আজকে প্রকাশিত চাকরির পরীক্ষার নোটিশ গুলো পাবেন

এ্যডলফ হিটলার

এ্যডলফ হিটলার




এ্যডলফ হিটলারহিটলারের জন্ম ১৮৮৯ সালের ২০ এপ্রিল অস্ট্রিয়া ব্যাভেরিয়ার মাঝামাঝি ব্রনাউ নামে এক আধা গ্রাম আধা শহরে। বাবা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামান্য চাকরি করত। যা আয় করত তার তিন পত্নী আর তাদের ছেলেমেয়েদের দুই বেলা খাবার সংকুলানই হতো না। হিটলার ছিলেন তার বাবার তৃতীয় স্ত্রীর তৃতীয় সন্তান।

ছয় বছর বয়সে স্থানীয় অবৈতনিক স্কুলে ভর্তি হলেন। ছেলেবেলা থেকেই হিটলার ছিলেন একগুঁয়ে, জেদি আর রগচটা। সামান্য ব্যাপারেই রেগে উঠতেন। অকারণে শিক্ষকদের সঙ্গে তর্ক করতেন। পড়াশোনাতে যে তার মেধা ছিল না এমন নয়। কিন্তু পড়াশোনার চেয়ে তাকে বেশি আকৃষ্ট করত ছবি আঁকা। যখনই সময় পেতেন কাগজ পেন্সিল নিয়ে ছবি আঁকতেন।

এগারো বছর বয়সে ঠিক করলেন আর পড়াশোনা নয়, এবার পুরোপুরি ছবি আঁকতেই মনোযোগী হবেন। বাবার ইচ্ছা ছিল স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে কোনো কাজকর্ম জুটিয়ে নেবে। বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই স্কুল ছেড়ে দিলেন হিটলার। স্থানীয় এক আর্ট স্কুলে ভর্তির চেষ্টা করলেন। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেন না। একটা বেসরকারি স্কুলে ভর্তি হলেন। কিন্তু কয়েক মাস পর অর্থের অভাবে স্কুল ছেড়ে দিলেন।

মা মারা গেলে সংসারের সব বন্ধন ছিন্ন হয়ে গেল। ভাগ্য অন্বেষণে বেরিয়ে পড়লেন হিটলার। ভিয়েনাতে চলে এলেন। ভিয়েনাতে এসে তিনি প্রথমে মজুরের কাজ করতেন। কখনো মাল বইতেন। এরপর রং বিক্রি করতে আরম্ভ করলেন। ভিয়েনাতে থাকার সময়েই তার মনের মধ্যে প্রথম জেগে ওঠে ইহুদি বিদ্বেষ। তখন জার্মানির অধিকাংশ কলকারখানা, সংবাদপত্রের মালিক ছিল ইহুদিরা। দেশের অর্থনীতির অনেকখানিই তারা নিয়ন্ত্রণ করত। হিটলার কিছুতেই মানতে পারছিলেন না, জার্মান দেশে বসে ইহুদিরা জার্মানদের উপরে প্রভুত্ব করবে।

১৯১২ সালে তিনি ভিয়েনা ছেড়ে এলেন মিউনিখে। সেই দুঃখ-কষ্ট আর বেঁচে থাকার সংগ্রামে আরো দুই বছর কেটে গেল। ১৯১৪ সালে শুরু হলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। হিটলার সৈনিক হিসেবে যুদ্ধে যোগ দিলেন। এই যুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের পরিচয় দিলেও কোনো পদোন্নতি হয়নি।

যুদ্ধ শেষ হলো। দেশজুড়ে দেখা দিল হাহাকার আর বিশৃঙ্খলা। তার মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠল বিভিন্ন বিপ্লবী দল, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এদের ওপর গোয়েন্দাগিরি করার জন্য হিটলারকে নিয়োগ করলেন কর্তৃপক্ষ।

সেই সময় প্রধান রাজনৈতিক দল ছিল লেবার পার্টি। তিনি সেই পার্টির সদস্য হলেন। অল্পদিনেই পাকাপাকিভাবে পার্টিতে নিজের স্থান করে নিলেন হিটলার। এক বছরের মধ্যেই তিনি হলেন পার্টিপ্রধান। দলের নতুন নাম রাখা হলো ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স পার্টি। পরবর্তীকালে এই দলকেই বলা হতো নাৎসি পার্টি।

