পাওয়ার ট্রান্সফরমার
শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০১৯
1 Comment
পাওয়ার ট্রান্সফরমার এর খুঁটিনাটি ও তৈরির কৌশল
পাওয়ার ট্রান্সফরমার
পাওয়ার সাপ্লাইতে ব্যবহৃত ট্রান্সফরমার গুলো পাওয়ার ট্রান্সফরমার নামে পরিচিত। এছাড়া আরও অনেক ধরনের ট্রান্সফরমারই হয়ে থাকে, যেমন I.F transformer (IFT), R.F transformer (RFT), H.T transformer (HT transformer) ইত্যাদি। অন্যান্য ট্রান্সফরমারের মতো এতেও দুই বা ততোধিক কয়েল থাকে। অন্যান্য ট্রান্সফরমারের সাথে পাওয়ার ট্রান্সফরমারের কমপক্ষে দুটি পার্থক্য আছে
পাওয়ার ট্রান্সফরমার ও অন্যান্য ট্রান্সফরমারের পার্থক্যঃ
প্রথমতঃ
এই দুই বা ততোধিক কয়েলের নির্দিষ্ট প্যাচ (টার্ন) সংখ্যা ও অভ্যন্তরীণ কোরের মাধ্যমে একে অপরের মধ্যে বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় আবেশ তৈরি করে ও উচ্চ বিদ্যুৎ কে নিম্ন বা তার বিপরীতে রূপান্তর করতে পারে।
দ্বিতীয়তঃ
এগুলো তুলনামূলক ভাবে হাই পাওয়ার রেটিং এর হয়ে থাকে
মূল বিষয়ঃ
এই ধারাবাহিক লেখার মাধ্যমে আমরা এসি মেইন লাইনে ব্যবহৃত পাওয়ার ট্রান্সফরমারের কিছু তত্ত্ব ও তথ্য আলোচনা করবো। আমাদের দেশের এসি মেইন সাপ্লাইয়ের প্রতি ফেজ-এ ২২০ ভোল্ট – ৫০ হার্জ এর হয়ে থাকে। এখানে সাপ্লাই ফ্রিকুয়েন্সি খুব গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, একটি নির্দিষ্ট ফ্রিকুয়েন্সির জন্য ডিজাইন করা ট্রান্সফরমার কখনোই ওই ফ্রিকুয়েন্সি অপেক্ষা অন্য কোনো ফ্রিকুয়েন্সিতে ব্যবহার করা উচিৎ নয়।
ট্রান্সফরমার কিভাবে কাজ করেঃ
ট্রান্সফরমারের এক বা একাধিক কয়েলে যখন এসি পাওয়ার ইনপুট দেয়া হয়, তখন কয়েল এবং আয়রণ কোরের চতুর্দিকে ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স উৎপন্ন হয়, যার কারণে অন্যান্য কয়েলে আবেশিত কারেন্টের সৃষ্টি হয়। যে কয়েলগুলোতে পাওয়ার ইনপুট দেয়া হয়, সেগুলো প্রাইমারি। এবং যেগুলো থেকে পাওয়ার আউটপুট নেয়া হয় সেগুলো সেকেন্ডারি হিসেবে পরিচিত। এই সেকেন্ডারি কয়েলে উৎপন্ন ভোল্টেজ প্রাইমারি বা সাপ্লাই ভোল্টেজের থেকে বেশি (স্টেপ আপ ট্রান্সফরমার) বা কম (স্টেপ ডাউন) হতে পারে। মূলত কাজের ধরণ হিসেবে এই ট্রান্সফরমারের প্রকার এমন ২ ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রত্যেক কয়েলে তারের টার্ন বা প্যাচের সংখ্যা ট্রান্সফরমারের কোরের সাইজের সাথে ব্যাস্তানুপাতিক ভাবে পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ কোর মোটা হলে তারের প্যাচ বা টার্ন সংখ্যা কমে, আর কোর চিকন হলে প্যাচ বাড়ে।
ল্যামিনেটেড কোর কি ও এর প্রয়োজনীয়তাঃ
প্রাইমারি কয়েলে পাওয়ার ইনপুট দেয়ার ফলে উৎপন্ন ক্রমাগত পরিবর্তনশীল ম্যাগনেটিক ফ্লাক্সের কারণে কোরের চতুর্দিকে জড়ানো কয়েলের পাশাপাশি কোরেও আবেশিত কারেন্টের সৃষ্টি করে। ফলে কোর যদি খুব কম রেজিস্টেন্স (রোধ) বিশিষ্ট একটি মাত্র ধাতব খন্ড হয়, তবে এতে আবেশিত কারেন্টের পরিমান অনেক বেশি হয়। এই আবেশিত কারেন্ট কোনো কাজে লাগানো যায় না, শুধুমাত্র কোর গরম হয়ে পাওয়ার বা শক্তির অপচয় হয়। এই ঘটনাটির আবিষ্কর্তার নামানুসারে একে “এডি কারেন্ট” (Eddy Current) বলা হয়।
এডি কারেন্ট একটি সহনীয়মাত্রায় কমানোর জন্য কোর-কে একটিমাত্র ধাতব খন্ডের পরিবর্তে একাধিক পাতলা ধাতব শীট-এ কাটা হয় এবং প্রত্যেকটি শীট-কে একে অন্যের থেকে ইনসুলেটেড (অপরিবাহী) করে রাখা হয়। এর পরও এডি কারেন্ট পরিবাহিত হয়, কিন্তু কারেন্ট খুবই সংকীর্ণ এরিয়ায় ভাগ হয়ে যাবার ফলে যে পরিমান পাওয়ার অপচয় হয়, তা একটিমাত্র ধাতব খন্ডের তুলনায় অনেক অনেক কম হয়ে থাকে।
ধাতব শীটগুলো একটি থেকে আর একটিকে ইনসুলেটেড করার পদ্ধতিই হলো লেমিনেশন যা বিভিন্নভাবেই করা যায়, যেমন: ধাতবপৃষ্ঠে রাসায়নিক (কেমিক্যাল) ব্যবহার করে, ভার্নিশ ব্যাবহার করে, খুব পাতলা সিমেন্ট পেপার ব্যবহার করে।
ল্যামিনেশন কোর কেমন হয়ঃ
আকারের দিক থেকে লেমিনেশন প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে:
E and I type
T and U type
উভয়েই তিন বাহু বিশিষ্ট কোর গঠন করে।
ট্রান্সফরমার তৈরি করবার একটি উদাহরণ:
এমন একটি পাওয়ার ট্রান্সফরমার ডিজাইন করতে হবে, যাতে নিচের বৈশিষ্ট্য গুলো থাকবে।
Primary = 220 V
Secondary:
350 V at 120 mA
6.3 V at 3 A
5 V at 2.2 A
সমাধান:
১ম ধাপ: সর্বমোট আউটপুট পাওয়ার নির্ণয়
350 V x 120 mA = 42 Watts
6.3 V x 3 A = 18.9 Watts
5 V x 2.2 A = 11 Watts
Total = 71.9 Watts = 72 Watts
২য় ধাপ: কোরের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল নির্ণয়
নিরাপত্তার খাতিরে এই ফলাফলের সাথে আরও 0.3 Square Inch যোগ করলে মোট ক্ষেত্রফল দাড়ায় A = 1.8 sq In.
৩য় ধাপ: ইনপুট পাওয়ার নির্ণয়
ধরা যাক, ট্রান্সফরমারটি ৯০% এফিসিয়েন্ট হবে, অর্থাৎ ইনপুটে ১০০ ওয়াট দিলে আউটপুটে ৯০ ওয়াট পাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে,
সর্বমোট আউটপুট পাওয়ার 72 Watts
তাহলে ইনপুট পাওয়ার হবে
অর্থাৎ 80 Watts ইনপুট দিলে আউটপুটে 72 Watts পাওয়া যা্বে
৪র্থ ধাপ: প্রাইমারী কয়েলের কারেন্ট নির্ণয়
যেহেতু প্রাইমারিতে 80 Watts ইনপুট দেয়া হবে, সেহেতু 220V এ প্রাইমারিতে ইনপুট কারেন্ট হবে 80/220 = 0.36A ।এক্ষেত্রে প্রাইমারি সাইডে কয়েলের জন্য এমনভাবে তার নির্বাচন করতে হবে, যেনো তা নিরাপদে এই পরিমান কারেন্ট প্রবাহিত করতে পারে।
সতর্কতা:
তার নির্বাচনের সময় লক্ষ রাখতে হবে যেনো, তারের এনামেল কোটিং এ কোনো প্রকার, কাটা-ছেড়া, ঘষা-মাজা না থাকে। কয়েলের কোনো একটি প্যাচের যদি সামান্য অংশেরও ইনস্যুলেশন নষ্ট হয়ে যায়, তো সেটা পুরো ট্রান্সফর্মারকেই অকেজো করে দিতে পারে।
৫ম ধাপ: N নির্ণয়
আমাদের ক্ষেত্রে ইনপুট EMF এর ফ্রিকুয়েন্সি F = 50 Hz
H বা flux density এর মান সাধারণভাবে প্রতি Squire Inch এ 60,000 লাইন ধরা হয়।
এছাড়া পূর্বের হিসাব অনুযায়ী A = 1.8 sq in
তাহলে,
৬ষ্ট ধাপ: কয়েলের জন্য তারের পাকসংখ্যা হিসাব
প্রাইমারী কয়েলের জন্য 220 X 4.2 = 924 পাক
সেকেন্ডারী কয়েলের জন্য
350 x 4.2 = 1470 পাক
6.3 x 4.2 = 26.5 পাক
5 x 4.2 = 21 পাক
৭ম ধাপ: তারের গেজ নির্ণয়
নিরাপত্তার কারণে এধরনের ট্রান্সফর্মারের জন্য প্রতি বর্গইঞ্চিতে প্রবাহিত কারেন্টের মাত্রা ২০০০ এম্পিয়ার ধরা হয়। অর্থাৎ SWG Table এর নির্দিষ্ট কলামের (১৪ নাম্বার কলাম) ভ্যালুকে ২ গুণ করে, অথবা কারেন্ট রেটিংকে (যা সূত্রানুসারে পাওয়া গেছে) অর্ধেক করে চার্ট থেকে তারের গেজ নির্ণয় করতে হবে।
প্রাইমারী কয়েল
এ ক্ষেত্রে 0.36A (৪র্থ ধাপ অনুযায়ী), সুতরাং সূত্র মতে 0.18A (Half current rating) কে SWG Table এর ১৪ নং কলামে খুজে দেখলে সেটি অথবা এর কাছাকাছি তারের যে গেজ নাম্বারটি পাওয়া যায়, সেটিই ব্যাবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে হবে ২৭ নং তার যা 0.18A কারেন্ট ভালোভাবেই পরিবহনে সক্ষম।
(টেবিল খেয়াল করলে দেখা যাবে এ তারটি সর্বচ্চো 0.21A কারেন্ট পরিবহন করতে পারে।)
সুতরাং প্রাইমারি কয়েলটি enamel এবং single silk কভারিং যুক্ত 27 SWG তার দিয়ে তৈরি করতে হবে।
সেকেন্ডারী কয়েল
HT 350V কয়েলে 120 mA কারেন্ট প্রবাহিত হয়। এর অর্ধেক করলে দাড়ায় 60 mA বা 0.06A। টেবিল থেকে এই কারেন্টের জন্য উপযোগী তার খুজলে দেখা যায় 34 SWG তার এই পরিমাণ কারেন্ট নিরাপদে প্রবাহিত করতে পারে। Heater windings: এই কয়েল দিয়ে ২ থেকে ৩ এম্পিয়ার কারেন্ট প্রবাহিত হয়, যার অর্ধেক ১ থেকে ১.৫ এম্পিয়ার। টেবিল থেকে দেখা যায় 18 SWG তার এর জন্য উপযুক্ত।
পরিশেষে বলা যায়
Primary winding: 27 SWG 924 turns
Secondary windings:
HT = 34 SWG 1050 turns
Heaters
18 SWG 26.5 turns
18 SWG 21 turns
power transformer এর ক্ষেত্রে frequency বেশি হলে কোর লস বেশি হয় কেন।
উত্তরমুছুন