পিএন জাংশন
শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০১৯
Comment
পিএন জাংশনের প্রাথমিক কথা
পিএন জাংশনঃ

একটি পি-টাইপ সেমিকন্ডাকটরকে বিশেষ উপায়ে একটি এন-টাইপ সেমিকন্ডাকটরের সাথে উপযুক্ত সংযোগ সৃষ্টি করলে সংযোগ তলটিকে পিএন জাংশন বলা হয়।
অন্য কথায় বলা যায়, একখন্ড সেমিকন্ডাকটর ক্রিস্টালের অর্ধপার্শ্বে পি-টাইপ ইম্পিউরিটি দ্বারা ডোপিং করলে এবং অন্যপার্শ্ব এন-টাইপ ইম্পিউরিটি দ্বারা ডোপিং করলে তাদের সংযোগতলকে পিএন জাংশন বলা হয়।
অধিকাংশ সেমিকন্ডাকটর ডিভাইসে এক বা একাধিক পিএন জাংশন থাকে। এই বিষয়টি খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ কারণ এই জাংশন প্রকৃতির মাধ্যমে সেমিকন্ডাকটর ডিভাইসের বিভিন্ন বৈদ্যূতিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত হয়। এ বিষয়টি বুঝতে পারলে সেমিকন্ডাকটর ডিভাইসের বৈশিষ্ট্য বুঝা যাবে।
পিএন জাংশনের গঠনঃ
এক খন্ড পি-টাইপ সেমিকন্ডাকটর এবং এক খন্ড এন-টাইপ সেমিকন্ডাকটরকে পরস্পরের ভৌত সংস্পর্শে এনে সংযোগ সৃষ্টি করলে পিএন জাংশনের প্রকৃত গুণাবলী পাওয়া সম্ভব নয়। এজন্য বিশেষ কৌশল অবলম্বনে পিএন জাংশন ফেব্রিকেট করা হয়। পিএন জাংশন সৃষ্টির একটি সাধারণ পদ্ধতি হলো (Alloying) সংকরায়ন। এই পদ্ধতিতে একটি ত্রি-ভ্যালেন্ট ইমপিউরিটি পদার্থের টুকরো একটি এক্সট্রিনসিক এন-টাইপ সেমিকন্ডাকটর স্ল্যাবের উপর স্থাপন করা হয়। এরপর সিস্টেমটি প্রায় ৫০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হয়। উত্তাপের ফলে এন-টাইপ মিশ্রণে অবস্থিত পিওর সেমিকন্ডাকটরের কিছু অংশ গলেনের মাধ্যমে এন-টাইপ ইমপিউরিটি হতে পৃথক হয়ে ত্রি-ভ্যালেন্ট ইমপিউরিটি পদার্থের সাথে মিশ্রিত হয় এবং পি-টাইপ মিশ্রণ সৃষ্টি হয় যা গর্তের আকৃতিতে এন-টাইপ মিশ্রণের মধ্যে যায়গা দখল করে। যা চিত্রে দেখানো হয়েছে। অতঃপর তাপমাত্রা হ্রাস করা হয়, ফলে মিশ্রণটি জমে কঠিন হতে থাকে। সঠিক কন্ডিশনের অনুকূলে ত্রি-ভ্যালেন্ট ইম্পিউরিটির পরমানুসমূহ খাটি সেমিকন্ডাকটরের সাথে সুস্থিত হয়ে পি-টাইপ অঞ্চল সৃষ্টি করে এবং দুই প্রকার সেমিকন্ডাকটরের বিভেদতলে একক ক্রিস্টলের গঠনে পিএন জাংশন সৃষ্টি হয়।
পিএন জাংশনের/সন্ধিস্থানের প্রকারভেদঃ
ক) তৈরী সন্ধিস্থান (Grown Junction)
খ) বিন্দু স্পর্শ সন্ধিস্থান (Point-Contact Junction)
গ) ব্যাপ্ত সন্ধিস্থান (Diffused Junction)
ঘ) পুনঃকেলাসিত সন্ধিস্থান (Recrystallized Junction)
ঙ) সারফেস বেরিয়ার সন্ধিস্থান (Surface Barrier Junction)
চ) খাদ মিশ্রিত সন্ধিস্থান (Alloy Junction)
ছ) সঞ্চালিত ক্ষেত্র সন্ধিস্থান (Drift Field Junction)
জ) উপসজ্জিত সন্ধিস্থান (Epitaxial Junction)
ডিপ্লেশন লেয়ারের গঠনঃ
পি-টাইপ সেমিকন্ডাকটরে মেজরিটি চার্জ কেরিয়ার হিসাবে অসংখ্য হোল এবং এন-টাইপ সেমিকন্ডাকটরে মেজরিটি চার্জ কেরিয়ার হিসাবে অসংখ্য ইলেকট্রন থাকে। পিএন জাংশন সৃষ্টির পর উভয় পার্শ্বের ফ্রি-ইলেকট্রন এবং হোলের মধ্যে ডিফিউশন ক্রিয়া ঘটে ফলে ইলেকট্রন এবং হোলের পরস্পরের আকর্ষণের কারণে এন-টাইপ অঞ্চল হতে কিছু ফ্রি-ইলেকট্রন জাংশন অতিক্রম করে পি-টাইপ অঞ্চলে গমন করে একই সাথে সমান সংখ্যক হোল পি-সাইড অঞ্চল হতে এন-টাইপ অঞ্চলে গমন করে। এই সময় জাংশনের সবচেয়ে নিকটবর্তী অঞ্চলে উভয় পার্শ্বের ইলেকট্রন এবং হোলের মধ্যে ইলেকট্রন-হোল জোড়ের সৃষ্টি হয়। ফলে জাংশনের নিকটবর্তী পি-টাইপ অঞ্চলে স্থির ঋণাত্বক এবং এন-টাইপ অঞ্চলে স্থির ধণাত্বক চার্জের সৃষ্টি হয়। এখন এই বাধা অতিক্রম করে আর কোন ডিফিউশন কার্য চলতে পারে না।
সজ্ঞাঃ পিএন জাংশনের নিকটবর্তী উভয় পার্শ্বে যে অঞ্চল জুড়ে মুক্ত ইলেকট্রন এবং হোল থাকে না কিন্তু স্থির একসেপটর এবং ডোনার সমৃদ্ধ একটি ইলেকট্রিক ফিল্ড সৃষ্টি করে সেই অঞ্চলকে ডিফিউশন রিজিওন বা ডিপ্লেশন রিজিওন বা ডিপ্লেশন লেয়ার বলা হয়।
পটেনশিয়াল বেরিয়ার, ড্রিফ্ট, ডিফিউশন কারেন্টের ভৌত সজ্ঞাঃ
পটেনশিয়াল বেরিয়ারঃ পিএন জাংশন সৃষ্টির পর জাংশন স্থলে ডিপ্লেশন লেয়ার সৃষ্টি হয় ফলে নতুন ডিফিউশন ক্রিয়া বাধা প্রাপ্ত হয় অর্থাত পি-টাইপ হতে হোল এন-টাইপে যেতে এবং এন-টাইপ হতে ফ্রি-ইলেকট্রন পি-টাইপে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। ডিপ্লেশন লেয়ার কর্তৃক এই বাধা প্রদান করাকে পটেনশিয়াল বেরিয়ার বা বেরিয়ার ভোল্টেজ বলা হয়। সিলিকনের ক্ষেত্রে এর মান ০.৭ ভোল্ট এবং জার্মেনিয়ামের ক্ষেত্রে এর মান ০.৩ ভোল্ট হয়ে থাকে।
ড্রিফ্টঃ যখন কোন সেমিকন্ডাকটরকে বৈদ্যূতিক ক্ষেত্রের মধ্যে স্থাপন করা হয় তখন ঐ সেমিকন্ডাকটরের ফ্রি ইলেকট্রন ও হোলগুলি বিক্ষপ্তভাবে ছুটাছুটি করে অর্থাত উত্তেজিত হয়। ইলেকট্রন এবং হোলসমূহের এই অবস্থাকে ড্রিফ্ট বলে।
ডিফিউশনঃ কোন সেমিকন্ডাকটরে বাহ্যিক ইলেকট্রিক ফিল্ড প্রয়োগ না করা হলে ঐ সেমিকন্ডাকটরের ইলেকট্রন এবং হোলগুলি একে অপরের সাথে মিলিত হয়ে পরস্পরকে নিস্ক্রিয় করে। নিস্ক্রিয় হওয়ার জন্য ইলেকট্রন এবং হোলের মিলিত হওয়াকে ডিফিউশন বলে।
ডিফিউশন কারেন্টঃ সেমিকন্ডাকটর পদার্থের ক্রিস্টাল তলে যদি কোথাও বেশী ইলেকট্রন অথবা হোলের কনসেনট্রেশন ঘটানো হয় তবে চার্জ কেরিয়ার উচ্চ কনসেনট্রেশন হতে নিম্ন কনসেনট্রেশনে বিক্ষিপ্তভাবে গমন করে একটি কারেন্ট প্রবাহ সৃষ্টি করে এই কারেন্টকে ডিফিউশন কারেন্ট বলে। ডিফিউশন কারেন্ট প্রবাহের জন্য কোন বাহ্যিক ভোল্টেজের প্রয়োজন হয় না।
ফরওয়ার্ড এবং রিভার্স বায়াসে পিএন জাংশনের আচরণঃ
বায়াসিং: ইলেকট্রনিক ডিভাইসকে সঠিকভাবে কার্যকরী করার জন্য বাহির হতে যে পূর্বনির্ধারিত বৈদ্যূতিক সরবরাহ (কারেন্ট অথবা ভোল্টেজ) দেয়া হয় তাকে বায়াসিং বলা হয়। পিএন জাংশনকে কার্যকরী করতে জাংশনে বাহ্যিকভাবে ইলেকট্রিক ফীল্ড/ভোল্টেজ প্রয়োগ করার প্রকৃয়াকে বায়াসিং বলা হয়। ইহা ২ ভাবে করা হয়। (১) ফরওয়ার্ড বায়াস বা সন্মুখ বায়াস (২) রিভার্স বায়াস বা পশ্চাৎমুখ বায়াস।
(১) ফরওয়ার্ড বায়াসঃ
যখন একটি পিএন জাংশনের আড়াআড়িতে এমন দিকে বাহ্যিক ভোল্টেজ সোর্স যুক্ত করা হয় যাতে পটেনশিয়াল বেরিয়ার বিলুপ্ত হয় এবং জাংশনের মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হয় তখন সোর্স যুক্ত করার উক্ত দিককে ফরওয়ার্ড বায়াস বলা হয়। সাধারণতঃ যখন একটি পিএন জাংশনের পি-টাইপ প্রান্তের সাথে ব্যাটারীর পজেটিভ টার্মিনাল এবং এন-টাইপ প্রান্তের সাথে ব্যটারীর নেগেটিভ টার্মিনাল যুক্ত করা হয় তখন জাংশনটিকে ফরওয়ার্ড বায়াস করা হয়েছে বলা হয়।
(২) রিভার্স বায়াসঃ
যখন একটি পিএন জাংশনের আড়াআড়িতে এমন দিকে বাহ্যিক ভোল্টেজ সোর্স যুক্ত করা হয় যাতে পটেনশিয়াল বেরিয়ার বৃদ্ধি পায় তখন সোর্স যুক্ত করার উক্ত দিককে রিভার্স বায়াস বলা হয়। সাধারণতঃ যখন একটি পিএন জাংশনের পি-টাইপ প্রান্তের সাথে ব্যাটারীর নেগেটিভ টার্মিনাল এবং এন-টাইপ প্রান্তের সাথে ব্যটারীর পজেটিভ টার্মিনাল যুক্ত করা হয় তখন জাংশনটিকে রিভার্স বায়াস করা হয়েছে বলা হয়।
ফরওয়ার্ড বায়াসে পিএন জাংশনের মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহের কৌশলঃ
একটি পিএন জাংশনকে ফরওয়ার্ড বায়াস করা হলে পি-টাইপ অঞ্চলের হোলগুলি ব্যাটারীর পজেটিভ টার্মিনাল দ্বারা বিকর্ষিত হয়ে জাংশনের দিকে ধাবিত হয় অপরদিকে এন-টাইপের ফ্রি-ইলেকট্রনগুলি ব্যাটারীর নেগেটিভ টার্মিনাল দ্বারা বিকর্ষিত হয়ে জাংশনের দিকে ধাবিত হয়। যেহেতু চার্জ কেরিয়ারগুলি বাহ্যিক সোর্স হতে শক্তি অর্জন করে তাই কিছু সংখ্যাক ফ্রি-ইলেকট্রন এবং হোল ডিপ্লেশন লেয়ার ভেদ করে জাংশনের দিকে ধাবিত হয়। এ অবস্থায় প্রযুক্ত ভোল্টেজ সোর্সের ফীল্ড পটেনশিয়াল বেরিয়ার ফিল্ডের বিপরীতে ক্রিয়া করে এবং পটেনশিয়াল বেরিয়ার কমতে কমতে এক সময় বিলুপ্ত হয়। প্রযুক্ত ভোল্টেজ সোর্সের মান পটেনশিয়াল বেরিয়ার হতে বেশী হলে পি-টাইপ অঞ্চল হতে হোল জাংশনের মধ্য দিয়ে এন-টাইপ অঞ্চল হয়ে ব্যাটারীর নেগেটিভ টার্মিনালে পৌছে। একই সাথে এন-টাইপ অঞ্চল হতে ফ্রি-ইলেকট্রন জাংশনের মধ্য দিয়ে পি-টাইপ অঞ্চল হয়ে ব্যাটারীর পজেটিভ টার্মিনালে পৌছে। এইভাবে ইলেকট্রন এবং হোলের পরস্পর বিপরীতমুখী প্রবাহ দ্বারা পিএন জাংশনের মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহ ঘটে।
অর্থাত একটি পিএন জাংশনকে ফরওয়ার্ড বায়াস করা হলে নিম্ন লিখিত ঘটনাগুলো ঘটেঃ
(১) পটেনশিয়াল বেরিয়ার কমে যায় এবং তা ০.৩ হতে ০.৭ ভোল্টের মধ্যে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়।
(২) জাংশনে খুব কম ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্স হয়।
(২) জাংশনে প্রবাহিত কারেন্ট ব্যাটারীর ভোল্টেজের উপর নির্ভরশীল।
রিভার্স বায়াসে পিএন জাংশনের মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহের কৌশলঃ
একটি পিএন জাংশনকে রিভার্স বায়াস করা হলে পি-টাইপ অঞ্চলের হোলগুলি ব্যাটারীর নেগেটিভ টার্মিনাল দ্বারা আকর্ষিত হয়ে জাংশনের বিপরীত দিকে ধাবিত হয়। অপরদিকে এন-টাইপ অঞ্চলের ফ্রি-ইলেকট্রনগুলি ব্যাটারীর পজেটিভ টার্মিনাল দ্বারা আকর্ষিত হয়ে জাংশনের বিপরীত দিকে ধাবিত হয়। ফলে ডিপ্লেশন লেয়ারের আকার বৃদ্ধি পায় এবং মেজরিটি কেরিয়ারের পক্ষে জাংশন অতিক্রম করা সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় প্রযুক্ত ভোল্টেজ সোর্সের ফীল্ড ও পটেনশিয়াল বেরিয়ার ফিল্ড একই দিকে ক্রিয়া করে এবং পটেনশিয়াল বেরিয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে থাকে ফলে জাংশনে উচ্চ রেজিস্ট্যান্সের সৃষ্টি হয় এবং কারেন্ট জাংশনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে না। তবে মাইনরিটি কেরিয়ারের জন্য খুব সামান্য পরিমান সাধারণতঃ মাইক্রো এম্পিয়ার বা ন্যানো এম্পিয়ার রেঞ্জের রিভার্স কারেন্ট প্রবাহিত হয়।
অর্থাত একটি পিএন জাংশনকে রিভার্স বায়াস করা হলে নিম্ন লিখিত ঘটনাগুলো ঘটেঃ
(১) পটেনশিয়াল বেরিয়ার বৃদ্ধি পায়।
(২) জাংশনে খুব বেশী রিভার্স রেজিস্ট্যান্স হয়।
(২) জাংশনের মধ্য দিয়ে ফরওয়ার্ড কারেন্ট প্রবাহিত হয় না।
(৩) সামান্য রিভার্স কারেন্ট প্রবাহিত হয়।
পিএন জাংশন ডায়োডের ফরওয়ার্ড ও রিভার্স বৈশিষ্ট্য রেখাঃ
বৈশিষ্ট্য রেখাঃ একটি পিএন জাংশনে ফরওয়ার্ড এবং রিভার্স বায়াস প্রদান করে প্রযুক্ত ভোল্টেজের প্ররিবর্তন সাপেক্ষে প্রবাহিত কারেন্টের পরিমান ছক কাগজে স্থাপন করে চিত্রের মত বক্র রেখা অংকণ করা যায় যা একটি পিএন জাংশনের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত ভোল্টেজ ও জাংশনে প্রবাহিত কারেন্টের মধ্যে সম্পর্ক প্রকাশ করে একেই পিএন জাংশনের বৈশিষ্ট্য রেখা বা V-I Characteristic Curve বলে।
শূণ্য বায়সের ক্ষেত্রেঃ যখন জাংশনে প্রযুক্ত ভোল্টেজের মান শূণ্য তখন প্রবাহিত কারেন্ট শূণ্য অর্থাত জাংশনে কোন কারেন্ট প্রবাহিত হয় না যা চিত্রের 0 বিন্দুতে দেখানো হয়েছে।
ফরওয়ার্ড বৈশিষ্ট্য রেখাঃ প্রযুক্ত ভোল্টেজের মান ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করলে প্রায় ০.২ ভোল্টে পর্যন্ত কোন কারেন্ট প্রবাহ লক্ষ্য করা যায় না। প্রযুক্ত ভোল্টেজ ০.৩ ভোল্টে পৌছালে খুব সামান্য ফরওয়ার্ড কারেন্ট প্রবাহ হয়। কারেন্টের মান বৃদ্ধি পায়। প্রযুক্ত ভোল্টেজের মান আরো বৃদ্ধি করলে কারেন্ট খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এবং খুব সামান্য ভোল্টেজ বৃদ্ধির জন্য উচ্চ মাত্রায় কারেন্ট বৃদ্ধি পায়। প্রায় ০.৬ ভোল্ট প্রযুক্ত ভোল্টেজের জন্য প্রায় ৭০ মিলি এম্পিয়ার কারেন্ট প্রবাহিত হয়।
ব্যাখ্যাঃ প্রায় ০.২ ভোল্ট পর্যন্ত কারেন্ট খুব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং প্রাপ্ত রেখাটি বক্র হয়। এর কারণ পটেনশিয়াল বেরিয়ার। প্রযুক্ত ভোল্টেজ পটেনশিয়াল বেরিয়ার অতিক্রম করা পর্যন্ত কারেন্ট প্রবাহ বৃদ্ধি পায় না। জার্মেনিয়ামের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত ভোল্টেজ ০.৩ ভোল্টে পৌছালে সম্পূর্ণ রূপে পটেনশিয়াল বেরিয়ার বিলুপ্ত হয় এবং জাংশন রেজিস্ট্যান্স প্রায় শূণ্য হয় এবং এসময় ভোল্টেজ খুব সামান্য বৃদ্ধির ফলে খুব উচ্চ মাত্রায় কারেন্ট বৃদ্ধি পায় এর ফলে পরবর্তী প্রাপ্ত রেখাংশটি সরল রৈখিক হয়।
রিভার্স বৈশিষ্ট্য রেখাঃ প্রযুক্ত রিভার্স ভোল্টেজের মান ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করলে সামান্য রিভার্স কারেন্ট প্রবাহিত হয় কিন্তু রিভার্স কারেন্টের মান বৃদ্ধি পায়না প্রায় স্থির থাকে। রিভার্স ভোল্টেজের মান আরো বৃদ্ধি করতে থাকলে একটি নির্দিষ্ট রিভার্স ভোল্টেজে প্রায় –২০ ভোল্টে পৌছালে হঠাৎ রিভার্স উচ্চ মাত্রায় কারেন্ট বৃদ্ধি পায় এবং জাংশনটি উত্তপ্ত হয়।
ব্যাখ্যাঃ জাংশনে রিভার্স ভোল্টেজ প্রয়োগ করলে পটেনশিয়াল বেরিয়ার বৃদ্ধি পায় এবং কোন ফরওয়ার্ড কারেন্ট প্রবাহিত হয় না। কিন্তু প্রযুক্ত রিভার্স ভোল্টেজের মান ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করলে জাংশনের মধ্য দিয়ে সামান্য পরিমান (মাইক্রো এমপিয়ার রেঞ্জে) রিভার্স কারেন্ট প্রবাহিত হয় যা বৈশিষ্ট্য রেখায় দেখানো হয়েছে, ইহা রিভার্স সেচুরেশন কারেন্ট নামে পরিচিত। প্রযুক্ত রিভার্স ভোল্টেজ আরো বৃদ্ধি করলে মাইনরিটি ইলেকট্রনসমূহের গতিশক্তি বৃদ্ধি পেয়ে পাশাপাশি পরমাণুর ইলেকট্রনসমূহের মধ্যে সংঘর্ষে উত্তাপ সৃষ্টি হয় এবং এই অবস্থায় জাংশনের ব্রেকডাউন ঘটে ফলে বেরিয়ার অঞ্চলের কো-ভ্যালেন্ট বন্ড ভেঙ্গে ইলেকট্রন-হোল জোড়া সৃষ্টি হয়। এসময় জাংশন অতিক্রম করে খুব বেশী পরিমান রিভার্স কারেন্ট প্রবাহিত হয় যা চিত্রে দেখানো হয়েছে। জাংশনের ব্রেকডাউন ঘটলে পিএন জাংশনটি স্থায়ী ভাবে নষ্ট হয়ে যায়।
নোটঃ পিএন জাংশনের মধ্য দিয়ে ফরওয়ার্ড কারেন্ট প্রবাহিত হয় মেজরিটি চার্জ কেরিয়ারের জন্য এবং রিভার্স কারেন্ট প্রবাহিত হয় মাইনরিটি চার্জ কেরিয়ারের জন্য।
সিলিকন এবং জার্মেনিয়াম ডায়োডের বৈশিষ্ট্যের উপর তাপমাত্রার প্রভাবঃ
সিলিকন এবং জার্মেনিয়ামকে তাপ দিলে তাদের কন্ডাকটিভিটি বৃদ্ধি পায়, ফলে ভ্যালেন্স ব্যান্ড হতে কন্ডাকশন ব্যান্ডে ইলেকট্রনগুলি চলে যায়। তাপমাত্রা বৃদ্ধি সময় কক্ষ তাপমাত্রা অতিক্রম করলে কিছু সেমিকন্ডাকটরের কো-ভ্যালেন্ট বন্ড ভেঙ্গে যায় এবং কিছু ফ্রি-ইলেকট্রন ও হোলের সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় পিএন জাংশনটিতে ফরওয়ার্ড বায়াস থাকলে জাংশনের নী-ভোল্টেজ কমে যায় ও ফরওয়ার্ড কারেন্ট বৃদ্ধি পায়, আর যদি জাংশনে রিভার্স বায়াস থাকে তবে জাংশনের রিভার্স ব্রেকডাউন ভোল্টেজ কমে যায় ফলে অল্প রিভার্স ভোল্টেজে অনেক বেশী রিভার্স কারেন্ট প্রবাহিত হয়।
কক্ষ তাপমাত্রায় Ge এর জন্য রিভার্স ও ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্সের অনুপাত ৪০০০০:১
উচ্চ তাপমাত্রায় Ge এর জন্য রিভার্স ও ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্সের অনুপাত ১০০০:১.৩ হতে ৯০০০:২.৬ এর মধ্যে হয়ে থাকে।
উচ্চ তাপমাত্রায় Si এর জন্য রিভার্স ও ফরওয়ার্ড রেজিস্ট্যান্সের অনুপাত ৮৫০০০০:১.১ হতে ৭৬০০০০:১ এর মধ্যে হয়ে থাকে।
উপরোক্ত তথ্য হতে দেখা যায় যে Si এর থার্মাল রেজিস্টিভিটি উচ্চ। তাই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে খুব Si এর কম কো-ভ্যালেন্ট বন্ড ভাঙ্গে। এজন্য সিলিকন জাংশনগুলি ফরওয়ার্ড বায়াসের সময় কম ফরওয়ার্ড কারেন্ট বাড়ে এবং রিভার্স বায়াসের সময় কম লিকেজ কারেন্ট প্রবাহিত হয়। এবং জাংশন সহজে পুড়ে ধ্বংস হয় না।
অপরদিকে জার্মেনিয়াম জাংশন উচ্চ তাপ সংবেদনশীল হওয়ায় তা Si এর তুলনায় নিম্ন থার্মাল রেজিস্টিভিটি বিশিষ্ট। ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে জার্মেনিয়াম জাংশনগুলি ফরওয়ার্ড বায়াসের সময় সিলিকনের তুলনায় বেশী ফরওয়ার্ড কারেন্ট বাড়ে এবং রিভার্স বায়াসের সময় সিলিকনের তুলনায় বেশী লিকেজ কারেন্ট প্রবাহিত হয়। ফলে সিলিকনের তুলনায় কম তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে জার্মেনিয়াম জাংশন সহজে পুড়ে ধ্বংস হয়।
একারণে Si জাংশনকে Ge জাংশনের তুলনায় অধিক তাপমাত্রায় অপারেট করা যায়।
ব্রেকডাউন ফেনোমেনন, স্ট্যাটিক রেজিস্ট্যান্স, ডায়নামিক রেজিস্ট্যান্স, ফরওয়ার্ড ব্রেকডাউন ভোল্টেজ, রিভার্স ব্রেকডাউন ভোল্টেজঃ