১৯২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম নাৎসি দলের সভা ডাকা হলো। এতেই হিটলার প্রকাশ করলেন তার পঁচিশ দফা দাবি।

এরপর হিটলার প্রকাশ করলেন স্বস্তিকা চিহ্নযুক্ত দলের পতাকা। ক্রমশই নাৎসি দলের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। তিন বছরের মধ্যেই দলের সদস্য হলো প্রায় ৫৬০০০ এবং এটি জার্মান রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করল।

হিটলার চেয়েছিলেন মিউনিখে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব যেন না থাকে। এই সময় তার পরিকল্পিত এক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলো। পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন। তাকে এক বছরের জন্য ল্যান্ডসবার্গের পুরনো দুর্গে বন্দি করে রাখা হলো।

জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আবার রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। তার উগ্র স্পষ্ট মতবাদ, বলিষ্ঠ বক্তব্য জার্মানদের আকৃষ্ট করল। দলে দলে যুবক তার দলের সদস্য হতে আরম্ভ করল। সমস্ত দেশে জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠলেন হিটলার।
এ্যডলফ হিটলার
১৯৩৩ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোট পেলেন কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেন না। পার্লামেন্টের ৬৪৭টির মধ্যে তার দলের আসন ছিল ২৮৮। বুঝতে পারলেন ক্ষমতা অর্জন করতে গেলে অন্য পথ ধরে অগ্রসর হতে হবে।

কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠ না হওয়ায় হিটলার পার্লামেন্ট ভেঙে দিলেন। এবার ক্ষমতা দখলের জন্য শুরু হলো তার ঘৃণ্য রাজনৈতিক চক্রান্ত। বিরোধীদের অনেকেই খুন হলেন। অনেকে মিথ্যা অভিযোগে জেলে গেল। বিরোধী দলের মধ্যে নিজের দলের লোক প্রবেশ করিয়ে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করলেন। অল্পদিনের মধ্যেই বিরোধী পক্ষকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে হিটলার হয়ে উঠলেন শুধু নাৎসি দলের নয়, সমস্ত জার্মানির ভাগ্যবিধাতা।

হিটলারের এই উত্থানের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল ইহুদিদের বিরুদ্ধে তার প্রচার। তিনিই জার্মানদের মধ্যে ইহুদি বিদ্বেষের বীজকে রোপণ করেছিলেন। দেশ থেকে ইহুদি বিতাড়নই ছিল তার নাৎসি বাহিনীর প্রধান উদ্দেশ্য।

দেশের প্রান্তে প্রান্তে ইহুদি বিদ্বেষ মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। শুরু হলো তাদের ওপর লুটতরাজ, হত্যা। হিটলার চেয়েছিলেন এভাবে ইহুদিদের দেশ থেকে বিতাড়ন করবেন। কিন্তু কোনো মানুষই সহজে নিজের আশ্রয়স্থল ত্যাগ করতে চায় না।

১৯৩৫ সালে নতুন আইন চালু করলেন হিটলার। তাতে দেশের নাগরিকদের দুটি ভাগে ভাগ করা হলো, জেন্টিল আর জু। জেন্টিল অর্থাৎ জার্মান, তারাই খাঁটি আর্য, জু হলো ইহুদিরা। তারা শুধুমাত্র জার্মান দেশের বসবাসকারী, এদেশের নাগরিক নয়। প্রয়োজনে তাদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। দেশজুড়ে জার্মানদের মধ্যে গড়ে তোলা হলো তীব্র ইহুদি বিদ্বেষী মনোভাব।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর ইউরোপের মিত্রপক্ষ ও জার্মানদের মধ্যে যে ভার্সাই চুক্তি হয়েছিল তাতে প্রকৃতপক্ষে জার্মানির সমস্ত ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়েছিল। ১৯৩৩ সালে হিটলার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জার্মানির হৃৎ গৌরব পুনরুদ্ধার করার সংকল্প গ্রহণ করেন এবং তিনি একে একে ভার্সাই চুক্তির শর্তগুলো মানতে অস্বীকার করে নিজের শক্তি ক্ষমতা বিস্তারে মনোযোগী হয়ে ওঠেন।

১৯৩৪ সালে হিটলার রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে নিজেকে জার্মানির ফুয়েরার হিসেবে ঘোষণা করেন এবং অল্পদিনের মধ্যে নিজেকে দেশের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেন। তার এই সাফল্যের মূলে ছিল জনগণকে উদ্দীপিত করার ক্ষমতা। তিনি দেশের প্রান্তে প্রান্তে ঘুরে ঘুরে জনগণের কাছে বলতেন ভয়াবহ বেকারত্বের কথা, দারিদ্র্যের কথা, নানা অভাব-অভিযোগের কথা।
হিটলার তার সমস্ত ক্ষমতা নিয়োগ করলেন দেশের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে। তার সহযোগী হলেন কয়েকজন সুদক্ষ সেনানায়ক এবং প্রচারবিদ। দেশের বিভিন্ন সীমান্ত প্রদেশে বিশাল সৈন্য সমাবেশ করলেন। কিছুদিনের মধ্যেই সন্ধির চুক্তি ভঙ্গ করে রাইনল্যান্ড অধিকার করলেন। অস্ট্রিয়া ও ইতালি ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ হলো জার্মানির সাথে।

ইতালির সর্বাধিনায়ক ছিলেন মুসোলিনি। একদিকে ইতালির ফ্যাসিবাদী শক্তি অন্যদিকে নাৎসি জার্মানি। বিশ্বজয়ের আকাঙ্ক্ষায় উন্মত্ত হয়ে ওঠে ইতালি। প্রথমে আলবেনিয়া ও পরে ইথিওপিয়ার বেশ কিছু অংশ দখল করে নেয়।

অবশেষে হিটলার পোল্যান্ডের কাছে ডানজিগ ও পোলিশ করিডর দাবি করলেন। যাতে এই অঞ্চলে সৈন্য সমাবেশ ঘটাতে পারেন। পোল্যান্ডের সরকার তার এই দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলেন। পোল্যান্ডের ধারণা ছিল হিটলার তার দেশ আক্রমণ করলে ইউরোপের অন্য সব শক্তি তার সাহায্যে এগিয়ে আসবে। তাদের সম্মিলিত শক্তির সামনে জার্মান বাহিনী পরাজিত হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি বড় কারণ জার্মানির সামরিক শক্তি সম্বন্ধে ইউরোপের অন্য সব দেশের সঠিক ধারণার অভাব। আর একটি বড় কারণ ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স প্রথম পর্যায়ে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হিটলার ও মুসোলিনির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চায়নি। তাছাড়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলিনের ধারণা ছিল হিটলারের ক্ষমতা শুধুমাত্র প্রচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাছাড়া সেই সময় ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রের কাছে জার্মানির চেয়ে বড় শত্রু ছিল কমিউনিস্ট রাশিয়া। তাদের উদ্দেশ্য ছিল রাশিয়ার প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে জার্মানরা নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে। তাই যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমস্ত শর্ত ভঙ্গ করে জার্মানরা নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করে চলেছিল তখন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স কেউ তাদের বাধা দেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। উপরন্তু হিটলারকে নানা সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়েছিল।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশের এই সুবিধাবাদী নীতির সুযোগ পুরোপুরি গ্রহণ করেছিলেন হিটলার। বিশ্বজয়ের স্বপ্নে মত্ত হয়ে ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সালে জার্মান বাহিনী পোল্যান্ড আক্রমণ করল এবং এই দিনটি থেকেই শুরু হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

মাত্র পনেরো দিনে জার্মান বাহিনী পোল্যান্ডের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে পোল্যান্ড অধিকার করল। তারপর শুরু হলো জার্মান বাহিনীর অগ্রগমন। পোল্যান্ডের পর হিটলার দখল করলেন নরওয়ে ও ডেনমার্ক। নরওয়েতে বিরাট সংখ্যক ব্রিটিশ সৈন্য অবস্থান করছিল। তাদের অধিকাংশই নিহত হলো। এই ঘটনায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলিন পদত্যাগ করলেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন চার্চিল।

এবার হিটলার দৃষ্টি ফেরাল ফ্রান্সের দিকে। ফ্রান্স ইউরোপের সর্বপ্রধান শক্তি। ফ্রান্স নিজেদের সুরক্ষার জন্য জার্মান সীমান্তে দুর্ভেদ্য ব্যূহ সৃষ্টি করেছিল। যাকে বলা হতো ম্যাজিনো। বেলজিয়াম আক্রমণ করে সেই দেশের মধ্য দিয়ে ফ্রান্সের সীমান্ত প্রদেশে গিয়ে উপস্থিত হলো। সোঁদায় তুমুল যুদ্ধের পর ফরাসি বাহিনী পরাজিত হলো।
ফরাসিদের এই বিপর্যয়ের সুবিধা নেয়ার জন্য ইতালি নিজেকে জার্মানদের মিত্রপক্ষ হিসেবে ঘোষণা করে যুদ্ধে যোগ দিল। সমস্ত ইউরোপ-আফ্রিকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ আগুন।
এ্যডলফ হিটলার
Adolf Hitler



ইতালির রাষ্ট্রপ্রধান মুসোলিনি উত্তর আফ্রিকা অধিকার করার জন্য বিরাট সৈন্যদল পাঠালেন। অন্যদিকে হিটলার ফ্রান্স অধিকার করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করলেন। হিটলার অনুগত ফ্যাসিস্ট শক্তি নতুন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মার্শাল পেত্যাকে নিযুক্ত করল। মার্শাল বিনাযুদ্ধেই হিটলারের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন।

ফ্রান্স জয়ের পর জার্মানি যুগোস্লাভিয়া আর গ্রিস দেশ অধিকার করল। ইতিমধ্যে রুমানিয়া, বুলগেরিয়া ও হাঙ্গেরি জার্মানির পক্ষে যোগ দিল। এর ফলে সমগ্র দক্ষিণ ইউরোপ জার্মানির নিয়ন্ত্রণে এসে গেল। একদিকে যখন জার্মান বাহিনী বীরদর্পে একের পর এক দেশ অধিকার করে এগিয়ে চলেছে, দেশের অভ্যন্তরে হিটলার শুরু করেছেন নারকীয় ইহুদি নিধনযজ্ঞ। পৃথিবীর ইতিহাসে এই নৃশংসতার কোনো তুলনা নেই। হিটলার চেয়েছিলেন জার্মানি থেকে ইহুদিদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে। হাজার হাজার ইহুদিকে বন্দি করা হলো। তাদের বলা হতো তোমাদের জার্মানির বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হবে। তাদের গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো জনবসতিহীন সীমান্ত অঞ্চলে। এখানে তাদের জন্য অস্থায়ী বন্দিনিবাস তৈরি করা হয়েছিল। তাকে বলা হতো ঘেট্রো। এখানে কোনো খাবার ছিল না, পানি ছিল না, তার উপরে ছিল হিটলারের বাহিনীর নির্মম অত্যাচার। অল্পদিনের মধ্যেই বেশির ভাগ মানুষই মারা পড়ত। যারা বেঁচে থাকত তাদের গুলি করে হত্যা করা হতো। নাৎসি বাহিনীর হাতে নারী-শিশু, বৃদ্ধ কারো নিস্তার ছিল না।

হাজার হাজার ইহুদিকে হত্যা করতে যে বিরাট পরিমাণ গুলি খরচ হতো তাতে জার্মান কর্তৃপক্ষ চিন্তিত হয়ে পড়ল। হিটলারের আদেশে তৈরি হলো গ্যাস চেম্বার। একটা বড় ঘর। চারদিকে বন্ধ। একসাথে দুইশত মানুষকে সেই ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস ছাড়া হতো। কয়েক মিনিটের মধ্যে সেই বিষাক্ত গ্যাসে মারা পড়ত সবাই। তাদের মৃতদেহগুলো সীমান্ত অঞ্চলে বিরাট বিরাট গর্তে ছুড়ে ফেলে দেয়া হতো। তিন বছরে হিটলার প্রায় ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিল। ইহুদিদের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ আর ঘৃণাই তাকে এই হত্যাকাণ্ডে প্ররোচিত করেছিল।

ফ্রান্সের পতনের পর ১৯৪১ সালের ২২ জুন সমস্ত চুক্তি ভঙ্গ করে হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করল। হিটলার ভেবেছিলেন রাশিয়া অধিকার করতে পারলে সমগ্র ইউরোপ তার পদানত হবে। নেপোলিয়ানের মতো রাশিয়া আক্রমণ হিটলারের জীবনের সবচেয় বড় ভ্রান্তি। রুশ বাহিনী এই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল না। জার্মানরা প্রচণ্ড গতিতে এগিয়ে চলে মস্কোর দিকে। রাশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল অধিকার করলেও শীত আসতেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল জার্মানরা। তারা পিছু হটতে আরম্ভ করল। এই সুযোগে রুশ গেরিলা বাহিনী আঘাত হানতে থাকে। শীত শেষ হতেই জার্মানরা নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলে। রাশিয়ার দক্ষিণে ককেশাস তৈলক্ষেত্রসহ বহু অঞ্চল দখল করে দেয়। তারা রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর প্রান্তে এসে পৌঁছায় কিন্তু রুশ বাহিনী মরণপণ সংগ্রাম করে জার্মানদের পরাজিত করে।

একদিকে যখন রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ চলছে, জেনারেল রোমেল হিটলারের নির্দেশে আফ্রিকায় আরেকটি ফ্রন্ট খুললেন। একসাথে এতগুলো ফ্রন্ট না খোলার জন্য অনেকে হিটলারকে পরামর্শ দিলেও বিশ্বজয়ের স্বপ্নে হিটলার তখন এমনই বিভোর, কারোর কোনো উপদেশ গ্রহণ করলেন না।

ইউরোপজুড়ে যখন যুদ্ধ চলছে, এশিয়ার জাপান জার্মানির পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিল। তারা ৭ ডিসেম্বর ১৯৪২ সালে আমেরিকার পার্ল হারবার বন্দরের ওপর বোমা বর্ষণ করে বিধ্বস্ত করে ফেলল। এই ঘটনায় আমেরিকাও প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ল।

প্রথম দিকে জার্মান বাহিনী সর্বত্র জয়লাভ করলেও মিত্রশক্তি যখন সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ আরম্ভ করল, হিটলারের বাহিনী পিছু হটতে আরম্ভ করল। আফ্রিকায় ইংরেজ সেনাপতি মন্ট গোমারি রোমেলকে পরাজিত করলেন। এক বছরের মধ্যেই আফ্রিকা থেকে জার্মান বাহিনীকে বিতাড়িত করা হলো। ইতালিতে মুসোলিনিকে বন্দি করা হলো। ফ্যাসিবিরোধী জনগণ তাকে প্রকাশ্য রাস্তায় হত্যা করল।

জার্মান বাহিনীর সবচেয়ে বড় পরাজয় হলো রাশিয়ার স্টালিনগ্রাদে। দীর্ঘ ছয় মাস যুদ্ধের পর ফৌজের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলো জার্মান বাহিনী। সর্বত্রই যখন পরাজয়, নিজের অহমিকায় এতখানি উন্মত্ত হয়ে উঠেছিলেন হিটলার, মিত্রশক্তিকে সামান্যতম গুরুত্ব দিতেন না। নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে তার অনেক সেনাপতিই তাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। দুর্ভাগ্যবশত তাদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়।

হিটলার ক্রমশই সঙ্গীসাথীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে থাকেন। সকলের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। বেশির ভাগ সময়ই বাঙ্কারে থাকতেন। সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতেন। এই সময় তার একমাত্র সঙ্গী ছিল প্রেমিকা ইভা ব্রাউন।

ইভা হিটলারকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও হিটলারকে পরিত্যাগ করেননি। হিটলার ছিলেন এক বিকৃত মানসিকতার শিকার। তিনি স্বপ্ন দেখতেন সমস্ত পৃথিবী হবে তার নাৎসি বাহিনীর পদানত। নিজের স্বপ্নকে পূর্ণ করার জন্য তিনি জার্মান বাহিনীকে গড়ে তুলেছিলেন। নিজে অল্প শিক্ষিত হয়েও অনুভব করেছিলেন যুদ্ধে বিজ্ঞানের উপযোগিতা। তাই শুধু সুদক্ষ সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলেননি। তার নির্দেশে বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছিল সর্বাধুনিক সমরাস্ত্র।

অসাধারণ সংগঠন শক্তি, বুদ্ধি, প্রবল ব্যক্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও হিটলারের ধ্বংসের কারণ তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা, তার অহমিকা, রক্তপিপাসু দানবের মতো মানবজাতিকে ধ্বংস করার ইচ্ছা। ১৯৪৪ সালে লাল ফৌজ স্বদেশভূমি থেকে জার্মান বাহিনীকে সম্পূর্ণ উৎখাত করে একের পর এক অধিকৃত পোল্যান্ড, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, চেকোস্লোভাকিয়া মুক্ত করতে করতে জার্মান ভূখণ্ডে এসে প্রবেশ করে। অন্যদিকে ইংরেজি আর আমেরিকান সৈন্যরাও জার্মানির অভিমুখে এগিয়ে চলে।

যতই চারদিক থেকে পরাজয়ের সংবাদ আসতে থাকে হিটলার উন্মত্তের মতো হয়ে ওঠেন। ১৯৪৫ সালের ২৯ এপ্রিল হিটলারের শেষ ভরসা তার স্টেইনের সৈন্যবাহিনী বিধ্বস্ত হয়ে যায়। তার অধিকাংশ সঙ্গীই তাকে পরিত্যাগ করে মিত্রপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব পাঠায়। হিটলার বুঝতে পারেন তার সব স্বপ্ন চিরদিনের জন্য শেষ হয়ে গেছে। বার্লিনের প্রান্তে রুশ বাহিনীর কামানের গর্জন শোনা যাচ্ছে। হিটলার তার বারো বছরের সঙ্গিনী ইভাকে বার্লিন ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ইভা তাকে পরিত্যাগ করতে অস্বীকার করেন। দুজনে সেই দিনেই বিয়ে করেন।

বিয়ের পর হিটলার উপস্থিত সঙ্গীদের সাথে একসঙ্গে শ্যাম্পেন পান করলেন। তারপর দুটি চিঠি লিখলেন। একটি চিঠিতে সবকিছুর জন্য ইহুদিদের অভিযুক্ত করলেন। অন্য চিঠিতে নিজের সব সম্পত্তি পার্টিকে দান করে গেলেন।

৩০ এপ্রিল ১৯৪৫। চারদিক থেকে বার্লিন অবরোধ করে ফেলে লাল ফৌজ। হিটলার বুঝতে পারেন আর অপেক্ষা করা উচিত নয়। যে কোনো মুহূর্তে লাল ফৌজ এসে তাকে বন্দি করতে পারে। তিনি তার ড্রাইভার ও আরো একজনকে বললেন, মৃত্যুর পর যেন তাদের এমনভাবে পোড়ানো হয়, দেহের কোনো অংশ যেন অবশিষ্ট না থাকে।

বিকেল সাড়ে তিনটার সময় তিনি নিজের ঘর থেকে বের হয়ে তার পার্শ্বচরদের সাথে করমর্দন করে নিজের ঘরে ঢুকলেন। তারপরই শব্দ শোনা গেল। হিটলার নিজের মুখের মধ্যে গুলি করে আত্মহত্যা করলেন। আর ইভা আগেই বিষ খেয়েছেন।

দুজন সৈন্য তাদের কম্বল দিয়ে মুড়ে বাগানে নিয়ে এল। চারদিক থেকে কামানের গোলা এসে পড়ছে। সেই অবস্থাতেই মৃতদেহের ওপর পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়া হলো। যিনি সমস্ত মানবজাতিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন, নিজের অপরিণামদর্শিতায় শেষ পর্যন্ত নিজেই ধ্বংস হয়ে গেলেন।

☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "এ্যডলফ হিটলার"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Iklan Atas Artikel

Iklan Tengah Artikel 1

Iklan Tengah Artikel 2

Iklan Bawah Artikel