আজকে প্রকাশিত চাকরির পরীক্ষার নোটিশ গুলো পাবেন

সেমিকন্ডাকটর ডায়োড/ক্রিস্টাল ডায়োড

সেমিকন্ডাকটর ডায়োড/ক্রিস্টাল ডায়োড


‎‎ সূচনাঃ

ইলেকট্রনিক টেকনোলজিতে ডায়োড একটি পরিচিত নাম। ইহা বহুল ব্যবহৃত একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস। প্রায় ইলেকট্রনিক বর্তনীতে ডায়োডের ব্যবহার রয়েছে। আধুনিক ইলেকট্রনিক প্রযুক্তিতে ডায়োড একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। সুতরাং ডায়োড সম্পর্কে জানা ইলেকট্রনিক্সের শিক্ষার্থীদের জন্য অপরিহার্য।

পরিচয়ঃ 

ডায়োড হলো দুই টার্মিনাল বিশিষ্ট একটি বিশেষ ধরণের ইলেকট্রনিক সেমিকন্ডাকটর ডিভাইস যাতে একক ক্রিস্টালে নির্মিত একটি পিএন জাংশন থাকে এবং যা একমুখী কারেন্ট প্রবাহ সৃষ্টি করতে পারে। এক কথায় একটি পিএন জাংশনকেই সেমিকন্ডাকটর ডায়োড বা ক্রিস্টাল ডায়োড বলা হয়।

প্রতীকঃ 

সেমিকন্ডাকটর ডায়োড/ক্রিস্টাল ডায়োড

চিত্রে ডায়োডের স্ক্যামিটিক ডায়াগ্রাম দেখানো হলো। স্ক্যামিটিক চিত্রে একটি তীর চিহ্ন রয়েছে এর সামনের দিকে একটি উলম্ব বার বা দন্ড রয়েছে এবং দুই পার্শ্বে দুটি সরল রেখা রয়েছে। তীর চিহ্নটি ফরওয়ার্ড বায়াসে চিরাচরিত কারেন্ট প্রবাহের দিক নির্দেশ করে, অর্থাৎ এটি হচ্ছে সেই দিক যে দিকে ফরওয়ার্ড বায়াস অবস্থায় হোল প্রবাহ ঘটে। দুই পার্শ্বের রেখা দুটি দুই টার্মিনাল নির্দেশ করে, যার একটি এ্যানোড এবং একটি ক্যাথোড। পি-টাইপ ম্যাটেরিয়ালের সাথে যুক্ত টার্মিনালটি এ্যানোড এবং এন-টাইপ ম্যাটেরিয়ালের সাথে যুক্ত টার্মিনালটিকে ক্যাথোড বলা হয় যা চিত্রে নির্দেশ করা হয়েছে। যদি তীর চিহ্নিত টার্মিনালটি বার চিহ্নিত টার্মিনাল অপেক্ষা বেশী পজেটিভ হয় তাহলে বলা হয় ডায়োডটি ফরওয়ার্ড বায়াস প্রাপ্ত হয়েছে ।

ডায়োডের প্রকারভেদ অনুযায়ী এর প্রতীকের পার্থক্য হয়। নিচের ছকে ডায়োডের প্রকারভেদ অনুযায়ী এর প্রতীক দেখানো হলোঃ



প্রকারভেদঃ

গঠন ও কার্যপ্রণালীর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরণের ডায়োড ইলেকট্রনিক বর্তনীতে ব্যবহার হতে দেখা যায় তারা মোটামুটি নিম্নরূপঃ
                                                     সেমিকন্ডাকটর ডায়োড/ক্রিস্টাল ডায়োড
সাধারণ/রেকটিফায়ার ডায়োড

স্কটকি ডায়োড

টানেল ডায়োড

ভ্যারাকটর ডায়োড

আলোক বিকিরণকারী ডায়োড LED

ফটো ডায়োড

সোলার সেল

লেজার ডায়োড

ভৌত গঠনঃ

প্রত্যেক প্রকার ডায়োডেই পিএন জাংশন থাকে। পিএন জাংশন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। উক্ত পিএন জাংশনটি একটি শক্ত প্লাস্টিক নির্মিত কেসের মধ্যে আবদ্ধ করা হয়। পিএন জাংশনের পি-টাইপ ম্যাটেরিয়াল হতে একটি এবং এন-টাইপ ম্যটেরিয়াল হতে একটি মোট দুটি ধাতব টার্মিনাল বের করা হয়, যাদেরকে যথাক্রমে এ্যানোড ও ক্যাথোড বলা হয়। কালো প্লাস্টিক নির্মিত মোড়কের এক প্রান্তে রূপালী বর্ণের একটি ব্যান্ড আঁকা থাকে যা এন-টাইপ প্রান্তের দিক নির্দেশ করে অর্থাত এই প্রান্তের সাথে সংযুক্ত টার্মিনালটি ক্যাথোড এবং অপর টার্মিনালটি এ্যানোড, যা চিত্রে দেখানো হয়েছে। সকল প্রকার ডায়োডের বাহ্যিক রূপ ও আকার এক রকম নয়। প্রকার ভেদে ডায়োডের বাহ্যিক আকার ও রূপ ভিন্ন ভিন্ন হয়। নিম্নে বিভিন্ন ডায়োডের বাহ্যিক রূপ দেখানো হলোঃ

                                                   সেমিকন্ডাকটর ডায়োড/ক্রিস্টাল ডায়োড

রেজিস্ট্যান্সঃ

সেমিকন্ডাকটর ডায়োড ফরওয়ার্ড বায়াস অবস্থায় খুব সহজে কারেন্ট প্রবাহ করে এবং রিভার্স বায়াস অবস্থায় কারেন্ট প্রবাহ করে না। সুতরাং বুঝা যায় ডায়োডের ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্স খুব কম এবং রিভার্স রেজিস্ট্যান্স তুলনামূলক অনেক বেশী থাকে।

ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্সঃ

ফরওয়ার্ড বায়াস অবস্থায় ডায়োড যে রেজিস্ট্যান্স প্রদর্শন করে তাকে ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্স বলে। এই রেজিস্ট্যান্স দুই ধরণের হয়, (১) ডিসি ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্স (২) এসি ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্স।

(১) ডিসি ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্সঃ ফরওয়ার্ড বায়াস অবস্থায় একটি ডায়োড তার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ডিসি কারেন্টকে যে বাধা প্রদান করে তাকে ডিসি ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্স বলা হয়। একটি ডায়োডের আড়াআড়িতে প্রযুক্ত ফরওয়ার্ড ডিসি ভোল্টেজ এবং প্রযুক্ত ভোল্টেজের জন্য ডায়োডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ফরওয়ার্ড কারেন্টর অনুপাতের মাধ্যমে ডিসি ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্স নির্নয় করা হয়। পাশের চিত্রটিতে আমরা ডায়োডের ফরওয়ার্ড বৈশিষ্ট্য রেখা থেকে দেখতে পাচ্ছি যে OA ফরওয়ার্ড ভোল্টেজের জন্য প্রবাহিত ফরওয়ার্ড কারেন্ট OB, অতএব ডায়োডের ডিসি ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্স Rf হলে, Rf = OA/OB হবে, যেখানে P ফরওয়ার্ড বৈশিষ্ট্য রেখার উপর যে কোন মুহুর্তের অপারেটিং পয়েন্ট।

(২) এসি ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্সঃ ফরওয়ার্ড বায়াস অবস্থায় একটি ডায়োড তার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পরিবর্তনশীল কারেন্টকে যে বাধা প্রদান করে তাকে এসি ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্স বলা হয়। একটি ডায়োডের আড়াআড়িতে প্রযুক্ত পরিবর্তনশীল ফরওয়ার্ড ভোল্টেজ এবং প্রযুক্ত ভোল্টেজ সাপেক্ষে ডায়োডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পরিবর্তনশীল ফরওয়ার্ড কারেন্টর অনুপাতের মাধ্যমে ডিসি ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্স নির্নয় করা হয়। অতএব এসি ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্স = (ডায়োডে প্রযুক্ত ফরওয়ার্ড ভোল্টেজের পরিবর্তন)/(ডায়োডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ফরওয়ার্ড কারেন্টের পরিবর্তন)। এসি ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্সের হিসাব নিকাশ, ডায়োডের সাথে পরিবর্তনশীল ভোল্টেজের অপারেশনে ব্যবহৃত হয়।

পাশের চিত্রটিতে আমরা ডায়োডের ফরওয়ার্ড বৈশিষ্ট্য রেখা থেকে দেখতে পাচ্ছি যে P হলো ফরওয়ার্ড বৈশিষ্ট্য রেখার উপর যে কোন মুহুর্তের একটি অপারেটিং পয়েন্ট। যেখানে ob ফরওয়ার্ড ভোল্টেজের জন্য প্রবাহিত ফরওয়ার্ড কারেন্ট oe। এসি ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্স নির্নয়ের জন্য অপারেটিং পয়েন্ট P এর উভয় পার্শ্বে সমপরিমান ফরওয়ার্ড ভোল্টেজ পরিবর্তন করে আমরা পাই, ab=bc । চিত্র হতে পাই oa ফরওয়ার্ড ভোল্টেজের জন্য ফরওয়ার্ড কারেন্ট od এবং oc ফরওয়ার্ড ভোল্টেজের জন্য ফরওয়ার্ড কারেন্ট of ।

অতএব ডায়োডের এসি ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্স=(ফরওয়ার্ড ভোল্টেজের পরিবর্তন)/(ফরওয়ার্ড কারেন্টের পরিবর্তন)=(oc-oa)/(of-od)=ac/df

নোটঃ ক্রিস্টাল/সেমিকন্ডাকটর ডায়োডের ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্স খুব কম হয় সাধারতঃ তা ১ থেকে ২৫ ওহমের মধ্যে হয়ে থাকে।

রিভার্স রেজিস্ট্যান্সঃ

রিভার্স বায়াস অবস্থায় একটি ডায়োডে যে রেজিস্ট্যান্স পাওয়া যায় তাকে রিভার্স রেজিস্ট্যান্স বলে। রিভার্স রেজিস্ট্যান্স, প্রযুক্ত রিভার্স ভোল্টেজের ধরণ অনুযায়ী দুই ধরনের হতে পারে (১) ডিসি রিভার্স রেজিস্ট্যান্স এবং (২) এসি রিভার্স রেজিস্ট্যান্স। আদর্শ ডায়োডের ক্ষেত্রে রিভার্স রেজিস্ট্যান্স অসীম হয় কিন্তু বাস্তবে খুব সামান্য পরিমান লিকেজ কারেন্টের জন্য ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্সে তুলনায় অনেক বেশী পরিমান রিভার্স রেজিস্ট্যান্স পাওয়া যায়। জার্মেনিয়াম ডায়োডের ক্ষেত্রে রিভার্স-টু-ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্সের অনুপাত=৪০০০০:১ এবং সিলিকনের ক্ষেত্রে তা ১০০০০০০:১।

ভোল্টেজ-কারেন্ট বৈশিষ্ট্য রেখাঃ

                                          সেমিকন্ডাকটর ডায়োড/ক্রিস্টাল ডায়োড

একটি ডায়োডের ফরওয়ার্ড এবং রিভার্স বায়াস প্রদান করে প্রযুক্ত ভোল্টেজের প্ররিবর্তন সাপেক্ষে প্রবাহিত কারেন্টের পরিমান ছক কাগজে স্থাপন করে চিত্রের মত বক্র রেখা অংকণ করা যায় যা একটি ডায়োডের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত ভোল্টেজ ও ডায়োডে প্রবাহিত কারেন্টের মধ্যে সম্পর্ক প্রকাশ করে একেই ডায়োডের বৈশিষ্ট্য রেখা বা V-I Characteristic Curve বলে।

শূণ্য বায়সের ক্ষেত্রেঃ যখন ডায়োডে প্রযুক্ত ভোল্টেজের মান শূণ্য তখন প্রবাহিত কারেন্ট শূণ্য অর্থাত ডায়োডে কোন কারেন্ট প্রবাহিত হয় না যা চিত্রের 0 বিন্দুতে দেখানো হয়েছে।

ফরওয়ার্ড বৈশিষ্ট্য রেখাঃ প্রযুক্ত ভোল্টেজের মান ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করলে প্রায় ০.২ ভোল্টে পর্যন্ত কোন কারেন্ট প্রবাহ লক্ষ্য করা যায় না। প্রযুক্ত ভোল্টেজ ০.৩ ভোল্টে পৌছালে খুব সামান্য ফরওয়ার্ড কারেন্ট প্রবাহ হয়। কারেন্টের মান বৃদ্ধি পায়। প্রযুক্ত ভোল্টেজের মান আরো বৃদ্ধি করলে কারেন্ট খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এবং খুব সামান্য ভোল্টেজ বৃদ্ধির জন্য উচ্চ মাত্রায় কারেন্ট বৃদ্ধি পায়। প্রায় ০.৬ ভোল্ট প্রযুক্ত ভোল্টেজের জন্য প্রায় ৭০ মিলি এম্পিয়ার কারেন্ট প্রবাহিত হয়।

ব্যাখ্যাঃ প্রায় ০.২ ভোল্ট পর্যন্ত কারেন্ট খুব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং প্রাপ্ত রেখাটি বক্র হয়। এর কারণ পটেনশিয়াল বেরিয়ার। প্রযুক্ত ভোল্টেজ পটেনশিয়াল বেরিয়ার অতিক্রম করা পর্যন্ত কারেন্ট প্রবাহ বৃদ্ধি পায় না। জার্মেনিয়ামের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত ভোল্টেজ ০.৩ ভোল্টে পৌছালে সম্পূর্ণ রূপে পটেনশিয়াল বেরিয়ার বিলুপ্ত হয় এবং ডায়োডের রেজিস্ট্যান্স প্রায় শূণ্য হয় এবং এ সময় ভোল্টেজ খুব সামান্য বৃদ্ধির ফলে খুব উচ্চ মাত্রায় কারেন্ট বৃদ্ধি পায় এর ফলে পরবর্তী প্রাপ্ত রেখাংশটি সরল রৈখিক হয়।

রিভার্স বৈশিষ্ট্য রেখাঃ প্রযুক্ত রিভার্স ভোল্টেজের মান ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করলে সামান্য রিভার্স কারেন্ট প্রবাহিত হয় কিন্তু রিভার্স কারেন্টের মান বৃদ্ধি পায়না প্রায় স্থির থাকে। রিভার্স ভোল্টেজের মান আরো বৃদ্ধি করতে থাকলে একটি নির্দিষ্ট রিভার্স ভোল্টেজে প্রায় –২০ ভোল্টে পৌছালে হঠাৎ উচ্চ মাত্রায় রিভার্স কারেন্ট বৃদ্ধি পায় এবং ডায়োডটি উত্তপ্ত হয়।

ব্যাখ্যাঃ জাংশনে রিভার্স ভোল্টেজ প্রয়োগ করলে পটেনশিয়াল বেরিয়ার বৃদ্ধি পায় এবং কোন ফরওয়ার্ড কারেন্ট প্রবাহিত হয় না। কিন্তু প্রযুক্ত রিভার্স ভোল্টেজের মান ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করলে ডায়োডের মধ্য দিয়ে সামান্য পরিমান (মাইক্রো এমপিয়ার রেঞ্জে) রিভার্স কারেন্ট প্রবাহিত হয় যা বৈশিষ্ট্য রেখায় দেখানো হয়েছে, ইহা রিভার্স সেচুরেশন কারেন্ট নামে পরিচিত। প্রযুক্ত রিভার্স ভোল্টেজ আরো বৃদ্ধি করলে মাইনরিটি ইলেকট্রনসমূহের গতিশক্তি বৃদ্ধি পেয়ে পাশাপাশি পরমাণুর ইলেকট্রনসমূহের মধ্যে সংঘর্ষে উত্তাপ সৃষ্টি হয় এবং এই অবস্থায় ডায়োডের ব্রেকডাউন ঘটে ফলে বেরিয়ার অঞ্চলের কো-ভ্যালেন্ট বন্ড ভেঙ্গে ইলেকট্রন-হোল জোড়া সৃষ্টি হয়। এসময় জাংশন অতিক্রম করে খুব বেশী পরিমান রিভার্স কারেন্ট প্রবাহিত হয় যা চিত্রে দেখানো হয়েছে। জাংশনের ব্রেকডাউন ঘটলে পিএন জাংশনটি স্থায়ী ভাবে নষ্ট হয়ে যায়।

নোটঃ ডায়োডের মধ্য দিয়ে ফরওয়ার্ড কারেন্ট প্রবাহিত হয় মেজরিটি চার্জ কেরিয়ারের জন্য এবং রিভার্স কারেন্ট প্রবাহিত হয় মাইনরিটি চার্জ কেরিয়ারের জন্য।

ডায়োডের সমতূল্য বর্তনীঃ

কোন একটি বর্তনীতে সংযুক্ত একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইসকে তার বিভিন্ন তড়িৎ বৈশিষ্ট্যসমূহকে প্রতিস্থাপন করার জন্য তড়িৎ বর্তনীর বিভিন্ন উপাদানসমূহকে সমন্বয় করে যে বর্তনী কল্পনা করা হয় বা আঁকা হয় তাকে ঐ ডিভাইসের সমতূল্য বর্তনী বলা হয়। সমতূল্য বর্তনী অনেক সময় বৈদ্যূতিক হিসাব নিকাশকে সহজ করে তোলে। এ অংশে আমরা একটি ডায়োডের সমতূল্য বর্তনী নির্ণয়ের প্রয়াস পাব।

কাছাকাছি সমতূল্য বর্তনীঃ যখন একটি ডায়োডের আড়াআড়িতে ফরওয়ার্ড ভোল্টেজ,VF প্রয়োগ করা হয় তখন প্রযুক্ত ফরওয়ার্ড ভোল্টেজ, পটেনশিয়াল বেরিয়ার V0 অতিক্রম না করা পর্যন্ত ডায়োড কন্ডাকশনে যাবে না। যখন ফরওয়ার্ড ভোল্টেজ পটেনশিয়াল বেরিয়ার V0 অতিক্রম করবে তৎক্ষণাৎ ডায়োড কারেন্ট কন্ডাকশন শুরু করবে। ডায়োডের মধ্য দিয়ে ফরওয়ার্ড কারেন্ট If প্রবাহিত হবে যদি ফরওয়ার্ড ভোল্টেজ (১) পটেনশিয়াল বেরিয়ার V0 এবং (২) অভ্যন্তরীণ রেজিস্ট্যান্স Rf এর আড়াআড়িতে ফরওয়ার্ড ভোল্টেজ ড্রপ IfRf কে অতিক্রম করতে পারে।

অতএব, VF = V0 + IfRf

সিলিকন ডায়োডের জন্য V0= ০.৭ ভোল্ট এবং জার্মেনিয়াম ডায়োডের জন্য V0= ০.৩ ভোল্ট।

একটি ডায়োডের আপাত সমতূল্য বর্তনী নিম্নে দেখানো হলো। উক্ত বর্তনীতে একটি সুইচ S, একটি ব্যাটারী V0 এবং ডায়োডের ইন্টারনাল রেজিস্ট্যান্স rf সিরিজে সংযুক্ত আছে।

                                     সেমিকন্ডাকটর ডায়োড/ক্রিস্টাল ডায়োড

সরলীকৃতঃ সমতূল্য বর্তনীঃ অধিকাংশ ক্ষেত্রে সার্কিট বিশ্লেষণে ডায়োডের অভ্যন্তরীণ রেজিস্ট্যান্সকে (Rf) হিসাব থেকে বাদ দেয়া হয়। সেসব ক্ষেত্রে সরলীকৃতঃ সমতূল্য বর্তনীটি নিচের চিত্রের মত হবে। এই সমতূল্য বর্তনীটি অধিকাংশ সময় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সার্কিটে ব্যবহার হয়।

সেমিকন্ডাকটর ডায়োড/ক্রিস্টাল ডায়োড

আদর্শ ডায়োড মডেলঃ

যে ডায়োড ফরওয়ার্ড বায়াস অবস্থায় আদর্শ কন্ডাকটরের ন্যয় ক্রিয়া করে এবং রিভার্স বায়াস অবস্থায় আদর্শ ইনসুলেটরের ন্যয় ক্রিয়া করে তাকে আদর্শ ডায়োড বলা হয়। তত্বীয়ভাবে ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্স Rf = 0 এবং পটেনশিয়াল বেরিয়ার অতি নগণ্য এবং রিভার্স রেজিস্ট্যান্স, Rr = অসীম ধরা হয়। যদিও বাস্তবে এমন ডায়োড পাওয়া যাবে না কিন্তু ডায়োড সার্কিট বিশ্লেষণের কাজের সুবিধার জন্য এমন ডায়োড কল্পনা করা হয়।

বিভিন্ন ডায়োড মডেলঃ

                                     সেমিকন্ডাকটর ডায়োড/ক্রিস্টাল ডায়োড

আদর্শ ডায়োডঃ যে ডায়োডের ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্স শূণ্য এবং রিভার্স রেজিস্ট্যান্স অসীম হয় তাকে আদর্শ ডায়োড বলা হয়। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে বাস্তবে এরূপ বৈশিষ্ট্যের কোন ডায়োড পাওয়া সম্ভব নয়।

প্রকৃত ডায়োডঃ

প্রকৃত ডায়োডের ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্স শূণ্য হয় না এবং রিভার্স রেজিস্ট্যান্স অসীম হয় না। ফরওয়ার্ড বায়াস অবস্থায় প্রকৃত ডায়োড ফরওয়ার্ড সাপ্লাই ভোল্টেজকে এর বেরিয়ার ভোল্টেজের মাধ্যমে বাধা প্রদান করে ফলে কিছু ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্স প্রদর্শিত হয় এবং রিভার্স বায়াস অবস্থায় মাইনরিটি কেরিয়ারের জন্য সর্বদা কিছু রিভার্স কারেন্ট প্রবাহিত হয় যার ফলে রিভার্স রেজিস্ট্যান্স অসীম হয় না।

ডায়োডের প্যারামিটারসমূহঃ

(ক) বাল্ক রেজিস্ট্যান্সঃ ডায়োডের পি-টাইপ সেমিকন্ডাকটর ম্যাটেরিয়ালের রেজিস্ট্যান্স এবং এন টাইপ সেমিকন্ডাকটর ম্যাটেরিয়ালের রেজিস্ট্যান্সের সমষ্টিকে (Bulk Resistance) বাল্ক রেজিস্ট্যান্স (rb) বলা হয়, যেখানে rb=rp+rnএখানে rb=বাল্ক রেজিস্ট্যান্স, rp=পি-টাইপ রেজিওনের রেজিস্ট্যান্স, rn=এন-টাইপ রেজিওনের রেজিস্ট্যান্স।। ব্যবহারিকভাবে এর পরিমান খুব কম এবং একে rb=(Vf – Vk )/If এই সমীকরণ দ্বারা প্রকাশ করা যায়, যেখানে Vf =প্রযুক্ত ফরওয়ার্ড ভোল্টেজ, Vk= নী-ভোল্টেজ, If=ফরওয়ার্ড কারেন্ট। বাল্ক রেজিস্ট্যান্স ডায়োড কর্তৃক প্রদত্ত বাধা যা ডায়োডের নী-ভোল্টেজ অপেক্ষা উচ্চতর ফরওয়ার্ড ভোল্টেজে হিসাব করা হয়। এক কথায় বলতে গেলে একটি ডায়োডের পটেনশিয়াল বেরিয়ারের বাধাকে বাদ দিলে শুধু (পি-টাইপ এবং এন-টাইপ) ম্যাটেরিয়ালের রেজিস্ট্যান্স কর্তৃক যে বাধা অবশিষ্ট থাকে তাই বাল্ক রেজিস্ট্যান্স। 

(খ) ডায়নামিক রেজিস্ট্যান্সঃ এসি অপারেটিভ বায়সের ক্ষেত্রে ডায়োডে প্রযুক্ত এসি ভোল্টেজের সাপেক্ষে ঐ সময়ে প্রবাহিত পরিবর্তনশীল এসি কারেন্টের অনুপাতকে ডায়নামিক রেজিস্ট্যান্স বা ইনক্রিমেন্টাল রেজিস্ট্যান্স বলে। কোন ডায়োডে এসি ভোল্টেজ প্রয়োগ করলে সামান্য সময়ে প্রবাহিত কারেন্ট dI এবং ভোল্টেজ dV হলে Rac=dV/dI হইবে। 

(গ) ডায়োড কারেন্ট সমীকরণঃ ইহা একটি বিশ্লেষণী সমীকরণ যার মাধ্যমে ডায়োডের ফরওয়ার্ড ও রিভার্স বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা যায়। একে বোল্টজ্‌ম্যান ডায়োড সমীকরণ বলা হয়। সমীকরণটি নিম্নরূপঃ 

I=I0(e40v-1) = I0e40v যদি V>1 ভোল্ট, জার্মেনিয়ামের জন্য। 

I=I0(e20v-1) = I0e20v যদি V>1 ভোল্ট, সিলিকনের জন্য। 

এখানে I0= রিভার্স সেচুরেশন কারেন্ট; এখানে V= ডায়োডের আড়াআড়িতে ভোল্টেজ 

ডায়োডের রেটিংসমূহঃ

একটি নির্দিষ্ট সার্কিট অপারেশনের জন্য অথবা একটি নির্দিষ্ট প্রয়োগের জন্য একজন ডিজাইনারকে অবশ্যই ডায়োডের স্পেসিফিকেশনসমূহ সম্পর্কে জানতে হবে যা বিভিন্ন ডায়োড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের ডাটাশীটে লিপিবদ্ধ করে থাকে। এই সকল ডাটাশীটসমূহে ডিভাইসের প্রকৃত রেটিং, আদর্শ অপারেশনের শর্তসমূহ, সর্বনিম্ন ও সবোর্চ্চ রেটিং, যান্ত্রিক ও ভৌত ডাটাসেট, বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রেখা লিপিবদ্ধ থাকে। “Absolute maximum rating” নির্দেশ করে সর্বোচ্চ ভোল্টেজ ও কারেন্টের মান যা ঐ ডিভাইসে প্রয়োগ করা যায়, যার কারণে ডিভাইসটি ধ্বংস হবে না, এই মানের চেয়ে বেশী ভোল্টেজ প্রয়োগ করলে বা বেশী কারেন্ট প্রবাহ হলে ডিভাইসটি পুড়ে ধ্বংস হবে। আদর্শ রেটিংসমূহ ডিভাইসটি হতে সর্বোত্তম কার্যকারীতা পাওয়ার শর্তসমূহ নির্দেশ করে। নিম্নে ডায়োডের জন্য কয়েকটি গুরুত্ত্বপূর্ণ স্পেসিফিকেশন উল্লেখ করা হলোঃ 

(ক) পীক ইনভার্স ভোল্টেজঃ এটা হলো রিভার্স ভোল্টেজের সর্বোচ্চ মান যাতে একটি ডায়োড নিরাপদে থাকে, এর চেয়ে বেশী রিভার্স ভোল্টেজ প্রয়োগে ডায়োড পুড়ে ধ্বংস হবে। ইহা বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন – (১) পীক রিভার্স ভোল্টেজ (PRV) (২) রিভার্স ব্রেকডাউন ভোল্টেজ (VR অথবা VRB) (৩) ম্যক্সিমাম রিভার্স ভোল্টেজ (VRM অথবা VRmax) ইত্যাদি। 

(খ) গড় সন্মুখ কারেন্টঃ এটা ফরওয়ার্ড কারেন্টের সেই মান যাতে একটি ডায়োড নিরাপদে অনবরত প্রবাহ করতে পারে। এর মান তাপমাত্রার সাথে পরিবর্তনশীল। সাধারণতঃ এর মান ২৫o সেন্টিগ্রেডে পরিমাপ করা হয়। ইহাকে ‘রিপিটিটিভ ফরওয়ার্ড কারেন্ট’ এবং ‘সর্বোচ্চ স্টেডি স্টেট ফরওয়ার্ড কারেন্ট (IFM অথবা IFmax)’ বলা হয়ে থাকে। 

(গ) ফরওয়ার্ড সার্জ কারেন্টঃ অতি অল্প সময়ে হঠাৎ ফরওয়ার্ড কারেন্ট বৃদ্ধি পেলে তাকে সার্জ কারেন্ট বলে। এখানে অল্প সময় বলতে ১ সেকেন্ডর কম সময় বুঝায়। একটি ডায়োড সর্বোচ্চ যে পরিমান সার্জ কারেন্ট নিরাপদে প্রবাহ করতে পারে তা ঐ ডায়োডের সার্জ কারেন্ট IFS। 

(ঘ) ফরওয়ার্ড ভোল্টেজঃ একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ও নির্দিষ্ট সন্মুখ কারেন্টের জন্য ফরওয়ার্ড ভোল্টেজের মান। একে VF দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

(ঙ) সর্বোচ্চ ফরওয়ার্ড ভোল্টেজঃ ফরওয়ার্ড ভোল্টেজের সবোর্চ্চ মান যাতে একটি ডায়োড না পুড়ে নিরাপদে কারেন্ট প্রবাহ করতে পারে। একে VFM দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

(চ) রিভার্স কারেন্টঃ ইহা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সর্বোচ্চ রিভার্স ভোল্টেজে সর্বোচ্চ রিভার্স সেচুরেশন কারেন্ট। সাধারণ রিভার্স কারেন্টকে IR এবং সর্বোচ্চ রিভার্স কারেন্টকে IRM দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

(ছ) পাওয়ার অপচয়ঃ ২৫o সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার মুক্ত বায়ুতে একটি ডায়োডে যে পরিমান পাওয়ার অপচয় হয় তাই তার অপচয়কৃত পাওয়ার। সাধারণতঃ ডায়োড স্পেসিফিকেশনে ২৫o সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার মুক্ত বায়ুত সর্বোচ্চ যে পরিমান পাওয়ার অনবরত নিরাপদে খরচ হতে থাকে তার মানকে পাওয়ার অপচয় হিসাবে গণনা করা হয়।

(জ) রিভার্স রিকভারী টাইমঃ একটি ডায়োড অন অবস্থা হতে অফ অবস্থায় যেতে অথবা অফ অবস্থা হতে অন অবস্থায় আসতে সর্বোচ্চ যে সময় ব্যয় করে তাকে রিভার্স রিকভারী টাইম বলা হয়। একে trr দ্বারা প্রকাশ করা হয়। ব্যাবহারিকভাবে এই সময় ন্যানো সেকেন্ড (ns) রেঞ্জে হয়ে থাকে।

ডায়োড পরীক্ষা করাঃ

একটি ডায়োড সার্কিটে সংযুক্ত করার পূর্বে কয়েকটি বিষয় পরীক্ষা করে নেয়া প্রয়োজন, নতুবা ডায়োডটি ত্রুটিপূর্ণ হলে সার্কিট সঠিকভাবে কাজ করবে না। (১) ডায়োডের এ্যনোড এবং ক্যাথোড সঠিকভাবে নির্ণয় করা (২) ডায়োডের আদর্শ কন্ডিশন নির্ণয় (৩) ডায়োডের শর্ট কন্ডিশন নির্ণয় (৪) ওপেন কন্ডিশন নির্ণয় (৫) ছিদ্রযুক্ত (Leaky) কন্ডিশন নির্ণয় ইত্যাদি ডায়োডের গুরুত্ত্বপূর্ণ পরীক্ষার অন্তর্ভূক্ত। এই সকল পরীক্ষার মাধ্যমে অনেকগুলি ডায়োডের মধ্য হতে ত্রুটিমুক্ত ডায়োডকে বাছাই করে নেয়া যায় এবং ত্রুটিযুক্ত ডায়োডকে বাছাই করে আলাদা করা যায়, পাশাপাশি এ্যনোড এবং ক্যাথোড সঠিকভাবে নির্ণয় করে সঠিক পোলারিটিতে সার্কিটে সংযুক্ত করা যায়। তাই ইলেকট্রনিক্সের শিক্ষার্থীদের জন্য এটি বেশ গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়।

কি দ্বারা পরীক্ষা করব?

মুভিং কয়েল ইন্সট্রুমেন্ট বা এনালগ ওহম মিটার অথবা AVO মিটারের সাহায্যে ডায়োড পরীক্ষা করা যায়। তবে এর মাধ্যমে শুধুমাত্র এনোড, ক্যাথোড শনাক্ত করা এবং শর্ট ও ওপেন কন্ডিশন ইত্যাদি পরীক্ষা করা যায় কিন্তু ডায়োডের পটেনশিয়াল বেরিয়ার ভোল্টেজ নির্ণয় করা যায় না। পক্ষান্তরে আধুনিক ডিজিটাল মাল্টিমিটারের সাহায্যে উপরোক্ত সুবিধাগুলির পাশাপাশি ডায়োডের পটেনশিয়াল ভোল্টেজের মান নির্ণয় করা যায়। ডিজিটাল মাল্টিমিটারে ডায়োড পরিমাপের জন্য বিশেষ একটি রেঞ্জ আছে যাতে ডায়োডের চিহ্ন দেয়া থাকে, ডায়োড পরিমাপের সময় ডিজিটাল মাল্টিমিটারের সিলেকটর প্রোবটি উক্ত চিহ্নিত স্থানে স্থাপন করে পরিমাপ করতে হয়।

এনোড ও ক্যাথোড শনাক্তকরণঃ

কোন ডায়োডকে সার্কিটে সংযোগের পূর্বে তার এনোড এবং ক্যাথোড সঠিকভাবে নির্ণয় করতে হবে নতুবা ভুল পোলারিটিতে সার্কিটে সংযোগ করলে ডায়োডটি পুড়ে ধ্বংস হবার সম্ভবনা রয়েছে। এ কাজের জন্য আমরা ডিজিটাল এবং এনালগ AVO মিটার উভয়ের ব্যবহার শিখব।

ডিজিটাল মিটারের মাধ্যমেঃ সর্বপ্রথম একটি ডিজিটাল মাল্টিমিটারের সিলেকটর নবটি ডায়োড চিহ্নিত রেঞ্জে স্থাপন করতে হবে। মিটারের দুটি প্রোব ডায়োডের দুটি টার্মিনালে সংযোগ করলে যদি ডিসপ্লেতে .0L পাঠ দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে ডায়োডটি রিভার্স বায়াস প্রাপ্ত হয়েছে। এবারে ডায়োডের সংযোগটি উল্টে দিলে ডায়োডটি ফরওয়ার্ড বায়াস প্রাপ্ত হবে এবং মিটারের ডিসপ্লেতে 0.34 হতে 0.7 এর মধ্যেবর্তী যে কোন একটি পাঠ আসবে। এটি হচ্ছে ডায়োডের পটেনশিয়াল বেরিয়ারের মান। এই অবস্থায় লাল প্রোবের সাথে যুক্ত টার্মিনালটি ডায়োডের এনোড এবং অপরটি ক্যাথোড হিসেবে বিবেচিত হবে।
                                              সেমিকন্ডাকটর ডায়োড/ক্রিস্টাল ডায়োড


ডিজিটাল মাল্টিমিটারের লাল প্রোবটি মিটারের অভ্যন্তরীণ ব্যাটারীর পজেটিভ প্রান্তে এবং কালো প্রোব নেগেটিভ প্রান্তের সাথে যুক্ত তাই যখন ডায়োডের এনোড লাল প্রোবের সাথে এবং ক্যাথোড কালো প্রোবের সাথে যুক্ত হয় তখন ডায়োডটি ফরওয়ার্ড বায়াস প্রাপ্ত হয় এবং ডায়োডের মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহের ফলে মিটারে পাঠ পাওয়া যায়। সংযোগটি এর উল্টা হলে রিভার্স বায়াসের কারণে কোন কারেন্ট প্রবাহ হয় না ফলে মিটারে কোন পাঠ আসে না। এনালগ AVO মিটারের অভ্যন্তরীণ ব্যাটারী ডিজিটাল মিটারের তুলনায় উল্টা ভাবে যুক্ত থাকে তাই এনালগ মিটারের সাহায্যে ডায়োড পরিমাপের পদ্ধতিটি এর উল্টা হবে।

এনালগ AVO মিটারের মাধ্যমেঃ প্রথমে এনালগ AVO মিটারের সিলেকটর নবটি ওহমিক রেঞ্জের x100 স্থানে স্থাপন করতে হবে। মিটারের দুটি প্রোব ডায়োডের দুটি টার্মিনালে সংযোগ করলে যদি মিটারের কাটাটি বিক্ষেপ না দেয় তাহলে বুঝতে হবে ডায়োডটি রিভার্স বায়াস প্রাপ্ত হয়েছে। এবারে ডায়োডের সংযোগটি উল্টে দিলে ডায়োডটি ফরওয়ার্ড বায়াস প্রাপ্ত হবে ও মিটারের কাটাটি বিক্ষেপিত হয়ে মিটারের লো-রেজিস্ট্যান্স স্কেলে চলে আসবে এবং মিটারে পাঠে যে রেজিস্ট্যান্স মান পাওয়া যাবে তা হচ্ছে ডায়োডের ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্সের মান। এই অবস্থায় লাল প্রোবের সাথে যুক্ত টার্মিনালটি ডায়োডের ক্যাথোড এবং অপরটি এনোড হিসেবে বিবেচিত হবে।
                                    সেমিকন্ডাকটর ডায়োড/ক্রিস্টাল ডায়োড


উল্লেখ্য যে, এনালগ AVO মিটারের লাল প্রোবটি মিটারের অভ্যন্তরীণ ব্যাটারীর নেগেটিভ প্রান্তে এবং কালো প্রোবটি পজেটিভ প্রান্তের সাথে যুক্ত তাই যখন ডায়োডের এনোড লাল প্রোবের সাথে এবং ক্যাথোড কালো প্রোবের সাথে যুক্ত হয় তখন ডায়োডটি রিভার্স বায়াস প্রাপ্ত হয় এবং একারণে কোন কারেন্ট প্রবাহ হয় না ফলে মিটারের কাটা বিক্ষেপিত হয় না। এবার সংযোগটি এর উল্টা হলে ডায়োডের মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহের ফলে মিটারে পাঠ পাওয়া যায়।

আদর্শ কন্ডিশন নির্নয়ঃ

একটি ডায়োড ফরওয়ার্ড বায়াসে লো-রেজিস্ট্যান্স প্রদর্শন করবে এবং রিভার্স বায়াস অবস্থায় ওপেন সার্কিটের মত কাজ করবে বা উচ্চ রেজিস্ট্যান্স প্রদর্শন করবে। মিটারের মাধ্যমে পরীক্ষিত ডায়োডের বৈশিষ্ট্য এমন হলে উক্ত ডায়োডকে ত্রুটিমুক্ত ও আদর্শ বলা যায়।

শর্ট এবং ওপেন কন্ডিশন পরীক্ষাঃ

যদি ফরওয়ার্ড এবং রিভার্স উভয় সংযোগেই ডায়োডটি শূণ্য ওহম বা শূণ্যের কাছাকাছি রেজিস্ট্যান্স প্রদর্শণ করে তবে বুঝা যাবে ডায়োডটির জাংশন শর্ট হয়েছে। এক্ষেত্রে ডায়োটি ত্রুটিপূর্ণ বিধায় ব্যবহার করা যাবে না।

যদি ফরওয়ার্ড বায়াসে ডায়োডটি অসীম বা অনেক বেশী (সাধারণতঃ ১ কিলোওহমের বেশী) রেজিস্ট্যান্স প্রদর্শণ করে তবে বুঝা যাবে ডায়োডটি ওপেন হয়েছে। এক্ষেত্রে ডায়োটি ত্রুটিপূর্ণ বিধায় ব্যবহার করা যাবে না।

ছিদ্রযুক্ত (Leaky) ডায়োড নির্ণয়ঃ

যদি কোন ডায়োড ফরওয়ার্ড অবস্থায় স্বাভাবিক রেজিস্ট্যান্স প্রদর্শন করে অর্থাত শূণ্য ওহম বা শূণ্যের কাছাকাছি রেজিস্ট্যান্স প্রদর্শণ করে কিন্তু রিভার্স বায়াসে অসীম রেজিস্ট্যান্স প্রদর্শন করে না বরং মোটামুটি লো-রেজিস্ট্যান্স প্রদর্শণ করে তবে বুঝতে হবে ডায়োডটি Leaky এক্ষেত্রে ডায়োটি ত্রুটিপূর্ণ বিধায় ব্যবহার করা যাবে না।

প্রয়োগঃ

আধুনিক ইলেকট্রনিক সার্কিটসমূহে ডায়োডের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে, তবে নিম্নোক্ত ব্যবহারসমূহ খুবই প্রসিদ্ধঃ

রেকটিফায়ার ডায়োড হিসাবে এসি কারেন্টকে ডিসি কারেন্টে রূপান্তরের জন্য যা পাওয়ার ইলেকট্রনিক্স ও আধুনিক এসএমপিএস সিস্টেমে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়।

সিগনাল ডায়োড হিসেবে বিভিন্ন কম্যুনিকেশন সার্কিটে, যেমন স্মল সিগনাল (Small Signal) মুডুলেশন এবং ডিমডুলেশন সার্কিটে।

ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজেশন সার্কিটে জিনার ডায়োড ব্যবহার হয়।

রেডিও এবং টিভি রিসিভারে ভোল্টেজ কন্ট্রোল্ড টিউনিং সার্কিটে ভ্যারাকটর ডায়োড ব্যবহার হয়।

বিভিন্ন ধরণের লজিক সার্কিটে। 

☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "সেমিকন্ডাকটর ডায়োড/ক্রিস্টাল ডায়োড"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Iklan Atas Artikel

Iklan Tengah Artikel 1

Iklan Tengah Artikel 2

Iklan Bawah Artikel