কিভাবে সুন্দর করে কথা বলতে হয়
শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০১৯
1 Comment
মানুষের প্রকাশ করার প্রবনতা সবচে’ বেশি। নিজেকে প্রকাশ করতে কে না চায়।সবাই চায় নিজেকে সবচেয়ে সুন্দর করে উপস্থাপন করতে। বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের একটি অন্যতম উপাদান হচ্ছে সুন্দর করে কথা বলা, ভাব প্রকাশে সৌন্দর্য্য। এই কাজ খুব কঠিন কিছু নয়। সুন্দর কথা বলার জন্য নিজের চেষ্টা আর সামান্য কিছু গাইডলাইন ই যথেষ্ট।
অনেকেই আছেন খুব সুন্দর মনের মানুষ, দেখতেও অনেক সুন্দর কিন্তু তিনি ভাল কথা বললেও যিনি শুনছেন তাঁর রাগ উঠে যায়। নিজেকে নিজে তিনি বোঝাতে পারেন না যে কী করবেন! তাই তাঁর সব কিছুতেই অস্থির লাগে। মন ভাল হলেও তিনি ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিতি পান না। কিংবা সমাজে তার নানা ধরনের জটিলতায় পড়তে হয়। বন্ধু মহলে কেউ তাকে জায়গা দেন না। শুধুমাত্র কিভাবে-সুন্দর-করে-কথা-বলতকিভাবে সুন্দর করে কথা বলতে হয় সেটা না জানার জন্যে।
সুন্দর করে কথা বলা সত্যিই একটা আর্ট। স্মার্টনেস এর প্রথম শর্ত। অনেকেই অনেক ভাবে ট্রাই করে সুন্দর কথা বলার চেষ্টা করেছেন কিন্তু সেই চেষ্টাকে সবাই হাসির খোরাক বানিয়ে ফেলেছেন। তিনি সুন্দর কথা বলতে চেষ্টা করায়ও সমাজে বাঁকা চোখের শিকার। আসুন দেখি খুব স্বাভাবিক কিছু নীয়মে সুন্দর কথা বলার চর্চা করি।
নিজেকে নিয়ে কিছু এনালাইসিস করুন। আপনি কেমন কথা বলছেন? কিভাবে শুরু করছেন? কাকে কী বলছেন ইত্যাদি। এর সাথে আপনার শারীরিক স্ট্রাকচার কতটা বোল্ড নাকি নরমাল নাকি আরো খারাপ? কন্ঠটা কি বেশি উৎকট নাকি নরমাল নাকি খুবই মিষ্টি? আপনার নলেজ কেমন? এসব এনালাইসিস একটা কাগজে লিখে রাখলেই ভাল। চর্চা করার সময় কাজে আসবে। তবে আপনার স্মৃতিশক্তি ভাল হলে মনে রাখতে পারেন। সুন্দর করে কথা বলার ক্ষেত্রে এই বিষয় মাথায় রাখা জরুরী।
আপনার যা সামর্থ্য আছে তাতেই শুরু করুন। এনালাইসিস করার পর দেখা গেছে আপনার খুবই খারাপ অবস্থা! কিন্তু তাতে কি? আপনি কি শুরু করবেন না? অবশ্যই করবেন। মনে রাখবেন সুন্দর করে কথা বলা পুরটাই চর্চার উপর নির্ভরশীল।
চর্চা শুরুর পর নিচের বিষয়গুলিতে জোর দিন। মনে রাখবেন এর কোনটাই মিস করা যাবে না।
✦✦✦আগে শুনুনঃ কোন একটা আলোচনায় যোগ দিলে আগে শুনুন কে কী বলছে। এটা সব সময় সম্ভব নয়, কারন আপনি যদি সঞ্চালক হন তবে আপনাকেই আগে কিছু বলতে হবে। সেক্ষেত্রে মুল টপিক টি বলে সবার সবিনয় দৃষ্টি আকর্ষন করে শুনতে থাকুন। কিছু লিখে রাখুন। যা লিখবেন তাতে রেফারেন্স সহ লিখবেন- যেমন কে বলেছেন, কিজন্যে বলেছেন ইত্যাদি। কে কিভাবে কথা বলছেন সেটাও খেয়াল করুন। যিনি সুন্দর করে কথা বলছেন তাকে খুব মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তিনি হয়ত আপনার থেকে অনেক জানেন, তাতে কি। আপনিও একসময় জানবেন। ফলো করুন আর মনে মনে ভাবুন কিভাবে নিজেকে সেভাবে উপস্থাপন করবেন।
✦✦✦সুস্পষ্ট মতামত প্রয়োগঃ যথাসময়ে একটি স্পষ্ট মত প্রয়োগ করুন। এমন ভাবে বলবেন না যেন কেউ আপনার কথায় বিব্রত হয়। অন্যের কথার মাঝে কথা বলবেন না। যদি বলতে হয় তবে ভদ্রভাবে বলুন-মাফ করবেন অথবা এক্সকিউজ মী। তারপরে বলুন যে উনার কথাটায় আপনি কি যুক্ত করতে চাচ্ছেন।
✦✦✦আত্মবিশ্বাসের সাথে বলুনঃ যা বলবেন আত্মবিশ্বাস নিয়েই বলুন। দ্বিধা নিয়ে কিছু বলা উচিত নয়। কেউ যদি প্রশ্ন করে যে কেন আপনি এত আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলছেন, সাথে সাথে সুন্দর ব্যাখ্যা দিন। এবং তাকে এই জন্য একটা ধন্যবাদ জানান।
✦✦✦পরিবেশ পরিস্থিতির দিকে খেয়াল করে বলুনঃ একটা আলোচনায় অবশ্যই একটা নির্দিষ্ট পরিবেশ পরিস্থিতি থাকে না। চেঞ্জ হয়। কখনো হাসির সময় আসে কখনো খুব সিরিয়াস সময় আসে। অনেক সময় গম্ভীর একটা সিচুয়েশন দেখা যায়। সব সিচুয়েশনে সব কথা মানাবে না। নির্দিষ্ট সময়ে সময়োপযোগী কমেন্ট করুন।
✦✦✦টপিকের দিকে খেয়াল রাখুনঃ অনেকেই আছেন কথা বলা শুরু করেছেন, মাঝে একটা উদাহরন দিতে গেলেন, উদাহরনের মাঝে সুন্দর একটা গল্প কৌতুক শুরু করে দিলেন। আর আসল টপিক ভুলে গেলেন। গল্প শেষে নির্লজ্জের মতো হাসি দিয়ে বললেন- আমি কোথায় যেন ছিলাম? এসব মানুষের কথায় উপস্থিত সকলের কঠিন বিরক্তি হয়। রাগ হয়। পরের বার আর শুনতে চান না কেউই। সবাই নিশ্চয় তাদের মুল্যবান সময় সেই ব্যাক্তির গল্প শুনতে নষ্ট করবেন না?
তাই টপিকের দিকে মনোযোগ দিন। যদি এমন হয় তবে লিখে রাখুন। কাগজে লিখে তবেই গল্প উদাহরন যা দেবার দিন। এতে আপনার মনে থাকবে আপনি সত্যিই কোথায় ছিলেন। অফ টপিক সব সময় বলা যায় না। সিচুয়েশন দেখে বলুন।
কথার মাঝে দাঁড়ি কমা সেমিকোলনের সময় নিনঃ কথা শুধু রেলগাড়ির মত বলে যাবেন না। আবার ষ্টেশনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার মত বিশ্রামও নিবেন না। দাঁড়ি কমা কিংবা বিরাম এর সময় নিন। যাতে বুঝতে সুবিধা হয়।
✦✦✦চলিত ভাষায় বলুনঃ যে ভাষা সবাই বুঝে সে ভাষায় বলুন। আঞ্চলিক ভাষা পরিহার করুন। ইংরেজী কথায় কথায় না বলাই ভাল। যাঁরা ইংরেজী বলে পন্ডিত সাজতে চান তারা হাসির খোরাক হন। কোন উদ্ধৃতি ইংরেজীতেই যদি হয় সেটা বলা যেতে পারে। তবে ইন্টারন্যাশনাল কনভার্সেশনে তো পুরাটাই ইংরেজীতে বলবেন। সেখানে ভুলেও নিজের ভাষায় বলবেন না। এতে লোকাল লোকজন খুশি হলেও আন্তর্জাতিক সদস্যরা খুব মনে কষ্ট পান। তাই এদিকে খেয়াল রাখবেন। লোকাল ভাষায় কেউ কিছু জানতে চাইলেও ইংরেজীতেই উত্তর দিন। ভাষা যদি চেঞ্জ করতেই হয় তবে অনুমতি নিয়ে নিবেন।
✦✦✦উচ্চারন শুদ্ধ করুনঃ সঠিক উচ্চারন আবশ্যিক। এর জন্য প্রয়োজন অনুশীলন। সঠিক বাংলা উচ্চারনে কথা বলে আপনি তাক লাগিয়ে দিতে পারেন। আপনার কথা সবাই শুনতেই চাইবে শুধু শুনতেই চাইবে। এর জন্য কিছু কোর্স করাও যেতে পারে।
✦✦✦অংগভংগীর ব্যাবহারঃ কথা বলার সময় সংশ্লিষ্ট অংগভংগী গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। অনেকেই এক হাত নাড়িয়ে কথা বলেন। অনেকেই দু’হাত নাড়িয়ে কথা বলেন। আবার অনেকে হাত না নাড়িয়েই কথা বলেন। সত্যি বলতে কী আমাদের কোন কারিকুলামে কথা বলার উপর কোন পাঠ নেই।
এটা ব্যর্থ শিক্ষা নীতি। কিন্তু আপনি কিছু অনুশীলনের মাধ্যমে এর যথেষ্ট প্রয়োগ করতে পারেন। যখন যা বলবেন তা বুঝাতে যেভাবে অংগ সঞ্চালন দরকার সেটাই করা উচিত। বড় কিছু বুঝাতে দু’হাতে বড় ইঙ্গিত করাই সঠিক। সুন্দর করে কথা বলার ক্ষেত্রে এটাও আবশ্যিক।
সুন্দর করে কথা বলা শেখার ১০টি উপায়
আমরা আমাদের জীবনে অনেক মানুষকে দেখেছি যারা অনেক জ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের ঠিক মতো প্রকাশ করতে পারে না। এমনকি শিক্ষা জীবনে এমন অনেক শিক্ষকদের দেখেছি যাঁদের পড়া আমরা কিছুই বুঝতাম না । নিঃসন্দেহে তারা অনেক জ্ঞানী কিন্তু ঘাটতি ছিল উপস্থাপনের।
সুন্দর করে কথা বলা হচ্ছে একটি আর্ট । স্মার্টনেসের প্রথম শর্ত এটি । অনেকেই দেখা যায় অনেক জ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও উপস্থাপনের ঘাটতি থাকায় কেউ তাতে আগ্রহ দেখায় না। নিজেকে প্রকাশ করতে কে না চায়? সবাই চায় নিজেকে সবচেয়ে সুন্দর করে উপস্থাপন করতে। বাহ্যিক সৌন্দর্যের মধ্যে ভাব প্রকাশের সৌন্দর্য হচ্ছে অন্যতম একটি উপাদান।
অনেকেই আছেন খুব ভালো মনের মানুষ, দেখতেও সুন্দর কিন্তু তিনি ভাল কথা বললেও যিনি শুনছেন তার ভাল লাগে না। শুধুমাত্র কীভাবে সুন্দর করে কথা বলতে হয় তা না জানার কারণে। এ কাজ খুব কঠিন কিছু নয়। নিজের চেষ্টা এবং সামান্য কিছু গাইডলাইনই যথেষ্ট। উপস্থাপন আরও চমকপ্রদ করতে আমরা আজকে দেখব সুন্দর করে কথা বলার কয়েকটি গাইডলাইন।
✦✦✦ ১। নিজেকে বিশ্লেষণ কর
প্রথমেই নিজেকে বিশ্লেষণ করতে হবে। তুমি কী বিষয়ে কথা বলছ, কীভাবে কথাটি শুরু করছ, কার সঙ্গে কথা বলছ এবং তার সাথে দেখতে হবে তোমার কণ্ঠস্বরটি কেমন। সেটি কি খুব বেশি কর্কশ , খুব মিষ্টি নাকি স্বাভাবিক। যেই বিষয় নিয়ে তুমি কথা বলছ সেই বিষয়ে তোমার দক্ষতা কেমন এটি জানা ও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিশ্লেষণের ফলাফল কাগজে লিখে রাখাই ভাল। সুন্দর করে কথা বলা পুরোটাই চর্চার ওপর নির্ভরশীল।
✦✦✦২। আগে শোনার ওপর গুরুত্ব দাও
কোন একটা আলোচনায় যোগ দিতে গেলে আগে শোন কে কী বলছে। হুট করে কোন মন্তব্য করা বোকামির কাজ। মূল বিষয়টি নিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা কর। কেউ যদি অনেক সুন্দর করে উপস্থাপন করে তবে তাকে অনুসরণ করা যেতে পারে।
✦✦✦৩। সুস্পষ্ট মতামত প্রয়োগ কর
কখনোই এমন কোন কথা বলা উচিত নয় যেটিতে মানুষ খুব বিব্রতবোধ করে কিংবা বিষয়বস্তুর সঙ্গে একদমই খাপ খায় না। অন্যের কথার মাঝে কথা বলাটা অনেকেই পছন্দ করে না। তবে কথা যদি বলতেই হয় সেটি ভদ্রভাবে বললে সবাই তাতে সাড়া দেবে। যেমনঃ “Excuse me” বলে বক্তার কথার সাথে যা যোগ করতে চাচ্ছিলে কিংবা সেই বিষয়ে কোন ব্যক্তিগত মতামতও দেয়া যেতে পারে।
✦✦✦৪। আত্মবিশ্বাসের সাথে বলো
যা বলবে আত্মবিশ্বাসের সাথে বলবে। দ্বিধা নিয়ে কিছু বলা উচিৎ নয়। বক্তাকে দ্বিধান্বিত দেখলে শ্রোতারা বক্তার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। আর যা বলছো, সেই কথাটি বলার সময় আত্মবিশ্বাসের কারণটি ও বলা যেতে পারে।
✦✦✦৫। পরিবেশ পরিস্থিতির দিকে খেয়াল কর
পরিবেশ পরিস্থিতি সব সময় এক থাকবে না। সেই পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে কথা বলতে হয়। একটি আলোচনার ক্ষেত্রেও পরিবেশ পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়। কখনো হাসির সময় আসে আবার কখনো কঠোর সময় আসে কিংবা অনেক সময় অনেক গম্ভীর পরিস্থিতি তৈরি হয়। সব পরস্থিতিতে সব কথা মানায় না। নির্দিষ্ট সময়পোযোগী মন্তব্য করাই ভাল ।
✦✦✦৬। মূল বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখো
কথা বলার সময়, সবসময় মূল বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অনেক সময় কথা বলতে বলতে বক্তা মূল বিষয় থেকে সরে পড়ে। তখন শ্রোতারা খুব বিরক্তবোধ করে। কারণ তারা তাদের মূল্যবান সময় গল্পে নষ্ট করতে চান না। দরকার হলে লিখে রাখতে পারো যেটি নিয়ে কথা বলতে চাও। তাহলে বক্তব্যগুলো মূল বিষয়ের মধ্যেই চলে আসবে।
✦✦✦৭। Gap দিয়ে কথা বলো
কথা বলার সময় একটু gap দিয়ে কথা বললে শ্রোতাদের বুঝতে সুবিধা হয়। বেশি তাড়াতাড়ি কথা বলা খুব বাজে একটি অভ্যাস। এতে শ্রোতাদের ও বুঝতে কষ্ট হয়। Gap দিয়ে কথা বললে মূল বিষয়ের ওপর গুরুত্বও দেয়া যায়। অন্যদিকে ধীরগতিতে কথা বললে শ্রোতারা বিরক্তবোধ করে এবং শোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। সুতরাং, মধ্যবর্তী একটি মাপ বেছে কথা বললে শ্রোতাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া যায়। কথা বলার সময় গুরুত্ব অনুযায়ী কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করা যেতে পারে।
✦✦✦৮। চলিত ভাষায় কথা বলো
যে ভাষা সবাই বুঝে সে ভাষায় কথা বলা উচিৎ । উচ্চারণ শুদ্ধ করলে কথা শুনতেও অনেক ভালো লাগে । সঠিক বাংলা উচ্চারণ করে তাক লাগিয়ে দেয়া যায়। খুব বেশি দরকার পড়লে উচ্চারণের ওপর কিছু কোর্স ও করা যেতে পারে।সঠিকভাবে কোন ইংরেজি শব্দ উচ্চারণ করতে পারা ইংরেজিতে ভাল করার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
✦✦✦৯। কোনো Source অনুসরণ করা যেতে পারে
উচ্চারণ সুন্দর করতে কিংবা জ্ঞান আহরণে বিভিন্ন source অনুসরণ করা যেতে পারে। যেমনঃ খবর, সিনেমা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ইত্যাদি।
✦✦✦১০। বিভিন্ন রকম বই পড়
জ্ঞান অর্জনে বই এর বিকল্প নেই। উচ্চারণ শুদ্ধ করতে বই এর কঠিন শব্দগুলো জোরে জোরে পড়ে অনুশীলন করা যেতে পারে ।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, সুন্দর করে কথা বলা পুরোটাই নিজের হাতে । নিজস্ব চেষ্টা এবং উপরের গাইডলাইনগুলো অনুসরণ করলে সুন্দর করে কথা বলা হবে নিজের হাতের মুঠোয়।
নিচের ৫টি কৌশল সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আপনি সহজেই সবার পছন্দের পাত্র হয়ে উঠতে পারবেন।
✦✦✦১। সাদর সম্ভাষণ
এটা একটি প্রাথমিক কার্যকরী মাধ্যম। প্রিয় কারো সাথে দেখা হলে বিনয়ীর সাথে তাকে সম্ভাষণ জানান। এ ক্ষেত্রে আপনার ব্যাস্ততাকে বাদ দিয়ে দিয়ে তাকেই গুরুত্ব প্রদান করুন। যার ফলে তার মনে আপনার জন্য ইতিবাচক দিক তৈরি হব। কেননা এর ফলে সে ভাববে আপনি তাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। যেটি আপনাকে তার প্রিয় পাত্র হতে সাহায্য করবে। তাই সম্ভাষন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয়।
✦✦✦২। ইগো পরিহার করুন
আমরা প্রত্যকেই অধিকাংশ সময় নিজস্ব ইগো বা অহংকার নিজেদের মধ্যে পুষে রাখি। এটি ধীরে ধীরে আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে। বিস্তার করতে থাকে তার ভয়ংকর ডালপালা। পরিশেষে ইগোর জাল আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে, যে জাল ছিড়ে বের হওয়া কঠিন হয়ে পরে। কিন্তু পছন্দের পাত্র হতে হলে আপনাকে আপনার ইগো বর্জন করতে হবে। শিকড় থেকে উপড়ে ফেলতে হবে ইগো নামক ভ্রান্ত বৃক্ষ। কেননা ইগো আপনাকে মনের অজান্তেই মানুষের কাছ থেকে দূরে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চালায়। ইগো মানুষের সাথে সহজভাবে মেশার ক্ষেত্রে দেয়াল হয়ে দাঁড়ায়। যার ফলে মানুষের কাছাকাছি আসয়ে ব্যাঘাত ঘটে। কিন্তু প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠার জন্য মানুষের সাথে মেশা জরুরী, বিনীয়ি হওয়া জরুরী। তাই সবার পছন্দের পাত্র হয়ে উঠার জন্য ইগো পরিহার করা অপরিহার্য।
✦✦✦৩। ভালো শ্রোতা হয়ে উঠুন
আমরা সবাই বলতে চাই কিন্তু কেউ আসলে শোনার ইচ্ছা বা আগ্রহ প্রকাশ করি না। কিন্তু আমাদের খেয়াল রাখা জরুরী অন্যের সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপন অথবা মেশার ক্ষেত্রে তার কথা মনযোগ সহকারে শোনা অন্ত্যন্ত জরুরী। কেননা কেউ একজন আপনার সাথে কথা বলছে অথচ আপনি তার কথা মনযোগ দিয়ে শুনছেন না। তাহলে বক্তা আপনার উপর বিরূপ ধারনা পোষণ করবে।
অন্যদিকে আপনি যদি বক্তার দিকে হালকা ঝুকে, তার চোখের দিকে তাকিয়ে ধৈর্য সহকারে তার কথা মনযোগ দিয়ে শুনে এবং সঠিক সময়ে উত্তর প্রদান করেন তাহলে বক্তা খুশী হবে এবং অতি সহজে আপনি তার প্রিয় ব্যাক্তিতে রুপান্তরিত হতে পারবেন। তাই সবার কাছে পছন্দের মানুষ হতে গেলে আপনাকে অবশ্যই ভালো শ্রতা হতে হবে।
✦✦✦৪। নতুনকে আপন করে নিন
এই কৌশলটি অতি দ্রুত পছন্দের ব্যাক্তি হিসেবে আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবে। নতুন কোন মানুষ আপনার কাছাকাছি আসলে তাকে অতিদ্রুত আপন করে নিন। কেননা, কেউই বিরূপ কোন মানুষ পছন্দ করে না। আর আমরা জানি যে নতুন কোন পরিবেশে একজন মানুষ আসলে কিছুটা উদ্বিগ্ন এবং সংকোচ বোধ করে।আপনি যদি সেখানে আগে থেকেই থাকেন তাহলে আপনার উচিৎ পরিচয়ের সঙ্গে সঙ্গে তার উদ্বিগ্নতা দূর করার চেষ্টা করা। তাহলে সহজেই সে ব্যাক্তি আপনাকে তার পছন্দের কাতারে রাখবে।
✦✦✦৫। বডি ল্যাংগুয়েজ বা অঙ্গভঙ্গি
আমাদের মস্তিষ্ক কারো সাথে কথা বলার আগেই তার অঙ্গভঙ্গি দেখেই তার সমন্ধে একটি ছোটখাট ছক কষে ফেলে। আপনি কিভাবে হাটলেন, কিভাবে দাঁড়ালেন, কিভাবে হাসলেন, কথা বলার সময় কিরূপ ভঙ্গি করলেন ইত্যাদি দিয়ে আপনার আচরণবিধি প্রকাশিত হয়। অনেক মানুষই আপনার এসব বিষয় খুব নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আপনাকে বিচার করবে। তাই আপনার পরিবেশের সাথে মিল রেখে অঙ্গভঙ্গি করতে হবে। তাহলেই মানুষ আপনাকে পছন্দের শীর্ষে রাখবে।
উপরোক্ত ৫ টি কৌশল অবলম্বন করলে আপনি সবার কাছে পছন্দনীয় ব্যাক্তি হতে পারবেন বলে আশাবাদী। তবে মনে রাখতে হবে মানুষের সাথে বিনয়ী হলে, তাদের সম্মান করলে এবং সৎ ভাবে জীবন যাপন করলে সবাই আপনাকে সম্মান করবে, ভালোবাসবে এবং বেলা শেষে আপনি সবার পছন্দের পাত্রে পরিণত হবেন।
অপরিচিত কারো সাথে আলাপচারিতার কৌশল
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজেই মানুষের বাস। তবে কেউ একা সমাজে চলতে পারেনা। সমাজে চলতে গিয়ে অনেক সময় অনেকের সাথে আমাদের পরিচিত হতে হয়। এমন অনেকেই আছেন যারা অপরিচিত কারো সাথে কথা শুরু করতে পারেন না। আর যদি শুরু করেন তবে কি বলবেন তা খুঁজে পান না। তাই তাদের বন্ধুত্বের জগৎটা ছোট হয়ে থাকে। তাদের জন্যই আমাদের আজকের আয়োজন। নিচের ৮ টি টিপস্ই আপনার পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট।
✦✦✦ ১) মনটাকে শান্ত রাখুন আর সব রকমের দুঃশ্চিন্তা এবং অস্থিরতা থেকে দুরে থাকুন। আপনি যেমন ঠিক তেমনই আচরণ করুন। তাহলে খুব সহজেই আপনি অপরিচিত কারো সাথে কিছু সময় কাটাতে পারবেন।
✦✦✦ ২) দুই পক্ষের মধ্যকার সাক্ষাতটি ফলপ্রসূ করার জন্য সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে তাদের তাকানোর দৃষ্টিভঙ্গি। বারবার চোখের পলক ফেলবেন না। তাদের দিকে আগ্রহী/কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকান এবং কথা বলার সময় মুখে একটা মিষ্টি হাসি রাখুন।
✦✦✦ ৩) সাধারন কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলুন। যদি আপনি কিছু কিনতে যান এবং অপরিচিত সেই লোকটিও একই জিনিস কিনতে যায় তবে সেই পণ্যটি নিয়ে কথা বলতে পারেন। আর এভাবেই আপনি কথা চালিয়ে যেতে পারেন।
✦✦✦ ৪) যদি আপনি কোন অনুষ্ঠানে থাকেন তবে কিভাবে আপনি দাওয়াত পেলেন এবং আপনি অনুষ্ঠানটি কেমন উপভোগ করছেন এ সম্পর্কে কথা বলতে পারেন। যদি অপর পক্ষ অন্য কোন বিষয় যেমন- নাচ, গান বা খাবার নিয়ে কথা শুরু করে তবে আপনাকেও এই বিষয়গুলো নিয়েই কথা শুরু করতে হবে যাতে আলাপচারিতাটি সুন্দরভাবে এগিয়ে যায়।
✦✦✦ ৫) অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতে চাইলে অথবা অনেকের মধ্যে গিয়ে হঠাৎ কথা শুরু করতে চাইলে আপনাকে এমন একটি বিষয় নির্বাচন করতে হবে যা সবার পছন্দনীয়। জনপ্রিয় সব হাল ফ্যাশনের কথা জানতে চাইলে ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে পারেন। কিন্তু রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিষয়গুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। যদি অপর পক্ষের কথা আপনার কাছে সুবিধাজনক মনে না হয় তবে আলাপচারিতাটি চালিয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
✦✦✦ ৬) অপরিচিত কারো সাথে কথা শুরু করার পদ্ধতি শিখতে চাইলে এই বিষয়ের উপর লেখা যে কোন বই দেখতে পারেন। আপনি যখন এটি শিখে যাবেন এবং এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ হয়ে উঠবেন তখন খুব সহজেই আপনি যে কারো সাথে কথা শুরু করতে পারবেন। অপরিচিত কারো সাথে কয়েক মিনিটের কথা আপনাকে সারা জীবনের বন্ধু পেতেও সাহায্য করতে পারে।
✦✦✦ ৭) আপনি আপনার অভ্যাসের ব্যাপারে কথা বলতে পারেন। তাছাড়া আপনার পছন্দের কোন খেলা বা সিনেমা নিয়েও কথা শুরু করতে পারেন। বিনা পরিশ্রমেই এমন অনেক কিছু পাবেন যা নিয়ে আপনি কথা চালিয়ে যেতে পারেন।
✦✦✦ ৮) অপর পক্ষকে কথা বলার সুযোগ দিন। বলা থেকে শোনাটা বেশি জরুরী। অন্যকে বলার সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে অন্যের ব্যাক্তিত্ব, পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে জানলে আপনাকে তার আরো বেশি ভালো লাগবে।
অপরিচিতদের সাথে কথা বলার কৌশলগুলো শিখে রাখুন। এগুলো আপনার সামাজিক সফলতা আনয়নের সাথে সাথে আপনার বন্ধুত্বের জগৎটাকে আরো বড় করতে সাহায্য করবে।
মানুষের সামনে কথা বলার ক্ষমতা অর্জনের কৌশল
নিজের স্মার্টনেস ফুটিয়ে তুলতে মানুষের সামনে কথা বলার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সে মানুষটি হোক ছেলে, হোক মেয়ে। সে কথা হতে হবে গোছালো রস মিলালো প্রশংসা মূলক। কারণ একমাত্র কথা দিয়েই মানুষের মন জয় করা সহজ। প্রথম প্রথম কথা বলতে গেলে ঠেকে যাবে জড়তা আসবে। ভূল হবে, এটা স্বাভাবিক। চর্চা করুণ সব ঠিক হয়ে যাবে।
বলার সুযোগ আসা মাত্রই উঠে দাড়াবেন কারণ পৃথবীর অর্ধেক মানুষ তো দাড়াতেই সাহস পায়না। ধীরস্থিরভাবে আপনার কথা ব্যক্ত করুণ। বড় বড় নকল কথা না বলে সাধারণ কথা বলুন এবং সংক্ষিপ্ত ভাবে বলুন। মানুষের সামনে কথা বলতে সাহসী হন কথা বলার কৌশল রপ্ত করুণ, কথা বলার সঙ্গে অঙ্গ ভঙ্গিও সুন্দর করে প্রকাশ করার চেষ্টা করুণ। উত্তেজনা পরিহার করুণ। সব সময় নরমাল ভাবে কথা বলুন।
✦✦✦মনকে বড় করুণ:- অনেকে আছে তারা কোন অনুষ্ঠানে গেলে বা বেড়াতে গেলে অন্যের সঙ্গে নিজের পোশাক পরিচ্ছদ মিলাতে শুরু করে। যখন দেখে তার পোশাক অনেক কমদামী গহনা সু আর সবার তুলনায় নিম্নমানের। সে নিজে নিজে মন থেকে নিজেকে ছোট করে ফেলে আসলে এসব কিছুই না। এজন্য মনকে বড় করতে হবে। আপনার কমদামী পোশাকটি মানান সই কিনা, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কিনা, গহনার বেলায় সৃজনশীল কিনা, পাতের জুতা মানিয়েছে কিনা। এই হচ্ছে আসল কথা। যদি তাই হয় তবে ভাবনা নেই দেখতে আর দশ জনের চেয়ে আপনাকেও কম সুন্দর মনে হবে না।
গোমরা করে বসে না থেকে নিজের যোগ্যতা প্রকাশ করুণ। দেখবেন সবাই আপনার দিকে তাকিয়ে রয়েছে সব কিছু সচেতনতার সহিত নির্বাচন করুণ। দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে অনুষ্ঠানের ধরণ ঋতু বুঝে পোশাক আনুসঙ্গীক নির্বাচন করুণ। যেন আপনার ফিগারের সঙ্গে মানায় সেদিকে লক্ষ করুণ।
সেকরিফাইজ মন, কার উপকারের মানসিকতা ভিতর থেকে তৈরি করুণ এজন্য নিজের মনকে বড় করতে হবে হীন প্রবণতা পরিহার করতে হবে। লজ্জা ভয় ত্যাগ করে সাহসি হয়ে উঠতে হবে।
✦✦✦ হাস্য রস চর্চা করুণ:- নিজের সকল ভয়, ভীতি, সংকীর্ণ, মন থেকে চির তরে পরিহার করতে হাস্যরস চর্চা করতে হবে। এজন্য অনুশীলন করতে হবে। জোকস বই পড়তে হবে। কমিডিয়ান নাটক সিনেমা দেখতে হবে।
বন্ধুরা মিলে একটি টিম তৈরি করে এই হাস্যরসের অনুশীলন করতে পারেন। ভাষা শুদ্ধ করতে মুখের কিছু ব্যায়াম আছে তা চর্চা করতে হবে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টেপ রেকর্ডারে রেকর্ড করে পরবর্তীতে তা শুনে অবাঞ্চিত ভুল গুলো আঞ্চলিকতার টান গুলো ধরতে পারবেন। এবং শব্দ ঠিকমতো উচ্চারণ করতে বারবার অনুশীলন করে তা ঠিক মত শিখে নিন।
✦✦✦ সাহসিকতা:- নিজেকে স্মার্ট ও আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করতে হলে আগে মনের সকল সংকীর্ণতা পরিহার করে, ভয়, লজ্জা দূরে ঠেলে মন থেকে সাহসি হয়ে উঠুন।
আমি পারবনা, আমার দ্বারা সম্ভব না, আমার দ্বারা হবে না, এমনহীন মনোবৃত্তি পরিহার করে মনের মধদ্যে একটি কথাই জাগরিত কুরুন যে, আমি পারবো আমার দ্বারাও সব সম্ভব।
আমি বলছি না সামান্য করণেই মেরে দুচার জনের মাথা ফাটিয়ে দিতে হবে। সাহসিকতা দেখাতে উপর থেকে লাফ দিতে হবে। জোড়ে গাড়ি চালাতে হবে, আসলে এমন কিছু নয়। আসল কথা হচ্ছে নিজেকে যুগোপযোগী ভাবে তৈরি করে উপস্থাপন করা। বিপদগ্রস্থ মানুষের উদ্ধার করার জন্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, লোকের সামলে ও মঞ্চের মাইকে কথা বলার সাহসিকতা অর্জন করতে হবে।
অনেকে আছে মেয়েদের সামনে অথবা পুলিশের সামনে কথা বলতে হাত পা কাপা কাপি শুরু করে দেয়। এসব ক্ষেত্রে সাহসি হতে হবে। মনের অস্থিরতা উদ্বিগ্নতা চাঞ্চলতা পরিহার করে ধীরস্থির ভাবে কথাগুলো বলে যান যেখানে গেলে আনিজিফিল হয় বার বার সেখানেই যান। চর্চা করুণ দেখবেন সাহসি হয়ে উঠেছেন।
নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করা কৌশল
যারা নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করতে পারে না, তাদের মাঝে প্রতিভা থাকলেও তার মুল্যায়ন হয় না। আপনারই কোন সহকর্মী আপনার থেকে কম প্রতিভা সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও শুধু মাত্র তার বচন-বাচন, সাজ-সজ্জা ও সুন্দর উপস্থাপনার মাধ্যমে আপনার চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি হচ্ছেন প্রভাবশালী। যদিও তার অন্তঃসার শুন্য তবুও আপনার উর্ধতন কর্মকর্তারা তাকে নিয়ে আশাবাদী। কিন্তু তাকে দেখে আপনার কাছে একটি প্রবাদ মনে হতে পারে যে ‘ উপরে ফিট ফাট ভিতরে সদরঘাট’ অথবা ‘Empty vessel sound much.’
আচ্ছা বলুন তো এতে কি আপনার কোন দুর্বলতা নেই? আমি বলি অবশ্যই আছে। কারন আপনি ভেতর থেকে বেশি স্মার্ট হলেও আপনার প্রকাশ ভঙ্গিমায় দুর্বলতা আছে। আর এই কারনেই অযোগ্য লোকেরা পেয়ে যায় যোগ্য লোকের স্থান।জেনে নিই কিভাবে নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করা যায়।
নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করা কে আমরা দুটি ভাগে ভাগ করি। একটি হল বাহ্যিক ভাবে উপস্থাপন আর অন্যটি হলো ভেতর থেকে নিজেকে সাজিয়ে নিয়ে নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করা। আসলে এ প্রতিযোগীতার সময়ের সবাই নিজেদের সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করতে চায়। চায় নিজেদের কথা বার্তা এমনকি নিজেদের চলাফেরাতে আধুনিকতা প্রকাশ। উপর্যুক্ত দুটো ভাবে যদি কেউ গুছিয়ে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে সফল হয় তারা এ জগতে দুটি পুরস্কারে ভুষিত হয়। একটি হলো মুল্যায়ন ও সন্মান।
✦✦✦ বাহ্যিক ভাবে নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করা :
নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করতে পারার পূর্ব শর্তই হল বাহ্যিক ভাবে নিজেকে গুছিয়ে নেয়া। নিচে এ সম্পর্কে কিছু দিক তুলে ধরা হলঃ
✦✦✦ পরিমার্জিত শারীরিক ভাষা সম্পর্কে জানুনঃ
আপনি পরিশীলিত হতে চান তাহলে আপনাকে জানতে হবে নিজেকে সবার সামনে গুছিয়ে উপস্থাপন করার কৌশল। নিজেকে অত্যাধুনিক হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইলে জানতে হবে নিজের দৈহিক অঙ্গভঙ্গি সম্পর্কেও। কথা বলার সময় অপর মানুষের চোখে চোখ রাখতে শিখুন, অনর্থক হাত নাড়ানাড়ি বন্ধ করুন, সোজা হয়ে চলাফেরা করুন আর নিজের মুখের কমনীয়তা বজায় রাখুন।
✦✦✦ নিজের চেহারায় রুচিশীলতা প্রকাশ করুন :
আপনি আপনার চেহারা সঙ্গে বর্তমান এবং প্রচলিত একটি ধাঁচ আনতে আপনার চেহারায় পরিবর্তন আনুন। প্রথমে চুল সাজিয়ে ফেলুন,বর্তমান সময়ের সাথে যায় এমন কোন হেয়ার স্টাইল করতে পারেন। আপনার চুল হাইলাইট করতে আপনার চেহারার সাথে যায় এমন কোন হেয়ার কাট নিতে পারেন। পুরুষরা আধুনিক দেখাতে তাদের মুখমণ্ডল ফ্রেস রাখুন। আর নারীরা হালকা মেকাপে থাকতে পারেন।
✦✦✦ সময় উপযোগী মানানসই পোশাক পরুন :
নিজেকে আধুনিক দেখাতে অবশ্যই আধুনিক পোশাক পরুন। হাল ফ্যাশানের পোশাক সম্পর্কে ধারণা রাখুন। নিজের সাথে মানানসই এমন পোশাক পরিধান করুন। দামী কাপড় পরলেই যে আপনাকে ভালো দেখাবে এমন ধারণা ভুল। যাই পরবেন খেয়াল রাখুন সেটা যেন পরিষ্কার পরিছন্ন হয়। মনে রাখবেন কেবল মাত্র একটি কালো শার্ট বা একটি জিন্সেই আপনাকে আধুনিক দেখাবে যদি আপনি সেই পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
✦✦✦ রুচিশীল এক্সেসারিজ ব্যবহার করুনঃ
রুচিশীল এক্সেসারিজ আপনাকে আধুনিক করতে সাহায্য করবে। যেমন গাঢ় রঙের বেল্ট,একটি সানগ্লাস,ভালো ব্র্যান্ডের কোন ঘড়ি আর মেয়েদের ক্ষেত্রে একটি স্কার্ফ আর সাথে হালকা কিছু সোনার, রুপার অথবা স্টাইলিশ ইমিটেসন জুয়েলারি আপনাকে দেবে আলাদা একটি রূপ।
✦✦✦ ভেতর থেকে নিজেকে সাজিয়ে নিয়ে নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করা :
শুধু বাহ্যিকভাবে গুছিয়ে উপস্থাপনের মাধ্যমে নিজেকে সম্পুর্ন সুন্দরভাবে প্রকাশ করা যায় না। ভেতর থেকে নিজেকে সাজিয়ে নিতে হয়।
✦✦✦ অন্যরা অস্বস্তিবোধ করে এমন আলোচনা থেকে বিরত থাকুনঃ
এমন যেকোন আলোচনা থেকে বিরত থাকুন যাতে মানুষ বিরক্তি বা অস্বস্তিবোধ করে। পরিশীলিত শব্দ ব্যবহার করে কথা বলার চেষ্টা করুন। নিজের টাকা পয়সা নিয়ে কথা বলা বন্ধ করুন। অন্যের বেতন, তার সামর্থ্য এমনকি তার খারাপ দিক নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে চলুন।
✦✦✦ একাধিক ভাষার মিশ্রণে কথা বলা থেকে বিরত থাকুনঃ
অনেক বাংলা এবং ইংরেজির সংমিশ্রণ এ কথা বলাকে আধুনিকতার বহিঃপ্রকাশ মনে করেন। আসলে তা কিন্তু নয়। সময় এবং পরিস্থিতি বুঝে যেকোন একটি ভাষায় সুন্দর করে কথা বলতে পারার মাঝেও কেবল আধুনিকতার বহিঃপ্রকাশ পায়। তাই সচেতনার মাধ্যমে কেবল একটি ভাষায় কথা বলুন। আবার যেক্ষেত্রে অন্য ভাষা সর্বজন স্বীকৃত, সেক্ষেত্রে অবশ্যই সে ভাষায় ব্যবহার করতে হবে। যেমন গণনাকারী যন্ত্র না বলে বলতে হবে কম্পিউটার।
✦✦✦ আত্মসমালচনার মাধ্যমে নিজেকে চেনাঃ
নিজেকে চেনার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হল আত্মসমালচনা করা। আত্মসমালচনা শব্দটির অর্থ হলো নিজের সমালোচনা করা। একজন মানুষ যখন নিজের ভালো দিক ও খারাপ দিক বুঝতে পারে তখনই সে নিজের পরিবর্তন করতে পারে। তাই আত্মসমালোচনা মাধ্যমে নিজের ভুলত্রুটিগুলো ধরুন ও সংশোধন করার চেষ্টা করুন। তাহলে নিজেকে আরও সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন।
✦✦✦ ধ্যানের মাধ্যমে নিজের মনস্তাত্বিক পরিবর্তন সাধনঃ
ধ্যান শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Meditation. যে চিন্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজের মন বা আত্মাকে নিয়ন্ত্রন ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তাই হল ধ্যান। এর সাথে মনযোগীতা বিষয়টিও জড়িত। আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজের ভুলত্রুটিগুলো যেমন ধরা যায়, তেমনি ধ্যানের মাধ্যমের এর সংশোধন বা পরিশুদ্ধকরন সম্ভব। মেডিটেশনের মাধ্যমে আমরা হীনমন্যতা, নেতিবাচক মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করা সম্ভব।
✦✦✦ বিনয়ের সঙ্গে নিজের সম্পর্কে কথা বলুনঃ
নিজের সম্পর্কে বলার প্রয়োজন দেখা দিলে কোন আস্ফালন ছাড়াই শান্ত থেকে বিনয়ের সাথে নিজেকে তুলে ধরুন। আপনার গুণাবলী সম্পর্কে অন্যকে জানাতে পরিশীলিত শব্দ চয়ন করুন আর সেই শব্দের প্রয়োগ করুন। এটি নিজেকে উপস্থাপনের একটি সুন্দর মাধ্যম।
✦✦✦ মেজাজের ভারসাম্যতা :
মানুষের মেজাজ সবসময় এক থাকে না। কিন্তু যারা নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করেন তাদের মেজাজের উপর দখল থাকবে অনেক বেশি। সেজন্য কিছু না কিছু প্রাকটিজ অর্থাৎ অনুশীলন দরকার। যোগ ব্যায়াম করে দেখতে পারেন। কাজ না হলে মেডিটেশন পদ্ধতির আশ্রয় নিন।
✦✦✦ খারাপ অভ্যাস :
অনেকেরই খারাপ কিছু অভ্যাস থাকে। এসবের কারনে তারা নিজেদের অবস্থান হারিয়ে ফেলেন। যেমন- নেশাভান করা, নারী বা পুরুষের প্রতি দুর্বলতা, উৎকট পোশাক ব্যবহার, অশোভন কিছু করা ইত্যাদি। যত দ্রুত পারা যায় এসব বাদ দিতে হবে। তা না হলে নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করা যায় না।
✦✦✦ রুচিশীল কাজ করা :
গান শোনা, বই পড়া, কিংবা ভাল মুভি দেখা, চিত্র কর্ম , সামাজিক সহযোগীতা, স্বেচ্ছাসেবিক কার্যক্রম ইত্যাদি একজন মানুষের রুচিশীলতার করে পরিচয় বহন করে। যে যত বেশি নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করতে পারে সে তত বেশি রুচিশীল কাজ করেন।
✦✦✦ সৎ এবং সত্যবাদী :
লোকেরা আজকাল এই অংশটি বাদ দিয়েই উপরে উঠতে চান। দেখলে হাসি পায়। যারা নির্ভিক তারাই হয় সৎ এবং সত্যবাদী। যে নিজের অন্যায় অন্যের উপর চাপিয়ে দেন তারাও মিথ্যাবাদী। তাই সত্যবাদী হওয়াটা আবশ্যক। একজন মিথ্যাবাদী মানুষ যতই স্মার্টনেস অর্জন করুক না কেন, স্থায়ী হন না বেশি দিন। সৎ মানুষের কথা অনেকদিন মানুষ মনে রাখেন।
উপর্যুক্ত পরামর্শগুলো মেনে চলুন দেখবেন আপনার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুন্দর উপস্থাপনা কেউ সাথে নিয়ে জন্মায় না, এটাকে অর্জন করতে হয়।
স্মার্টলি কথা বলার কৌশল
আমরা অনেকেই দামী আর সুন্দর জামা কাপড় পড়ি, দামী ব্র্যান্ডের টিশার্ট বা জিন্স না হলে বাইরে বের হতেই ইচ্ছা করে না অনেকের। আইফোন বা স্মার্ট ফোন ছাড়া কথা বলা হয়ে দাঁড়ায় সম্মানের প্রশ্ন। খুবই ভাল। নিজেকে যতটা সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা যায় সবার সামনে আপনি তা করেছেন। কিন্তু ধরা পড়ে যাচ্ছেন তখনই যখন আপনি কথা বলার জন্য মুখ খুলছেন। আপনি হয়তো নিজেই বুঝতে পারছেন যে, আপনি স্মার্টলি কথা বলতে পারছেন না। কিন্তু এর সমাধান ও খুঁজে পাচ্ছেন না। তাহলে নিচের লেখাটায় একটু চোখ বুলান, হয়তো পেয়েও যেতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত সমাধান।
তবে আপনি যদি ভেবে থাকেন স্মার্টলি কথা বলা মানে ‘র’ কে ‘ড়’ বলা, একটা বাক্যের অর্ধেক ইংরেজি, অর্ধেক হিন্দি, আর সামান্য বাংলা বলা, অথবা বিদঘুটে অঙ্গভঙ্গি করা, তাহলে আপনাকে হতাশ করার জন্য দুঃখিত।
✦✦✦ ১. আঞ্চলিকতা পরিহার করুনঃ
আমাদের দেশে বেশ কিছু আঞ্চলিক ভাষা প্রচলিত আছে। তার মধ্যে কিছু শুনে তো প্রথমে বোঝার কোন উপায়ই নেই যে সেগুলো বাংলা ভাষা নাকি অন্য কিছু! নিজ নিজ আঞ্চলিক ভাষাকে সম্মান করতে শিখুন। সে ভাষায় কথা বলুন। তবে এটাও খেয়াল রাখবেন তা যেন আপনার কথায় কোন ছাপ না ফেলে যায়। আপনার কথায় যদি আঞ্চলিক উচ্চারণ ভঙ্গি চলে আসে বা কোন আঞ্চলিক শব্দ ঢুকে পড়ে তবে অফিস, ক্লাসে বা বন্ধুদের সামনে যেখানেই যান, আপনাকে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে। বিশেষ করে চাকরির ইন্টারভিউ দেবার সময় সর্বাবস্থায় আঞ্চলিক বাচনভঙ্গি পরিহার করুন।
✦✦✦ ২. কিছু শব্দের উচ্চারণ সঠিক করুনঃ
অনেক সময় দেখা যায় আমরা ঠিকঠাক কথা বলছি। কিন্তু কিছু শব্দের বেলায় আমরা সেই ভুল উচ্চারণই করে যাচ্ছি। প্রথমে চিহ্নিত করুন ঠিক কোন কোন শব্দ উচ্চারণে আপনার সমস্যা হচ্ছে। যেমন, আমরা অনেকেই বলি “কেমন আসেন” “ভাল আসি” । কিন্তু ‘স’ এর জায়গায় যদি ‘ছ’ ব্যবহার করা যায় তাহলে “কেমন আছেন” কথাটা অনেক শ্রুতিমধুর শোনায়। অনেকে ‘প’ এর জায়গায় ‘ফ’ ব্যবহার করেন, অথবা ‘ব’ র জায়গায় ‘ভ’ । এই সামান্য কিছু শুব্দের শুদ্ধ উচ্চারণ কিন্তু আপনার কথা আকাশ পাতাল ফারাক এনে দিতে পারে। তবে পরিবর্তন একদিনে হবে না। নিজে প্র্যাকটিস করুন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। নিজের বাসা থেকেই।
✦✦✦ ৩. মিশ্র ভাষা পরিহার করুনঃ
অনেকে মনে করেন ইংরেজিতে কথা বলা, হিন্দিতে কথা বলা বেশ একটা ভাবের ব্যাপার। আপনি ইংরেজিতে অবশ্যই কথা বলবেন। কারন এটা আন্তর্জাতিক ভাষা। তবে তখনই, যখন আপনার দরকার হবে এই ভাষায় কথা বলা। অথবা বন্ধুদের সাথে অনুশীলন করতে পারেন। আপনার উপকারই হবে। কিন্তু বিনা কারণে ইংরেজিতে কথা বলা অন্য একজন বাঙ্গালির সাথে শুধু মাত্র স্মার্টনেস দেখানোর জন্য! এটা বোকামি। তার উপর আবার একটা বাক্যের অর্ধেক ইংরেজি অর্ধেক বাংলা! আপনি যদি ভেবে থাকেন এভাবে কথা বললে সবাই আপনাকে বেশ স্মার্ট ভাববে, তাহলে আপনার ধারণা ভুল।
✦✦✦ ৪. বলার আগে চিন্তা করুনঃ
হুট করে কোন কথা বলে ফেলার চেয়ে বরং একটু সময় চিন্তা করুন আপনি কি বলতে যাচ্ছেন, যেটা বলতে যাচ্ছেন সেটা সম্পর্কে আপনার যথেষ্ট ধারণা আছে কি না এবং আপনার কথায় শ্রোতার কেমন প্রতিক্রিয়া হতে পারে। কথা বলার আগে একটু চিন্তা করার ফলে অনেক বেফাঁস কথা বলার হাত থেকে বেঁচে যাবেন, এবং আপনার কথা হয়ে উঠবে অনেক বুদ্ধিদীপ্ত।
✦✦✦ ৫. একটু বিরতি দিয়ে কথা বলুনঃ
আমরা যখন বাসায় বা বন্ধুদের সাথে কথা বলি তখন আমাদের খেয়াল থাকে না যে আমরা কি বলছি। হড়বড় করে সব কথা বলে ফেলি অনেক দ্রুত। এর চেয়ে একটু ধীরে প্রত্যেকটা শব্দের উপর পর্যাপ্ত জোর দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার কথা সবাই প্রথমবারেই বুঝবে এবং আপনাকে দেখবে একটু আলাদা দৃষ্টিতে।
✦✦✦ ৬. শব্দভান্ডার বাড়ানঃ
হোক বাংলা কিংবা ইংরেজি, সব ভাষার ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত শব্দ জানা আবশ্যক। এতে করে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না যে এই শব্দের পর আপনি অন্য কোন শব্দ ব্যবহার করবেন। আমরা দৈনন্দিন জীবনে যেসব শব্দ ব্যবহার করি, বাংলা অভিধান খুলে তার সমার্থক শব্দগুলো দেখে নিতে পারেন। অথবা এমন অনেক শব্দ খুঁজে নিতে পারেন যেগুলো সাধারণ কথায় আমরা খুব কমই ব্যবহার করি, এবং তা প্রয়োগ করুন উপযুক্ত ক্ষেত্রে বুঝে। এতে আপনার কথা যেমন সুন্দর হবে তেমনি শ্রোতার মনে আপনার জ্ঞান সম্পর্কে ভাল ধারনা জন্মাবে।
✦✦✦ ৭.অঙ্গভঙ্গিঃ
আপনার কথার মুল্য অনেকগুন বাড়িয়ে দিতে পারে সঠিক বডি ল্যাংগুয়েজ। আপনার এক্সপ্রেশন, দাঁড়ানো বা বসার ভঙ্গি, হাত নাড়ানো এসব দিকে মনযোগ দিন। কোন কিছুই অতিরিক্ত করার দরকার নেই। তবে কথার সাথে যেন অঙ্গভঙ্গি খাপ খায় সে চেষ্টা করুন। অনেকের অভ্যাস থাকে অন্যের সাথে কথা বলার সময় কাঁধে হাত দেয়া, বা বারবার গায়ে খোঁচা দিয়ে নিজের দিকে মনযোগ ফেরানোর। আপনার যদি এমন কোন অভ্যাস থেকে থাকে, দয়া করে এখনি পরিহার করুন।
✦✦✦ ৮. আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলুনঃ
ধরা যাক, ক্লাস বা অফিসের কোন প্রেজেন্টেশন। টপিক সম্পর্কে আপনার খুবই ভাল ধারণা থাকা সত্ত্বেও শুধু মাত্র আত্মবিশ্বাসের অভাবে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন আপনি। ভয়েস টোন বাড়ান। যেখানে জোরে কথা বলা দরকার সেখানে জোরে, যেখানে আস্তে কথা বলা দরকার সেখাসে আস্তে কথা বলুন। এবং এমন ভাবে কথা বলুন, যাতে শ্রোতার মনে ধারনা জন্মে আপনি যা বলছেন তা সঠিক। এমনকি আত্মবিশ্বাসের সাথে মিথ্যা বলেও আপনি পার পেয়ে যেতে পারেন অনেক সময়।
✦✦✦ ৯. শুনুন এবং বুঝুনঃ
শুধু মাত্র আপনিই হড়বড় করে সব বলে যাবেন, এটা স্মার্টনেসের মধ্যে পড়ে না। বরং আপনি যার সাথে কথা বলছেন তার প্রত্যেকটা কথা শোনা এবং বোঝাও স্মার্টনেসের অন্তর্ভুক্ত। কেউ আপনার সাথে কথা বলার সময় তাকান সরাসরি তার দিকে, তার চোখের দিকে। কোন কথা বুঝতে সমস্যা হলে তার ঠোটের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করুন সে কি বলছে। এটাকে বলে ‘লিপ রিডিং’ যেটা কম শ্রবন শক্তির অধিকারী মানুষজন ব্যবহার করে থাকেন। তার কথায় সম্মতি জানান, মাথা বা হাত নেড়ে তাকে বোঝান যে আপনি তার কথা মন দিয়ে শুনছেন। এবং কারো কথা শোনার সময় মন দিয়ে শুনুন এবং তার প্রশ্ন বুঝার চেষ্টা করুন। কারণ প্রশ্ন ঠিকভাবে বুঝলেই কেবল আপনি ঠিক উত্তরটা দিতে পারবেন, এতে অনেক ভুল বুঝাবুঝিও কমবে।
✦✦✦ ১০. অনুসরণ করুন রেডিও বা টিভির সংবাদ উপস্থাপকদের বা নিজের কোন প্রিয় অভিনেতাকেঃ
প্রত্যেকটা মানুষই স্বতন্ত্র। আপনার অবশ্যই নিজস্বতা বজায় রাখা উচিত। আপনি নিজে যেভাবে কথা বলতে সাচ্ছন্দ বোধ করেন সেভাবেই বলবেন। অন্যকে অনুসরণ করতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলার কোন মানেই হয় না। তবে শেখার জন্য একজন গুরু আবশ্যক। শিক্ষক ছাড়া আপনি কখনো কোন বিষয় ভালভাবে শিখতে পারবেন না। তাই কথা বলার স্টাইল শেখার জন্য বেছে নিতে পারেন নিজের কোন প্রিয় অভিনেতা, রেডিও বা টিভির কোন উপস্থাপককে। বোঝার চেষ্টা করুন, তিনি কিভাবে কথা বলছেন, টোন কখন কোথায় কেমন, এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কেমন। এর পর আপনি পরিস্থিতি এবং পরিবেশ বুঝে তার কিছু অংশ প্রয়োগ করুন আপনার বাস্তব জীবনে।
সুন্দর করে কথা বলার কৌশল
মানুষের প্রকাশ করার প্রবনতা সবচে’ বেশি। নিজেকে প্রকাশ করতে কে না চায়।সবাই চায় নিজেকে সবচেয়ে সুন্দর করে উপস্থাপন করতে। বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের একটি অন্যতম উপাদান হচ্ছে সুন্দর করে কথা বলা, ভাব প্রকাশে সৌন্দর্য্য। এই কাজ খুব কঠিন কিছু নয়। সুন্দর কথা বলার জন্য নিজের চেষ্টা আর সামান্য কিছু গাইডলাইন ই যথেষ্ট।
অনেকেই আছেন খুব সুন্দর মনের মানুষ, দেখতেও অনেক সুন্দর কিন্তু তিনি ভাল কথা বললেও যিনি শুনছেন তাঁর রাগ উঠে যায়। নিজেকে নিজে তিনি বোঝাতে পারেন না যে কী করবেন! তাই তাঁর সব কিছুতেই অস্থির লাগে। মন ভাল হলেও তিনি ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিতি পান না। কিংবা সমাজে তার নানা ধরনের জটিলতায় পড়তে হয়। বন্ধু মহলে কেউ তাকে জায়গা দেন না। শুধুমাত্র কিভাবে সুন্দর করে কথা বলতে হয় সেটা না জানার জন্যে।
সুন্দর করে কথা বলা সত্যিই একটা আর্ট। স্মার্টনেস এর প্রথম শর্ত। অনেকেই অনেক ভাবে ট্রাই করে সুন্দর কথা বলার চেষ্টা করেছেন কিন্তু সেই চেষ্টাকে সবাই হাসির খোরাক বানিয়ে ফেলেছেন। তিনি সুন্দর কথা বলতে চেষ্টা করায়ও সমাজে বাঁকা চোখের শিকার। আসুন দেখি খুব স্বাভাবিক কিছু নীয়মে সুন্দর কথা বলার চর্চা করি।
✦✦✦ নিজেকে নিয়ে কিছু এনালাইসিস করুন
আপনি কেমন কথা বলছেন? কিভাবে শুরু করছেন? কাকে কী বলছেন ইত্যাদি। এর সাথে আপনার শারীরিক স্ট্রাকচার কতটা বোল্ড নাকি নরমাল নাকি আরো খারাপ? কন্ঠটা কি বেশি উৎকট নাকি নরমাল নাকি খুবই মিষ্টি? আপনার নলেজ কেমন? এসব এনালাইসিস একটা কাগজে লিখে রাখলেই ভাল। চর্চা করার সময় কাজে আসবে। তবে আপনার স্মৃতিশক্তি ভাল হলে মনে রাখতে পারেন। সুন্দর করে কথা বলার ক্ষেত্রে এই বিষয় মাথায় রাখা জরুরী।
✦✦✦ আপনার যা সামর্থ্য আছে তাতেই শুরু করুন
এনালাইসিস করার পর দেখা গেছে আপনার খুবই খারাপ অবস্থা! কিন্তু তাতে কি? আপনি কি শুরু করবেন না? অবশ্যই করবেন। মনে রাখবেন সুন্দর করে কথা বলা পুরটাই চর্চার উপর নির্ভরশীল।
চর্চা শুরুর পর নিচের বিষয়গুলিতে জোর দিন। মনে রাখবেন এর কোনটাই মিস করা যাবে না।
✦✦✦আগে শুনুনঃ
কোন একটা আলোচনায় যোগ দিলে আগে শুনুন কে কী বলছে। এটা সব সময় সম্ভব নয়, কারন আপনি যদি সঞ্চালক হন তবে আপনাকেই আগে কিছু বলতে হবে। সেক্ষেত্রে মুল টপিক টি বলে সবার সবিনয় দৃষ্টি আকর্ষন করে শুনতে থাকুন। কিছু লিখে রাখুন। যা লিখবেন তাতে রেফারেন্স সহ লিখবেন- যেমন কে বলেছেন, কিজন্যে বলেছেন ইত্যাদি। কে কিভাবে কথা বলছেন সেটাও খেয়াল করুন। যিনি সুন্দর করে কথা বলছেন তাকে খুব মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তিনি হয়ত আপনার থেকে অনেক জানেন, তাতে কি। আপনিও একসময় জানবেন। ফলো করুন আর মনে মনে ভাবুন কিভাবে নিজেকে সেভাবে উপস্থাপন করবেন।
✦✦✦সুস্পষ্ট মতামত প্রয়োগঃ
যথাসময়ে একটি স্পষ্ট মত প্রয়োগ করুন। এমন ভাবে বলবেন না যেন কেউ আপনার কথায় বিব্রত হয়। অন্যের কথার মাঝে কথা বলবেন না। যদি বলতে হয় তবে ভদ্রভাবে বলুন-মাফ করবেন অথবা এক্সকিউজ মী। তারপরে বলুন যে উনার কথাটায় আপনি কি যুক্ত করতে চাচ্ছেন।
✦✦✦আত্মবিশ্বাসের সাথে বলুনঃ
যা বলবেন আত্মবিশ্বাস নিয়েই বলুন। দ্বিধা নিয়ে কিছু বলা উচিত নয়। কেউ যদি প্রশ্ন করে যে কেন আপনি এত আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলছেন, সাথে সাথে সুন্দর ব্যাখ্যা দিন। এবং তাকে এই জন্য একটা ধন্যবাদ জানান।
✦✦✦পরিবেশ পরিস্থিতির দিকে খেয়াল করে বলুনঃ
একটা আলোচনায় অবশ্যই একটা নির্দিষ্ট পরিবেশ পরিস্থিতি থাকে না। চেঞ্জ হয়। কখনো হাসির সময় আসে কখনো খুব সিরিয়াস সময় আসে। অনেক সময় গম্ভীর একটা সিচুয়েশন দেখা যায়। সব সিচুয়েশনে সব কথা মানাবে না। নির্দিষ্ট সময়ে সময়োপযোগী কমেন্ট করুন।
✦✦✦টপিকের দিকে খেয়াল রাখুনঃ
অনেকেই আছেন কথা বলা শুরু করেছেন, মাঝে একটা উদাহরন দিতে গেলেন, উদাহরনের মাঝে সুন্দর একটা গল্প কৌতুক শুরু করে দিলেন। আর আসল টপিক ভুলে গেলেন। গল্প শেষে নির্লজ্জের মতো হাসি দিয়ে বললেন- আমি কোথায় যেন ছিলাম? এসব মানুষের কথায় উপস্থিত সকলের কঠিন বিরক্তি হয়। রাগ হয়। পরের বার আর শুনতে চান না কেউই। সবাই নিশ্চয় তাদের মুল্যবান সময় সেই ব্যাক্তির গল্প শুনতে নষ্ট করবেন না?
তাই টপিকের দিকে মনোযোগ দিন। যদি এমন হয় তবে লিখে রাখুন। কাগজে লিখে তবেই গল্প উদাহরন যা দেবার দিন। এতে আপনার মনে থাকবে আপনি সত্যিই কোথায় ছিলেন। অফ টপিক সব সময় বলা যায় না। সিচুয়েশন দেখে বলুন।
✦✦✦কথার মাঝে দাঁড়ি কমা সেমিকোলনের সময় নিনঃ
কথা শুধু রেলগাড়ির মত বলে যাবেন না। আবার ষ্টেশনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার মত বিশ্রামও নিবেন না। দাঁড়ি কমা কিংবা বিরাম এর সময় নিন। যাতে বুঝতে সুবিধা হয়।
✦✦✦চলিত ভাষায় বলুনঃ
যে ভাষা সবাই বুঝে সে ভাষায় বলুন। আঞ্চলিক ভাষা পরিহার করুন। ইংরেজী কথায় কথায় না বলাই ভাল। যাঁরা ইংরেজী বলে পন্ডিত সাজতে চান তারা হাসির খোরাক হন। কোন উদ্ধৃতি ইংরেজীতেই যদি হয় সেটা বলা যেতে পারে। তবে ইন্টারন্যাশনাল কনভার্সেশনে তো পুরাটাই ইংরেজীতে বলবেন। সেখানে ভুলেও নিজের ভাষায় বলবেন না। এতে লোকাল লোকজন খুশি হলেও আন্তর্জাতিক সদস্যরা খুব মনে কষ্ট পান। তাই এদিকে খেয়াল রাখবেন। লোকাল ভাষায় কেউ কিছু জানতে চাইলেও ইংরেজীতেই উত্তর দিন। ভাষা যদি চেঞ্জ করতেই হয় তবে অনুমতি নিয়ে নিবেন।
✦✦✦উচ্চারন শুদ্ধ করুনঃ
সঠিক উচ্চারন আবশ্যিক। এর জন্য প্রয়োজন অনুশীলন। সঠিক বাংলা উচ্চারনে কথা বলে আপনি তাক লাগিয়ে দিতে পারেন। আপনার কথা সবাই শুনতেই চাইবে শুধু শুনতেই চাইবে। এর জন্য কিছু কোর্স করাও যেতে পারে।
✦✦✦অংগভংগীর ব্যাবহারঃ
কথা বলার সময় সংশ্লিষ্ট অংগভংগী গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। অনেকেই এক হাত নাড়িয়ে কথা বলেন। অনেকেই দু’হাত নাড়িয়ে কথা বলেন। আবার অনেকে হাত না নাড়িয়েই কথা বলেন। সত্যি বলতে কী আমাদের কোন কারিকুলামে কথা বলার উপর কোন পাঠ নেই। এটা ব্যর্থ শিক্ষা নীতি। কিন্তু আপনি কিছু অনুশীলনের মাধ্যমে এর যথেষ্ট প্রয়োগ করতে পারেন। যখন যা বলবেন তা বুঝাতে যেভাবে অংগ সঞ্চালন দরকার সেটাই করা উচিত। বড় কিছু বুঝাতে দু’হাতে বড় ইঙ্গিত করাই সঠিক। সুন্দর করে কথা বলার ক্ষেত্রে এটাও আবশ্যিক।
✦✦✦কিছু সোর্স অনুসরন করুনঃ
টিভি, রেডিও, মুভি ইত্যাদি থেকে ভাল কিছু পেলে নোট রাখুন। কাজে দেবে। অনুশীলন করুন।
আমি শুদ্ধ সাবলীল ভাবে মানুষের সাথে কথা বলতে চাই
উত্তরমুছুন