জেম্স ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০১৯
Comment
১৩ই জুন, ১৮৩১ - ৫ই নভেম্বর, ১৮৭৯

আবিষ্কারের মৌলিকত্বের বিচারে নিউটন, আইনস্টাইনের সাথে সাথে তার নাম ও নেয়া হয়। ম্যাক্সওয়েলের যুগান্তকারী আবিষ্কারটি হল "তড়িৎ চুম্বক তরঙ্গ তত্ত্ব" . তিনিই প্রথম বলেছিলেন বিদ্যুৎ ক্ষেত্র কিংবা চুম্বক ক্ষেত্রে সামান্যতম বিশৃঙ্খলা ঘটলেই একদম আলোর গতির সমান একটি তড়িৎচুম্বক তরঙ্গ বেরিয়ে আসে। এবং এই তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য প্রায় অনেক দিক দিয়ে আলোকের বৈশিষ্টের মত। যেমন আলকের মত তাদের ও হয় প্রতিফলন, প্রতিসরণ, পোলারাইজেশন ইত্যাদি। ম্যাক্সওয়েলের এই তত্ত্ব সঠিক না ভুল তা যাচাই করতে গিয়েই বিজ্ঞানী হেনরিখ হার্জ সর্বপ্রথম ল্যাবরেটরিতে বেতার তরঙ্গ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সত্যতা প্রমাণিত হল ম্যাক্সওয়েলের। নানা জল গড়াতে গড়াতে তা নিয়ে গবেষণা আমাদের জগদীশ চন্দ্র বসুতে পর্যন্ত এসেছিল।
জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল স্কটিশ পদার্থবিজ্ঞানী যিনি তড়িচ্চুম্বকীয় তত্ত্ব আবিষ্কারের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। ঊনবিংশ শতকের বিজ্ঞানী হয়েও বিংশ শতকের বিজ্ঞানের উপর এতো প্রভাব ম্যাক্সওয়েল ছাড়া আর কারও ছিল না। এজন্যই আবিষ্কারের মৌলিকত্বের বিচারে নিউটন ও আইনস্টাইনের সাথে তার নাম করা হয়। ১৯৩১ সালে ম্যাক্সওয়েলের জন্ম শতবার্ষিকী পালিত হয়েছিল। সে সময় আইনস্টাইন বলেছিলেন, নিউটনের পর থেকে পদার্থবিজ্ঞান যত বিজ্ঞানীর দেখা পেয়েছে তার মধ্যে তিনিই সবচেয়ে সফল এবং প্রভাবশালী।
ম্যাক্সওয়েলের আবিষ্কারগুলোর সবচেয়ে বড় দিক ছিল, তার প্রায় সবগুলোই বিংশ শতকে বিজ্ঞানের প্রধান প্রধান আবিষ্কারের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণের ধারণা শুরু হয়েছে ম্যাক্সওয়েলের মাধ্যমে। মাইকেল ফ্যারাডে বৈদ্যুতিক ও চৌম্বক বলরেখা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যে বৈশিষ্ট্যগুলো দাঁড়া করিয়েছিলেন সেগুলোর উপর ভিত্তি করে ম্যাক্সওয়েল তার ক্ষেত্র সমীকরণ প্রতিপাদন করেন। এই সমীকরণগুলোই আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছিল।
এভাবেই ফ্যারাডে থেকে ম্যাক্সওয়েল হয়ে আইনস্টাইনে এসে ভর-শক্তির সমতুল্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়। ম্যাক্সওয়েলের মতবাদ ও তত্ত্ব কোয়ান্টাম তত্ত্বের আবিষ্কারের পথ করে দিয়েছিল। তিনি তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণের যে ব্যাখ্যা করেছিলেন তা তাপ বিকিরণের অসন্তোষজনক সূত্রের জন্ম দিয়েছে যা মাক্স প্লাংকের কোয়ান্টাম প্রকল্পের আগমনকে ত্বরিত করেছে। এভাবে একসময় আমরা বুঝতে পারি যে, তাপ বিকিরণ গুচ্ছে গুচ্ছে ঘটে যে গুচ্ছগুলোকে কোয়ান্টা বলে। প্লাংকের প্রকল্পের মূল অংশ অর্থাৎ তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণ ও পদার্থের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার ধারণাটিই পরমাণু এবং অণুর গঠন আবিষ্কারকে সহজ করে দিয়েছিল।
জেম্স ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল ১৮৩১ সালের ১৩ই নভেম্বর এডিনবরায় জন্মগ্রহণ করেন। ম্যাক্সওয়েলের জন্ম এডিনবরার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। পরিবারের একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। তাদের পরিবারের মূল নাম ছিল ক্লার্ক, ম্যাক্সওয়েল নামটি তার আইনজীবী বাবা পরে সংযুক্ত করেছিলেন। পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে মিড্লবাইয়ের বিশাল সম্পত্তি লাভ করার পরই তিনি এই নতুন নাম গ্রহণ করেছিলেন। ম্যাক্সওয়েলের বাবা-মা অনেক দেরিতে বিয়ে করেছিলেন। এজন্যই তার জন্মের সময় তার মায়ের বয়স ছিল ৪০ বছর। তার জন্মের পরপরই ম্যাক্সওয়েল পরিবার এডিনবরা ছেড়ে মিড্লবাই এস্টেটে তাদের নিজস্ব বাড়িতে চলে যায়।
১৮৩৯ সালে তার মা উদরের ক্যান্সারে কারণে মৃত্যুবরণ করেন। ম্যাক্সওয়েল নিজেও এই বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বাল্যকালে তিনি এক গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তেন যিনি তার মেধার ব্যাপারটি ঠিক ধরতে পারেননি। তিনি মনে করতেন ম্যাক্সওয়েল সবকিছু দেরিতে বুঝে। অবশ্য সেই বয়সেই বোঝা গিয়েছিল যে তার প্রচণ্ড উৎসাহ ও প্রখর স্মৃতিশক্তি আছে। খালা জেইন কেই ১৮৪১ সালে তাকে এডিনবরায় নিয়ে এসে এডিনবরা একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন। এই একাডেমিতে তার সাথে পড়াশোনা করতো তার জীবনীকার লুইস ক্যাম্পবেল ও বন্ধু Peter Guthrie Tait।
১৮৩১ সালের ১৩ই নভেম্বর তিনি এডিনবরায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন একজন বড় আইনজীবী। আইনজীবী হলেও তার ছিল বিজ্ঞানের প্রতি প্রবল অনুরাগ। তাই ঠিক করলেন ছেলেকে বিজ্ঞানে পড়াবেন। ছেলের লেখাপড়ার জন্য করে দিলেন সুজুগ, এমন কি আইনজীবী হয়েও মাঝে মাঝে তিনি নিজেই লেগে যেতেন ছেলেকে পড়ানোর কাজে। বাল্যকালে ম্যাক্সওয়েল ছিলেন অত্যন্ত লাজুক। তাই বাবাকে নানা কাঠখড় পুড়িয়ে লজ্জা কমাতে হয়েছে। ছেলের জন্য তিনি তৈরি করে দিয়েছিলেন এক সুন্দর গবেষণাগার। এমন অনুকূল পরিবেশে কিশোর ম্যাক্সওয়েল মেতে উঠলেন পড়াশোনা ও গবেষণায়। মাত্র ১৪ বছর বয়েসে প্রকাশ করেন তার গবেষণা পত্র। এত অল্প বয়েসে বাবা তার ছেলের এমন উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখে বিস্মিত হয়ে গেলেন। আগ্রহী হায়ে তার তৈরি করা যন্ত্র ও গবেষণা সব পাঠিয়ে দিলেন লন্ডনের রয়েল সোসাইটি তে। পাওয়া গেল অনেক প্রশংসা।
পাঠ্যবইয়ের বাইরের বিষয়েই তার উৎসাহ বেশি ছিল। পরীক্ষার ফলাফলকে তেমন গুরুত্ব দিতেন না। মাত্র ১৪ বছর বয়সে প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। এই গবেষণাপত্রে তিনি গোলাকার বক্রের একটি সাধারণীকৃত সিরিজ বর্ণনা করেছিলেন, উপবৃত্তের উদাহরণ ব্যবহার করে পিন এবং সূতোর মাধ্যমে যা তৈরি করা যায়। জ্যামিতি ও যান্ত্রিক নকশার প্রতি তার এই ভালবাসা সারা জীবনই বজায় ছিল। পূর্ণবয়স্ক ম্যাক্সওয়েলের গবেষণাকর্মে এই ভালবাসা অনেক কাজে দিয়েছে।
সল্প এই জীবনে তিনি ছিলেন নানা বিশ্ববিখ্যাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অধ্যাপক। কতক গ্রন্থের রচয়িতা, রচনা করেছেন শতাধিক গবেষণা। তার জীবনে দারুণ এক কীর্তি হিসেবে তিনিই লন্ডনে গরে তুলেছিলেন বিখ্যাত "ক্যাভেন্ডিস ল্যাবরেটরি"।. সল্প এই জীবনে অনেক কিছু করেছেন তিনি। অনেকদিন রোগে ভোগার পরে ১৮৭৯ সালের ৫ই নভেম্বর মাত্র ৪৮ বছর বয়েসে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
তিনি দীর্ঘজীবী হলে নিঃসন্দেহে বিজ্ঞান পেত অনেক কিছু। তারপর ও তিনি বিজ্ঞানে যা দিয়ে গেছেন তার অবদান বলে শেষ করার নয়।
☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "জেম্স ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন