আজকে প্রকাশিত চাকরির পরীক্ষার নোটিশ গুলো পাবেন

মাক্সিম গোর্কি

মাক্সিম গোর্কি



মাক্সিম গোর্কির প্রকৃত নাম আলেক্সেই মাক্সিমোভিচ পেশকভ। এই রুশ লেখকের জন্ম ১৮৬৮ সালের ২৮ মার্চ। ছোটবেলায়ই হারিয়েছিলেন মা-বাবাকে। এরপর শুরু হয় তাঁর কঠিন জীবন। প্রথমেই একটি শৌখিন জুতার দোকানে কাজ শুরু করেন তিনি। সেখানে সারা দিন শ্রম দিতে হতো তাঁকে।

এরপর কিশোর পেশকভ কাজ নেন কয়েদি বহনের জাহাজে। তাঁর কাজ ছিল জাহাজের কর্মচারীদের বাসন ধোয়া। সেখানের কাজটাও তাঁর জন্য সহজ ছিল না। ভোর ছয়টা থেকে মাঝরাত অবধি তাঁকে কাজ করতে হতো।

এই বয়সে কার এসব ভালো লাগে! এটা তো স্কুলে যাওয়ার বয়স, পাখি হয়ে উড়ে বেড়ানোর বয়স। কিন্তু পেটের তাগিদে এসব করা ছাড়া পেশকভের আর কোনো উপায়ও ছিল না। ভালো কাজের আশায় পেশা বদলাতে থাকেন পেশকভ। কিন্তু কোথাও শান্তি পাননি তিনি।

তবে পেশকভ শান্তি খুঁজে পেয়েছিলেন বইয়ের পাতায়। একটা ভালো নেশা ছিল তাঁর। তিনি ছিলেন বইয়ের পোকা। অভাব-অনটন, হাড়ভাঙা পরিশ্রম—এত কিছুর মধ্যেও থামেনি তাঁর বই পড়া। কত শত বইয়ের মধ্যে রুশ কবি পুশকিনের একটি কবিতার বই তাঁকে বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে।

তিনি যোগ দেন বিপ্লবী দলে। বিপ্লবী দলে যোগ দেওয়ার পর তাঁর জ্ঞানের ভান্ডার আরও সমৃদ্ধ হয়। সেই সঙ্গে জার শাসকের সন্দেহেও পড়েন তিনি।

আগেই বলেছি, দারিদ্র্য ছিল পেশকভের নিত্য সঙ্গী। একপর্যায়ে তিনি কাজ নেন একটি রুটির কারখানায়। এখানে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে পরদিন দুপুর পর্যন্ত একটানা কাজ করতে হতো তাঁকে। দারিদ্র্যের কশাঘাত আর দিনের পর দিন হাড়ভাঙা শ্রমের ধকলে মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি।

জীবন হয়ে পড়ে তাঁর কাছে মূল্যহীন, বেঁচে থাকা হয়ে পড়ে নিরর্থক। তিক্ত জীবনের অবসান ঘটাতে পিস্তল কেনেন তিনি। ১৮৮৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর। বয়স তখন তাঁর মাত্র ২০। নদীর তীরে গিয়ে নিজের বুকেই গুলি করলেন পেশকভ। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা তাঁর জীবনের আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু অলৌকিকভাবে বেঁচে যান তিনি। নিঃসন্দেহে এটা ছিল তাঁর দ্বিতীয় জীবন।

নব-উদ্যমে জীবন শুরু করেন পেশকভ। শুরু করেন লেখালেখি। ধারণ করেন নতুন নাম—মাক্সিম গোর্কি। রুশ ভাষায় গোর্কি শব্দের অর্থ তেতো। প্রথাগত রচনার বাইরে গোর্কির লেখায় প্রাধান্য পায় সমাজের নীচুতলার মানুষের জীবনালেখ্য।

তখনো গোর্কির যশ-খ্যাতি ততটা হয়নি। ১৮৯৮ সালে তাঁর লেখা প্রবন্ধ ও গল্প নিয়ে একটি ছোট সংকলন প্রকাশিত হয়। সংকলনটির নাম দেওয়া হয় রেখাচিত্র ও কাহিনি। এই বই প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে গোর্কির খ্যাতি।

১৯০০ সালে প্রকাশিত হয় গোর্কির সার্থক উপন্যাস ফোমা গর্দিয়েভ। গোর্কির লেখার জীবনবোধ ও ক্ষুরধার রাশিয়ার জার শাসকদের বিচলিত করে তোলে।

১৯০১ সালে বিপ্লবী ছাত্রদের হত্যার প্রতিবাদে গোর্কি রচনা করলেন ‘ঝোড়ো পাখির গান’ নামের কবিতাটি। ‘ঝোড়ো পাখির গান’ হয়ে ওঠে বিপ্লবের মন্ত্র। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে প্রতিবাদের মুখে তাঁকে আবার ছেড়ে দিতেও বাধ্য হয় সরকার। ক্রমে গোর্কি হয়ে ওঠেন লেলিন আদর্শের কর্মী। হয়ে ওঠেন লেখনীর মাধ্যমে মানবিক সমস্যার চিত্র তুলে ধরার সুদক্ষ শিল্পী। গোর্কিকে নির্বাসনে দেয় শাসকচক্র।

নির্বাসনে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে পাঠানো হয় ক্রিমিয়ার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সুস্থ হয়ে নাটক লিখতে শুরু করেন গোর্কি।

১৯০২ সালে লিখলেন নাটক লোয়ার ডেপথ (নীচুতলা)। এই নাটকের বাণী ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপের সর্বত্র। তখন গোর্কির পরিচিতি রাশিয়ার সীমা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র ইউরোপে। গোর্কি হয়ে ওঠেন ইউরোপের শাসিত মানুষের কণ্ঠস্বর। লেখনীর কারণে জীবনে বহুবার জার শাসকের রোষানলে পড়েছিলেন গোর্কি।

বারবার তাঁকে কারাববরণও করতে হয়েছে। আবারও গ্রেপ্তার হতে পারেন—এমন খবর জানতে পেরে দেশ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। অবশেষে তিনি জার্মানি ও ফ্রান্স হয়ে পাড়ি জমান আমেরিকায়।

১৯০৭ সালে সেখানে বসেই তিনি রচনা করেন তাঁর বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাস মা। মা উপন্যাস লিখে গোর্কি উঠে আসেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। নাম লেখান অমরত্বের খাতায়। মা ছাড়াও গোর্কি অসংখ্য জনপ্রিয় গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, কবিতা ও আত্মজীবনী লিখে গেছেন। ১৯৩৬ সালের ১৮ জুন এই মহান লেখকের জীবনাবসান ঘটে। কিন্তু গোর্কি আজও তাঁর লেখনীর মাধ্যমে চির-অম্লান হয়ে আছেন মানুষের হূদয়ে।

২০ বছর বয়সে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে আলেক্সেই মাক্সিমোভিচ পেশকভ সত্যিই বড় ভুল করেছিলেন। সৌভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন বলেই পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠেন মাক্সিম গোর্কি।

☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "মাক্সিম গোর্কি"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Iklan Atas Artikel

Iklan Tengah Artikel 1

Iklan Tengah Artikel 2

Iklan Bawah Artikel