৩.৭.১। ব্রেকডাউন ফেনোমেননঃ পিএন জাংশনে প্রযুক্ত রিভার্স বায়াস ভোল্টেজ বৃদ্ধি করতে থাকলে যে ভোল্টেজে পৌছালে জাংশনের রিভার্স কারেন্ট দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং জাংশনের ব্রেকডাউন ঘটে তাকে ব্রেকডাউন ভোল্টেজ বলে। জাংশনের ব্রেকডাউন ঘটনাকে ব্রেকডাউন ফেনোমেনন বলে। দুই পদ্ধতিতে জাংশনের ব্রেকডাউন ঘটেঃ (১) জিনার ব্রেকডাউন (২) আভ্যালেন্স ব্রেকডাউন।
ক। জিনার ব্রেকডাউনঃ যখন রিভার্স বায়াস ভোল্টেজ বৃদ্ধি করা হয় তখন জাংশনে ইলেকট্রিক ফীল্ড বৃদ্ধি পায়। উচ্চ ইলেকট্রিক ফীল্ড সেমিকন্ডাকটর পদার্থের কো-ভ্যালেন্ট বন্ড ভেঙ্গে ফেলে ফলে অধিক সংখ্যক মুক্ত ইলেকট্রন ও হোল উৎপন্ন হয় তখন রিভার্স কারেন্ট অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায় এবং জাংশনের ব্রেকডাউন ঘটে, এই ব্রেকডাউনকে জিনার ব্রেকডাউন বলে।
খ। আভ্যালেন্স ব্রেকডাউনঃ এই ক্ষেত্রে জাংশনের ইলেকট্রিক ফীল্ড বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মাইনরিটি কেরিয়ারের বেগ বৃদ্ধি পায়। উচ্চ শক্তি সম্পন্ন কেরিয়ারসমূহ নিকটবর্তী পরমাণুর কো-ভ্যালেন্ট বন্ড ভেঙ্গে ফলে আরো অধিক সংখ্যাক কেরিয়ার উৎপন্ন হয়। এই উৎপন্ন কেরিয়ারগুলি ইলেকট্রিক ফীল্ডের দ্বারা ত্বরাণ্বিত হয়ে তাদের চলার পথে আরো অধিক সংখ্যা কো-ভ্যালেন্ট বন্ড ভেঙ্গে ফেলে, এভাবে শৃঙ্খল রিএকশন চলতে থাকে ফলে অধিক সংখ্যক কেরিয়ার প্রবাহের কারণে উচ্চ মাত্রার রিভার্স কারেন্ট পাওয়া যায়। এই অবস্থায় জাংশন অতি উত্তপ্ত হয় এবং ব্রেকডাউন ঘটে। এই পদ্ধতির ব্রেকডাউনকে আভ্যালেন্স ব্রেকডাউন বলে।
স্ট্যাটিক রেজিস্ট্যান্সঃ যখন কোন পিএন জাংশনের মধ্য দিয়ে ডিসি কারেন্ট প্রবাহিত হয় তখন ঐ জাংশনের যে রেজিস্ট্যান্স পাওয়া যায় তাকে স্ট্যাটিক রেজিস্ট্যান্স বলে, ইহাকে R দ্বারা প্রকাশ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে স্ট্যাটিক রেজিস্ট্যান্স হলো জাংশনে প্রয়োগকৃত ভোল্টেজ, V ও স্টেডি কারেন্ট I এর অনুপাত, অর্থাত R = V/I, এই স্ট্যাটিক রেজিস্ট্যান্স V ও I এর সাথে পরিবর্তিত হয় বলে ইহা তেমন কার্যকরী নয়। ফরওয়ার্ড বায়াস অবস্থায় এই স্ট্যাটিক রজিস্ট্যান্স কে Rf এবং রিভার্স ডিরেকশনে Rr দ্বারা লেখা হয়। এদের আদর্শ মান –
(ক) একটি জার্মেনিয়াম Alloy জাংশন ডায়োডে Rf = 100Ω, Rr = 15μΩ
(খ) একটি সিলিকন রেকটিফায়ার ডায়োডে Rf = 0.3Ω, Rr = 1μΩ
স্ট্যাটিক রেজিস্ট্যান্স R বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপারেটিং বিন্দুর স্থানান্তরের জন্য পরিবর্তিত হয় এবং ইহা ব্যবহৃত প্যারামিটার গঠন করে না।
ডায়নামিক রেজিস্ট্যান্সঃ এসি অপারেটিভ বায়সের ক্ষেত্রে জাংশনে প্রযুক্ত এসি ভোল্টেজের সাপেক্ষে ঐ সময়ে প্রবাহিত পরিবর্তনশীল এসি কারেন্টের অনুপাতকে ডায়নামিক রেজিস্ট্যান্স বা ইনক্রিমেন্টাল রেজিস্ট্যান্স বলে। কোন জাংশনে এসি ভোল্টেজ প্রয়োগ করলে সামান্য সময়ে প্রবাহিত কারেন্ট dI এবং ভোল্টেজ dV হলে Rac = dV/dI হইবে।
নী–ভোল্টেজ (Knee), থ্রেশহোল্ড ভোল্টেজঃ একটি পিএন জাংশনে সর্বনিম্ন যে পরিমান ফরওয়ার্ড ভোল্টেজ প্রয়েগে জাংশনের মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহ শুরু হয় এবং এই ভোল্টেজ সীমা অতিক্রম করা মাত্র কারেন্ট খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় তাকে নী-ভোল্টেজ বা থ্রেসহোল্ড ভোল্টেজ বলে। বাস্তব ক্ষেত্রে নী-ভোল্টেজ বা (Threshold) থ্রেশহোল্ড ভোল্টেজ পটেনশিয়াল বেরিয়ারের সমান হয়ে থাকে।
রিভার্স ব্রেকডাউন ভোল্টেজঃ পিএন জাংশনে প্রযুক্ত রিভার্স বায়াস ভোল্টেজ বৃদ্ধি করতে থাকলে সর্বনিম্ন যে ভোল্টেজে পৌছালে জাংশনের রিভার্স কারেন্ট দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং জাংশনের ব্রেকডাউন ঘটে তাকে ব্রেকডাউন ভোল্টেজ বলে।
জাংশন ক্যাপাসিট্যান্স, পিএন জাংশন ডায়োডের সমতূল্য বর্তনী অংকণঃ
ফরওয়ার্ড অথবা রিভার্স বায়াস অবস্থায় পিএন জাংশন দ্বারা ক্যাপাসিটিভ ইফেক্ট প্রদর্শন করানো হয়।
স্পেস চার্জ ক্যাপাসিট্যান্স অথবা ট্রানজিশন ক্যাপাসিট্যান্সঃ পিএন জাংশনে রিভার্স বায়াস বৃদ্ধির সাথে সাথে ডিপ্লেশন লেয়ারের প্রশস্ততা বৃদ্ধি পায় এবং ডিপ্লেশন লেয়ার উচ্চ রেজিস্ট্যান্স প্রদর্শন করে ইনসুলেটর বা ডাইইলেকট্রিক পদার্থের মত ক্রিয়া করে। পি এবং এন অঞ্চলের অপর পার্শ্বগুলি নিম্ন রেজিস্ট্যান্স প্রদর্শন করে এবং ক্যাপাসিটরের সমান্তরাল প্লেটের মত ক্রিয়া করে। ফলে রিভার্স বায়াস অবস্থায় পূর্ণাঙ্গ সিস্টেমটি একটি ক্যাপাসিটরের মত ক্রিয়া করে। এক্ষেত্রে জাংশন ক্যাপাসিট্যান্সকে স্পেস চার্জ ক্যাপাসিট্যান্স অথবা ট্রানজিশন ক্যাপাসিট্যান্স বলা হয়। একে (Cpn অথবা CT) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। ইহাকে C=εA/d সূত্রের সাহায্যে হিসাব করা যায়। এর আর্দশ মান 40pF। ক্যাপাসিট্যান্সের মান প্রযুক্ত রিভার্স বায়াস ভোল্টেজের উপর নির্ভরশীল। এই ক্যাপাসিট্যান্সকে নিম্নের সম্পর্কের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়।
CT = K/(VK+VR)n
VK = নী-ভোল্টেজ
VR = প্রযুক্ত রিভার্স ভোল্টেজ
K = ধ্রুবক সেমিকন্ডাকটরের উপর ভিত্তি করে
n = 1/2 Alloy জাংশনের জন্য এবং n = 1/3 ডিফিউশন জাংশনের জন্য।
☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "পিএন জাংশন"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন