সেমিকন্ডাকটর
শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০১৯
1 Comment
বৈদ্যূতিক বৈশিষ্টের ভিত্তিতে পদার্থ তিন প্রকার (১) পরিবাহী (২) অর্ধপরিবাহী (৩) অপরিবাহী
(১) পরিবাহীঃ
যে সকল পদার্থে যথেষ্ট পরিমান মুক্ত ইলেকট্রন থাকে এবং যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে সহজে তড়িৎ প্রবাহিত হতে পারে তাদেরকে কন্ডাকটর বা পরিবাহী পদার্থ বলে। যেমন রূপা, তামা, এলুমিনিয়াম ইত্যাদি। পরিবাহী পদার্থের যোজন ব্যান্ডে সাধারণতঃ ৪টির কম ইলেকট্রন থাকে। কন্ডাকটরের পরিবহন ব্যান্ড ও যোজন ব্যান্ডের মধ্যে কোন শক্তি পার্থক্য (Energy Gap) থাকে না, বরং এই দুটি ব্যান্ড উপরিপাতিত অবস্থায় থাকে। ফলে খুব সামান্য পরিমান বিভব পার্থক্য প্রয়োগের ফলে তড়িৎ প্রবাহ ঘটে।
(২) অর্ধপরিবাহীঃ
যে সব পদার্থের তড়িৎ পরিবাহীতা কন্ডাকটরের তুলনায় কম কিন্তু অন্তরক হতে বেশী তাদেরকে অর্ধ পরিবাহী পদার্থ বলে। অর্ধ পরিবাহী পদার্থের যোজন ব্যান্ডে সাধারণতঃ ৪টি ইলেকট্রন থাকে। যেমনঃ জার্মেনিয়াম, সিলিকন ইত্যাদি। অর্ধপরিবাহী পদার্থের যোজন ব্যান্ড ও পরিবহন ব্যান্ডের মধ্যে সামান্য শক্তি ব্যবধান থাকে। সেমিকন্ডাকটরের পরিবহন ব্যান্ড প্রায় খালি থাকে। পরম শূণ্য তাপমাত্রায় সেমিকন্ডাকটর অপরিবাহীর ন্যয় আচরণ করে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে কন্ডাকশন ব্যান্ডে ইলেকট্রনের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ও সেমিকন্ডাকটরের তড়িৎ পরিবাহীতা বৃদ্ধি পায়। উপযুক্ত ভেজাল দ্রব্য মিশিয়ে অর্ধপরিবাহীর তড়িৎ পরিবাহীতা বৃদ্ধি করা যায়।
(৩) অপরিবাহীঃ
যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হতে পারে না তাদেরকে অপরিবাহী বলে। যেমন কাঁচ, রবার চিনামাটি ইত্যাদি। অপরিবাহীর পরিবহন ব্যান্ড সম্পূর্ণ খালি থাকে। যোজন ব্যান্ড ও পরিবহন ব্যান্ডের মধ্যবর্তী শক্তি ব্যবধান খুব বেশী থাকে তা সাধারনতঃ প্রায় ৭ ইলেকট্রন-ভোল্টের (7eV) সমান, ফলে যোজন ব্যান্ড হতে ইলেকট্রন পরিবহন ব্যান্ডে আনতে উচ্চ শক্তির প্রয়োজন। কক্ষ তাপমাত্রায় যোজন ইলেকট্রনসমূহ এই ব্যবধান অতিক্রম করতে পারে না, তাই এর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ চলে না।
পারমানবিক গঠন সহ সেমিকন্ডাকটরের ধারণা
ইলেকট্রনগুলি বিভিন্ন কক্ষপথে নিউক্লিয়াসের চারপার্শ্বে কতকগুলি অনুমোদিত কক্ষপথে ঘুরতে থাকে। একটি শেলে কত সংখ্যাক ইলেকট্রন থাকবে তা আমরা 2n2 সূত্র দ্বারা নির্ধারণ হয়, এখানে n কে প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা বলা হয় যেখানে (n = 1, 2, 3 ……) সর্বদা পূর্ণ সংখ্যা। এনার্জি শেলকে আবার (s, p, d, f) চারটি সাবশেলে ভাগ করা হয়।
জার্মেনিয়ামের ক্ষেত্রেঃ
জার্মেনিয়ামের পারমানবিক সংখ্যা ৩২, অর্থাত জার্মেনিয়াম পরমানুতে মোট ৩২টি ইলেকট্রন রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম শক্তি স্তরে (2n2 = 2×12 = 2) ২টি ইলেকট্রন রয়েছে। দ্বিতীয় শক্তি স্তরে (2n2 = 2×22 = 8) ৮টি ইলেকট্রন রয়েছে। তৃতীয় শক্তি স্তরে (2n2 = 2×32 = 18) ১৮টি ইলেকট্রন রয়েছে। চতুর্থ শক্তি স্তরে (2n2 = 2×42 = 32) ৩২টি ইলেকট্রন থাকার কথা ছিল, কিন্তু এখানে চতুর্থ শক্তিস্তর ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ নয়। এখানে চতুর্থ শক্তি স্তরে ইলেকট্রনের সংখ্যা অবশিষ্ট ৪টি। অর্থাত শেষ কক্ষপথে ভ্যালেন্স ইলেকট্রনের সংখ্যা ৪টি। বিভিন্ন শক্তি স্তরে অবস্থিত ইলেকট্রনগুলি আবার (s, p, d, f) সাবশেলসমূহে অবস্থান করে।
প্রথম শক্তি স্তরের ২টি ইলেকট্রন সাবশেল (s) এ অবস্থান করে। দ্বিতীয় শক্তি স্তরের ৮টি ইলেকট্রনের মধ্যে ২টি ইলেকট্রন সাবশেল (s) এ এবং বাকী ৬টি ইলেকট্রন সাবশেল (p) তে অবস্থান করে। তৃতীয় শক্তি স্তরের ১৮টি ইলেকট্রনের মধ্যে ২টি ইলেকট্রন সাবশেল (s), ৬টি ইলেকট্রন সাবশেল (p) তে এবং ১০টি ইলেকট্রন সাবশেল (d) অবস্থান করে। তৃতীয় শক্তি স্তর পূর্ণ হবার পর বাকী ৪টি ভ্যালেন্স ইলেকট্রন চতুর্থ শক্তি স্তরের (s) সাবশেলে ২টি এবং (p) সাবশেলে ২টি পাওয়া যায়।
জার্মেনিয়ামের ইলেকট্রন বিন্যাসঃ 1s22s22p63s23p63d104s24p6
সিলিকনের ক্ষেত্রেঃ
সিলিকনের পারমানবিক সংখ্যা ১৪, অর্থাত সিলিকনের পরমানুতে মোট ১৪টি ইলেকট্রন রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম শক্তি স্তরে (2n2 = 2×12 = 2) ২টি ইলেকট্রন রয়েছে। দ্বিতীয় শক্তি স্তরে (2n2 = 2×22 = 8) ৮টি ইলেকট্রন রয়েছে। তৃতীয় শক্তি স্তরে (2n2 = 2×32 = 18) ১৮টি ইলেকট্রন থাকার কথা ছিল, কিন্তু তৃতীয় শক্তিস্তর ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ নয়। এখানে তৃতীয় শক্তি স্তরে ইলেকট্রনের সংখ্যা অবশিষ্ট ৪টি। অর্থাত শেষ কক্ষপথে ভ্যালেন্স ইলেকট্রনের সংখ্যা ৪টি। বিভিন্ন শক্তি স্তরে অবস্থিত ইলেকট্রনগুলি আবার (s, p, d, f) সাবশেলসমূহে অবস্থান করে।
প্রথম শক্তি স্তরের ২টি ইলেকট্রন সাবশেল (s) এ অবস্থান করে। দ্বিতীয় শক্তি স্তরের ৮টি ইলেকট্রনের মধ্যে ২টি ইলেকট্রন সাবশেল (s) এ এবং বাকী ৬টি ইলেকট্রন সাবশেল (p) তে অবস্থান করে। দ্বিতীয় শক্তি স্তর পূর্ণ হবার পর বাকী ৪টি ভ্যালেন্স ইলেকট্রন তৃতীয় শক্তি স্তরের (s) সাবশেলে ২টি এবং (p) সাবশেলে ২টি পাওয়া যায়।
সিলিকনের ইলেকট্রন বিন্যাসঃ 1s22s22p63s23p2
**নোট** উপরোক্ত মৌলসমূহের পারমানবিক গঠন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় সেমিকন্ডাকটর মৌলসমূহের সর্ববহিস্থ কক্ষপথ নিয়মতান্ত্রিকভাবে ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ থাকেনা। শেষ শক্তি স্তরে ৪টি ভ্যালেন্স ইলেকট্রন থাকে এবং এই ৪টি ইলেকট্রন আবার Ns2Np2 বিন্যাসে সজ্জিত থাকে।
অর্ধপরিবাহীর তড়িৎ পরিবাহীতার উপর তাপমাত্রার প্রভাব
এই বিষয়টি বুঝার আগে তড়িৎ পরিবাহীতা সম্পর্কে জেনে নেয়া প্রয়োজন
তড়িৎ পরিবাহীতাঃ কোন পদার্থের মধ্য দিয়ে কত সহজে বিদ্যূৎ প্রবাহিত হতে পারে তাকে তড়িৎ পরিবাহীতা বলা হয়, এটি পদার্থের একটি বিশেষ গুণ। অর্থাত পদার্থের যে গুণের কারণে এর মধ্য দিয়ে বিদ্যূৎ পরিবহণ ঘটে তাকে তড়িৎ পরিবাহীতা বা কন্ডাকটিভিটি বলে।
আসুন এখন অর্ধপরিবাহীর উপর তাপমাত্রার প্রভাব সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। তাপমাত্রা পরিবর্তনের কারনে অর্ধপরিবাহী পদার্থের তড়িৎ পরিবাহীতা পরিবর্তিত হয়। কয়েকটি তাপীয় অবস্থায় তা আলোচিত হলোঃ
পরম শূণ্যেঃ
পরম শূণ্য তাপমাত্রায় অর্ধপরিবাহী পদার্থের ভ্যালেন্স ইলেকট্রনগুলি খুব দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে। কো-ভ্যালেন্ট বন্ড (সমযোজী বন্ধন) অত্যান্ত বেশী হয়। কোন প্রকার হোল দেখা যায় না। সর্বপরি অর্ধপরিবাহী পদার্থ ইনসুলেটর ধর্ম প্রদর্শন করে।
পরম শূণ্যের উপরেঃ
পরম শূণ্যের উপরে যত তাপমাত্র বাড়তে থাকে তত সেমিকন্ডাকটরের কো-ভ্যালেন্ট বন্ড ভেঙ্গে যায়। মোটামুটি কক্ষ তাপমাত্রা পর্যন্ত অর্ধপরিবাহী পদার্থ ইনসুলেটর ধর্ম প্রকাশ করে। তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পেলে সেমিকন্ডাকটরের রেজিস্ট্যান্স হ্রাস পায়। অর্ধপরিবাহী তাপশক্তি গ্রহণের ফলে ভ্যালেন্স ব্যান্ড হতে ইলেকট্রনসমূহ কন্ডাকশন ব্যান্ডে চলে যায় এবং সেমিকন্ডাকটরের কন্ডাকটিভিটি/পরিবাহীতা বৃদ্ধি করে। কন্ডাকশন ব্যান্ডে ইলেকট্রন চলে যাবার কারণে উক্ত ফাঁকা স্থান পার্শ্ববর্তী পরমাণু হতে একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে ফলে পার্শ্ববর্তী ইলেকট্রনে পজেটিভ ইমপিউরিটি অবস্থা সৃষ্টি হয়। পার্শ্ববর্তী পরমাণু আবার তার পার্শ্ববর্তী পরমাণু হতে ইলেকট্রন গ্রহন করে ফাকা স্থান পূর্ণ করে। এভাবে সেমিকন্ডাকটরে মুক্ত ইলেকট্রন সৃষ্টি হয় এবং অর্ধপরিবাহী নেগেটিভ ধর্ম প্রদর্শন করে।
পরিবাহী, অর্ধপরিবাহী এবং অপরিবাহী পদার্থের শক্তি ব্যান্ড ডায়াগ্রামের ব্যাখ্যা
এনার্জি ব্যান্ড ডায়াগ্রামঃ একটি পরমাণুর বিভিন্ন শক্তিস্তরে অবস্থিত ইলেকট্রনসমূহের এনার্জিকে যে চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তাকে এনার্জি লেভেল ডায়াগ্রাম বা এনার্জি ব্যান্ড ডায়াগ্রাম বলা হয়।
পরিবাহী পদার্থের এনার্জি ব্যান্ড : পরিবাহী পদার্থের যোজন ব্যান্ডে সাধারণতঃ ৪টির কম ইলেকট্রন থাকে। কন্ডাকটরের পরিবহন ব্যান্ড ও যোজন ব্যান্ডের মধ্যে কোন শক্তি পার্থক্য (Energy Gap) থাকে না, বরং এই দুটি ব্যান্ড উপরিপাতিত অবস্থায় থাকে। ফলে খুব সামান্য পরিমান বিভব পার্থক্য প্রয়োগের ফলে তড়িৎ প্রবাহ ঘটে।
(২) অর্ধপরিবাহী পদার্থের এনার্জি ব্যান্ড : অর্ধপরিবাহী পদার্থের যোজন ব্যান্ড ও পরিবহন ব্যান্ডের মধ্যে সামান্য শক্তি ব্যবধান থাকে যা প্রায় ১ ইলেকট্রন-ভোল্টের (1eV) সমান। সেমিকন্ডাকটরের পরিবহন ব্যান্ড প্রায় খালি থাকে। পরম শূণ্য তাপমাত্রায় সেমিকন্ডাকটর অপরিবাহীর ন্যয় আচরণ করে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে কন্ডাকশন ব্যান্ডে ইলেকট্রনের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ও সেমিকন্ডাকটরের তড়িৎ পরিবাহীতা বৃদ্ধি পায়। উপযুক্ত ভেজাল দ্রব্য মিশিয়ে অর্ধপরিবাহীর তড়িৎ পরিবাহীতা বৃদ্ধি করা যায়।
(৩) অপরিবাহী পদার্থের এনার্জি ব্যান্ড : অপরিবাহীর পরিবহন ব্যান্ড সম্পূর্ণ খালি থাকে। যোজন ব্যান্ড ও পরিবহন ব্যান্ডের মধ্যবর্তী শক্তি ব্যবধান খুব বেশী থাকে তা সাধারনতঃ প্রায় ৭ ইলেকট্রন-ভোল্টের (7eV) সমান, ফলে যোজন ব্যান্ড হতে ইলেকট্রন পরিবহন ব্যান্ডে আনতে উচ্চ শক্তির প্রয়োজন। কক্ষ তাপমাত্রায় যোজন ইলেকট্রনসমূহ এই ব্যবধান অতিক্রম করতে পারে না, তাই এর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ চলে না।
সেমিকন্ডাকটরের শ্রেণীবিভাগ
সেমিকন্ডাকটর মূলতঃ ২ প্রকারঃ
১। খাটি সেমিকন্ডাকটর (Intrinsic Semiconductor)
২। ভেজাল মিশ্রিত সেমিকন্ডাকটর (Extrinsic Semiconductor)
ভেজাল মিশ্রিত সেমিকন্ডাকটর আবার দুই প্রকারঃ
ক। পি-টাইপ সেমিকন্ডাকটর
খ। এন-টাইপ সেমিকন্ডাকটর
১। খাটি সেমিকন্ডাকটরঃ
ডোপিং এর পূর্বে অর্থাত ভেজাল পদার্থ মিশ্রণের পূর্বে বিষুদ্ধ সেমিকন্ডাকটরকে Intrinsic Semiconductor বা খাটি সেমিকন্ডাকটর বলা হয়। ইহা সাধারণ তাপমাত্রায় বিদ্যূৎ প্রবাহ করে না। কারণ চারটি যোজন ইলেকট্রন পার্শ্ববর্তী পরমাণুর অপর চারটি ভ্যালেন্স ইলেকট্রনের সাথে সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সর্ব বহিস্থ স্তরে ৮টি ইলেকট্রন পূর্ণ করে সুস্থিত হয়। ইলেকট্রনিক ডিভাইসে এর ব্যবহার খুব কম।
২। ভেজাল মিশ্রিত সেমিকন্ডাকটরঃ
ডোপিং এর পর অর্থাত ভেজাল পদার্থ মিশ্রনের পর ভেজাল দ্রব্য মিশ্রিত সেমিকন্ডাকটরকে Extrinsic Semiconductor বা ভেজাল মিশ্রিত সেমিকন্ডাকটর বলা হয়। ভেজাল পদার্থের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে সেমিকন্ডাকটর আবার দুই প্রকার হয়ে থাকে। (১) পি-টাইপ সেমিকন্ডাকটর (২) এন-টাইপ সেমিকন্ডাকটর।
খাটি সেমিকন্ডাকটরে ইলেকট্রন হোল জেনারেশন এন্ড রিকম্বিনেশন নিম্ন তাপমাত্রায় অধিকাংশ বিষুদ্ধ অর্ধপরিবাহীতে ইলেকট্রন এবং হোলগুলি দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। ফলে মুক্ত ইলেকট্রন থাকে না এবং বিদ্যূৎ প্রবাহ হয় না। কিন্তু কক্ষ তাপমাত্রায় বা তার কিছু বেশী তাপমাত্রায় ভ্যালেন্স ইলেকট্রনসমূহ তাপশক্তি অর্জন করে এবং কো-ভ্যালেন্ট বন্ধন ভেঙ্গে মুক্ত হয়। ফলে বন্ধনে একটি ইলেকট্রনের ঘাটতি পড়ে অর্থাত একটি হোলের সৃষ্টি হয়। এভাবে খাটি অর্ধপরিবাহীতে ইলেকট্রন এবং হোল জেনারেশন হয়।
বিষুদ্ধ সেমিকন্ডাকটরে সমান সমান হোল এবং মুক্ত ইলেকট্রন থাকে। মুক্ত ইলেকট্রনগুলি বিভিন্ন পরমাণুতে ঘুরে বেড়ায়। যখন কোন মুক্ত ইলেকট্রন কোন একটি হোলের মধ্যে ঢুকে যায় তখন ইলেকট্রন হোল রিকম্বিনেশন ঘটে। অর্থাত মুক্ত ইলেকট্রন এবং হোলের মিলনকে হোল-ইলেকট্রন রিকম্বিনেশন বলে।
ডোপিং, পি-টাইপ এবং এন-টাইপ সেমিকন্ডাকটর, কো-ভ্যালেন্ট বন্ড, মেজরিটি এবং মাইনরিটি চার্জ কেরিয়ার
ডোপিং
খাটি সেমিকন্ডাকটরের সাথে প্রয়োজন অনুপাতে ভেজাল দ্রব্য মিশিয়ে সেমিকন্ডাকটরের পরিবাহীতা বৃদ্ধি করার প্রকৃয়াকে ডোপিং বলা হয়।
পি-টাইপ সেমিকন্ডাকটর
বিষুদ্ধ সেমিকন্ডাকটরের সাথে ত্রি-ভ্যালেন্স ইলেকট্রন বিশিষ্ট পদার্থ (যেমন Al, Ga, B) কে ডোপিং এর সাহায্যে মিশ্রিত করলে যে মিশ্রিত পদার্থের সৃষ্টি হয় তাকে পি-টাইপ সেমিকন্ডাকটর বলা হয়। মিশ্রনের ফলে সেমিকন্ডাকটরের ক্রিস্টালের গঠনে একটি পরিবর্তন ঘটে। ভেজাল পরমাণুর ৩টি ভ্যালেন্স ইলেকট্রন সেমিকন্ডাকটর পরমাণুর ৩টি ভ্যালেন্স ইলেকট্রনের সাথে সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ হয় কিন্তু সেমিকন্ডাকটরের অবশিষ্ট একটি ইলেকট্রনের বন্ধন সৃষ্টির জন্য ভেজাল পরমাণুতে আর একটি ইলেকট্রনের ঘাটতি হয়। ভেজাল পরমাণুর ইলেকট্রনের ঘাটতির জন্য মিশ্র পদার্থটি ধণাত্বক চার্জ বহন করে। ত্রি-ভ্যালেন্স ইলেকট্রন বিশিষ্ট পদার্থ মিশ্রনের ফলে মিশ্রনে হোলের সৃষ্টি হয় এবং মিশ্রিত সেমিকন্ডাকটরটি বিদ্যূৎ পরিবাহী হয়। চিত্রে সিলিকনের সাথে বোরন এর মিশ্রণে পি-টাইপ সেমিকন্ডাকটর সৃষ্টি করা হয়েছে।
এন-টাইপ সেমিকন্ডাকটর
বিষুদ্ধ সেমিকন্ডাকটরের সাথে পঞ্চ-ভ্যালেন্স ইলেকট্রন বিশিষ্ট পদার্থ (যেমন As, Sb) কে ডোপিং এর সাহায্যে মিশ্রিত করলে যে মিশ্রিত পদার্থের সৃষ্টি হয় তাকে এন-টাইপ সেমিকন্ডাকটর বলা হয়। মিশ্রনের ফলে সেমিকন্ডাকটরের ক্রিস্টালের গঠনে একটি পরিবর্তন ঘটে। সেমিকন্ডাকটর পরমাণুর ৪টি ভ্যালেন্স ইলেকট্রন ভেজাল পরমাণুর ৪টি ভ্যালেন্স ইলেকট্রনের সাথে সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ হয় কিন্তু ভেজাল পরমাণুর অবশিষ্ট একটি ইলেকট্রনের বন্ধন সৃষ্টির জন্য সেমিকন্ডাকটরের আর একটি ইলেকট্রনের ঘাটতি হয়। ভেজাল পরমাণুর অতিরিক্ত মুক্ত ইলেকট্রনের জন্য মিশ্র পদার্থটি ঋণাত্বক চার্জ বহন করে। পঞ্চ-ভ্যালেন্স ইলেকট্রন বিশিষ্ট পদার্থ মিশ্রনের ফলে মিশ্রনে ইলেকট্রনের সৃষ্টি হয় এবং মিশ্রিত সেমিকন্ডাকটরটি বিদ্যূৎ পরিবাহী হয়। চিত্রে সিলিকনের সাথে ফসফরাস এর মিশ্রণে এন-টাইপ সেমিকন্ডাকটর সৃষ্টি করা হয়েছে।
কো-ভ্যালেন্ট বন্ড বা সমযোজী বন্ধন
যখন কোন পদার্থের পরমাণুগুলি ইলেকট্রন শেয়ারিং এর মাধ্যমে বন্ধন গঠন করে তাকে কো-ভ্যালেন্ট বন্ড বা সমযোজী বন্ধন বলে। এই প্রকৃয়ায় একটি পরমাণুর ভ্যালেন্স ইলেকট্রনসমূহ তার চার পার্শ্বের পরমাণুসমূহের ভ্যালেন্স ইলেকট্রনসমূহের সাথে শেয়ারিং করে অষ্টক পূর্ণ করে। কো-ভ্যালেন্ট বন্ড তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল। যখন তাপমাত্রা পরম শূণ্য তখন কো-ভ্যালেন্ট বন্ড খুব শক্ত হয়। এবং এই অবস্থায় কোন অর্ধপরিবাহী পদার্থই কারেন্ট পরিবহণ করতে পারে না। কিন্তু তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে কো-ভ্যালেন্ট বন্ড ভেঙ্গে যায় এবং এ অবস্থায় অর্ধপরিবাহী কারেন্ট পরিবহণ করে।
মেজরিটি চার্জ কেরিয়ার
একটি খাটি সেমিকন্ডাকটরে ডোপিং এর সাহায্যে এক্সট্রিনসিক সেমিকন্ডাকটর তৈরী করলে তাতে কিছু ফ্রি ইলেকট্রন এবং হোল সৃষ্টি হয়। এই দুইয়ের মধ্যে যেটির পরিমান বেশী থাকে তাকে মেজরিটি চার্জ কেরিয়ার বলে। যেমন পি-টাইপ সেমিকন্ডাকটরে প্রচুর পরিমান হোল সৃষ্টি হয় এবং সামান্য কিছু ফ্রি ইলেকট্রন থাকে তাই পি-টাইপ সেমিকন্ডাকটরে মেজরিটি চার্জ কেরিয়ার হলো হোল এবং এন-টাইপ সেমিকন্ডাকটরে প্রচুর পরিমান ফ্রি ইলেকট্রন সৃষ্টি হয় এবং সামান্য কিছু হোল থাকে তাই এন-টাইপ সেমিকন্ডাকটরে মেজরিটি চার্জ কেরিয়ার হলো ইলেকট্রন।
মাইনরিটি চার্জ কেরিয়ার
একটি খাটি সেমিকন্ডাকটরে ডোপিং এর সাহায্যে এক্সট্রিনসিক সেমিকন্ডাকটর তৈরী করলে তাতে কিছু ফ্রি ইলেকট্রন এবং হোল সৃষ্টি হয়। এই দুইয়ের মধ্যে যেটির পরিমান কম থাকে তাকে মাইনরিটি চার্জ কেরিয়ার বলে। যেমন পি-টাইপ সেমিকন্ডাকটরে প্রচুর পরিমান হোল সৃষ্টি হয় এবং সামান্য কিছু ফ্রি ইলেকট্রন থাকে তাই পি-টাইপ সেমিকন্ডাকটরে মাইনরিটি চার্জ কেরিয়ার হলো ইলেকট্রন এবং এন-টাইপ সেমিকন্ডাকটরে প্রচুর পরিমান ফ্রি ইলেকট্রন সৃষ্টি হয় এবং সামান্য কিছু হোল থাকে
সেমিকন্ডাকটর ডিভাইসের সুবিধা কি?
ক। সেমিকন্ডাকটর নির্মিত সরঞ্জামাদি আকারে ছোট এবং হালকা হয়।
খ। ভালবের তুলনায় ইহাদের আয়ুস্কাল বেশী
গ। খুব কম পাওয়ার খরচ করে।
ঘ। ডিভাইসের দাম কম।
ঙ। অধিক তাপোৎপাদী নয়।
চ। দ্রুত গতির সুইচিং করতে পারে।
বিষুদ্ধ এবং ভেজাল মিশ্রিত উভয় অর্ধপরিবাহী বৈদ্যূতিক ভাবে নিরপেক্ষ ব্যাখ্যা করঃ বিষুদ্ধ সেমিকন্ডাকটরেঃ
বিষুদ্ধ সেমিকন্ডাকটরে ইলেকট্রন এবং প্রোটন সংখ্যার গণনায় সমান থাকে বলে বিষুদ্ধ সেমিকন্ডাকটর বৈদ্যূতিকভাবে চার্জ নিরপেক্ষ থাকে।
ভেজাল মিশ্রিত সেমিকন্ডাকটরেঃ
ভেজাল মিশ্রিত সেমিকন্ডাকটরে ভেজাল মিশ্রনের ফলে (এন-টাইপে) প্রচুর মুক্ত ইলেকট্রন এবং (পি-টাইপে) হোল সৃষ্টি হয় কিন্তু সেমিকন্ডাকটরের মোট চার্জ অপরিবর্তিত থাকে। কেননা যে ভেজাল পদার্থ যোগ করা হয়েছে তাতেও ইলেকট্রন এবং প্রোটনের পরিমান সমান ছিল। তাই মিশ্রিত পদার্থটিতেও ইলেকট্রন এবং প্রোটনের পরিমান সমান হবে এবং মিশ্রণটি সার্বিকভাবে চার্জ নিরপেক্ষ হবে।
** একসেপটর এবং ডোনার বলতে কি বুঝ?
একসেপটরঃ
সাধারণতঃ পি-টাইপ সেমিকন্ডাকটরে ত্রি-ভ্যালেন্স ইলেকট্রন বিশিষ্ট পদার্থ ভেজাল হিসাবে যোগ করা হয়। এর ফলে মিশ্রনের ক্রিস্টালে একটি পরিবর্তন হয়। ভেজাল পদার্থের ৩টি ইলেকট্রন সেমিকন্ডাকটরের ৩টি ইলেকট্রনের সাথে জোড় বাধে কিন্তু সেমিকন্ডাকটরের অবশিষ্ট ১টি ইলেকট্রন জোড় বাধার জন্য ভেজাল পদার্থে একটি ইলেকট্রন ঘাটতি হয়, অর্থাত পজেটিভ হোলের সৃষ্টি হয় যা একটি ইলেকট্রন গ্রহন করতে পারে। এজন্য এই রকম ভেজাল দ্রব্যকে ট্রাই-ভ্যালেন্ট ইমপিউরিটি বলে এবং ভেজাল পরমাণুকে একসেপটর বলে।
ডোনারঃ
সাধারণতঃ এন-টাইপ সেমিকন্ডাকটরে পঞ্চ-ভ্যালেন্স ইলেকট্রন বিশিষ্ট পদার্থ ভেজাল হিসাবে যোগ করা হয়। এর ফলে মিশ্রনের ক্রিস্টালে একটি পরিবর্তন হয়। ভেজাল পদার্থের ৪টি ইলেকট্রন সেমিকন্ডাকটরের ৪টি ইলেকট্রনের সাথে জোড় বাধে কিন্তু ভেজাল পদার্থের ১টি ইলেকট্রন অবশিষ্ট থাকে এবং ইহা মুক্তভাবে অবস্থান করে এবং সমগ্র পদার্থ জুড়ে বিচরণ করতে পারে। অর্থাত ভোজাল পরমাণু একটি ইলেকট্রন দান করতে পারে। এজন্য এরূপ ভেজাল দ্রব্যকে পেন্টা-ভ্যালেন্ট ইমপিউরিটি বলে এবং ভেজাল পরমাণুকে ডোনার পরমাণু বলে।
** ইলেকট্রন এবং হোল কি?
ইলেকট্রনঃ
ইহা পরমাণুর ক্ষুদ্রতম কণিকা। ইহা ঋণাত্বক চার্জ বহন করে। একটি ইলেকট্রনের চার্জ প্রায় ১.৬০২x১০-১৯ কুলম্ব হয়ে থাকে।
হোলঃ
এটমিক বন্ড হতে একটি ইলেকট্রন বিচ্যূত হলে যে ফাঁকা স্থানের সৃষ্টি হয় তা-ই হোল।
** ড্রিফ্ট এবং ডিফিউশন কি?
ড্রিফ্টঃ
যখন কোন সেমিকন্ডাকটরকে বৈদ্যূতিক ক্ষেত্রের মধ্যে স্থাপন করা হয় তখন ঐ সেমিকন্ডাকটরের ফ্রি ইলেকট্রন ও হোলগুলি বিক্ষপ্তভাবে ছুটাছুটি করে অর্থাত উত্তেজিত হয়। ইলেকট্রন এবং হোলসমূহের এই অবস্থাকে ড্রিফ্ট বলে।
ডিফিউশনঃ
সেমিকন্ডাকটর পদার্থে বাহ্যিক বৈদ্যূতিক ক্ষেত্র প্রয়োগ না করলে সেমিকন্ডাকটরের ইলেকট্রন এবং হোলগুলি পরস্পর মিলিত হয়ে নিস্ক্রিয় হয়। ইলেকট্রন এবং হোলের এই অবস্থাকে ডিফিউশন বলে।
ড্রিফ্ট কারেন্ট:
যখন P-টাইপ অথবা এন টাইপ সেমিকন্ডাকটরের দুই পার্শ্বে বাহ্যিক কোন ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হয় তখন পি টাইপে হোল এবং এন-টাইপে ইলেকট্রন প্রবাহ দ্বারা কারেন্ট কন্ডাকশন ঘটে। হোল প্রবাহ ইলেকট্রন প্রবাহের বিপরীত দিকে হয়, আর এই ধরণের কারেন্ট প্রবাহকে ড্রিফ্ট কারেন্ট হয়।
ডিফিউশন কারেন্ট:
সেমিকন্ডাকটর পদার্থের ক্রিস্টাল তলকে যদি কোথাও বেশী ইলেকট্রন অথবা হোলের কনসেনট্রেশন ঘটানো হয় তবে চার্জ কেরিয়ার উচ্চ কনসেনট্রেশন হতে নিম্ন কনসেনট্রেশন অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে গমন করে একটি কারেন্ট প্রবাহের সৃষ্টি করে একে ডিফিউশন কারেন্ট বলা হয়। ডিফিউশন কারেন্টের জন্য কোন বাহ্যিক ভোল্টেজের প্রয়োজন হয় না।
দারুন
উত্তরমুছুন