
জোসেফ স্টালিন
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০১৯
Comment

রুশ ভাষায় ‘স্তাল’ অর্থ ইস্পাত ‘স্তালনোই’ অর্থ ইস্পাত কঠিন! আর ‘স্তালিন’ মানে হচ্ছে ‘লৌহ মানব’। জোসেফ স্টালিন একজন রুশ সাম্যবাদী রাজনীতিবিদ পশ্চিমারা যাকে প্রচন্ড একগুয়ে,দাম্ভিক নিশ্বংস চতুর স্বৈরশাসক উপাধি দিয়েছে সেই তিনি এক নাগারে একত্রিশ বছর শাসন করেছেন পুরো সোভিয়েত সাম্রাজ্য। তার আসল নাম-জর্জিয়ান ভাষায় ‘জোসেফ বেসারিওনি জুগাসভিলি’যার রুশ ইউসিফ ভিসারিওনোভিচ দ্জুগাসভিলি। অনেক অন্য কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতাদের মত স্টালিন বা স্তালিন ও তার ছদ্ম নাম। ‘স্তালিন’ ছদ্মনামের আগে তাকে আরো অনেক ছদ্ম নাম যেমন‘কোবা’‘সোসেলো’ কিংবা ইভানভ নামেও ডাকা হত।
যিনি মুলত জর্জিয়ান যার জন্ম হয়েছিল অতি দরিদ্র এক মুচির ঘরে।সাত বছর বয়সে তিনি স্মল পক্সে আক্রান্ত হয়ে সারা জীবনের জন্য সেই ক্ষত বয়ে বেড়ান। ১০ বছর বয়সে মিশন চার্চ স্কুলে ভর্তি হন যেখানে জর্জিয়ান শিশুদের রুশ ভাষা শিখতে বাধ্য করা হত।বার বছর বয়সে ঘোড়ায় টানা গাড়ি দুর্ঘটনায় তার বাম হাত চিরদিনের জন্য অচল হয়ে যায়। ষোল বছর বয়সে তিনি এক জর্জিয়ান অর্থাডক্স সেমিনারিতে বৃত্তি পান। কিন্তু সেখানে তিনি সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় শাসনের বিরুদ্ধচারন করেন। যদিও তিনি ছাত্র হিসেবে বেশ ভাল ছিলেন কিন্তু ১৮৯৯ সালে তার চুড়ান্ত পরিক্ষায় অনুপস্থিত থাকার জন্য সেমিনারি থেকে বহিস্কার করা হয়। সেমিনারির রেজিস্টার বইতে উল্লেখ আছে বেতন পরিশোধ করতে না পারার জন্য তাকে বহিস্কার করা হয়েছে( কিন্তু বৃত্তি পাওয়া একজন ছাত্রের বেতনের জন্য কেন বহিস্কার করা হবে এটা বোধগম্য নয়)। তবে সোভিয়েত সরকারি নথি থেকে জানা যায়,তৎকালীন নিষিদ্ধ পুস্তক পড়ার দায়ে ও Social Democratic study circle গড়ে তোলার জন্য তাকে বহিস্কার করা হয়।
স্কুল ছাড়ার কিছুদিন পরে তিনি ভ্লাদিমির লেনিনের লেখা একটা আর্টিকেল পড়ে মার্কসবাদী বিপ্লবী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯০৩ সালে তিনি লেনিনি এর বলশেভিক যোগদান করেন। কিছুকাল পরই তার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী কর্মকান্ডের জন্য জারের সিক্রেট পুলিশ সার্ভিস এর (যাদেরকে রুশ ভাষায় ‘আখরান’বলা হত) নজরে পড়েন। যার ফলশ্রুতিতে তিনি পরিপূর্ন বিপ্লবের হিসেবে গুপ্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।তাকে ককেশাশ অঞ্চলের বলশেভিক এর বিপ্লবী প্রধান এর দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি সেখানে গুপ্ত আধা সামরিক বাহিনী গড়ে তোলেন সেই সাথে বিভিন্ন রকমের প্ররোচনা প্রচারনা গুপ্ত হত্যা ব্যাংক ডাকাতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। ১৯০৭ সালে তিনি ‘তিফিলস’ ব্যাংক ডাকাতি করে চরম নিন্দিত হন। প্রচুর হতাহত ও দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার রুবল বা সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলার চৌর্যবৃত্তির জন্য তার রাজনৈতিক ভাবমুর্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
এর আগে ১৯০৬ সালে তিনি ‘একাতেরিনা স্বেভানডিজ্ব’ কে বিয়ে করেন যার ঘরে তার প্রথম সন্তান ‘ইয়াকভ’ এর জন্ম হয় কিন্তু জন্মের অল্পকাল পরেই সে Typhus(জ্বর বিকার)আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
বিপ্লবের সময় তিনি বহুবার ধরা পড়েন ও সাইবেরিয়াতে নির্বাসিত হন। কিন্তু প্রতিবারই তিনি কোন না কোনভাবে সেখান থেকে পালিয়ে আসতে সমর্থ হন।
শেষবার যখন তিনি আটক হন তখন তাকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বাধ্যতামুলক ভাব রুশীয় সেনাদলের সাথে যোগদানের আদেশ হয়, কিন্তু এতদিনের বয়ে বেড়ানো সেই ‘ভয়ঙ্কর অভিশাপ’ অচল হয়ে যাওয়া বাম হাত তাকে বাচিঁয়ে দেয়।
স্তালিনকে নিয়ে কৌতুক-১
দ্বীতিয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে স্তালিন তাদের আক্রমন কৌশল নিয়ে আলোচনা করছেন মার্শাল জুকভ এর সাথে।আপনার কি মনে হয় কমরেড জুকভ আমরা কোন দিক থেকে আক্রমন করতে পারি?
পূর্ব দিক দিয়ে আক্রমন করলেই সবচেয়ে ভাল হয় ‘কমরেড স্তালিন’।
আমার মনে হয় আপনার একটু ভাল করে চিন্তা করা উচিৎ। যান ভাল করে ভেবে চিন্তে তার পের বলবেন।
কমরেড জুকভ হতাশ হয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে অতি অনুচ্চ স্বরে স্তালিনকে ‘শুয়োর’বলে গালি দিল।
তবে স্তালিনের সেক্রেটারি পশক্রিবিসেভ ঠিকই শুনে ফেলল গালিটা। সে গিয়ে স্তালিনকে অনুযোগ করল কমরেড জুকভ তাকে ‘শুয়োড়’ বলে গালি দিয়েছে।
স্তালিন তখুনি জরুরি তলব করল জুকভকে। জুকভ আসতেই তিনি রেগে গিয়ে বললেন, কমরেড জুকভ’ আপনি কাকে শুয়োড় বলে গালি দিয়েছেন?
জুকভ একটু দ্বিরুক্তি না করে বললেন,‘হিটলারকে’।
স্তালিন তখন তার সেক্রেটারির দিক ঘুরে জিজ্ঞেস করলেন,’তবে তুমি কার কথা মনে করেছিলে?’
‘
১৯২১ সালের রেড আর্মির(১৯১৮-১৯২২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার সিভিল ওয়ারের সময়ে কমিউনিষ্ট বিপ্লবীদের আধা সামরিক সংগঠনকে বলা হত রেড আর্মি যা ১৯৩০ সালে বিশ্বের সবচেয়ে সু সংগঠিত ও বৃহৎ সেনাবাহিনী হিসেবে স্বীকৃতি পায়)জর্জিয়া আক্রমনের মুল পরিকল্পনা কারীছিলেন স্তালিন যার সফলতায় লেনিন এর সাথে তার সম্পর্কের উন্নয়ন হয়। পার্টির প্রতি অনুগত্য সাহসিকতা নির্ভিক কর্মঠ স্তালিনকে লেনিন ট্রটেস্কিসহ অন্যান্য বয়স্ক ও উচ্চপদস্থ পার্টি নেতাদের টপকে পার্টির সাধারন সম্পাদকের পদে পরের বছর স্তালিনকে মনোনয়ন দেন।
স্তালিনকে লেনিন মনে হয় খানিকটা ভয় পেতেন- না হলে এই কৌতুকটা কেন প্রচলিত হল;
স্তালিন একবার লেনিনের কাছে গিয়ে বললেন,কমরেড ভ্লাদিমির ইলিচ আমি কি ডজন খানেক কমিউনিষ্ট পার্টি মেম্বারকে খুন করতে পারি?
লেনিন বললেন,হুম এটা পার্টির চাহিদার স্বার্থে আপনি পারেন।
কমরেড আমরা কি পার্টির ভালর জন্য শ’খানেক মেম্বারকে হত্যা করতে পারি?
জ্বী পারেন। পার্টির জন্য ভাল হলে অবশ্যই পারেন।
যদি প্রয়োজন হয় তবে হাজার খানে?
যদি সত্যিকার অর্থেই তেমন প্রয়োজন হয় তবে পারেন।
যদি তেমন কোন পরিস্থিতির সৃস্টি হয় তবে কি মিলিয়নখানেক পার্টি মেম্বারকে হত্যা করতে পারি।
আহ!ইউসিফ ভিসারিওনোভিচ,এখন কমরেডসুলভ উপায়ে আপনার সমালোচনা করতে পারি-আপনি মনে হয় কিঞ্চৎ উত্তেজিত আর উদ্বিগ্ন!
১৯২২ সালে লেনিন এর প্রথম স্ট্রোকের পর স্তালিন পার্টির প্রায় সবোর্ময় ক্ষতার অধিকারী হয়ে ওঠেন এবং লেনিনকে বাইরের পৃথিবী থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। যার ফলে পার্টির সিনিয়র নেতারা বিরাগভাজন হন। লেনিনও ধীরে ধীরে স্তালিনের স্বেচ্ছাচারিতা,অভদ্র আচরন,উচ্চাকাঙ্খায় ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে পরিশেষে পার্টির সব্বোচ্চ পদ থেকে সরিয়ে ফেলার পরামর্শ দেন। কিন্তু সতালিনের কুটচালে তা আর কখনো সম্ভব হয়নি। জনসম্মুখে লেনিনের শেষ ইচ্ছাপত্র সম্পূনূরুপে আর কখনো প্রকাশ পায়নি। উল্টো পার্টির চরম প্রভাবশালী যেইসব নেতা সেটা প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন- তাদেরকে উল্টো পার্টি থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। ট্রটোস্কিকেতো দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। সেই থেকে শুরু হল স্তালিনের চরম স্বেচ্ছাচারিতা আর নিশ্বংসতা সেই সাথে গোপনীয়তা যা চলেছে তার ক্ষমতার শেষ দিন পর্যন্ত।
তিনি হত্যা করেছেন লেনিনগ্রাদের পার্টি প্রধান সের্গেই কিরভকে। তার তৈরি রুশ সিক্রেট পুলিশ যা ১৯৫৪ সালে কেগ্যাব্যা(কেজিবি)বা কমিতেত গসুদারস্তবিন্নি বেজাপাদনোস্তি বা Committee for State Security জন্ম নেয়।যাদের মাধ্যমে সুদুর মেক্সিকোতে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম রাজনৈতিক প্রতিভা ও লেনিনের ঘনিষ্ঠ সহচর লিওন ত্রোতস্কি (ট্রটোস্কি)হত্যা করা হয়।(লিওন ত্রোত্স্কি, যার প্রকৃত নাম লিয়েভ দাভিদোভিচ ত্রোত্স্কি রুশ বিপ্লবেরঅন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। তিনি লেনিনের ভাবশিষ্য ছিলেন। লাল ফৌজ গঠনে তাঁর উদ্যোগ ছিল স্মরণীয়। ১৯১২-১৩ সাল অবধি বল্কান যুদ্ধে সাংবাদিকতা করেন। এর ,মাঝে দু-দুবার সাইবেরিয়ায় নির্বাসন দন্ড পেয়ে প্রতিবারই পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। ১৯১৭ সালে আসে রুশ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সাফল্য শুরু হয় গৃহযুদ্ধ ।
জার্মানীর সাথে বিশ্বযুদ্ধকালীন সন্ধি করেন। তিনি পলিটব্যুরোর সদস্য ছিলেন। ১৯২০ সালে গৃহযুদ্ধ শেষ হলেও স্ট্যালিনের সাথে বিরোধের শুরু ।লেনিন অসুস্থ হলে ত্রোত্স্কি বিপাকে পড়েন। লেনিন এর মৃত্যুর পরে স্ট্যালিন তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগ আনেন। ১৯২৮ সালে সমস্ত ত্রোত্স্কিপন্থীরা বহিস্কৃত হন। ত্রোত্স্কি সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে পালিয়ে প্রথমে তুরস্কে আশ্রয় নেন। ১৯৩৩ সালে ফ্রান্সে যান। ১৯৩৫ সালে নরওয়েতে যান কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হন। এরপর মেক্সিকোতে আশ্রয় নেন। ত্রোত্স্কি ১৯৪০ সালের ২০ আগস্ট রামো্ন মারকাডার নামে এক আততায়ীর হাতে নিহত হন। ১৯৭২ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম মেকারজোসেফ লোসে ত্রোতস্কির নির্বাসিত জীবন নিয়ে ‘The Assassination of Trotsky’ নামে একটি ফিল্ম করেন। সেখানে ত্রোতস্কির ভুমিকায় অভিনয় করেন ‘রিচার্ড বার্টন’।)
এই লৌহ মানবের টর্চার কতটা ভয়ঙ্কর ছিল সেটা এই কৌতুকে স্পষ্ট হয়;
‘উরাল থেকে আসা কিছু মজুরের সাথে সাক্ষাতের পরে স্তালিন তার প্রিয় পাইপটি খুজে পাচ্ছিলেন না। তখুনি তিনি ডেকে পাঠালেন কেজিবি প্রধান লাভরেন্তি বেরিয়াকে বললেন, আমি আমার পাইপটা খুজে পাচ্ছিনা গেল কোথায় সেটা?
বেরিয়া তাকে আস্বস্ত করে বললেন, স্যার আপনি চিন্তা করবেন না। আমি আপনার পাইপ খুজে বের করার চেস্টা করছি।
কিছুক্ষন বাদে স্তালিন তার ড্রয়ারে খুজে পেলেন পাইপটা।দেয়ালেইয়ে কাঠি ঠুকে পাইপে আগুন ঠেসে ধোয়ার কুন্ডুলি উড়িয়ে আয়েস করে বসে ফোন ঘোরালেন বেরিয়াকে। বললেন,বেরিয়া অবশেষে আমি আমার পাইপটা খুজে পেয়েছি।
বেরিয়া ভীষন আনন্দিত হয়ে বলল,এটা অবশ্যই দারুন সুখবর যে আপনি পইপটা খুজে পেয়েছেন। তারপরেই কপাল কুঁচকে বললেন, তবে যে ওদের রিমান্ডে নেবার পরে সবাই স্বীকার করল তারাই পাইপটা নিয়েছে?’
স্তালিন লেনিনের পাশাপাশি তিনি নিজের একটা ভিন্নধর্মী ইমেজ তৈরি করতে সচেষ্ট হন। তিনি নিজের নামে সোভিয়েত ইউনিয়নের অনেক শহর ও গ্রামের নামকরন করেন। স্তালিন শান্তি পুরস্কার নামে একটা পুরস্কারের প্রবর্তন করেন তিনি।
স্তালিন সোভিয়েত ইউনিয়নে কেন্দ্রীয় অর্থনীতি ব্যবস্থার প্রচলন করেন। তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রায় সবটুকুই অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর ছিলো। স্তালিনের দ্রুত শিল্পায়ন ও কৃষিকার্যের কেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে পুরো দেশটি অল্প সময়ের মধ্যে শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হয়। কিন্তু একই সময়ে অর্থনৈতিক উত্থানপতনের দরুন কোটি কোটি মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা যায়। ১৯৩০-এর দশকে স্তালিন নিজের ক্ষমতা শক্ত করার জন্য নিপীড়ন শুরু করেন, যার ফলে কমিউনিস্ট পার্টির শত্রু সন্দেহে কোটি কোটি মানুষকে হত্যা করা হয়, অথবা সাইবেরিয়া ও কেন্দ্রীয় এশিয়ার নির্যাতনকেন্দ্রে নির্বাসিত করা হয়। রাশিয়ার অনেক জাতিগোষ্ঠীকে তাদের বসতবাড়ি থেকে উৎখাত করে অন্যত্র সরিয়ে দেয়া হয়।
স্তালিনের শাসনকালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ২য় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয়, এবং নাৎসি জার্মানির পরাজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্তালিনের নেতৃত্বে সোভিয়েত ইউনিয়ন ২য় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বের দুই পরাশক্তির একটিতে পরিণত হয়, যা ৪০ বছর পরে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
‘মানবতার এক উজ্জল প্রতিভা’ ‘সমাজতন্ত্রের গোড়াপত্তনকারী’‘জাতির পিতা’ সহ অনেক উপাধী সাদরে বরন করেছিলেন। সেইসাথে নতুন করে সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাস লিখতে বাধ্য করেন যা ১৯১৭ বিপ্লব থেকে শুরু করে পরবর্তী কাল পর্যন্ত তাকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করেন।
দ্বীতিয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে স্তালিন জাতীয় সংগীতে নিজের নাম ঢুকিয়ে দেন। তার মহৎ কর্ম মানুষের হৃদয়ে প্রোতিথ করার জন্য তিনি কবিতা, সাহিত্য, নাটক, সিনেমায় তাকে ভক্তিভরে উপাস্থপনা ও তার মহান কর্মকান্ড ফলাও করে প্রচার করার জন্য অনুরোধ বা বাধ্য করেন।
বিস্ময়কর হলেও সত্য যে স্তালিন ১৯৪৮ সালে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনিত হয়েছিলেন!
দ্বীতিয় বিশ্বযুদ্বের সময় থেকেই শারিরিক অবস্থার অবনতি শুরু হয়। অতিরক্তি ধুমপানের জন্য তিনি ‘অথেরোস্ক্লেরোসিস’ রোগে আক্রান্ত হন!১৯৪৪ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজে স্যালুট নেবার সময়ে তিনি মস্তিস্ক প্রদাহে আক্রান্ত হন! পরবর্তীত ১৯৪৫ সালরে অক্টোবরে তিনি ফের হৃদরোগে আক্রান্ত হন!
১৯৫৩ সালের পহেলা মার্চ ভোরে তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেরিয়া,ভাবি প্রধানমন্ত্রী জর্জি মালেকভ, জর্জি মালেকভ, নিকিতা খ্রুশ্চেভ এর সাথে সারারাত পান আড্ডা ও মুভি দেখা শেষে মস্কো সেন্টার থেকে পনের কিলোমিটার দুরে তার কুন্তেসেভো রেস্ট হাউজে ঘুমাতে যান। ধারনা করা হয় শোবার খানিক্ষন বাদেই তিনি ম্যাসিভ ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন!
স্তালিনের কড়া আদেশ ছিল তিনি স্ব ইচ্ছায় ঘুম থেকে না উঠলে কেউ যেন না জাগায়। তার দেহরক্ষী ও পাহাড়াদাররা ভবেছিল রাত্রি জাগরেনর কারনে তিনি দীর্ঘক্ষন ঘুমাচ্ছেন। রাত তখন দশটা প্রায়- স্তালিন তখনো তার শয়ন কক্ষে-জেগে আছেন কি ঘুমাচ্ছেন কারো কোন ধারনা নেই। সবাই ভীষন উদ্বিগ্ন। কারোই সাহসে কুলোচ্ছে না তাকে জাগানোর ।
অবশেষে ভীষন ঝুঁকি নিয়ে 'কুন্তোসভো'র সহকারী কমান্ডার স্তালিনের শয়নক্ষের খুললেন। দরজা খুলেই তিনি ভয়ে আতঙ্কে তার মিলিটারি খোলস থেকে বেরিয়ে চিৎকার করে উঠলেন! দৃশ্যটা সত্যিই আতঙ্কিত করার মত ছিল;লৌহমানব স্তালিন তার নিজের মুত্র গায়ে মেখে মেঝেতে জুবুথুবু হয়ে পড়ে আছেন। সবাই ভেবেছিল স্তালিন মারা গেছেন- কিন্তু তিনি তখনো বেঁচে ছিলেন।
২রা মার্চ সকালে ডাক্তার এসে তার শারিরিক অবস্থা পর্যবেক্ষন করে কোন আশার বাণী শোনাতে পারেননি। শুধু পোশাক পাল্টে পরিস্কার বিছানায় শুইয়ে দেয়া ছাড়া তার আর কিছুই করার ছিল না।
৫ই মার্চ ১৯৫৩ সালে ৭৪ বছর বয়সে স্তালিন মৃত্যুবরন করেন। সরকারিভাবে তার মৃত্যুর ঘোষনা দেয়া হয় এরও চারদিন পরে ৯ মার্চ।
তার দেহ ১৯৬১ সাল পর্যন্ত সংরক্ষন করে রেড স্কয়ারে লেনিনের সমাধির পাশে রাখা হয়। ১৯৬১ সালের ৩১শে অক্টোবর ক্রমলিনের দেয়ালের পাশের সমাধিতে সমাহিত করা হয়।
১৯৯৩ সালে প্রকাশিত রাজনৈতিক স্মৃতিকথা 'ভাসেলিভ মালাকভে' রগ্র ন্থে লেখা হয় স্তালিনের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী 'বেরিয়া' নাকি স্তালিনকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছেন।
২০০৩ সালে, রাশিয়ান এবং আমেরিকান ঐতিহাসিক একটি যৌথ দল ঘোষণা করে, তাদের ধারনা স্তালিনকে ইঁদুর মারার বিষ 'ওয়ারফারিন' প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়েছিল। গন্ধহীন বর্ণহীন এই শক্তিশালী বিষ মানুষ হত্যার জন্য একটা বিশ্বাসযোগ্য অস্ত্র ছিল। স্তালিন বহুবার তার শত্রু নিধনে এই বিষ ব্যাবহার করিয়েছেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তার বিশ্বস্ত সহযোগীরাই তাকে সেই ‘মানুষ হত্যার বিশ্বাসযোগ্য অস্ত্র’ দিয়েই হত্যা করেছিল।
তার সখ নিয়ে কিছু কথা বলি;
স্তালিন মদ খেতেন কিন্তু কখনোই বে-এক্তিয়ার হতেন না। তার রাশিয়ান ভদকা'র থেকে জর্জিয়ান ওয়াইন অনেক প্রিয় ছিল। তবে রাশিয়ান্ ঐতিহ্যবাহী খাবার তিনি বেশ পছন্দ করতেন। তার প্রিয় ছবি ছিল আমেরিকান 'ওয়েষ্টার্ন ফিল্ম'। ছুটির অবসরে তিনি তার উচ্চ পদ মর্যাদার রাজনৈতিক সহচরদের নিয়ে 'ক্রেমলিন মুভি থিয়েটারে' সিনেমা দেখতেন। বিদেশী ছবির সরাসরি অনুবাদক ছিলেন 'ইভান বলশাখভ'। সদা হাস্যময় ইভান বলশাখভের মোহনীয় অনুবাদে সবাই দারুন আমোদিত হতেন! স্তালিনের প্রিয় মুভির তালিকায় ছিল 'চার্লি চ্যাপলিন'। তবে তিনি কখনোই চলচ্চিত্রে নগ্নতাকে প্রশ্রয় দিতেন না। কোন মুভিতে নগ্নতা প্রদর্শিত হলে তিনি খানিকটা রেগে গিয়ে উচ্চস্বরে বলতেন' ইভান তুমি কি এটাকে বেশ্যালয় বানাতে চাইছ'?
স্তালিনের বিশ হাজার বইয়ে ঠাসা একখানা ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ছিল। তিনি নাকি একদিনে পাঁচশত পৃষ্ঠা অবধি পড়তেন!
(পাঠকদের প্রতি অনুরোধ রইল;লেখায় ভুল ত্রুটি হলে একটু শুধরে দিবেন।)
রুস্কাইয়া ব্লুদার প্রায় সবগুলো পর্বেই (দু-তিনটে বাদে)ভিন্ন ভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "জোসেফ স্টালিন"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন