আজ ১৬ ডিসেম্বর: ইতিহাসের আজকের এই দিনে
বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০১৯
Comment
আজ ১৬ ডিসেম্বর: ইতিহাসের আজকের এই দিনে |
১৬ গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী অনুসারে বছরের ৩৫০ তম (অধিবর্ষে ৩৫১ তম) দিন।বছর শেষ হতে আরো ১৫ দিন বাকি রয়েছে।
১৯৭১
বিজয় দিবস
বাংলাদেশে বিশেষ দিন হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের সর্বত্র পালন করা হয়। প্রতি বছর ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশে দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়। ২২ জানুয়ারি, ১৯৭২ তারিখে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারীভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়।[১] ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ সদস্য বাংলাদেশ ও ভারতের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে।[২] এর ফলে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। এ উপলক্ষে প্রতি বছর বাংলাদেশে দিবসটি যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য এবং বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়। ১৬ই ডিসেম্বর ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা ঘটে। জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে অনুষ্ঠিত সম্মিলিত সামরিক কুচকাওয়াজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা যোগ দেন। কুচকাওয়াজের অংশ হিসেবে সালাম গ্রহণ করেন দেশটির প্রধান মাননীয় রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী। এই কুচকাওয়াজ দেখার জন্য প্রচুরসংখ্যক মানুষ জড়ো হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে ঢাকার অদূরে সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে থাকেন।
পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ
আজ ১৬ ডিসেম্বর |
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী এই দিনে যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল। সেদিন ঢাকার কেন্দ্রস্থলে রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের পক্ষে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। তিনি যৌথবাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর উপ-সর্বাধিনায়ক ও ডেপুটি চীফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল করিম খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন। তবে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী উপস্থিত ছিলেন না। আত্মসমর্পণ দলিলের ভাষ্য ছিল নিম্নরূপ:[৩]
আজ ১৬ ডিসেম্বর |
এই দলিল স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড লেফটেন্যান্ট-জেনারেল অরোরার নির্দেশের অধীন হবে। নির্দেশ না মানলে তা আত্মসমর্পণের শর্তের লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে এবং তার প্রেক্ষিতে যুদ্ধের স্বীকৃত আইন ও রীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আত্মসমর্পণের শর্তাবলীর অর্থ অথবা ব্যাখ্যা নিয়ে কোনো সংশয় দেখা দিলে, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।
লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পণকারী সেনাদের জেনেভা কনভেনশনের বিধি অনুযায়ী প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান দেওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করছেন এবং আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি সামরিক ও আধা-সামরিক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও সুবিধার অঙ্গীকার করছেন। লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার অধীন বাহিনীগুলোর মাধ্যমে বিদেশি নাগরিক, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও জন্মসূত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যক্তিদের সুরক্ষাও দেওয়া হবে।
বিজয় দিবস উৎযাপন
১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে বিজয় দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, চলচ্চিত্র, কবিতা, নিবন্ধ, গণমাধ্যম ইত্যাদি বিভিন্নভাবে এই বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়। এই দিন উপলক্ষে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজের আয়োজন করে থাকে, এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান, মতবিনিময় সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। দেশের প্রধান সড়কগুলো জাতীয় পতাকা দিয়ে সাজানো হয়। এই দিনে ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করা হয়।
বিদেশী প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ যদিও অপারেশন সার্চলাইট এর সময় এবং এর পরবর্তী সময়ে মানবাধিকার লঙ্গনের জন্য নিন্দা প্রস্তাব আনে, তবুও তারা যুদ্ধ সংগঠিত হওয়ার পূর্বে রাজনৈতিকভাবে পদক্ষেপ নিতে অসমর্থ হয়েছিল।
১৯৭১ সালের মার্চে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণার পর ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বৈশ্বিক জনমত গড়ে তোলাতে রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক এবং মানবিক সাহায্যের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচারণা শুরু করে। বাঙালীদের উপর পাকিস্তানিদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে ভারতের প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সফর করেন। যুদ্ধের দিকে বৈশ্বিক দৃষ্টি আকর্ষণ এবং ভারতের পক্ষে সামরিক কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ, যুদ্ধের পরে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে প্রমাণিত হয়।[১২] এমনকি, পাকিস্তানের পরাজয়ের পর, সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের স্বীকৃতিতে তৎক্ষণাৎ ভূমিকা রাখে।
যুদ্ধে ভারতের অংশগ্রহণে, পাকিস্তান নিশ্চিত পরাজয় দেখতে পায়, এবং জাতি সংঘের কাছে মধ্যস্ততার সুপারিশ করে এবং ভারতকে যুদ্ধবিরতিতে যেতে চাপ দেয়। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ, ৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে দক্ষিণ এশিয়ার যুদ্ধবিগ্রহ বিষয়ে আলোচনায় বসে। দীর্ঘ আলোচনার পর ৭ ডিসেম্বর, জাতিসংঘ "তাৎক্ষণিক যুদ্ধ-বিরতি এবং সেনা প্রত্যাহার" অধ্যাদেশ জারি করে। যখন সংখ্যাগরিষ্ঠরা সমর্থন জানায়, তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন এই অধ্যাদেশে দুইবার ভেটো দেয় এবং যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স এই অধ্যাদেশ থেকে বিরত থাকে।
১২ই ডিসেম্বর, পাকিস্তান আসন্ন পরাজয় দেখে, নিরাপত্তা পরিষদকে পুনরায় উত্থাপন করতে জাতিসংঘের কাছে অনুরোধ জানায়। পাকিস্তানের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী এবং বৈদেশিক মন্ত্রী, জুলফিকার আলী ভুট্টো, যুদ্ধ-বিরতির জন্য অধ্যাদেশ জারি করাতে নিউ ইয়র্ক সিটির দিকে দ্রুত অগ্রসর হন। পরিষদে চারদিন বিচারবিবেচনা চলে। এরই মধ্যে প্রস্তাবটি চূড়ান্ত হয়ে যায়, পূর্ব পাকিস্তানে সশস্ত্র বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করে যুদ্ধ বিগ্রহ বন্ধ করতে হয়, এবং পদক্ষেপটি নিছক একাডেমিক রয়ে যায়। অধ্যাদেশে ব্যর্থতার জন্য ভুট্টো, হতাশ হয়ে পড়েন এবং জাতিসংঘের নিষ্ক্রিয়তার জন্য, তার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে এবং পরিষদ ত্যাগ করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার এক মাসের মধ্যে বেশিরভাগ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বাংলাদেশকে তৎক্ষণাৎ স্বীকৃতি দেয়।
সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানকারী দেশসমূহের তালিকা
দেশ স্বীকৃতিদানের তারিখ
১-------------ভুটান--------------------------------৬ ডিসেম্বর ১৯৭১
২-------------ভারত----------------------------------৬ ডিসেম্বর ১৯৭১
৩-------------পোল্যান্ড--------------------------১২ জানুয়ারি ১৯৭২
৪--------------বার্মা-----------------------------১৩ জানুয়ারি ১৯৭২
৬-------------নেপাল----------------------------১৬ জানুয়ারি ১৯৭২
৭--------------বার্বাডোস-------------------------২০ জানুয়ারি ১৯৭২
৮--------------যুগোস্লাভিয়া-----------------------২২ জানুয়ারি ১৯৭২
৯--------------টোঙ্গা-----------------------------২৫ জানুয়ারি ১৯৭২
১০-------------সোভিয়েত ইউনিয়ন------------২৬ জানুয়ারি ১৯৭২
১১-------------চেকোস্লোভাকিয়া----------------২৬ জানুয়ারি ১৯৭২
১২-------------সাইপ্রাস---------------------------২৬ জানুয়ারি ১৯৭২
১৩--------------হাঙ্গেরি-----------------------------২৬ জানুয়ারি ১৯৭২
১৪--------------অস্ট্রেলিয়া-------------------------২৬ জানুয়ারি ১৯৭২
১৫------------- ফিজি-----------------------------২৬ জানুয়ারি ১৯৭২
১৬-------------নিউজিল্যান্ড---------------------২৬ জানুয়ারি ১৯৭২
১৭--------------সেনেগাল------------------------১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২
১৮-------------যুক্তরাজ্য---------------------------৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২
১৯--------------পশ্চিম জার্মানি----------------------৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২
২০---------------ফিনল্যান্ড--------------------------৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২
২১------------------ডেনমার্ক-----------------------৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২
২২----------------সুইডেন-------------------------৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২
২৩------------------নরওয়ে-------------------------৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২
২৪----------------আইসল্যান্ড-----------------------৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২
২৫----------------ইসরায়েল------------------------৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২
২৬-----------------জাপান-------------------------৮ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২
২৭-----------------লুক্সেমবুর্গ-----------------------১১ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২
২৮----------------নেদারল্যান্ডস-------------------১১ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২
২৯----------------বেলজিয়াম----------------------১১ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২
৩০-----------------আয়ারল্যান্ড--------------------১১ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২
৩১-----------------ইতালি----------------------------১২ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২
৩২-----------------ফ্রান্স------------------------------১৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২
৩৩----------------কানাডা----------------------------১৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২
৩৪-----------------সিঙ্গাপুর--------------------------১৬ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২
৩৫-----------------মরিশাস---------------------------২০ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২
জন্ম
১৭৭৫ - জেন অস্টেন একজন ইংরেজ ঔপন্যাসিক।[১]
১৯১৭ - আর্থার সি ক্লার্ক, একজন বিখ্যাত বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক এবং উদ্ভাবক।[১]
১৯০৬ - মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, বাঙালি কবি।[১]
১৯৪০ - মাহমুদুন্নবী, বাংলাদেশি সঙ্গীতশিল্পী।[১]
১৯৪৭ - বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল।
মৃত্যু
১৮৫৯ - ভিলহেল্ম গ্রিম, জার্মান লেখক।
বিজয় দিবস, বাংলাদেশ
☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "আজ ১৬ ডিসেম্বর: ইতিহাসের আজকের এই দিনে "
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন