ইয়াসির আরাফাত
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০১৯
Comment
আগস্ট ২৪, ১৯২৯ –নভেম্বর ১১, ২০০৪
ফিলিস্তিনি মুক্তি সংগ্রামের নেতা ইয়াসির আরাফাত ১৯২৯ সালের ২৪ আগস্ট মিসরের কয়রোতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম মুহাম্মদ আবদেল রহমান আবদেল রউফ আরাফাত আল-কুদওয়া আল-হুসেইনী। তার বাবা আবদেল রউফ আল-কুদওয়া আল-হুসেইনী ছিলেন ফিলিস্তিনের গাজার অধিবাসী। মা জোয়া আবুল সাউদ ছিলেন জেরুজালেমের অধিবাসী। আরাফাতের চারবছর বয়সে মা মারা যান। আরেক ভাই ফাতির সঙ্গে মামার বাড়িতে ছিলেন।
ইয়াসির আরাফাত ১৯৪৪ সালে কায়রোর ইউনিভার্সিটি অব কিং ফুয়াদ ওয়ানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন। ১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময়ে অন্যান্য আরবদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন। ফিলিস্তিনের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তবে ফেদাইনের সঙ্গে যোগ না দিয়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। যদিও তিনি এ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি গাজা এলাকার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৯ সালের প্রথমদিকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না থাকায় কায়রো ফিরে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনায় যোগ দেন। ১৯৫০ সালে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন ইয়াসির আরাফাত। এরপরে তিনি ইহুদিবাদ ও জায়ানিজম সম্পর্কে পড়াশুনা করেন। একই সময় ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামের জন্য অস্ত্র সংগ্রহ শুরু করেন।
১৯৫২ সাল থেকে ৫৬ সাল পর্যন্ত জেনারেল ইউনিয়ন অব প্যালেস্টাইনিয়ান স্টুডেন্টস বা জিইউপিএসের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় মিসরের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেন এবং বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। কিছুদিন কুয়েতে শিক্ষকতাও করেন। ১৯৫৯ সালে ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামের জন্য ফাতাহ দল প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এরপর আমৃত্যু পর্যন্ত মুক্তি সংগ্রাম করেছেন।
ইয়াসির আরাফাত ১৯৯০ সালে ৬১ বছর বয়সে বিশ্বস্ত সহকর্মী ২৮ বছর বয়সি সুহা তাবিলকে বিয়ে করেন। ১৯৯৫ সালে কন্যা সন্তানের পিতা হন ইয়াসির আরাফাত। তার একমাত্র কন্যা জাহওয়া আরাফাতের বর্তমান বয়স ২০।
ফিলিস্তিনিরা ইয়াসির আরাফাতকে সবসময়ই একজন মুক্তিযোদ্ধা মনে করেছেন। তিনি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে দীর্ঘ সময় সংগ্রাম করেছেন। কখনো সহিংস পথে, কখনো শান্তিপূর্ণভাবে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে এগিয়ে গেছেন আরাফাত। ২০০৪ সালে ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে ৭৫ বছর বয়সে স্বল্পস্থায়ী, রহস্যময় রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
তবে ফিলিস্তিনিরা মনে করেন ইয়াসির আরাফাতকে ইসরায়েল বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করেছে। কেননা তার মৃত্যু দুর্ঘটনাও ছিল না, স্বাভাবিকও ছিল না। অনেকের মতে, আরাফাত ইসরায়েলের গুপ্ত হত্যার শিকার হয়েছিলেন। কেননা এর আগে ইসরায়েল বুঝিয়ে দিয়েছিল আরাফাত হত্যার নিশানায়।
ইয়াসির আরাফাতকে বেশ কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করা হয়। ১৯৮২ সালে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী থাকাকালে শ্যারন বৈরুতে আরাফাতকে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ১৯৮৫ সালে অল্পের জন্য তিউনিসিয়ায় ইসরায়েলি বোমা হামলা থেকে রক্ষা পান। ২০০১ সালের ডিসেম্বরে ইসরায়েলি মিসাইল রামাল্লায় তার দপ্তরে আঘাত হানে। এর খানিক আগেই তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে যান।
মার্কিন সাংবাদিক স্টিফেন লেন্ডম্যান এক প্রতিবেদনে জানান, ওয়াশিংটনের সম্মতি নিয়েই ইসরায়েল আরাফাতকে হত্যার সময় ও পদ্ধতি বেছে নিল। তারা ভেবেছিল, কোনো প্রমাণ থাকবে না। কিন্তু তারা ভুল ভেবেছিল।
এ প্রসঙ্গে আরাফাতের দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ড. আশরাফ আল-কুর্দি বলেছিলেন, ‘যে কোনো চিকিৎসকও আরাফাতের রোগলক্ষণ দেখে বলবেন, তিনি বিষের শিকার। প্যারিসে নেওয়ার আগে তার শরীরের ওজন অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল, মুখ লালচে আর গায়ের রং হয়ে পড়েছিল ধাতব হলুদ। বিষটা ধীরে ধীরে কাজ করছিল। ২০০৪ সালে অক্টোবরের ১২ তারিখে খাওয়ার পরই আরাফাতের বমি হয় এবং তলপেটে ব্যথা হয়। ঘণ্টা খানেক আগেই তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ সুস্থ। তিউনিসিয়া থেকে ডাক্তাররা এলেন, তারাও রোগটা ধরতে পারলেন না। ২৯ তারিখে হেলিকপ্টারে করে তাকে জর্ডানে নেওয়া হলে অপেক্ষারত ফরাসি বিমান তাকে প্যারিসে নিয়ে যায়। ফরাসি ডাক্তাররাও রোগ ধরতে ব্যর্থ হন। ৩ নভেম্বর কোমা এবং ৪ নভেম্বর মৃত্যু।’
ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর পর তার ময়নাতদন্ত করা হয়নি, মৃত্যুর কারণও ঘোষণা করা হয়নি। চিকিৎসার কাগজপত্রও ছিল অপ্রকাশিত। ২০১২ সালে স্ত্রী সুহা আরাফাতের লাশ তোলার আদেশ দেন। ২০১৩ সালে সুইস বিশেষজ্ঞরা আরাফাতের ব্যক্তিগত দ্রব্যাদি পরীক্ষা করে উচ্চমাত্রার রেডিও অ্যাকটিভ টক্সিন পোলোনিয়ামের অস্বাভাবিক উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছেন।
পোলোনিয়াম-২১০ এমন একটি বিষ যে, তার এক গ্রামের দশ লাখ ভাগের এক ভাগই মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের মতে, আরাফাতের কাছে আসতে পারে, এমন কোনো ব্যক্তির পক্ষেই এই বিষ প্রয়োগ করা সম্ভব ছিল।
পশ্চিম তীরে থাকাকালীন আরাফাত যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন তিনি বাস করছিলেন তার ‘মুকাতা’ বা রাষ্ট্রপ্রধানের প্রাসাদে। ইসরায়েলি সৈন্যরা সে প্রাসাদ ঘিরে রেখেছিল। স্বভাবতই বহু ফিলিস্তিনির ধারণা, ইসরায়েলই এই মৃত্যুর পিছনে রয়েছে। ইসরায়েল বারবার প্রকাশ্যে আরাফাতকে হত্যার ঘোষণা দিয়েছে। তাকে হত্যার কারণ ও সক্ষমতাও তাদের আছে। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ গুপ্তহত্যায় বিশ্বের সেরা। দু-একটি ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা সফল।
পশ্চিম তীরের রামাল্লাহয় চির নিদ্রায় শায়িত আছেন ইয়াসির আরাফাত। তার মৃত্যু নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়ে গেছে। ফিলিস্তিনিদের কাছে জাতীয় বীর তিনি। তার মৃত্যুর এক দশক পরেও ফিলিস্তিনিদের কাছে আরাফাতের গুরুত্ব অথবা জনপ্রিয়তা নিয়ে কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না।
☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "ইয়াসির আরাফাত"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন