস্তবায়নের নামই কারিগরি শিক্ষা। পাঠ্যপুস্তকের সাথে প্রাকটিক্যাল প্রশিক্ষণ, দক্ষতা আর মেধার সমন্বয় সৃজনশীল উৎপাদনমুখী কার্যক্রমই হল কারিগরি শিক্ষা।
নবম শ্রেণী থেকে কারিগরি শিক্ষা শুরু হয়। এদেশে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে এসএসসি ভোকেশনাল কোর্সে পড়াশোনা করানো হয়। অন্যদিকে এসএসসি পাসের পর পলিটেকনিক এবং মনোটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে বিভিন্ন ট্রেডে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স করানোর ব্যবস্থা করা হয়।
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে আগে তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স করানো হলেও সময়ের দাবিতে এসব কোর্সের কলেবর বৃদ্ধি করে বর্তমান চার বছর মেয়াদী কোর্স পড়ানো হচ্ছে। এসব কোর্স সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীরা ডেপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে সহজেই দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পেশায় চাকরি পেয়ে থাকলেও বিএসসি ইঞ্জিলিয়ারদের মত সম্মান ও সুযোগ-সুবিধা পেতে সক্ষম হন না।
তবে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (DUET) এবং কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় চার বছর মেয়াদী বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের প্রবর্তন করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে DUET এ ভর্তির সুযোগ অর্জন করতে হয়। মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণেরও সুযোগ আছে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পাসের পর ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল, কৃষি, ডেন্টাল বিষয়ে যে টেকনিক্যাল শিক্ষার সুযোগ দেওয়া হয় সে সব ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ভর্তির সুযোগ থাকে না।
✦✦ যাদের জন্য কারিগরি শিক্ষা
অপেক্ষাকৃত কম খরচ এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা পদ্ধতির কারণে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জন্যে এ শিক্ষা উপযোগী এবং কার্যকর।
কারিগরি শিক্ষায় কাজটাই আসল। তাই এখানে যোগ্যতার মাপকাঠি হচ্ছে কাজের দক্ষতা। যে যতো ভাল কাজ করবে সে ততো আর্থিক সুযোগ-সুবিধা লাভ করবে। এছাড়া সাধারণ শিক্ষিতরাও এই শিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন।
✦✦ এদেশে কারিগরি শিক্ষা
দেশে কারিগরি শিক্ষা পরিচালনা করে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (বাকাশিবো)। ১৯৫৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ৪২টি সরকারি পলিটেকনিক, ৭টি মনোটেকনিক, প্রায় অর্থ শতাধিক প্রাইভেট পলিটেকনিক, ব্যবসা শিক্ষাক্রম ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান, সরকারি ভোকেশনাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বেশ কিছু টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) রয়েছে। বর্তমানে ক্রমান্বয়ে দেশের মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণীর কাছে কারিগরি শিক্ষা পদ্ধতি বেশি গ্রহণযোগ্য ও নির্ভযোগ্য হয়ে উঠছে।
✦✦ কারিগরি শিক্ষার প্রধান প্রধান বিষয়
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড পরিচালনা করছে বিভিন্ন মানের ও রকমের ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদের কোর্স। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স। এর একটা পরিচয় নিম্নে প্রদত্ত হল।
বিষয়
মোট আসন সংখ্যা
পলিটেকনিক
✦ ১. ডিপ্লোমা-ইন-সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ১২৬০
✦ ২. ডিপ্লোমা-ইন-ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ৯২০
✦ ৩. ডিপ্লোমা-ইন-মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ৭৬০
✦ ৪. ডিপ্লোমা-ইন-ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ৭২০
✦ ৫. ডিপ্লোমা-ইন-কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ১২৪০
✦ ৬. ডিপ্লোমা-ইন-পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং ৭৬০
✦ ৭. ডিপ্লোমা-ইন-আর্কিটেকচার ১৬০
✦ ৮. ডিপ্লোমা-ইন-অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ৮০
✦ ৯. ডিপ্লোমা-ইন-কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ৪০
✦ ১০. ডিপ্লোমা-ইন-ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং ৪০
✦ ১১. ডিপ.-ইন-এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং ৪০ মনোটেকনিক
✦ ১. ডিপ্লোমা-ইন-এনভায়ারনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং ২৫
✦ ২. ডিপ্লোমা-ইন-অপসেট প্রিন্টিং ২৫
✦ ৩. ডিপ্লোমা-ইন-সিরামিকস ৪০
✦ ৪. ডিপ্লোমা-ইন-গ্লাস ৪০
✦ ৫. ডিপ্লোমা-ইন-সার্ভেয়িং ৪০ এছাড়া ৪ বছর মেয়াদী মেরিন, শিপ বিল্ডিং, এরোস্পেস, এভিয়োনিক্স-এ ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স; ৪ বছর মেয়াদী এগ্রিকালচার, ৩ বছর মেয়াদী ফরেস্ট্রি, ২ বছর মেয়াদী এইচএসসি (ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা), কমার্স-এ ডিপ্লোমা কোর্স; ১ বছর মেয়াদী ফটওয়্যার মেকিং, লেদার ট্যানিং, সেক্রেটারিয়েল সায়েন্স-এ সার্টিফিকেট কোর্স; ১ বছর মেয়াদী সফটওয়্যার এপ্লিকেশন, মেডিকেল আল্ট্রাসাউন্ড-এ ডিপ্লোমা কোর্স এবং ১ বছর মেয়াদী মেডিকেল মার্কেটিং ম্যানেজমেন্ট ও প্যারামেডিকেল-এ সার্টিফিকেট কোর্স চালু রয়েছে।
✦✦ উল্লেখযোগ্য ভোকেশনাল কোর্স সমূহ
বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড এর অধীনে সাধারণ শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার সমন্বয়ে সৃষ্টি এসএসসি (ভেকেশনাল) শিক্ষাক্রম প্রতি বছর সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে নবম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য দরখাস্ত আহ্বান করে। এসএসসি উত্তীর্ণদের জন্য রাখা হয়েছে এইচএসসি ভোকেশনাল কোর্স। এ সকল কোর্স/ট্রেড এর পরিচয় নিম্নে প্রদত্ত হলো।
✦✦ এসএসসি ভোকেশনাল কোর্সসমূহ
✦ ১. অটোমোবাইল
✦ ২. অডিও-ভিডিও সিস্টেম
✦ ৩. ওয়েল্ডিং
✦ ৪. রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ারকন্ডিশনিং
✦ ৫. জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস
✦ ৬. ফিস কালচার এন্ড ব্রিডিং
✦ ৭. কম্পিউটার এপ্লিকেশন এন্ড অপারেশন
✦ ৮. ফার্ম মেশিনারি
✦ ৯. জেনারেল মেকানিক্যাল ওয়ার্কস
✦ ১০. ড্রেস মেকিং এন্ড টেইলারিং
✦ ১১. বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স
✦ ১২. পোল্ট্রি বিয়ারিং এন্ড ফার্মিং
✦ ১৩. ড্রাফিটিং সিভিল
✦ ১৪. উড ওয়ার্কিং এন্ড কেবিনেট মেকিং
✦✦ এইচএসসি ভোকেশনাল কোর্স/ট্রেডসমূহ
✦ ১. ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস এন্ড মেইনটেন্যান্স
✦ ২. ক্লথিং এন্ড গার্মেন্টস ফিনিশিং
✦ ৩. এগ্রো মেশিনারি
✦ ৪. কম্পিউটার অপারেশন এন্ড মেইনটেন্যান্স
✦ ৫. ইলেকট্রিক্যাল কন্ট্রোল এন্ড কমিউনিকেশন
✦ ৬. মেশিন টুল অপারেশন এন্ড মেইনটেন্যান্স
✦ ৭. অটোমোবাইল
✦ ৮. রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ারকন্ডিশনিং
✦ ৯. ওয়েন্ডিং এন্ড ফেব্রিকেশন
✦ ১০. ফিশ কালাচার এন্ড ব্রিডিং
✦ ১১. বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন এন্ড মেইনটেন্যান্স
✦ ১২. পোল্ট্রি বিয়ারিং এন্ড ফার্মিং
✦ ১৩. ড্রাফিটিং সিভিল
✦ ১৪. উড এন্ড ডিজাইন
উল্লেখযোগ্য ডিপ্লোমা কোর্সসমূহ
ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
✦✦ কর্মপরিধি
আধুনিক সময়ে আবাসন সমস্যা নিরসনে নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন। তৈরি হচ্ছে সড়ক, ব্রিজ ইত্যাদি। সবসময়েই বাড়ি, সড়ক এবং ব্রিজ তৈরির মূল নেপথ্য নায়ক হচ্ছেন একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। সড়ক, বিল্ডিং এবং ব্রিজ তৈরির নকশা, পর্যবেক্ষণ, সে মোতাবেক কাঠামো তৈরি, কাজ পরিচালনা, গুণগত মান রক্ষা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদেরই কাজ। নিঃসন্দেহে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং সর্বকালের আধুনিক ও সম্মানজনক পেশা।
✦✦ কর্মসংস্থান
দেশের রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, সয়েল টেস্ট ফার্ম, কনস্ট্রাকশন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানসহ স্থাপত্য নির্মান সামগ্রী, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা রয়েছে। আত্ম-কর্মসংস্থানমূলক ব্যবস্থা হিসেবে আছে ঠিকাদারি ব্যবসা। দেশের বাইরেও এ পেশাজীবীদের রয়েছে কাজের বাজার। আছে মধ্যম মানের বেতন, সম্মান, অভিজ্ঞতা আর কর্মদক্ষতায় দ্রুত পদোন্নতিসহ বেতন বৃদ্ধির সুযোগ। তবে তা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের তুলনায় বেশ কিছুটা কম।
ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
✦✦ কর্মপরিধি
বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, কল-কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত আর মুদি দোকান যেখানেই যান বিদ্যুৎ দরকার হবেই। এই বিদ্যুৎ উৎপাদন, সংরক্ষণ, সরবরাহ, বিতরণ, বিদ্যুৎ পরিচালনা পদ্ধতি, ক্যাবল লাইন স্ট্রাকচার থেকে শুরু করে এর সবরকম ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা পুঁথিগত বিদ্যা, মেধা ও দক্ষতার মাধ্যমেই পরিচালনা করছেন সারা দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে।
✦✦ কর্মসংস্থান
হাই ভোল্টেজ ক্যাবল লাইন, পাওয়ার জেনারেটর প্লান্ট, হাউজ ওয়্যারিং, ইন্ডাস্ট্রি, ফ্যাক্টরিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের রয়েছে একটা বড় কর্মক্ষেত্র। বর্তমান সময়ে দেশে বিদেশে তড়িৎ প্রকৌশলীদের জন্য রয়েছে উচ্চ ও সম্মানজনক জীবিকা নির্বাহের সুযোগ। এখানেও বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের তুলনায় ডিপ্লোমাধারীদের মর্যাদা অনেক কম।
ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং
✦✦ কর্মপরিধি
ঘড়ি, কলিংবেল, রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, খেলনাসহ ইলেকট্রনিক্সের বহুবিধ সামগ্রী রয়েছে। এসব সামগ্রী তৈরির মূল কারিগরই হচ্ছেন একজন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার। গ্রাম-গঞ্জে এখন রেডিও, টেলিভিশন এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর বহুল ব্যবহার এ পেশাদারিত্বের সুযোগ ও সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করেছে।
✦✦ কর্মসংস্থান
ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর উৎপাদন, ডিজাইন, ব্যবস্থাপনা, প্রয়োগ এবং প্রচলন সংশ্লিষ্ট বহুবিধ প্রতিষ্ঠানে একজন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারের ব্যাপক চাহিদা ও গুরুত্ব রয়েছে দেশে ও বিদেশে।
ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং
✦✦ কর্মপরিধি
সময়ের বিবর্তনে মানুষের রুচিতে আসছে অভিনবত্ব। কম জায়গায় কি করে একটি সুন্দর-পরিচ্ছন্ন বাড়ি তৈরি করা যায় অথবা একটি রাস্তা কিংবা একটি ব্রিজ কোন ধারায়, কোন কাঠামোতে, কোনভাবে টেকসই, মানসম্মত এবং দৃষ্টিনন্দন হবে এসবই নির্ভর করে একটি ভালো মানের ডিজাইনের উপর। আর এই নান্দনিক ডিজাইনের স্থাপতিই হলেন একজন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার।
✦✦ কর্মসংস্থান
বিভিন্ন স্ট্রাকচার ডিজাইন ফর্ম, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন এন্ড ডিজাইনিং ফার্মে এসব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা রয়েছে। আজকাল ব্যক্তি মালিকানায় যেসব ছোট ছোট ২-৫ তলা পর্যন্ত বিল্ডিং হচ্ছে সেগুলোতে অনেক আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার এককভাবে কন্ট্রাকে বাড়িরে প্লান বা ডিজাইন করেন। এ ক্ষেত্রে তারা ডিপ্লোমাদেরকে সহকারী হিসেবে কাজের সুযোগ করে দেন। এই বিষয়ে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীদের জন্য দেশে এবং বিদেশেও রয়েছে ভালো সুযোগ-সুবিধা।
ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং
✦✦ কর্মপরিধি
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ইতোমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য পেশায় পরিণত হয়েছে। একটি কম্পিউটার তৈরি, সফটওয়ার লোড, এর পরিচালনা পদ্ধতি, একে সচল রাখা এবং এর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের যাবতীয় কাজ করেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়াররা। এভাবে দেখতে গেলে বর্তমান সময়ে কোনো কিছুই আর কম্পিউটারের বাইরে নয়।
✦✦ কর্মসংস্থান
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ রয়েছে বহুমাত্রিক পেশা। ই-কম্পিউটার ডিজাইনার, ডাটা এন্ট্রি, মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশন, সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার, হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, গ্রাফিকস ডিজাইনার এরকম বহুমুখী কর্মক্ষেত্র রয়েছে এ পেশায়। হার্ডওয়্যার প্রতিষ্ঠান, সফটওয়্যার ফার্ম ও ট্রেনিং প্রতিষ্ঠান, ডিজাইন ফার্ম থেকে শুরু করে আজকাল কম্পিউটারের ব্যাপক প্রচলনের কারণে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা দ্রুত বেড়ে চলেছে। বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বে এ পেশার জন্য রয়েছে সম্মানজনক এবং উচ্চ শিক্ষার সুপরিসর ব্যবস্থা।
ডিপ্লোমা ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
✦✦ কর্মপরিধি
উৎপাদনশীল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান উৎপাদন উৎসটিই হচ্ছে যন্ত্র বা মেশিন। এসব উন্নত আধুনিক মেশিনের পুরো ডায়াগ্রাম, পরিচালনা পদ্ধতি, বিভিন্ন যন্ত্রাংম এবং এর ব্যবহার, নিয়ন্ত্রন, মেরামত ইত্যাদি কাজ করে থাকেন দক্ষ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা। আমরা আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য অকেন সামগ্রী যেমন- সাবান, ক্রীম, পেস্ট, চিপস, প্যাকেটজাত, অন্যান্য প্রসাধণী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পেয়ে থাকি এখানে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের কর্মকান্ডের ফল হিসেবে, কেননা এ সবই এখন মেশিনের মাধ্যমে তৈরি বা প্রস্তুত হয়।
✦✦ কর্মসংস্থান
আমাদের দেশেও দিন দিন তৈরি হচ্ছে জীবনযাপনের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, অটোমেটিক মেশিন তৈরির শিল্প, কল-কারখানা। আর এর ফলে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের সুযোগ বাড়ছে। বিভিন্ন মেশিনারিজ প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের রয়েছে ভাল চাহিদা। দেশের বাইরেও এ পেশাজীবীদের চাহিদা ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ আছে।
ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং
✦✦ কর্মপরিধি
সময়ের সাথে মানুষের সচেতনতা বেড়ে চলেছে আজকাল। পোশাক পরিচ্ছদ এবং সাংসারিক প্রয়োজনীয় কাপড়জাত জিনিসপত্রে আসছে আধুনিকতার ছোঁয়া। এর ফলেই ডিজাইনার এবং সেই সাথে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বেড়ে চলেছে।
✦✦ কর্মসংস্থান
বিভিন্ন টেক্সটাইল মিল, গার্মেন্টস এন্ড ফ্যাশন হাউস, ডিজাইন হাউজে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যাপাক চাহিদা আছে। দক্ষতার ভিত্তিতে এ পেশাজীবীদের উচ্চ বেতন আর সুযোগ-সুবিধাও বাড়ে। বিদেশে এ পেশাজীবীদের কাজের বাজার এবং উচ্চ শিক্ষার দ্বারা উন্মুক্ত।
ডিপ্লোমা ইন গ্লাস এন্ড সিরামিকস ইঞ্জিনিয়ারিং
✦✦ কর্মপরিধি
নানাবিধ সংগত কারণে মানুষের প্রয়োজন মেটাতে এদেশে গড়ে উঠছে প্রচুর গ্লাস সিরামিকস কারখানা। এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত গ্লাস এন্ড সিরামিকস ইঞ্জিনিয়ারদের নব নব উদ্ভাবিত ডিজাইন আর রঙচঙে সজ্জিত হয়ে বাজারে আসছে নানা ধরনের গ্লাস ও সিরামিকর জাত দ্রব্য। এসব পণ্যের নতুন নতুন ডিজাইন, নতুন উদ্ভাবন, প্রস্তুত কৌশল, প্রস্তুত ব্যয় সর্বোপরি এ শিল্পের সার্বিক পরিচালনা একেক জন গ্লাস ও সিরামিকস ইঞ্জিনিয়ারের তত্ত্বাবধানেই হয়ে থাকে।
✦✦ কর্মসংস্থান
গ্লাস এন্ড সিরামিকস ডিজাইন, সরবরাহ ও প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে এ পেশায় শিক্ষিতদের ভালো বেতনের চাকুরির এবং উচ্চ শিক্ষার সুযোগ রয়েছে দেশে এবং বিদেশে।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য উচ্চশিক্ষা: ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকৌশল শিক্ষার মানোন্নয়ন ও গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের চারটি (চট্রগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা) ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে ডিগ্রি প্রদানকারী স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা হয়। বর্তমানে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এম ইঞ্জিনিয়ারিং/এসএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ও পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর-এ কেবলমাত্র ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি করা হয়।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি তথ্য
✦✦ যোগ্যতা
(ক) প্রার্থীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। (খ) প্রার্থীকে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় গড়ে কমপক্ষে ৫৫% নম্বর পেয়ে সিভিল, আর্কিটেকচার, সিভিল (উড স্পেশালাইজেশন), ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার, মেকানিক্যাল, পাওয়ার, অটোমোবাইল, রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ার কন্ডিশনিং ইঞ্জিনিয়ারিং এর সমমানের পরীক্ষায় কমপক্ষে সমতুল্য নম্বর বা গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। (গ) চাকুরিরত প্রার্থীরাও যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন।
✦✦ ভর্তির সময়
সাধারণত মে-জুন মাসে পত্রিকায় ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়।
✦✦ বিষয় ও আসন সংখ্যা
যথাক্রমে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং- ৬০; সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং- ১২০; এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং- ১২০। এছাড়াও চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু করা হচ্ছে।
✦✦ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের ব্যতিক্রমি বিষয়সমূহ
উপরোল্লিখিত বর্ণনার বাইরেও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত কিছু কলেজে নিম্ন বর্ণিত বিষয়ে পড়াশুনার সুযোগ রয়েছে।
ডিপ্লোমা-ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং- ২২, ডিপ্লোমা-ইন মিপ বিল্ডিং-৫৯; ডিপ্লোমা-ইন ফরেস্ট্রি-৫০; ডিপ্লোমা-ইন প্রিন্টিং-৫০; ডিপ্লোমা-ইন গ্লাস এন্ড সিরামিক্স-৮০; ডিপ্লোমা-ইন এয়ারক্রাফঠ মেইনটেনেন্স এভিয়োনিক্স-২২; এরোস্পেস-২২; ডিপ্লোমা-ইন হেলথ টেকনোলজি এন্ড সার্ভিসেস, মেডিকেল আল্ট্রা সাইন্ড-৮৮; প্যারা মেডিকেল-৪৪; মেডিকেল, মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট-২২; ডিপ্লোমা-ইন টেকনিক্যাল এডুকেশন-১২০।
☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "কারিগরি শিক্ষা"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন