
ফ্রান্সিস বেকন্
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০১৯
Comment

ইংরেজ দার্শনিক, আইনজ্ঞ, রাজনীতিবিদ এবং পরীক্ষামূলক বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার পথপ্রদর্শক স্যার ফ্রান্সিস বেকন। তিনি একাধারে একজন ইংরেজ দার্শনিক, আইনজ্ঞ, কুটনৈতিক এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার পথপ্রদর্শক। ইংল্যান্ডের রানি এলিজাবেথ এবং সম্রাট প্রথম জেমসের উপদেষ্টা আর বিতর্কিত অথচ অসাধারন এক ব্যাক্তিত্ব স্যার ফ্রান্সিস বেকন। ফ্রান্সিস বেকনকে অভিজ্ঞতাবাদের জনক বলা হয়। তিনি দার্শনিক চিন্তাধারায় মৌলিক কিছু তত্ত্ব প্রবর্তন করেন। এগুলোকে বেকনিয়ান মেথডও বলা হয়ে থাকে। তিনি পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের ওপর জোর দেন। কোন জিনিষের উৎস অনুসন্ধানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অনুসন্ধানের প্রক্রিয়াগুলো তিনিই প্রবর্তন করেন। ধর্মীয় চিন্তায় ও সাহিত্যে তিনি জোর দিয়েছেন নীতিদর্শন ও ধর্মতাত্ত্বিক আনুধ্যানের ওপর। আইনের ক্ষেত্রে তিনি বড় ধরনের সংস্কারের চেষ্টা করেছেন। আইনজীবি হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করলেও তিনি বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের প্রবক্তা এবং জ্ঞানান্ধতা ও গোঁড়ামি বিরোধী হিসেবে সুখ্যাত হন। রাণী এলিজাবেথের আমলে ইনি আইনজীবী হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন। এছাড়া বেকন ছিলেন পার্লামেন্ট সদস্য। তবে রাণী এলিজাবেথের মৃত্যুর পরই ইনি গৌরবের শিখরে উপনীত হন এবং কতিপয় উচ্চপদ অলঙ্কৃত করার পর রাজা জেমস এর রাজত্বকালে ইনি লর্ড চ্যান্সেলারের পদে নিযুক্ত হন। রাজনীতিজ্ঞ এবং আইনজীবী হিসাবে কর্মবহুল জীবন যাপনের পরও তিনি সেকালে প্রচলিত বিজ্ঞান সংক্রান্ত ধ্যানধারণা পর্যালোচনা ও পুনর্বিন্যাসের গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৬২৬ সালের আজকের দিনে মৃত্যুৃবরণ করেন এই দার্শনিক। আজ তার ৩৮৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ইংরেজ দার্শনিক স্যার ফ্রান্সিস বেকনের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
এরপর বেকন সম্পূর্ণভাবেই মনন চিন্তন ও লেখালেখির মধ্যে আত্মনিয়োগ করেন এবং জ্ঞান ও বুদ্ধি নিয়ে চর্চা করতে করতেই তাঁর জীবনের শেষ দিনে পৌঁছান। ইংরেজি ভাষার প্রতি ফ্রান্সিস বেকনের বড় একটা শ্রদ্ধাবোধ ছিল না। কারণ, তিনি মনে করতেন, এ সমস্ত আধুনিক ভাষা একসময় উপযুক্ত গ্রন্থের অভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়বে। তাই ল্যাটিন ছিল তার একমাত্র প্রিয় ভাষা। অথচ সেই ফ্রান্সিস বেকন ইংরেজি ভাষায় যে অবদান রেখেছেন, তা নি:সন্দেহে অবিস্মরণীয়। বিজ্ঞানের অগ্রগতির ও সম্ভাবনার প্রবক্তা হিসেবে শ্রেষ্ঠদের সঙ্গে তাঁর তুলনা করা হয়। বেকনকে বলা হত Philosopher of utilities। ব্যবহারিক জগতের দার্শনিক, জাগতিক জ্ঞান ও বুদ্ধির আশ্চর্যজনক আকর তাঁর রচিত প্রবন্ধসমূহ, এত গল্প কথায় ব্যবহারিক চিন্তার এত দিক, এত দিগন্ত উন্মোদিত করেছেন তিনি, যে অবাক হতে হয়। তিনি বিজ্ঞান, দর্শন, শিক্ষা ও রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে পঞ্চাশের অধিক বই লিখেছেন। তার বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ এসেইজ (১৫৯৭), দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব লার্নিং ডিভাইন অ্যান্ড হিউম্যান (১৬০৫), নাভাম অর্গানাম সায়েন্টিয়ারম (নিউ মেথড, ১৬২০) ও নিউ আটলান্টিস (১৬২৭)। ‘এসেস’ বইটির তিনটি সংস্করণ রয়েছে। এর মধ্যে নোভাম অর্গানাম বইটির বাংলা অনুবাদ করেছেন ফজলুল করিম।
বেকন তার শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ‘এসেইজ’ এর প্রবন্ধগুলো নিখুঁত অলঙ্কারে সুশোভিত করেছেন। তার রচনাশৈলী নমনীয় এবং আধুনিক না হলেও বিশেষ ভাব প্রকাশে বলিষ্ঠতা ও অর্থব্যাঞ্জনার জন্য অতুলনীয়। তাঁর রচিত প্রবন্ধ সংগ্রহের তিনটি সংস্করণ বের হয়। ১৫৯৭ সালে প্রথমটিতে মাত্র ১০টি লেখা ছিল। দ্বিতীয়টির প্রকাশ হয় ১৬১২ সালে ৩৮টি রচনা নিয়ে। আর তৃতীয় ও শেষ সংস্করণে ৫৮টি লেখা ছিল। তাঁর মৃত্যুর অল্প দিন আগেই তা শেষ হয়। ১৬০৫ খ্রীস্টাব্দে তাঁর ‘এডভ্যান্স মন্ট অব লানিং’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞানসমূহের শ্রেণি-বিভাগ সংবলিত ‘দি গ্রেট ইনসিচুয়েশন’ মূল গ্রন্থের প্রথম খণ্ড হিসাবে এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এর পনের বৎসর পর ১৬২১ সালে তাঁর মহতী গ্রন্থ ‘নোভাম অর্গানাম’ পরীক্ষামূলক প্রাকৃতিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এক নয়া পদ্ধতির সূচনা করে। নোভাম অর্গানাম’-এর প্রথম খণ্ডটি বৈজ্ঞানিক দর্শনে তাঁর অবদানের প্রতিনিধিত্বমূলক রচনা।
বেকন ক্ষমতা অর রাজসম্মানের শিখর থেকে শিখরে পৌঁছেছিলেন। ১৬০৩ সালে তিনি নাইট উপাধি পান, ১৬১৮ সালে ব্যারন হন, ১৬২১ সালে সেন্ট আলবান-এর ভাইকাউন্ট উপাধি পান। এরই সঙ্গে তিনি সলসিটর জেনারেল, এ্যাটর্নি জেনারেল, লর্ড কীপার এবং পরে লর্ড চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন। লর্ড চ্যান্সেলর ছিল বিচার বিভাগের সর্ব্বোচ্চ পদ, অনেকটা সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতির মত। যেহেতু মৃত্যুর সময় তার কোন উত্তরশুরী ছিল না, তাই পরবর্তীতে তার উপাধিগুলো বিলীন হয়ে যায়। এরপরই তাঁর পতন ও সম্মান হারানোর পালা। ১৬২১ সালে তাঁর মহতী গ্রন্থ প্রকাশিত হবার কিছুদিন পার রাজনৈতিক দুর্ভোগে বেকন জর্জরিত হয়ে পড়েন এবং তাঁর বিরুদ্ধে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। অভিযোগ সম্পর্কে বেকনের স্বীকৃতির পর থেকেই তাঁর পতন শুরু হয়। অবশ্য তাঁর স্বীকারক্তিতে তিনি বলেন যে উপঢৌকন নিলেও তার দ্বারা তাঁর সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হয়নি। তাঁকে শাস্তি দেওয়া হয়নি কিন্তু রাজার সভাসদ হিসেবে তাঁর রাজনীতিকে জীবনের এখানেই ইতি টানতে হয় বলা যায়। লন্ডন টাওয়ারে তিনি কারাভোগ করতে থাকেন, এবং এছাড়াও তাঁকে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। তাঁর পার্লামেন্টের সদস্যপদ বাতিল করা হয় এবং ভবিষ্যতেও পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার অধিকার হরণ করা হয়। কারাবাস শেষ হলে জীবনের বাকি দিনগুলোতে বেকন শুধুমাত্র গ্রন্থ রচনায় মনোনিবেশ করেছিলেন। এই সময়ই তিন বিখ্যাত ‘এসেইজ’ গ্রন্থটি প্রকাশ করেন
'মানুষের মন আর মননের গভীর অতল
কেমনে তা ছুঁতে হয় যদি নাই শিখে থাকো
চেয়ে দেখো, সামনে উদাহরন রয়েছেন
মেধাবী বেকন ।
সব থেকে জ্ঞানী আর উজ্জ্বল মানুষ একজন,
বিকীর্ণ করেছেন আলো,
যদিও সবার থেকে ছোট তার মন'
১৬২৬ সালের ৯ এপ্রিল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে লন্ডনের বাইরে হেইগেট এলাকার অরুনডেল ম্যানশনে মৃত্যুবরণ করেন এই দার্শনিক। আজ এই বিতর্কিত অথচ অসাধারন ব্যাক্তিত্ব স্যার ফ্রান্সিস বেকনের ৩৮৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ইংরেজ দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার পথপ্রদর্শক স্যার ফ্রান্সিস বেকনের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "ফ্রান্সিস বেকন্"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন